১২ এপ্রিল খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের উৎসব ইস্টারের দিন৷ কিন্তু এবছর করোনা সংক্রমণ রুখে দিতে গির্জার বদলে বাসা থেকেই এই উৎসবের প্রার্থনায় সামিল হওয়া নিয়ে উঠছে আলোচনা৷
ছবি: Reuters/K. Pfaffenbach
বিজ্ঞাপন
জার্মানিতে করোনা সংক্রমণের গতি থামিয়ে দিতে নেওয়া হয়েছে বেশ কয়েকটি জরুরি পদক্ষেপ৷ এরমধ্যে অন্যতম হলো গির্জার মতো যে কোনো জনবহুল স্থানে জমায়েতের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে৷ এর ফলে খ্রিস্টানদের উৎসব ইস্টার পালনে আনা হবে কিছু বদল৷
কিন্তু এই বদল দু'একটি গোষ্ঠীর মনমত না হওয়ায় তারা আদালতের দ্বারস্থ হন৷ ইস্টার উদযাপনে গির্জায় সমবেত হতে চেয়ে আদালতের কাছে আর্জি জানালেও তা গ্রহণ করা হয়নি৷ জার্মানির বার্লিন ও হেসেন প্রদেশের আদালত দেশের ক্যাথলিক ও প্রোটেস্টান্ট ধারার পাদ্রীদের সাথে সুর মিলিয়ে নিষেধাজ্ঞার পক্ষেই রায় দেন৷
জার্মানির প্রোটেস্টান্ট গির্জার প্রধান হাইনরিশ বেডফোর্ড-স্ট্রোম বলেন যে এই মূহুর্তে মানুষের জীবন রক্ষা করাই হোক একমাত্র নীতি নির্ধারক৷ অন্যদিকে, ক্যাথলিক বিশপ রুডলফ ফোডেরহোলৎজার এই পরিস্থিতিতেও যারা জমায়েতের পক্ষে তাঁদের প্রশ্ন করেন, যে আসলেই তারা এই মারণব্যাধির দ্রুত সমাধান চান কি না৷
করোনা ভাইরাস: ইউরোপের কোথায় কেমন ‘লকডাউন’?
কোভিড-১৯ যেন ছড়াতে না পারে, সেজন্য ইউরোপের সর্বত্র জনজীবনের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে৷ কিন্তু সেই কড়াকড়িগুলো কেমন? চলুন দেখে নিই ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Ben Ari
ইটালি
ইটালিতে গত ৯ মার্চ সারাদেশে লকডাউন ঘোষণা করা হয়৷ এর ছয় কোটি জনগোষ্ঠীকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যেতে নিষেধ করা হয়৷ অন্যথায় চারশ’ থেকে তিন হাজার ইউরো পর্যন্ত জরিমানা গুণতে হবে৷ সুপারমার্কেট, ব্যাংক, ফার্মেসি ও পোস্ট অফিস ছাড়া বাকি সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়৷ আপাাতত এই ঘোষণা ৩ এপ্রিল পর্যন্ত কার্যকর থাকলেও তা ৩১ জুলাই পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে৷
ছবি: Imago Images/Zuma Wire
স্পেন
গত ১৪ মার্চ সরকার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে৷ দেশের চার কোটি ৬০ লাখ মানুষকে ঘরে থাকতে বলা হয়৷ ১১ এপ্রিল পর্যন্ত এই অবস্থা কার্যকর থাকবে৷ হাজার হাজার পুলিশ ও সেনাবাহিনি মোতায়েন করা হয়েছে৷ স্পেনও তার ইউরোপীয় প্রতিবেশীদের সঙ্গে সীমান্ত যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে৷
ছবি: AFP/J. Jordan
ফ্রান্স
ফ্রান্সে ১৭ মার্চ লকডাউন ঘোষণা করা হয়৷ চলবে ১ এপ্রিল পর্যন্ত৷ কিন্তু বাড়ানো হতে পারে৷ ঘর থেকে বেরোতে হলে একটি ফর্ম পূরণ করে কারণ ব্যাখ্যা করতে হয়৷ দিনে একবার শরীরচর্চা করতে এক ঘন্টার জন্য একা বের হওয়া যাবে৷ এছাড়া ঘরের এক কিলোমিটারের মধ্যে হেঁটে আসা যাবে৷ না মানলে ১৩৫ ইউরো থেকে ৩৭০০ ইউরো পর্যন্ত জরিমানা৷
ছবি: Getty Images/G. Souvant
জার্মানি
ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো জার্মানি তার ৮ কোটি জনগণের জন্য অত কড়াকড়ি আরোপ করেনি৷ তবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যাপারে নিয়ম করে দিয়েছে, যেমন, ঘরের বাইরে ভিন্ন পরিবারের দু’জনের বেশি একসঙ্গে থাকতে পারবেন না৷ ২০ এপ্রিল পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা না মানলে কোনো কোনো রাজ্য ২৫ হাজার ইউরো পর্যন্ত জরিমানা করা হতে পারে৷
ছবি: DW/M. Müller
যুক্তরাজ্য
২৩ মার্চ লকডাউনের ঘোষণা দেয় যুক্তরাজ্য৷ চলবে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত৷ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সংগ্রহ বা যাদের অফিসে যেতেই হবে তারা বাইরে যেতে পারেন৷ তবে কোনর কাগজ দেখাতে হবে না৷ বড় আকারের জমায়েত বন্ধ রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/R. Pinney
অস্ট্রিয়া
অস্ট্রিয়াও কিছুটা শিথিল৷ ৯০ লাখ মানুষের দেশটিতে গত ১৬ তারিখ থেকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে, যা বলবৎ থাকবে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত৷ মানুষ জরুরি কাজে কিংবা শরীরচর্চা করতে ঘরের বাইরে যেতে পারবেন৷ তবে পাঁচ জনের বেশি একসঙ্গে থাকতে পারবেন না৷ অন্য দেশগুলোর মতো তারাও সব রেস্টুরেন্ট, বার এসব বন্ধ রেখেছে৷ কেউ নিষেধাজ্ঞা না মানলে ৩৬০০ ইউরো পর্যন্ত জরিমানা দিতে হবে৷
ছবি: AFP/H. Neubauer
বেলজিয়াম
গত ১৮ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল অব্দি লকডাউন ঘোষণা করে বেলজিয়াম৷ তবে তা আট সপ্তাহ বা এর বেশিও হতে পারে৷ এক কোটি ১৪ লাখ মানুষের দেশটিও ডাক্তার দেখানো, জরুরি কাজ, কিংবা হালকা শরীরচর্চা ছাড়া জনগণকে ঘরেই থাকতে বলেছে৷ রাস্তায় পুলিশ টহল দিচ্ছে৷ তারা নিয়ম না মানলে যে কাউকে জরিমানা করতে পারে৷
ছবি: Reuters/Y. Herman
পর্তুগাল
১৯৭৬ সালে গণতন্ত্র ফেরত পাবার পর এই প্রথম জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে পর্তুগাল৷ ২ এপ্রিল পর্যন্ত থাকবে তা৷ জরুরি অবস্থার আওতায় সরকার সেনা মোতায়েনসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামসহ বেশিরভাগ বিষয়ই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে৷ লোকজনকে ঘরে থাকতে বলা হয়েছে৷ ব্যাংক, ফার্মেসি ও খাদ্যদ্রব্যের দোকান খোলা রয়েছে, তবে রেস্টুরেন্ট বন্ধ রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/R. Franca
8 ছবি1 | 8
করোনার মধ্যেও যেভাবে হবে ইস্টার
পরিবর্তিত পরিস্থতি যেমনই হোক না কেন, তা ইস্টারের আবহাওয়া নষ্ট করতে পারবেনা, এমনটাই মত বেডফোর্ড-স্ট্রোমের৷ তিনি বলেন, ‘‘টেলিভিশনে গির্জার প্রার্থনা সরাসরি সম্প্রচার করে হোক, বা ইন্টারনেটে এমনকি টেলিফোনের মাধ্যমেই হোক না কেন, ইস্টারের বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছাবেই৷''
মঙ্গলবার বার্লিনের প্রশাসনিক আদালতে এবিষয়ের একটি আর্জি খারিজ করা হয়৷ সেখানে একটি বিশেষ ক্যাথলিক গোষ্ঠী ৫০ জনের জমায়েতের অনুমতির জন্য আবেদন করেছিল৷ কিন্তু মঙ্গলবার তা নাকচ করে দেওয়া হয়৷ বিচারকেরা বলেন, বার্লিনে প্রযোজ্য করোনা-নীতি ধর্মীয় স্বাধীনতা ও ধর্মীয় চর্চার সাথে সাংঘর্ষিক নয়৷ এর আগে, জার্মানির হেসেন ও স্যাক্সনি অঞ্চলেও এমন আবেদন খারিজ হওয়ার উদাহরণ রয়েছে৷
নিষেধাজ্ঞা নিয়ে দ্বিধায় সংবাদমাধ্যম
ধর্মীয় জমায়েতের ওপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে জার্মান সংবাদমাধ্যম কিছুটা হলেও বিভক্ত৷ রাইনিশে পোস্ট সংবাদপত্রের সংবিধান-বিশেষজ্ঞ হোর্স্ট ড্রায়ার এই ধরনের নিষেধাজ্ঞাকে কিছুটা হলেও সমস্যাজনক বলে মনে করেন৷ তাঁর মতে, অনলাইনে প্রার্থনা গির্জায় গিয়ে প্রার্থনার বিকল্প নয়৷ পাশাপাশি, গির্জা অনেকের কাছে মানসিক শান্তির একটা জায়গা, যা হয়তো বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেকের প্রয়োজন হতে পারে৷
টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব পিটার হানের প্রশ্ন কিছুটা ভিন্ন৷ তিনি বলেন, ‘‘বিয়ার বা অন্যান্য পানীয়ের দোকান খোলা রয়েছে, কিন্তু গির্জা বন্ধ? এটা কীভাবে যৌক্তিক?'' একটি সংবাদপত্রকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হান এই নিষেধাজ্ঞার নিন্দা করেছেন ও একে খ্রিষ্টান আচারের মূলে আঘাত করার সাথে তুলনা করেছেন৷
পিটার হানের এই মন্তব্যকে ‘বেপরোয়া' আখ্যা দিয়েছেন হেসেন অঞ্চলের প্রোটেস্টান্ট ডায়োসিজের সভাপতি ফোলকার ইউং৷ রবার্ট কখ ইন্সটিটিউট, যারা এই মূহুর্তে জার্মানিতে করোনা সংক্রমণের সব খবরের মূল সূত্র, তারাও নিশ্চিত করেছেন যে গির্জায় প্রার্থনা বন্ধ রাখলেই সেখান থেকে সংক্রমণ ঠেকানো যেতে পারে৷
এসএস/কেএম (কেএনএ, ইপিডি)
লকডাউনে সুস্থ থাকার উপায়
দেশে দেশে চলছে লকডাউন৷ করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সবাইকে বলা হচ্ছে বাসায় থাকতে৷ কিন্তু এই অবস্থায় শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকার উপায় কী! দেখুন এই ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/PantherMedia/D. Cervo
দিনের নিয়ম ঠিক রাখুন
হোম অফিস করুন, বা ছুটিই কাটান, স্বাভাবিক নিয়ম থেকে বের হয়ে গেলে শরীর-মনে তার বাজে প্রভাব পড়তে পারে৷ ফলে শরীরের ঘড়ি ঠিক রাখার জন্য সঠিক সময়ে ঘুম থেকে ওঠা, স্নান করা, খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷
ছবি: picture-alliance/PantherMedia/D. Cervo
সুষম খাবার খান
এই সময়ে কেবল শারীরিক নয়, মানসিকভাবেও চাঙ্গা থাকা দরকার৷ তাই শুধু সুস্বাদু নয়, বরং শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সক্ষম, এমন খাবার বেশি করে খান৷
ছবি: Imago/Frank Sorge
ঘুমের ওপর গুরুত্ব দিন
বাসার বাইরে যেতে হচ্ছে না বলেই ইচ্ছেমতো রাত জাগা বা দেরি করে ওঠা আপনাকে বিধ্বস্ত করে দিতে পারে৷ ফলে ঠিক সময়ে ঘুমাতে যান, ঠিক সময়ে উঠুন৷ ঘুম যাতে পর্যাপ্ত হয়, সেদিকে বিশেষ নজর দিন৷
ছবি: Imago/Stylbruch/Y. Fischer
ব্যায়াম করুন
বাসার বাইরে বের না হওয়া মানে স্বাভাবিক হাঁটাচলাও বন্ধ হয়ে যাওয়া৷ ফলে বাসাতেই ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়াম করে নিন৷ প্রয়োজনে ইউটিউবের সাহায্য নিয়ে নতুন কিছু যোগাসনও শিখে নিতে পারেন৷ এতে শরীর থাকবে চাঙ্গা, মন থাকবে ফুরফুরে৷
ছবি: Reuters/R. Casilli
বিকল্প সামাজিক যোগাযোগ
বাইরে গিয়ে সশরীরে বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারলেও অনলাইনেই বন্ধুদের সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা দিন৷ তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে আমরা এমনিতেই অনেক বেশি পরস্পরের সঙ্গে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংযুক্ত৷ এর পুরো সুবিধা নেয়ার সময় এখনই৷
ছবি: picture-alliance/PhotoAlto/F. Cirou
শখের সময়
অনেকের অনেক ধরনের শখ থাকে৷ কেউ বাগান করতে পছন্দ করেন, কেউ গান গাইতে, কেউ ছবি আঁকতে৷ এ সময়ে নিজেকে আরো ঝালিয়ে নিন৷ লকডাউন শেষ হতে হতে হয়তো আপনি দক্ষ শিল্পী হয়ে উঠতে পারেন৷