কোটা সংস্কার আন্দোলনের তিন সমন্বয়ককে তুলে নেয়ার অভিযোগ
২৬ জুলাই ২০২৪
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম সহ তিনজনকে তুলে নেয়ার খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। রাজধানীর গণস্বাস্থ্য হাসপাতাল থেকে বিকেলে গোয়েন্দা পুলিশ তাদের তুলে নিয়ে যায় বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন৷
বিজ্ঞাপন
বাকি দু’জন হলেন, আসিফ মাহমুদ এবং আবু বকর মজুমদার৷ নাহিদের বড় বোন ফাতেমা তাসনিম এএফপিকে জানান, সাদা পোশাক পরা গোয়েন্দা সংস্থার ছয় ব্যক্তি তাদের তিনজনকে তুলে নিয়ে যায়৷
এএফপির খবরে আরো বলা হয়, গত কয়েক দিন ধরে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তারা। ছিলেন নজরদারিতে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই তাদের সঙ্গে কাউকে দেখা করতে দেয়া হয়নি। নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ এর আগেও তাদের তুলে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ করেছিলেন।
বিটিভি পরিদর্শনে প্রধানমন্ত্রী
এদিকে, কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে হামলা-আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত বিটিভি ভবন পরিদর্শন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, "যারা এসবের সঙ্গে জড়িত, সারা বাংলাদেশের আনাচকানাচে যে যেখানে আছে, তাদের খুঁজে বের করুন।"
শুক্রবার কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে হামলা-আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত বিটিভি ভবন পরিদর্শন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷
এসময় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তার কাছে তুলে ধরেন বিটিভির মহাপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা৷
পরিদর্শন শেষে মেট্রোরেল, বিটিভিসব নানা স্থাপনায় হামলার প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘যারা এসবের সঙ্গে জড়িত, সারা বাংলাদেশের আনাচকানাচে যে যেখানে আছে, তাদের খুঁজে বের করুন। তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করার জন্য সহযোগিতা করুন। আমি দেশবাসীর কাছে এই আহ্বান জানাচ্ছি।’’
২০১৩ সালে বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনে আগুন দেয়া ও ধ্বংসযজ্ঞের প্রসঙ্গও টেনে আনেন প্রধানমন্ত্রী। তবে আগের বারের চেয়ে এবারের ঘটনা অনেকটাই ভিন্ন বলেও মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, "তারা এবার আগুন লাগাতে গানপাউডার ব্যবহার করেছে এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।"
শেখ হাসিনা আরও বলেন, "পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কিন্তু টেলিভিশনের ওপর হাত দেয়নি বা কেউই কখনো দেয়নি। কিন্তু আজকে এই টেলিভিশন সেন্টারকে যারা এইভাবে পোড়াল, একটা কিছু নেই যে তাদের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। তাহলে এরা কারা? এরা কি এ দেশেরই মানুষ? এদের কি এই দেশেই জন্ম? একটা দেশকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করার চিন্তা নিয়েই যেন তাদের এই আক্রমণ।"
জীবনের ঝুঁকি নিয়েও বিটিভিকে রক্ষার চেষ্টা করায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা।
বিটিভির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, হামলায় বিটিভির বিভিন্ন অবকাঠামো, সম্প্রচার সরঞ্জাম, নকশা বিভাগ, অফিস ভবন ও কক্ষ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ১৯৬৪ সাল থেকে সংরক্ষিত প্রাচীন জিনিস দিয়ে সজ্জিত একটি টেলিভিশন জাদুঘরও এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷
১৮ জুলাই বিকেলে বিটিভি ভবনের প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন একদল মানুষ। শুরুতে সেখানে পার্ক করা কয়েকটি গাড়িতে আগুন দেয়া হয়। পরে বিটিভি ভবনের ভেতরে গিয়ে বিভিন্ন ফ্লোরের বিভিন্ন অংশে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
সেদিন সন্ধ্যা ছয়টার দিকে বিটিভি ভবনের নিয়ন্ত্রণ নেয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ - বিজিবি।
সাধারণের মৃত্যুর দায় জামায়াত-শিবিরের: ওবায়দুল কাদের
কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতায় সাধারণ মানুষের প্রাণহানির জন্য জামায়াত-শিবিরকে দায়ী করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের৷ পুলিশ এবং সাধারণ মানুষ কোনো হত্যায় অংশ নিতে পারে না বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি৷
প্রথম আলো জানিয়েছে, ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের৷
সহিংসতায় কতজন মারা গিয়েছেন, এমন তথ্য সরকারের কাছে আছে কীনা, এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ''পত্রপত্রিকায় দুই শর মতো বা দুই শর চেয়ে একটু বেশি৷ আমরা এটার খোঁজখবর নিচ্ছি৷''
অনেক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে গুলিতে, জামায়াত কি অস্ত্র ব্যবহার করছিল কীনা, এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ''অনেক নিরীহ মানুষ মারা গেছেন। জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্যপট দেখতে ছিল...বাচ্চা যখন তাকাল, সেই বাচ্চা গুলি খেয়ে মারা গেল। তারপরে এ ধরনের ঘটনা আরও অনেক ঘটেছে৷ রাস্তায় বেরিয়েছে, নিষ্পাপ, নির্বোধ শিশু, কিছুক্ষণ পর দেখা গেল সে–ও লাশ হয়ে পড়ে ছিল৷ এ রকম ঘটনা অনেক আছে৷ এগুলো জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডব৷ আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি৷ সাংবাদিকেরাও নিচ্ছেন৷ সব সত্য বেরিয়ে আসবে৷''
রেমিট্যান্স ব্যাহত
পাঁচ দিন ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় ব্যাংক ও মোবাইল আর্থিক সেবা (এমএফএস) এর মাধ্যমে রেমিট্যান্স সংগ্রহে প্রভাব পড়েছে৷ এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ সৃষ্টি হতে পারে বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷
ব্যাংকার ও এমএফএস প্রোভাইডারদের বরাত দিয়ে দ্য ডেইলি স্টার জানিয়েছে, ১৮ জুলাই থেকে ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় রেমিট্যান্স সংগ্রহ বন্ধ ছিল৷ এরপর সীমিত পরিসরে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা চালুর পর আবার রেমিট্যান্স আসা শুরু হয়। কিন্তু তারপরও রেমিট্যান্স সংগ্রহ স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কম৷
স্বাভাবিক সময়ে দিনে প্রায় আট থেকে ১০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স বাংলাদেশে আসে৷ ১ জুলাই থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৯৭ কোটি ডলার৷
এখনও অবশ্য এর পরের সপ্তাহগুলোর তথ্য পুরোপুরি পাওয়া যায়নি৷ প্রাথমিক তথ্য বিশ্লেষণে করে দেখা যাচ্ছে, পরবর্তী সপ্তাহগুলোতে রেমিট্যান্স অর্ধেকেরও নীচে নেমে আসতে পারে৷
এমএফএস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার ডেইলি স্টার জানিয়েছে, তার প্রতিষ্ঠান স্বাভাবিক অবস্থায় দিনে পাঁচ থেকে সাত কোটি টাকা রেমিট্যান্স পেলেও, ইন্টারনেট সংযোগের ধীরগতির কারণে তা ৮০ লাখ টাকায় নেমে এসেছে৷
হাসপাতালে গোয়েন্দা নজরদারিতে সমন্বয়কেরা
ডেইলি স্টার জানিয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন, সেখানে কঠোর নজরদারি রয়েছে৷ সাংবাদিকদের সঙ্গে তাদের কথা বলতে দেয়া হচ্ছে না৷
চার দিনের আলটিমেটাম শেষ হওয়ার পর বৃহস্পতিবার তাদের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করার কথা ছিল। হাসপাতাল থেকেই এই ঘোষণা দেয়ার কথা ছিল৷ কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, বৃহস্পতিবারই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েকজন সদস্য হাসপাতালে গিয়ে দুই সমন্বয়কের কেবিনের টেলিফোন ও ওয়াইফাই লাইন কেটে দেন৷
এরপর ডেইলি স্টারের প্রতিবেদক হাসপাতালে তাদের সঙ্গে দেখা করতে গেলেও তাকে কেবিন দুটোতে ঢুকতে দেয়া হয়নি৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাদা পোশাক পরিহিত দুই ব্যক্তি নিজেদের গোয়েন্দা পরিচয় দিয়ে জানিয়েছেন, ''এই দুটি কেবিনে প্রবেশ নিষেধ। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কঠোর নির্দেশনা আছে।''
এডিকে/এসিবি (প্রথম আলো, দ্য ডেইলি স্টার)
কোটাসংস্কার আন্দোলনের ঘটনাপ্রবাহ
কোটা সংস্কার নিয়ে দ্বিতীয় দফা টানা আন্দোলন শুরু হয়েছিল ১ জুলাই৷ আন্দোলন সংঘর্ষে রূপ নেয় ১৫ জুলাই৷ প্রথম আলোর বরাত দিয়ে ২৫ জুলাই পর্যন্ত ২০২ জন হওয়ার কথা জানিয়েছে এপি৷ ছবিঘরে থাকছে ঘটনা পরিক্রমা৷
ছবি: Rajib Dhar/AP/picture alliance
৯ জুলাই, মঙ্গলবার
হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে দুই শিক্ষার্থীর আবেদন৷ আন্দোলনের অংশ হিসেবে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা চার ঘণ্টা পর অবরোধ তুলে নেন৷ আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে পরদিন সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা ‘বাংলা ব্লকেড’ নামে অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়৷
ছবি: Zabed Hasnain Chowdhury/IMAGO/SOPA Images
১২ জুলাই, শুক্রবার
কোটা সংস্কারের দাবিতে শুক্রবার ছুটির দিনেও দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল শেষে শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন৷ রেলপথ অবরোধ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা৷
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP
১৩ জুলাই, শনিবার
সব গ্রেডে কোটার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি ঘোষণা৷ পরের দিন রোববার গণপদযাত্রা করে রাষ্ট্রপতি বরাবর এ স্মারকলিপি দেবেন আন্দোলনকারীরা৷ তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, বিচারাধীন বিষয়ে সরকারের এখন কিছু করার নেই৷
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
১৪ জুলাই, রোববার
গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা চাকরি পাবে?’ এ মন্তব্যের মাধ্যমে তাদের অবমাননা করা হয়েছে দাবি করে শুরুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং পরে চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ হয়৷
ছবি: Mamunur Rashid/NurPhoto/picture alliance
১৪ জুলাই, রোববার
একই দিনে পদযাত্রা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দিয়ে আন্দোলনকারীরা জাতীয় সংসদে জরুরি অধিবেশন ডেকে সরকারি চাকরির সব গ্রেডের কোটার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে সরকারকে ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেন৷
ছবি: Press Information Depart of Bangladesh
১৫ জুলাই, সোমবার
রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আন্দোলন থেকে আত্মস্বীকৃত রাজাকার ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ মানসিকতা বা আচরণের প্রকাশ ঘটেছে৷ এর জবাব দেওয়ার জন্য ছাত্রলীগ প্রস্তুত৷ বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে৷ সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন স্থানে৷
ছবি: Habibur Rahman/IMAGO/ABACAPRESS
১৬ জুলাই, মঙ্গলবার
সারা দেশে দিনভর ব্যাপক বিক্ষোভ ও সংঘর্ষ হয়৷ আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ সরকার সমর্থকেরা৷ এতে নিহত হন ছয়জন৷ রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থী আবু সাঈদ পুলিশের বুলেটে নিহত হন৷
ছবি: Zabed Hasnain Chowdhury/NurPhoto/IMAGO
১৭ জুলাই, বুধবার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন অব্যাহত৷
ছবি: Zabed Hasnain Chowdhury/NurPhoto/IMAGO
১৮ জুলাই, বৃহস্পতিবার
দেশব্যাপী প্রতিরোধ, সহিংসতা, সংঘর্ষ ও গুলি৷ মোট নিহত ২৭ জন৷ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ সারা দেশ ছিল প্রায় অচল৷
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS
১৮ জুলাই, বৃহস্পতিবার
রাজধানী ছাড়াও দেশের ৪৭টি জেলায় দিনভর বিক্ষোভ, অবরোধ, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, পুলিশের হামলা-গুলি ও সংঘাতের ঘটনা ঘটে৷ এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত দেড় হাজার৷ সারা দেশে বিজিবি মোতায়েন৷
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP
১৯ জুলাই, শুক্রবার
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ বা সর্বাত্মক অবরোধের কর্মসূচি ঘিরে রাজধানী ঢাকায় ব্যাপক সংঘর্ষ, হামলা, ভাঙচুর, গুলি, অগ্নিসংযোগ ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে৷ রাজধানী ঢাকা ছিল কার্যত অচল, পরিস্থিতি ছিল থমথমে৷
ছবি: AFP
১৯ জুলাই, শুক্রবার
দেশের বিভিন্ন জেলাতেও ব্যাপক বিক্ষোভ, সংঘর্ষ ও সহিংসতা হয়৷ রাতে সারা দেশে কারফিউ জারি, সেনাবাহিনী মোতায়েন৷ টেলিয়োগাযোগ ও ইন্টারনেট সেবা সম্পূর্ণ বন্ধ৷ একদিনেই নিহত ৮৪৷
ছবি: Rajib Dhar/AP/picture alliance
২০ জুলাই, শনিবার
দেশজুড়ে কারফিউ ও সেনা মোতায়েনের পাশাপাশি সাধারণ ছুটি ঘোষণা৷ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ, ধাওয়া ও গুলি৷ উল্লেখযোগ্য স্থান হচ্ছে, যাত্রাবাড়ী, উত্তরা, বাড্ডা ও মিরপুর৷ এ ছাড়া মোহাম্মদপুরেও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে৷ শনিবার নিহত ২৬ জন৷এদিন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে৷
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS
২১ জুলাই, রোববার
সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা পুনর্বহাল-সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় সামগ্রিকভাবে বাতিল করে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে বলা হয়, কোটাপ্রথা হিসেবে মেধাভিত্তিক ৯৩%; মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫ %; ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ১ % এবং প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ % নির্ধারণ করা হলো৷ রোববার নিহত ১৯ জন৷ সমন্বয়ক নাহিদকে তুলে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ, হাসপাতালে ভর্তি৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP
২২ জুলাই, সোমবার
কোটাপ্রথা সংস্কার করে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী তৈরি করা প্রজ্ঞাপন অনুমোদন প্রধানমন্ত্রীর৷ সব মিলিয়ে ছয় দিনে মোট ১৮৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়৷
ছবি: Zabed Hasnain Chowdhury/NurPhoto/IMAGO
২৩ জুলাই, মঙ্গলবার
কোটাপ্রথা সংস্কার করে প্রজ্ঞাপন জারি৷ মঙ্গলবার পর্যন্ত ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সংঘর্ষে ১৯৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে৷ মৃত্যুর এই হিসাব কিছু হাসপাতাল, মরদেহ নিয়ে আসা ব্যক্তি ও স্বজনদের সূত্রে পাওয়া বলে জানিয়েছে দৈনিক প্রথম আলো৷ সব হাসপাতালের চিত্র পাওয়া যায়নি বলেও জানিয়েছে তারা৷
ছবি: Rajib Dhar/AP/picture alliance
২৩ জুলাই, হাসপাতালের তথ্য
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে শিশু-কিশোর এবং নারীও রয়েছেন৷৷ আহতদের অনেকে চোখে রাবার বুলেট ও ছররা গুলি এবং শরীরের অন্যান্য জায়গায় গুলির ক্ষতচিহ্ন নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন৷
ছবি: Rajib Dhar/AP/picture alliance
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, সংঘর্ষে তিনজন পুলিশ সদস্য এবং একজন আনসার সদস্য নিহত হয়েছেন৷ ১ হাজার ১১৭ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন৷ এর মধ্যে গুরুতর আহত ১৩২ জন৷ তিনজন হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রয়েছেন৷
ছবি: Anik Rahman/AP/picture alliance
আইনমন্ত্রীর বক্তব্যে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির বর্ণনা
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংবাদ সংস্থা এপিকে জানিয়েছেন, সংঘর্ষের সময় রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত টেলিভিশন চ্যানেল বিটিভির সদর দপ্তরে হামলা চালানো হয়েছে৷ এছাড়া ঢাকার ফ্লাইওভারে দু’টি টোল প্লাজা, এক্সপ্রেসওয়েতে এবং দুইটি মেট্রোরেল স্টেশনে আগুন দেয়া হয়েছে৷ কয়েকশ’ সরকারি ভবনে আগুন দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন আইনমন্ত্রী৷
ছবি: K M ASAD/AFP
ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য
ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক এপিকে জানিয়েছেন, ছয় দিন বন্ধ থাকার পর ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ঢাকা ও চট্টগ্রামের কিছু এলাকায় আংশিকভাবে চালু করা হয়েছে৷ তার অভিযোগ, আন্দোলনকারীরা প্রধান তথ্য কেন্দ্রে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে ফলে ফাইবার অপটিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে৷
ছবি: AFP
গ্রেপ্তার
সারা দেশ থেকে এখন পর্যন্ত আড়াই হাজারেও বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা এএফপি৷ সারাদেশে অন্তত ২৭ হাজার সেনা মোতায়েন আছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ৷ ২৪ জুলাই কারফিউ শিথিল করা হলেও এখনো তা বহাল আছে৷