স্কুল খুলতেই বিপত্তি। কেরালায় পাশাপাশি দুইটি স্কুলে একসঙ্গে ১৯২ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
করোনাকালে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল ভারতের অধিকাংশ স্কুল-কলেজ। করোনার প্রকোপ সামান্য কমতে, ধীরে ধীরে বিভিন্ন রাজ্যে স্কুল খুলতে শুরু করেছে। আর তারপরেই ঘটল বিপত্তি। কেরালায় পাশাপাশি দুইটি স্কুলে ১৯২ জন ছাত্র এবং শিক্ষকের কোভিড ধরা পড়েছে। আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এর মধ্যে ৯১ জন ছাত্র একটি কোচিংয়ে পড়তে যেত। ফলে তাদের মাধ্যমে ওই কোচিংয়ে আরো ছাত্রের মধ্যে কোভিড ছড়িয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সাময়িক ভাবে ওই স্কুল দুইটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেই স্কুল খুলেছে। কেরালার মালাপ্পুরাম জেলার পাশাপাশি দুইটি স্কুলে ছাত্রছাত্রীরা যেতে শুরু করেছিল। সামাজিক দূরত্বের নিয়ম মেনেই সেখানে ক্লাস শুরু হয়েছিল। চলতি সপ্তাহে প্রথমে একটি স্কুলে দশম শ্রেণির এক ছাত্র এবং অন্য স্কুলে এক শিক্ষকের কোভিড ধরা পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসন দুইটি স্কুলের প্রায় সমস্ত ছাত্র এবং শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের করোনা টেস্টের ব্যবস্থা করে। দেখা যায়, ১৯২ জনের শরীরে করোনার ভাইরাস আছে। তবে তারা সকলেই অ্যাসিম্পটোম্যাটিক।
করোনার টিকা কার্যক্রম শুরু
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে টিকা প্রদান কার্যক্রম উদ্বোধন করেছেন৷ কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে প্রথমদিন মোট ২৭ জনকে টিকা দেয়া হয়েছে৷
ছবি: facebook.com/ATNNews
প্রথম টিকা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে টিকা প্রদান কার্যক্রম উদ্বোধন করেন৷ তার উপস্থিতিতে পাঁচজনকে টিকা দেয়া হয়৷ প্রথম টিকা নেন কুর্মিটোলা হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু বেরোনিকা কস্তা৷ এরপর টিকা নেন মেডিসিন কনসালটেন্ট ডা. আহমেদ লুৎফর মবিন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপিকা নাসিমা সুলতানা, ট্রাফিক পুলিশ মো: দিদারুল ইসলাম ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম ইমরান হামিদ৷
ছবি: facebook.com/ATNNews
সাহস দেন প্রধানমন্ত্রী
প্রথম টিকা নেয়া রুনুকে প্রধানমন্ত্রী জিজ্ঞেস করেন, ‘তুমি ভয় পাচ্ছো না তো?’ তখন রুন মাথা নেড়ে জানিয়ে দেন, তিনি ভয় পাচ্ছেননা৷ এরপর প্রধানমন্ত্রী তাকে বলেন, ‘তুমি সাহসি মেয়ে’৷ টিকা দেয়া শেষে প্রধানমন্ত্রী হাততালি দিয়ে তার সুস্থতা কামনা করেন৷ এভাবে বাকি চারজনের সঙ্গে কথা বলে তাদের ‘রিলাক্স’ করার চেষ্টা করেন প্রধানমন্ত্রী৷ এছাড়া যারা টিকা প্রয়োগের কাজে ছিলেন তাদেরকে তিনি ‘মাসল লুজ’ করারও পরামর্শ দেন৷
ছবি: facebook.com/ATNNews
‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’
টিকা নেয়া শেষে কেউ হাত তুলে, কেউ সালাম দিয়ে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ ও ‘জয় বাংলা’ বলেন৷
ছবি: facebook.com/ATNNews
মোট ২৭ জন
প্রথমদিন মোট ২৭ জনকে টিকা দেয়া হয়৷ আগামীকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার পাঁচ হাসপাতালের ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে টিকা দেওয়া হবে৷ ছবিতে তেজগাঁও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অধীনে সাব-সেন্টারে কাজ করা ডাঃ দেওয়ান মোঃ হেমায়েত হোসেইনকে টিকা নিতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
সারা দেশে শুরু ৭ ফেব্রুয়ারি
বাংলাদেশে যেহেতু করোনা টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয়নি তাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল অনুযায়ী প্রথমে টিকা পাওয়া ব্যক্তিদের পর্যবেক্ষণ করা হবে৷ সব ঠিক থাকলে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হবে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
অবজারভেশন রুম
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে টিকা নেয়া ব্যক্তিদের পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য একটি আলাদা কক্ষ ঠিক করা হয়েছে৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
নিবন্ধন প্রক্রিয়া
যারা টিকা নিতে চান, তাদের সবাইকে অনলাইনে নিবন্ধন করতে হবে৷ ‘সুরক্ষা’ (www.surokkha.gov.bd) প্ল্যাটফর্মের মোবাইল অ্যাপ ও ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে নিবন্ধন করতে হবে৷ নিবন্ধনের জন্য অন্যান্য তথ্যের সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর লাগবে৷ যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই তারা আপাতত করোনার টিকা পাবেন না৷
ছবি: surokkha.gov.bd
সরকারের পরিকল্পনা
আগামী ছয় মাসে তিন কোটি মানুষকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা করেছে সরকার৷ প্রতি মাসে ২৫ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়া হবে৷ জনপ্রতি দুটি করে মাসে ৫০ লাখ ডোজ টিকার প্রয়োজন হবে৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
প্রস্তুত পাঁচ হাসপাতাল
টিকা দিতে আপাতত ঢাকার পাঁচটি হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে৷ এগুলো হলো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল৷
ছবি: Mortuza Rashed
অগ্রাধিকার পাবেন যারা
অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এক কোটি ৬৯ লাখ ৩৭ হাজার ৯৭৩ জনকে করোনার টিকা দেয়ার জন্য পরিকল্পনা সাজিয়েছে সরকার৷ এদের মধ্যে আছেন কোভিড-১৯ স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত চার লাখ ৫২ হাজার ২৭ জন স্বাস্থ্যকর্মী, অনুমোদিত ছয় লাখ বেসরকারি ও প্রাইভেট স্বাস্থ্যকর্মী, দুই লাখ ১০ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাঁচ লাখ ৪৬ হাজার ৬২০ জন সদস্য, সামরিক ও বেসামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনীর তিন লাখ ৬০ হাজার ৯১৩ জন সদস্য৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
অগ্রাধিকার তালিকায় সরকারি কর্মকর্তা, সাংবাদিক
রাষ্ট্র পরিচালনায় অপরিহার্য ৫০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী, ৫০ হাজার গণমাধ্যম কর্মী, এক লাখ ৭৮ হাজার ২৯৮ জন জনপ্রতিনিধি, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার দেড় লাখ কর্মচারী, পাঁচ লাখ ৪১ হাজার ধর্মীয় প্রতিনিধি, মৃতদেহ সৎকারে নিয়োজিত ৭৫ হাজার ব্যক্তি, জরুরি সেবার চার লাখ কর্মী, স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরের দেড় লাখ কর্মী, এক লাখ ২০ হাজার প্রবাসী অদক্ষ শ্রমিকও আছেন অগ্রাধিকারের তালিকায়৷
ছবি: bdnews24.com
আছেন জাতীয় দলের খেলোয়াড়রাও
জেলা উপজেলায় কর্মরত চার লাখ জরুরি সেবার সরকারি কর্মচারী, এক লাখ ৯৭ হাজার ৬২১ জন ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্বল্প রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার (যক্ষ্মা, এইডস, ক্যানসার) ছয় লাখ ২৫ হাজার জনগোষ্ঠী, ৬৪ থেকে ৭৯ বছর বয়সী এক কোটি তিন লাখ ২৬ হাজার ৬৫৮ জন্য ব্যক্তি, ৮০ বছর ও তদূর্ধ্ব ১৩ লাখ ১২ হাজার ৯৭৩ জন জনগোষ্ঠী, জাতীয় দলের খেলোয়াড় ২১ হাজার ৮৬৩ জনও আগে টিকা পাবেন৷
ছবি: Munir Uz zaman/AFP
12 ছবি1 | 12
এই তথ্য সামনে আসার সঙ্গে সঙ্গে স্কুল দুইটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। আক্রান্ত ছাত্র এবং শিক্ষকদের পরিবার এবং ঘনিষ্ঠদেরও করোনার পরীক্ষা হয়। কেরালার প্রশাসনের দাবি, এখনো পর্যন্ত দুই হাজারেরও বেশি ব্যক্তির টেস্ট করানো হয়েছে। অনেককেই আইসোলেশনে পাঠানো হয়েছে।
তবে চিন্তার বিষয় হলো, আক্রান্ত ছাত্রদের ৯১ জন একটি কোচিংয়ে পড়তে যায়। তা হলে কি সেই কোচিং থেকেই করোনা ছড়িয়ে পড়েছে? এই প্রশ্ন উঠছে। প্রশাসন জানিয়েছে, ওই কোচিংয়ের আরো বহু ছাত্রের করোনা টেস্ট করানো হয়েছে। আপাতত কোচিংটিও বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।
ওড়িশাতেও গত মাসে একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল। স্কুল খোলার পর ৩১ জন ছাত্র ও শিক্ষক করোনায় আক্রান্ত হন। এখন শুধু দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস হচ্ছে। তাতেই একাধিক রাজ্য থেকে ছাত্র ও শিক্ষকদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর আসছে।
ভারতের অন্য রাজ্যগুলিতে করোনার প্রকোপ খানিকটা কমলেও কেরালায় এখনো সংক্রমণ যথেষ্টই। তারই মধ্যে সেখানে যুক্তরাজ্য থেকে আসা এক ব্যক্তির শরীরে করোনার নতুন স্ট্রেইন মিলেছে। ফলে দুশ্চিন্তা আরো বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে আদৌ কেন স্কুলগুলি খোলার অনুমতি দিল সরকার, তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
চিকিৎসকদের একাংশের অবশ্য বক্তব্য, ভারতে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হয়ে গেছে। সে কারণেই ছাত্রদের মধ্যে করোনার কোনো লক্ষ্যণ দেখা যায়নি।