রাশিয়ার দাবি প্রচুর মানুষ ভোট দিয়েছেন। স্থানীয় মানুষের দাবি, বন্দুকের নলের সামনে ভোট হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
রাশিয়া জানিয়েছে, চারদিনের গণভোট শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। বিপুল পরিমাণ মানুষ ভোটে অংশ নিয়েছেন। কিন্তু ইউক্রেনের প্রশাসনের দাবি, যত মানুষ ভোট দিয়েছে বলে রাশিয়া দাবি করছে, তত মানুষ ওই সমস্ত এলাকাতেই নেই। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর লাখ লাখ মানুষ সেখান থেকে পালিয়ে এসেছে।
যুদ্ধের আতঙ্ক নিয়ে ইউক্রেনে স্কুলে ফিরছে শিশুরা
02:15
প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গেও কথা বলেছে ডিডাব্লিউ। এক নারী জানিয়েছেন, তিনি মাঠে কাজ করছিলেন। এমন সময় দুই নারী এবং তাদের সঙ্গে তিনজন রাইফেল হাতে সেনা জওয়ান এসে তাকে ভোট দিতে যেতে বলে। ইচ্ছা না থাকলেও তিনি ভোট দিতে যেতে বাধ্য হন। বুথে ঢুকে তাকে বন্দুকের নল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া হয় কোথায় ছাপ দিতে হবে।
ওই নারী ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ''আমার ছেলের বয়স ৩৫। ভয় ছিল, আমি ভোট দিতে না গেলে ওরা ছেলেকে সেনাবাহিনীতে নিয়ে যেত। সে কারণেই ওদের সঙ্গে ভোট দিতে চলে যাই।'' ওই নারীর দাবি, তিনি চলে যাওয়ায় তার স্বামী এবং ছেলের দিকে সেনা জওয়ানদের নজর পড়েনি। তারা মাঠেই কাজ করছিল।
এমন অভিজ্ঞতা অনেকেরই। ডিডাব্লিউকে অনেকেই জানিয়েছেন যে, রাইফলের নলের সামনে তারা ভোট দিতে বাধ্য হয়েছেন।
ইউক্রেনে আরো তীব্র আক্রমণের ইঙ্গিত
আগামী কিছুদিনের মধ্যে নতুন আক্রমণের পথে যেতে পারে রাশিয়া। সতর্কবার্তা অ্যামেরিকার। গাড়িবোমা বিস্ফোরণের জন্য ইউক্রেনকে দায়ী করল ক্রেমলিন।
ছবি: Andrii Marienko/AP/dpa/picture alliance
অ্যামেরিকার বার্তা
আগামী ২৪ অগাস্ট ইউক্রেনের স্বাধীনতা দিবস। সেই উপলক্ষে কিয়েভ-সহ ইউক্রেনের একাধিক জায়গায় বেসামরিক ভবন এবং বেসামরিক কাঠামোয় রাশিয়া আঘাত হানতে পারে বলে সতর্ক করেছে অ্যামেরিকা। তাদের গোয়েন্দা রিপোর্টে এই তথ্য উঠে এসেছে।
ছবি: Evgeniy Maloletka/AP/picture alliance
মার্কিনদের প্রতি
কিয়েভে অ্যামেরিকার দূতাবাস ইউক্রেনে বসবাসকারী মার্কিনদের নির্দেশ দিয়েছে, সাইরেন বাজলেই বাড়ির নীচে চলে যেতে হবে। বাড়ির বাইরের দেওয়াল থেকে ভিতরের দেওয়ালের দিকে থাকাই বাঞ্ছনীয়। বিপদের সংকেত পেলেই মার্কিন নাগরিকদের পালানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির প্রশাসন জানিয়েছে, আক্রমণের আশঙ্কা আছে, তাই এবছর স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান উদযাপিত হবে না। বড় জমায়েত করতে নিষেধ করা হয়েছে।
ছবি: Gleb Garanich/REUTERS
রাশিয়ার পাল্টা
মার্কিন গোয়েন্দা রিপোর্ট নিয়ে রাশিয়া কোনো মন্তব্য করেনি। তবে মস্কোর অদূরে গাড়িবোমা বিস্ফোরণের জন্য কিয়েভকে দায়ী করেছে ক্রেমলিন।
ছবি: Investigative Committee of Russia via REUTERS
শহিদের মর্যাদা
গাড়িবোমা বিস্ফোরণে নিহত হয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের ঘনিষ্ঠ অতিজাতীয়তাবাদী চিন্তাবিদ আলেকজান্ডার দুগিনের মেয়ে দারিয়া দুগিনা। মস্কো থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে তার গাড়িতে বিস্ফোরণ হয়। সোমবার পুটিন তাকে বিশেষ বীরের মরনোত্তর সম্মান দিয়েছেন।
ছবি: TSARGRAD.TV via REUTERS
রাশিয়ার গোয়েন্দাদের দাবি
রাশিয়ার গোয়েন্দাদের দাবি এক ইউক্রেনের নারী একাজ করেছেন। মেয়েকে নিয়ে মাসখানেক আগে তিনি রাশিয়া গেছিলেন। দুগিনার কমপ্লেক্সেই বাড়ি ভাড়া নেন। শনিবার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তিনি এস্তোনিয়ায় পালিয়ে গেছেন বলে তাদের দাবি। ইউক্রেন এবিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
ছবি: Investigative Committee of Russia via REUTERS
ইউক্রেনের দাবি খারিজ
পশ্চিমা বিশ্বের কাছে বিশেষ দাবি জানিয়েছিল ইউক্রেন। বলা হয়েছিল, রাশিয়ার সব নাগরিকের ভিসা নিষিদ্ধ করা হোক। কিন্তু অ্যামেরিকা জানিয়েছে, তা করা সম্ভব নয়। নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেই কেবল একাজ করা সম্ভব।
ছবি: privat
7 ছবি1 | 7
ভোট হয়েছে মূলত লুহানস্ক, দনেৎস্ক, ঝাপোরিজ্ঝিয়া এবং খেরসনে। দনেৎস্ক এবং লুহানস্কে রাশিয়ার মদতপুষ্ট বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীরা জানিয়েছে, ৮৭ শতাংশ ভোট হয়েছে। কিন্তু স্থানীয় ইউক্রেন প্রশাসনের বক্তব্য, ওই পরিমাণ মানুষই নেই সেখানে। সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাওয়া অঞ্চলেও ৫০ শতাংশের উপর ভোট পড়েছে বলে রাশিয়া দাবি করেছে। কিন্তু বাস্তবে সেখানে ১০ শতাংশ মানুষও নেই। সকলেই পালিয়ে গেছেন। বিভিন্ন শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন।
রাশিয়া অবশ্য জানিয়েছে, ভোট শান্তিপূর্ণভাবেই হয়েছে। দ্রুত ফলাফল ঘোষণা করা হবে। ইউক্রেনপন্থিদের বক্তব্য, এই ভোটের মাধ্যমে রাশিয়া ওই অঞ্চলের একটি ডেটাবেস তৈরি করার চেষ্টা করেছে। স্থানীয় মানুষের বয়স, ভাষা এই সবকিছুই জানার চেষ্টা করেছে তারা।
ইউক্রেনপন্থিদের বক্তব্য, শেষপর্যন্ত রাশিয়ার গণভোট সফল হবে না। কারণ, এর আগে ওই অঞ্চলে রাশিয়া রুবল, রাশিয়ার পাসপোর্ট চালু করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তা সফল হয়নি। গণভোট নিয়েও রাশিয়া যা ভাবছে, তা সাফল্য পাবে না।