কেমন হবে সাকিব-লিটনের 'কলকাতা অভিযান'?
৬ জানুয়ারি ২০২৩সাকিবের জন্ম শহর মাগুরা থেকে ভারতীয় সীমান্ত মোটে ৮০ কিলোমিটার, আর লিটনের দিনাজপুরকে তো কেটে কয়েক টুকরোই করে দিয়েছেন র্যাডক্লিফ সাহেব। উত্তর দিনাজপুর আর দক্ষিণ দিনাজপুর ভারতের অংশ করে দিয়েছেন আর পূর্ব দিনাজপুর সেসময়কার পূর্ব পাকিস্তানের ভাগে দিয়েছেন, যা পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশের অংশ হয়েছে।
অবশ্য সাকিব ও লিটনের জন্ম মানচিত্র ভাগাভাগি এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের অনেক পরে, মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জন করা লাল-সবুজ পতাকার রঙ্গে রঙিন জার্সি গায়েই বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেন দুই ক্রিকেটার। সাকিব ব্যাটে বলে অনন্য, বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডারদের একজন, যার সুনাম দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে পৌঁছে গেছে বিদেশেও। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোতে সাকিব বেশ চাহিদাসম্পন্ন ক্রিকেটার, সেই সঙ্গে গত বছর খানেক ধরে ব্যাট হাতে দারুণ করা লিটন দাসও নজর কেড়েছেন বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে ভালো করে।
আইপিএলের ২০২৩ সালের আসরের জন্য খেলোয়াড় নিলাম হয় গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর, ভারতের সৈকত শহর কোচিতে। সেখানে ৬ ঘণ্টায় ১৭৫ কোটি রুপি খরচ করে ১০টি আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজি নিশ্চিত করে ৮০ জন ক্রিকেটারকে, যারা মাঠ মাতাবেন ১ এপ্রিল থেকে শুরু হতে যাওয়া আসরে। এই ৮০ জনের ভেতর বাংলাদেশের দুজন, সাকিব ও লিটন। প্রথম দফা নিলামে অবিক্রিত থেকে যাবার পর নিলামের শেষ দিকে প্রথমে লিটন দাসকে কিনে নেয় কলকাতা নাইট রাইডার্স, নিলামে অন্য কোনো দল লিটনকে না চাওয়াতে ভিত্তিমূল্য ৫০ লাখ রূপিতেই বাংলাদেশের উইকেট-রক্ষক ব্যাটসম্যানকে দলে পেয়ে যায় কেকেআর। এরপর নিলামের একদম শেষ পর্যায়ে, সাকিব আল হাসানকেও তার ভিত্তিমূল্য ১.৫ কোটি রূপিতে কিনে নেয় কলকাতা। এবারই প্রথমবারের মতো কোনো আইপিএল দলে একসঙ্গে বাংলাদেশের দুই ক্রিকেটারকে দেখা যাবে। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, নিলামের শেষ ভাগে এসে দল পাওয়া সাকিব ও লিটনকে কি আদৌ কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে খেলতে দেখা যাবে, নাকি স্রেফ বাংলাদেশের দর্শক টানতেই কেকেআর কর্তৃপক্ষের এই ‘চাল'?
কলকাতা নাইট রাইডার্সের 'হোম ভেন্যু' ইডেন গার্ডেনস হলেও শেকড় মুম্বাইতে। শাহরুখ খান, জুহি চাওলা,জয় মেহতাদের 'রেড চিলিস এন্টারটেইনমেন্ট'-এর কাছে কলকাতা নাইট রাইডার্সের মালিকানা, তাদের হাতে আছে ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (সিপিএল)-এর দল ত্রিনবাগো নাইট রাইডার্স এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের 'ইন্টারন্যাশনাল লিগ টি-২০'-এর মালিকানাও। সবগুলো দলের পরিচালনা দেখভাল করেন সংস্থার প্রধান নির্বাহি ভেঙ্কি মাইসোর। বিশ্বজুড়ে বিমা কোম্পানির শীর্ষ পর্যায়ে দুই দশকের বেশি সময় ধরে কাজ করা ভেঙ্কি মাইসোর যে স্রেফ বাংলাদেশের বাজার ধরতে দুই কোটি রূপি খরচ করে দুজন বিদেশি ক্রিকেটার দলে নেবেন না, সেটা সংশ্লিষ্ট সবাই ভালো করেই জানেন। তাহলে নিলামের শেষ বেলায় কেন দুই বাংলাদেশিকে তুলে নেয়া? এই প্রসঙ্গে ইএসপিএন ক্রিকইনফোর ডেপুটি এডিটর সাম্য দাসগুপ্ত বলেন, ‘‘ প্রথম দুজন বাংলাদেশের ক্রিকেটার আইপিএলের একই দলে খেলছেন। এর আগে সাকিব আল হাসান ও মাশরাফি বিন মর্তুজা কলকাতায় খেলেছেন, তবে একসঙ্গে খেলেননি। মুস্তাফিজুর রহমান নিয়মিত খেলছে, সাকিব গতবার সুযোগ পাননি, তবে এবার দেখলাম সাকিবকে আবারও দলে নিয়েছে কলকাতা। ব্যপারটার মধ্যে বেশ একটা ভাবনার খোরাক আছে যে, শেষ মুহুর্তে কেন নিলো লিটন আর সাকিবকে, এটা কি কলকাতা আর বাংলাদেশের মধ্যে একটা সম্পর্ক আছে বলেই নিয়েছে, নাকি দুই বাংলার একটা আত্মিক টান বা ওরকম কিছু? আমার তা একদমই মনে হয় না। এককালে সেটা হয়ত ছিল, কারণ, আইপিএলের শুরুর দিকে কলকাতা নাইট রাইডার্সের যে ক্যাচম্যান্ট এরিয়া (অববাহিকা), ঠিক এই শব্দটাই ব্যবহার করা হয়েছিল, বলা হয়েছিল বাংলাদেশের খেলোয়াড়দেরও সুযোগ দেয়া হবে। তবে এসব কথার কথা, কারণ, এরকম কিছুর বাস্তবায়ন আমরা দেখিনি। আবার হতে পারে বাংলাদেশ থেকে খুব বেশি উঁচু মানের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটার উঠে আসেনি'। তাই কলকাতা নাইট রাইডার্সে সাকিব এবং লিটনের অন্তর্ভুক্তি তাদের ক্রিকেটীয় সামর্থ্যের কারণেই, এর পেছনে কোনো ইতিহাস বা ভূগোল নেই, বরং খানিকটা অর্থনীতির যোগ আছে। সেই সঙ্গে খানিকটা অংকের হিসেবেরও কারণ এবারের নিলামে যে কলকাতা নাইট রাইডার্সকে কম টাকায় বেশি খেলোয়াড় কিনে দলের ফাঁকা জায়গাগুলো পূরণ করতে হয়েছে! অর্থাৎ, সীমিত সম্পদে সর্বোচ্চ উপযোগ তৈরির চেষ্টা।''
কলকাতা নাইট রাইডার্স আগের বারের নিলামে মোটা টাকা খরচ করে প্যাট কামিন্স, অ্যালেক্স হেলস ও স্যাম বিলিংসকে নিলেও এবার তাদের পাবে না। কামিন্সকে ছেড়ে দিয়েছে কেকেআর, আর ইংল্যান্ডের দুই ক্রিকেটার হেলস ও বিলিংস সরে দাঁড়িয়েছেন। কলকাতা নিলামের আগে ধরে রাখে আগের মৌসুমের মাত্র ১৪ জন ক্রিকেটারকে,তাদের হাতে ছিল মাত্র ৭.০৫ কোটি আর নিতে হয়েছে ১১ জন ক্রিকেটার, যার ভেতর ৩ জন হতে হবে বিদেশি। নতুন কোচ চন্দ্রকান্ত পন্ডিত এবং দল পরিচালনায় অন্য যারা আছে, তারা মিলেই কম তেলে মচমচে ভাজার কৌশলে দল গড়েছেন এবার- এমনটাই মনে করেন সাম্য দাশগুপ্ত, ‘‘এই নিলামে কলকাতা নাইট রাইডার্সের কাছে টাকা খুব কম ছিল। সেটা তাদের ভুল ক্যালকুলেশনেই হোক বা কম টাকায় দল বানানোর পরিকল্পনাই হোক। মাত্র ১৪ জন খেলোয়াড়কে তারা ধরে রাখে আগের মৌসুম থেকে আর তাদের হাতে টাকাও খুব কম ছিল, নিলামে কলকাতা কোনো বড় বা নামী দামী খেলোয়াড়ের প্রতি খুব একটা আগ্রহ দেখায়নি বা তারা আসলে দর হাঁকাতেই পারেনি, কারণ, টাকা যেহেতু কম। ফলে পরের দিকে, অর্থাৎ যেসব দলের হাতে টাকা বেশি ছিল, সেইসব দল তাদের পছন্দের ক্রিকেটারদের নিয়ে নেয়ার পর যারা বাকি ছিলেন, তাদের ভেতর থেকেই ক্রিকেটার বাছাই করেছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। শেষের দিকে ভিত্তিমূল্যে বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারকে তুলে নেয় কলকাতা, যাতে তাদের দল গড়তে সুবিধা হয়।''
নানান সমীকরণে দল তো পেয়ে গেলেন সাকিব আর লিটন। খেলতে পারবেন কয়টা ম্যাচ? সাকিব পুরানো খেলোয়াড়৷ পরীক্ষিত। অলরাউন্ডার হিসেবে দলে একভাবে না একভাবে অবদান রাখতেই পারবেন। লিটন উইকেট-রক্ষক ও উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান। তার জন্য জায়গা পাওয়াটা কঠিন, কলকাতা নাইট রাইডার্স সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই মনে হয়েছে সাম্য দাস গুপ্তের, '‘‘হ্যাঁ তাদের ভিত্তিমূল্যেই নেয়া হয়েছে এবং শেষে নেয়া হয়েছে, এমনটা মনে হতেই পারে অন্য কোনো দল তাদের চায়নি, ফলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের জন্য সহজ হয়ে গিয়েছিল তাদের দলে নেয়া। তবে এই দুইজন দারুণ ক্রিকেটার। বিশেষ করে উপমহাদেশের উইকেটে, ইডেন গার্ডেনসে, যেখানে কলকাতা তাদের অর্ধেক ম্যাচ খেলবে, সেখানে সাকিব এবং লিটন দুজনেই অসাধারণ খেলোয়াড় হতে পারেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের জন্য। আর একবার যখন কেউ দলে এসে পড়ে, তখন তাকে কম দামে, না বেশি দামে নেয়া হয়েছে সেসব নিয়ে আলোচনার আর অবকাশ থাকে না। আন্তর্জাতিক স্তরে অভিজ্ঞ দুজন ক্রিকেটার, দুজনেই দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সাকিব তিন ফর্ম্যাটেই বিভিন্ন সময়ে শীর্ষ অলরাউন্ডার হয়েছেন, লিটন বেশ প্রতিশ্রুতিশীল ব্যাটসম্যান এবং সম্প্রতি তার সময়টাও ভালো যাচ্ছে। তাই তাদের কত টাকা দিয়ে নেয়া হয়েছে সেটা বড় কথা নয়, বড় কথা হচ্ছে তারা দলে আছে।''
কলকাতা নাইট রাইডার্সের তাঁবুতে ২২ জনের ২ জন হয়ে গেছেন সাকিব আর লিটন। মাঠের খেলায় ১১ জনের ভেতর বিদেশি সর্বোচ্চ ৪ জন, দলে বিদেশি আছেন ৮ জন। সাকিব আর লিটনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা আসলে এখানেই। সাম্য যতটা বুঝতে পেরেছেন, তা হচ্ছে, বাংলাদেশের দুজন কলকাতা নাইট রাইডার্সের মূল একাদশের পরিকল্পনার বাইরে, তাদের মূলত নেয়া হয়েছে ব্যাক আপ খেলোয়াড় হিসেবে, ‘‘দলে ৮ জন বিদেশি ক্রিকেটার থাকেন। সাধারণত যেভাবে দলগুলো পরিকল্পনা করে, প্রথম একাদশ বাছাই করার পর প্রতিটা পজিশনের জন্য একটা করে ব্যাকআপ খেলোয়াড় রাখা। স্বাভাবিকভাবেই কন্ডিশনটা অন্যরকম হলে প্রথম একাদশটাও পালটায় প্রতিটা দলেরই প্রথম পছন্দের একাদশ বেছে নেয়ার সময় তাতে চারজন বিদেশি খেলোয়াড় থাকে। চোট, অফ ফর্ম কিংবা কন্ডিশনের কারণে সেই চারজনে অদলবদল হতে পারে, তবে প্রথম একাদশ আর ব্যাকআপ সবাই মোটামুটি ঠিক করে রাখে। কলকাতা নাইট রাইডার্সের ক্ষেত্রে চার বিদেশি বাছাই'র বেলায় সবার আগে আসবে আন্দ্রে রাসেল ও সুনীল নারিনের নাম। তারা অনেকদিন ধরে কলকাতা নাইট রাইডার্সে খেলছেন, অনেকটা আত্মার সম্পর্ক বলতে পারেন। কলকাতা নাইট রাইডার্স কর্তৃপক্ষও তাদের ব্যপারে খুবই উদার, তাদের ফর্মের অনেক ওপর-নীচ হয়েছে, তবুও কলকাতা তাদের ছাড়েনি। বয়স হলেও দুজনেই প্রথম একাদশে নিশ্চিতভাবেই থাকবেন। নাইটদের দলের একজনের সঙ্গে কথা বলে যা বুঝতে পারলাম, আফগানিস্থানের উইকেট-রক্ষক ব্যাটসম্যান রহমানউল্লাহ গুরবাজ, যাকে খেলোয়াড় অদল-বদল করে আনা হয়েছে আরেকটি আইপিএল দল গুজরাট টাইটানস থেকে সেই হচ্ছে কলকাতা নাইট রাইডার্সের এই মুহূর্তে উইকেট-রক্ষক ও উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেব প্রথম পছন্দ। এবং লিটন দাস তার ব্যাকআপ, আমি কথা বলে এটাই বুঝেছি। অর্থাৎ গুরবাজের যদি ফর্ম খারাপ হয় বা তিন--চার ম্যাচ পর টিম ম্যানেজমেন্ট যদি মনে করে যে লিটনকেও একটা সুযোগ দিয়ে দেখি, এরকম হতে পারে'' জানিয়েছেন ইএসপিএন ক্রিকিনফোর ডেপুটি এডিটর।
সাকিব কলকাতা নাইট রাইডার্সের বলা যায় ঘরের ছেলে। এক মৌসুম সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে খেলা বাদ দিলে আইপিএলে সবসময় কলকাতার হয়েই খেলেছেন সাকিব। জিতেছেন শিরোপাও। তবে গত মৌসুমে আইপিএলে সাকিব কোনো দলেই জায়গা পাননি, তার আগের বার খেলেছেন মাত্র ৮ ম্যাচে এবং পাম্ন্সও পারফর্ম্যান্সও খুব আশাব্যঞ্জক নয়। তাই সাম্য মনে করছেন সাকিব কলকাতা নাইট রাইডার্সে 'অটোম্যাটিক চয়েস' নন, ‘‘ সাকিব যে কোনো দলের দলের জন্যই অপরিহার্য এবং অসাধারণ পারফর্মার হতে পারে। তবুও চার বিদেশির বাধ্যবাধকতায় অন্য যারা আছে, তাদের সমন্বয় করতে গিয়েই সাকিবকে জায়গা হারাতে হচ্ছে। সাকিব মূলত সুনীল নারিনের ব্যাকআপ। টিম সাউদি এবং লকি ফার্গুসন এই দুজনের ভেতর লকি ফার্গুসন প্রথম পছন্দ আর সাউদি হচ্ছেন ব্যাকআপ। আন্দ্রে রাসেলের ব্যাকআপ হচ্ছেন ডেভিড উইজা, রেহমানউল্লাহ গুরবাজের ব্যাকআপ হচ্ছেন লিটন দাস। এইবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে দলের সমন্বয়টা এমন হতে পারে যে একজন প্রেসার কমিয়ে একজন স্পিনার বাড়ানো, তখন লকি ফার্গুসনের জায়গায় সাকিব দলে আসতে পারে। আমি লোকেদের সঙ্গে কথা বলে যেটা বুঝেছি সাকিব ও লিটন মূলত ব্যাক আপ খেলোয়াড়। তার মানে এই নয় যে তারা সুযোগ পাবে না, তবে প্রথম তিন-চারটে ম্যাচে তারা সুযোগ না-ও পেতে পারে।''
বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল এক মৌসুম খেলেছিলেন আইপিএলে, মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের হয়ে। ক্রিকেট বিশ্লেষক হিসেবে টিভি চ্যানেলগুলোতে আশরাফুল সূচারুভাবেই কাটাছেঁড়া করছেন, ডয়েচে ভেলেকে তিনিও বললেন যে, শুরুতে একাদশে জায়গা পেতে কষ্টই হবে সাকিব ও লিটনের, ‘‘প্রথমত যদি সুযোগ পায় শুরু থেকে, তাহলে ভালো করবে তবে সুযোগ পাওয়াটা মুশকিল। ওদেরকে তো ভিত্তিমূল্যে নিয়েছে, ওদের চেয়ে বেশি টাকা দিয়ে যাদের নিয়েছে. তাদেরকেই আগে সুযোগ দেবে। ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট এরকমই। যখনই সুযোগ পায় আশা করবো যেন ভালো করে, তাহলে পরের মৌসুমে আইপিএলে সুযোগ পাওয়াটা সহজ হবে।''
আশরাফুল মনে করেন সাকিব আসলে কলকাতার 'প্ল্যান বি', ‘‘আগের বছর কিন্তু সাকিব দল পায় নাই, তার আগের বছর খেলেছে মাত্র ৮ ম্যাচ। বাংলাদেশের হয়ে সাকিব যতটা সফল, আইপিএলে অতটা নয়। আইপিএলে তো সাকিবের ব্যাটিং থেকে দল খুব একটা কিছু পায় না, ব্যাট করার সুযোগ পায় শেষের দিকে। বাংলাদেশে খেলে টপ অর্ডারে, এখানে তো পারফর্ম করার সুযোগ থাকে। আইপিএলে ওকে যেখানে ব্যাটিংয়ে নামায়, ও আসলে ওই সময়ে ব্যাট করার ক্রিকেটার না। তারপরও ওকে নিল কারণ বাংলাদেশে বেশ ভাল একটা বাজার আছে আইপিএলের, এসব চিন্তা করেই হয়তো নিয়েছে', এমনটাই জানালেন সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান। অন্যদিকে লিটনের দল পাওয়ার পেছনে কাজ করেছে ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তার ২১ বলে হাফসেঞ্চুরির ইনিংসটাই, মনে করেন আশরাফুল,‘‘ ' লিটনের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ওই পারফরম্যান্সটা নিঃসন্দেহে অনেক কাজে দিয়েছে। ও ২১ বলে যে হাফসেঞ্চুরিটা করেছে সেটা নিঃসন্দেহে প্লাস পয়েন্ট ওর জন্য। এছাড়াও নিয়ে রেখেছে, কারণ, ও সব ফর্ম্যাটেই ভালো ক্রিকেট খেলছে, তবে মনে হয় না প্রথমেই একাদশে জায়গা পাবে।'' দুজনকেই যেহেতু ভিত্তিমূল্যে পাওয়া যাচ্ছে, বাংলাদেশ এবং কলকাতার সম্পর্ক ও বাজার সব মিলিয়েই সাকিব ও লিটনকে দলে নিয়েছে নাইট রাইডার্স, তাদের কেউই দলটির প্রথম পছন্দের খেলোয়াড় নয়, কারণ, তাহলে আগেই নিলামে তাদের জন্য হাত তুলতো কলকাতা, এমনটাই মনে করেন আশরাফুল।
২০২৩ সালে ভারতের মাটিতে বিশ্বকাপ, তার আগে ভারতে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে সাকিব, লিটন ও মুস্তাফিজদের খেলাটা বাংলাদেশের বিশ্বকাপ প্রস্তুতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলেই মনে করেন আশরাফুল, ‘‘আসলে তিনজনই অনেক অভিজ্ঞ। সাকিবের তো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৬-১৭ বছর হয়ে যাচ্ছে, লিটনের প্রায় ৭-৮ হয়ে যাচ্ছে, আর মুস্তাফিজেরও ৫-৬ বছর হয়ে যাচ্ছে। আর মুস্তাফিজ তো আইপিএলে পারফর্মারই,তাদের খেলাটা তো আমাদের জন্য ২০২৩ বিশ্বকাপের প্রস্তুতিতে অবশ্যই অনেক সাহাযো করবে।''
সাকিব অনেকটাই ভাবলেশহীন ছিলেন, যখন তার কাছে আইপিএল এ দল পাওয়ার অনুভূতিটা জানতে চাওয়া হয়। যদিও আগের আসরে দল পাননি তবে আইপিএলে সাকিবই সবচেয়ে নিয়মিত মুখ তাই কলকাতা নাইট রাইডার্সের ডাকে অবাক হননি এই অলরাউন্ডার। লিটন প্রথমবারের মত খেলতে যাবেন আইপিএলে, দল পাবার পর ভারতের বিপক্ষে টেস্টে ৭৩ রানের ইনিংস খেলেছেন টেস্টে যার সাক্ষী কলকাতা নাইট রাইডার্স অধিনায়ক শ্রেয়াস আইয়ার। কেকেআরকে দেয়া ভিডিওবার্তায় অবশ্য নিজের উচ্ছাস প্রকাশ করেছেন লিটন। বিকেএসপির সাবেক দুই ছাত্র এক সঙ্গেই যোগ দেবেন নাইটদের তাঁবুতে, তবে এক যাত্রায় বোধহয় পৃথক ফলই হবে। ৩৬ বছর বয়সী সাকিবের জন্য আইপিএলের দরজাটা আস্তে আস্তে বন্ধই হতে থাকবে, কারণ অলরাউন্ডার হলেও সাকিবের ব্যাটে মরচে ধরছে। অন্যদিকে লিটনের ব্যাটের ধার ক্রমশ ঝকঝকে হয়ে উঠছে। এই আইপিএলে অতিথি চরিত্র পেলেও আগামীতে পেয়ে যেতে পারেন প্রধান চরিত্র। বাংলাদেশের দুজন ক্রিকেটারের কলকাতা অভিযান কতটা সফল হবে তা এই মুহূর্তে বলা মুশকিল তবে সাহস করে এইটুকু বলে ফেলা যায়,বিদেশী হলেও ইডেন গার্ডেনে সোনালি আর বেগুনি জার্সিতে বাংলায় কথা বলার লোক মাত্র এই দুজনই। কারণ দেশীরা তো হরিয়ানা, তামিলনাড়ু, ঝাড়খন্ড না হয় উত্তর প্রদেশের!