ভারতের ‘ডিজিটাল কালচারের’ প্রতিনিধি ও প্রবক্তা নিশান্ত শাহ এসেছেন আই-টি তীর্থ ব্যাঙ্গালোর থেকে জার্মানির ল্যুনেবুর্গে, লয়ফানা ইউনিভার্সিটির অনলাইন পাঠক্রমে সাহায্য করতে৷ কেমন হবে ভবিষ্যতের ডিজিটাল শিক্ষাজগৎ?
বিজ্ঞাপন
বস্তুত এই প্রকল্পের মূলমন্ত্র হলো, ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা ছাত্র-ছাত্রীরা যেমন পরস্পরের সঙ্গে অনলাইন সহযোগিতা করবে, তেমনই আবার খোদ অধ্যাপকদের পরীক্ষা নেবে এবং নম্বর দেবে তারা!
‘ডিজিটাল কালচার'-এর বিশেষজ্ঞ প্রফেসর শাহ নতুন ধরনের পড়াশুনো ও পাঠক্রমের সন্ধান করছেন৷ যে কারণে উত্তর জার্মানির ল্যুনেবুর্গ শহরের লয়ফানা ইউনিভার্সিটিতে শাহের আগমন৷
অনলাইনে পড়ালেখার কিছু ওয়েবসাইট
ঘরে বসে অনলাইনে ভিডিওর মাধ্যমে পড়ালেখার জন্য বাংলাদেশে কয়েকটি ওয়েবসাইট চালু হয়েছে৷ সেখানে বিভিন্ন শ্রেণির পড়ালেখার পাশাপাশি রয়েছে প্রতিযোগিতামূলক বিভিন্ন পরীক্ষার টেস্ট৷
ছবি: Chamok Hasan
শিক্ষক ডটকম
২০১২ সালের আগস্ট মাসে যাত্রা শুরু করা শিক্ষক ডটকমে কম্পিউটার বিজ্ঞান থেকে শুরু করে পদার্থ, রসায়ন, প্রকৌশল, জ্যোতির্বিজ্ঞান সহ নানান বিষয়ে বাংলায় লেকচার পাওয়া যায়৷ তাদের কার্যক্রমের জন্য সাইটটি ইতিমধ্যে ডয়চে ভেলে, গুগল, ইন্টারনেট সোসাইটি ও আইএসআইএফ থেকে পুরস্কার পেয়েছে৷ বিস্তারিত: www.shikkhok.com ৷
খান অ্যাকাডেমি বাংলা
বিল গেটস তাঁর সন্তানদের পড়াশোনার জন্য খান অ্যাকাডেমির সহায়তা নিয়েছেন৷ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সালমান খানের তৈরি এই ওয়েবসাইটটির পরিচয় এমনই অসাধারণ৷ সেই প্রতিষ্ঠানের লেকচারগুলো বাংলায় পাওয়া যায় এই লিংকে http://khanacademybangla.com/৷
ছবি: http://khanacademybangla.com/
সৃজনশীল ডটকম
একজন শিক্ষার্থী যেন ঘরে বসেই তার সুবিধামত সময়ে স্কুলের সিলেবাস অনুযায়ী অধ্যায়ভিত্তিক ও টার্মভিত্তিক যত খুশি তত পরীক্ষা দিতে পারে সে লক্ষ্যে চালু হয়েছে এই ওয়েবসাইটটি৷ এর মাধ্যমে শিক্ষার্থী তার নিজের প্রস্তুতি কেমন হচ্ছে তা জানতে পারে৷ এছাড়া এই সাইটে (http://www.srijonshil.com/) পাঠ্যবইয়ের বিভিন্ন বিষয়ের উপর অডিও ভিজ্যুয়াল টিউটোরিয়ালও রয়েছে৷
ছবি: http://www.srijonshil.com/
চ্যাম্পসটোয়েন্টিওয়ান ডটকম
ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের উদ্যোগে চালু হওয়া এই ওয়েবসাইটে (http://www.champs21.com/) ইংরেজি ও বাংলা উভয় মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের জন্য গণিত, বিজ্ঞান ও ইংরেজির ওপর বিভিন্ন ধরণের টেস্ট রয়েছে৷ স্কুলের বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এ থেকে উপকৃত হতে পারেন৷
ছবি: http://www.champs21.com/
ইউটিউবে বাংলা শিক্ষা
বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশের নোয়াখালির মেয়ে সাওসান ইউটিউবে বাংলা শেখানোর চেষ্টা করছেন৷ ভিন্নভাষী যারা বাংলা শিখতে আগ্রহী কিংবা বিভিন্ন দেশে বেড়ে ওঠা বাঙালি প্রজন্ম, যাঁদের কাছ থেকে বাংলা ভাষা ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে, তাঁদের জন্য এই ভিডিও চ্যানেল (http://www.youtube.com/84Enchantress)৷ এই চ্যানেলটি ২০১২ সালে ডয়চে ভেলের সেরা ব্লগ অনুসন্ধান প্রতিযোগিতার ‘বেস্ট ভিডিও চ্যানেল’ ক্যাটেগরিতে মনোনীত হয়েছিল৷
ছবি: https://www.youtube.com/user/84Enchantress
চমক দেখিয়ে অঙ্ক শেখান চমক হাসান
গণিতের মতো জটিল বিষয়কে আনন্দের সঙ্গে শেখানোর চেষ্টা করছেন বুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থী ও বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে পিএইচডি গবেষণারত চমক হাসান৷ একসময় সামনাসামনি সেটা করলেও প্রবাসে থাকার কারণে এখন তাঁর মাধ্যম ইউটিউব চ্যানেল (http://www.youtube.com/ChamokHasan)৷ ছবিটিই বলে দিচ্ছে কেমন মজা করে অঙ্ক শেখান তিনি৷
ছবি: Chamok Hasan
6 ছবি1 | 6
ব্যাঙ্গালোরের সেন্টার ফর ইন্টারনেট অ্যান্ড সোসাইটি-তে ডিজিটাল কালচার-এর অধ্যাপক নিশান্ত শাহ জানালেন: ‘‘আমি বর্তমানে সেন্টার ফর ডিজিটাল কালচার্স-এর আন্তর্জাতিক ট্যান্ডেম সহযোগী৷ আমার মূল কাজ হলো হাইব্রিড পাবলিশিং ল্যাব নামধারী এই দক্ষতার ট্যান্ডেম-কে ডিজিটাল যুগে শিক্ষা প্রসারের নতুন পন্থা উদ্ভাবনে সাহায্য করা৷''
গত শতাব্দীর ৩০-এর দশকের সব আর্মি ব্যারাক৷ হালে এগুলোই হলো ল্যুনেবুর্গের লয়ফানা ইউনিভর্সিটি৷ তবে ভবিষ্যতের বড় পরিকল্পনা আছে৷ যেমন প্রখ্যাত স্থপতি ড্যানিয়েল লিবেসকিন্ড-এর নকশা অনুযায়ী একটি কেন্দ্রীয় ভবন তৈরি করা৷ লিবেসকিন্ড আবার লয়ফানা ইউনিভার্সিটিতে পড়ান এবং তিনি নিঃসন্দেহে নতুন অনলাইন পাঠক্রমগুলির ‘স্টার'৷ যেমন ধরা যাক নগর উন্নয়নের আন্তঃ-বিষয়ক প্রচেষ্টাটিতে৷ লিবেসকিন্ড-এর মতে: ‘‘ভবিষ্যতের শহরগুলিতে আবেগপূর্ণ গণতান্ত্রিক সংশ্লষের ব্যবস্থা রাখতে হবে, যা-তে এমন সব প্রকাশ্য স্থান ও বাসস্থান নির্মাণ করা সম্ভব হয়, যেখানে প্রতিটি মানুষ তার নিজের স্বপ্ন সার্থক করার প্রচেষ্টা করতে পারে৷''
‘থিংক-ট্যাংক সিটি' নামের এই পাইলট প্রোজেক্টে সারা বিশ্বের ছাত্ররা ভবিষ্যতের আদর্শ শহরটি কল্পনা করতে পারবে৷ তত্ত্বাবধায়কদের কাছে যেটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটি হলো: মুখ্য ধারণাগুলি বুনিয়াদ থেকে, অর্থাৎ শহুরে মানুষ ও নগরবাসীদের কাছ থেকে আসা চাই৷ ছাত্ররা ছোট ছোট আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী হিসেবে কাজ করে, কাজেই তাদের সাংস্কৃতিক পার্থক্য সহজেই দৃষ্টিগোচর হয়৷
রান্না শেখার কয়েকটি বাংলা ওয়েবসাইট
অনেকে আছেন যাঁরা মজার খাবার খেতে চান৷ কিন্তু সেটা কীভাবে তৈরি করতে হয় তা জানেন না৷ এই ছবিঘরটি তাদের জন্যই৷
ছবি: youtube.com
পত্রপত্রিকার রেসিপি
বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খাবারের রেসিপিগুলো একসঙ্গে পাওয়া যাবে এই ব্লগে (http://bengalirecipes4u.wordpress.com/)৷ সঙ্গে পাওয়া যাবে কিছু ভিডিও ক্লিপও৷
ছবি: bengali recipes 4U
দেশি-বিদেশি রেসিপির সমাহার
বাংলাদেশি খাবারের পাশাপাশি চাইনিজ, জাপানিজ, কোরিয়ান সহ অন্যান্য বিদেশি খাবারের রেসিপি পেতে যেতে পারেন এই ব্লগে (http://www.ebanglarecipe.com/)৷ রেসিপির পাশাপাশি পুষ্টি সংক্রান্ত তথ্য, খাদ্য সংরক্ষণের উপায় এবং রান্না বিষয়ক নানা পরামর্শ পাওয়া যাবে সেখানে৷
ছবি: ebanglarecipe.com
ফেসবুকে ‘রান্না-বান্না’
মজাদার সব খাবারের রেসিপি পেতে ফেসবুকে আপনি ‘রান্না-বান্না’ পেজটি লাইক করে রাখতে পারেন৷ লিংক: https://www.facebook.com/Rannabanna
ছবি: Facebook
একজন গৃহিনীর রান্নার ব্লগ
রুমানা আজাদ তাঁর রান্নার ব্লগে (http://rumana.net.bd) লিখেছেন, ‘‘আমি ভেবেছি এমন কিছু করার যেটা সাধারণ মানুষের কাজে লাগে৷ একজন আলুভর্তা করবে কিন্তু স্টেপগুলি সঠিকভাবে জানে না, আমি তাকে সেটা হাতে কলমে শেখাতে চাই৷ এমন হতে পারে একটা মেয়ে বা ছেলে নুডুলস রান্না করবে, কিন্তু সাহস করে করতে পারছে না, আমি তাদের সাধারণভাবে নুডুলস রান্না শেখাতে চাই৷’’
ছবি: rumana.net
ভূলু’স রেসিপি
নিজের ওয়েবসাইট (http://www.vulusrecipe.com/) সম্পর্কে ভূলু লিখেছেন, ‘‘আমার এই ব্লগের রেসিপিগুলোয় বাংলাদেশি রান্না আর স্বাদের আসল রূপ দেখতে পাবেন৷ সেই সাথে থাকবে আঞ্চলিক রান্নার রেসিপি – যেগুলো বাংলাদেশের রান্না-বান্নার অনন্য স্বাদে যোগ করে ভিন্ন মাত্রা৷’’
ছবি: .vulusrecipe.com
প্রবাসী রওনকের ব্লগ
অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী রওনক জাহান তাঁর ব্লগে (www.banglarecipes.com.au) বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় রান্নার রেসিপি দিয়েছেন৷ সাধারণ রান্নার পাশাপাশি ঈদ ও ইফতারের বিশেষ খাবার-দাবারের রেসিপি পাওয়া যাবে সেখানে৷
ছবি: banglarecipes.com.au
দিবা’স রেসিপি
চকলেট, রসমালাই থেকে শুরু করে ঘি, ভর্তা, বিরিয়ানি, রোস্ট – এমন সব মুখরোচক রান্নার উপায় জানতে যেতে পারেন ইউটিউবের এই চ্যানেলে৷ ঠিকানা: http://www.youtube.com/user/deebasrecipe
ছবি: youtube.com
7 ছবি1 | 7
লয়ফানা ডিজিটাল স্কুলের প্রোজেক্ট ম্যানেজার আন কাট্রিন ওয়াটোল্লা জানালেন: ‘‘প্রথম কাজটা ছিল, প্রকল্পে অংশগ্রহণকারীদের নিজের নিজের শহর দেখে তাৎপর্যপূর্ণ খুঁটিনাটির ছবি তোলা৷ স্বভাবতই ছবিগুলোর মধ্যে অনেক ফারাক থাকে৷ ইউরোপের মানুষদের কাছে তাদের শহরে যে বস্তুগুলি চোখে পড়ার মতো, এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া কিংবা ল্যাটিন অ্যামেরিকার মানুষদের কাছে তা হয়ত সম্পূর্ণ আলাদা৷''
প্রকল্পে অংশগ্রহণকারীরা যেমন বিভিন্ন দেশের – এমনকি মহাদেশের মানুষ, তেমনই তাদের শিক্ষার ধরন ও পরিমাণ আলাদা৷ নয়ত অনলাইন পাঠক্রমে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক মানুষদের সংখ্যা কম নয়৷ লয়ফানা ইউনিভার্সিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট হল্ম কেলার জানালেন: ‘‘আমরা এই পাঠক্রমে তিন হাজার অংশগ্রহণকারীকে নিয়েছি, অর্থাৎ তিন হাজার আবেদনের পর আমরা রেজিস্ট্রেশন বন্ধ করি৷ আমরা চাই কোয়ান্টিটির পরিবর্তে কোয়ালিটি, এবং আমাদের কোর্সগুলোর ছাত্রছাত্রীদের খুবই ভালো দেখাশোনা করে থাকি৷''
সাফল্যের চাবিকাঠি হল সুপারভিশন এবং টিমওয়ার্ক৷ ইরিনা মট রোমানিয়া থেকে অনলাইনে আলোচনায় যোগদান করে থাকেন৷ থিংক-ট্যাংক সিটি প্রকল্প সম্বন্ধে তাঁর অভিজ্ঞতা সাধরণ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্পূর্ণ আলাদা: ‘‘আমি যে পরিবেশ থেকে, যে শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে এসেছি, তার ভিত্তি হলো প্রতিযোগিতা৷ কিন্তু এই পাঠক্রমে অংশগ্রহণ করে আমরা আদানপ্রদানের, মতবিনিময়ের যে ম্যাজিক, তার স্বাদ পেয়েছি৷''
ল্যুনেবুর্গে শীঘ্রই পূর্ণাঙ্গ বি.এ. ডিগ্রী নেওয়ার আয়োজন থাকবে৷ হাজার বছরের পুরনো শহরটি অজান্তেই ডিজিটাল যুগে পৌঁছে গেছে৷