মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিনেও কোনো দল বা জোটই প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করতে পারেনি৷ তাই এক আসনে একই দলের একাধিক প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন৷ প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হবে আগামী ৯ ডিসেম্বর৷
ছবি: bdnews24.com
বিজ্ঞাপন
৯ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন৷ ওই দিন দল ও জোট থেকে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে তাদের প্রার্থী নিশ্চিত করা হবে৷ বাকিরা বাদ পড়বে৷ এই বাদ পড়ার আশঙ্কায় কেউ কেউ স্বতন্ত্র হিসেবে বুধবার মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন৷ দল যদি মনোনয়ন চূড়ান্ত না করে, তাহলে তাঁরা শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করবেন৷ কিন্তু ভয়ের বিষয় হলো, এই সময়ে দল বা জোট থেকে মনোনয়ন চূড়ান্ত করতে অনেক প্রার্থী তাঁদের শক্তি প্রদর্শন করতে পারেন৷ আর তাতে সংঘাত-সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে৷
এবার জোটের অন্যান্য শরিক দলের জন্য ৭০টি আসন রেখে বাকি ২৩০ আসনে ২৫০ জনকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ৷ ২০টি আসনে দুই জন করে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে৷ আর বিএনপি ৩০০ আসনে মনোনয়ন দিয়েছে ৮০০'রও বেশি প্রার্থীকে৷ কোনো কোনো আসনে তারা ৪-৫ জনকেও মনোনয়ন দিয়েছে৷ এর মধ্যে কিছু মনোনয়ন দেয়া হয়েছে মামলার চিন্তা মাথায় রেখে বিকল্প প্রার্থী হিসেবে৷ তবে বিদ্রোহ ঠেকাতে অথবা সিদ্ধান্ত নিতে না পারায় অধিকাংশ আসনেই একাধিক প্রার্থী দেয়া হয়েছে৷ আওয়ামী লীগও যেসব আসনে প্রার্থী নিয়ে সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি সেসব আসনে একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে৷
‘দু’টি বড় দলই কৌশল হিসেবে একই আসনে একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে’
This browser does not support the audio element.
কিন্তু সংকট আরো বড় হয়েছে জোট নিয়ে৷ কারণ, আওয়ামী লীগ বা বিএনপি কেউই তাদের জোটের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি চূড়ান্ত করতে পারেনি৷ আওয়ামী লীগের সঙ্গে ১৪ দল ছাড়াও আছে এরশাদের জাতীয় পার্টি, বিকল্প ধারা, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি এবং কিছু ইসলামি দল ও জোট৷ তারা তাদের মতো মনোনয়ন দিয়েছে এবং শেষ দিনে তারা মনোনয়ন পত্র দাখিলও করেছে৷ যেমন, ওয়াকার্স পার্টিকে মোট ৫ টি আসন দেয়া হবে৷ তাদের পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে ৩৪ জন৷ জাসদকে দেয়া হতে পারে ২টি আসন৷ তাদের হয়ে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন ৫ জন৷ জাতীয় পার্টি কতটি আসন পাবে তা এখনো নিশ্চিত নয়৷ তবে তারা মনোনয়ন দিয়েছে ১১০ জনকে৷
এদিকে বিএনপি বলছে, জোটের শরিকদের আসন তারা পরে ছেড়ে দেবে৷ তাদের আট শতাধিক প্রার্থী ৩০০ আসনেই মনোনয়নপত্র দাখিল করেছে৷ তবে ২০ দলের সঙ্গে তারা আসন বন্টন প্রায় চূড়ান্ত করেছে, কিন্তু জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট-এর গণফোরাম, নাগরিক ঐক্যসহ বাকি শরিকদের সঙ্গে আসন চূড়ান্ত হয়নি৷ জামায়াত শেষ পর্যন্ত ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ জামায়াতকে ২৫টি আসন দিতে চাইলেও তারা আরো বেশি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে৷ নাগরিক ঐক্য আসন পেতে পারে ২টি, কিন্তু তারা মনোনয়ন জমা দিয়েছে ৮টি আসনে৷
আওয়ামী লীগ সরকারের ভালো-মন্দ
প্রায় দশ বছর ধরে দেশ পরিচালনা করছে আওয়ামী লীগ৷ এই সময়ে সরকারের কাজে সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টির কথা ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন দশজন ভোটার৷
ছবি: imago/Xinhua
দীপক চন্দ্র শীল
ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য পাস করে বের হওয়া দীপক চন্দ্র শীল জানান, তাঁর কাছে গত পাঁচ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের যে কাজটি সবচেয়ে ভালো লেগেছে তা হলো, যুদ্ধাপরাধীর বিচার৷
ছবি: DW/M. Mamun
রিয়ন সরকার
ঢাকার শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রিয়ন সরকার মনে করেন, সরকারের সবচেয়ে ভালো কাজ ছিল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন৷ এক্ষেত্রে অনেক বাধা পেরিয়ে পদ্মা সেতুর কাজ এগিয়ে নেয়ার উদাহরণ দেন তিনি৷
ছবি: DW/M. Mamun
জাহিদ মাহমুদ প্রান্ত
বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া জাহিদ মাহমুদ প্রান্ত বলেন, দেশ থেকে জঙ্গি নির্মূল করা আওয়ামী লীগ সরকারের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাজ৷
ছবি: DW/M. Mamun
মনিকা আক্তার
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন মনিকা আক্তার৷ তাঁর দৃষ্টিতে সরকারের সবচেয়ে ভালো কাজ ছিল দশ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়া৷
ছবি: DW/M. Mamun
হাসানুর রাজা
নিম্ন আয়ের দেশ থেকে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করা সরকারের সবচেয়ে ভালো কাজ ছিল বলে মনে করেন স্কুল শিক্ষক হাসানুর রাজা৷
ছবি: DW/M. Mamun
সবুজ মাতুব্বর
তিনি একজন বেসরকারি চাকরিজীবী৷ তাঁর কাছে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সবচেয়ে খারাপ লাগার বিষয় ছিল দলীয় কিছু নেতা-কর্মীর অপকর্ম, যেমন বেপরোয়া সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও দুর্নীতি৷
উপজেলা নির্বাচনে নিজের ভোট প্রয়োগ করতে পারেননি মাছ বিক্রেতা জালাল মিয়া৷ ভোটকেন্দ্রে যাবার আগেই তাঁর ভোট অন্য কেউ দিয়ে ফেলেছিল বলে অভিযোগ তাঁর৷
ছবি: DW/M. Mamun
মাহবুবুল আলম
পরিবহন ব্যবসায়ী মাহবুবুল আলমের মতে, আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনাটি তাঁর সবচেয়ে খারাপ লেগেছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
নূর মোহাম্মদ
রিকশাচালক নূর মোহাম্মদ গত পাঁচ বছরে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধিকে আওয়ামী লীগ সরকারের সবচেয়ে খারাপ দিক মনে করেন৷
ছবি: DW/M. Mamun
10 ছবি1 | 10
এদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন বা তাঁর মেয়ে ব্যারিস্টার সারা হোসেন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না৷ আর বিকল্পধারার ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী আগেই নির্বাচনে প্রার্থী না হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ ফেনীর একটি এবং বগুড়ার ২টি আসনে খালেদা জিয়ার পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া হলেও তিনি যে প্রার্থী হতে পারছেন না তা সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের রায়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে৷ তিনটি আসনেই বিকল্প প্রার্থী আছে৷ আর বিএনপি'র পাঁচ নেতা আমানউল্লাহ আমান, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, ওয়াদুদ ভূঁইয়া, মো. মশিউর রহমান এবং মো. আব্দুল ওহাব প্রার্থী হতে পারছেন না৷ তাঁদের আসনগুলোতেও একাধিক বিকল্প প্রার্থী আছে বিএনপি'র৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনূ মজুমদার বলেন,‘‘দু'টি বড় দলই কৌশল হিসেবে একই আসনে একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে৷ আসলে তারা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত নিশ্চিত হতে চাইছে৷ বিএনপি চাইছে, তারা যদি নির্বাচন থেকে বেরিয়ে আসতে চায়, তাহলে যেন বেরিয়ে আসতে পারে৷ আর আওয়ামী লীগও চাইছে ভালো অবস্থানে থাকতে৷ তবে এতে করে সমস্যা হবেই৷ যাঁরা দলের হয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন, তাঁদের মধ্যে যাঁরা শেষ পর্যন্ত পাবেন না, তাঁরা হতাশ হবেন৷ তাঁরা তো একটা সমস্যার সৃষ্টি করবেনই৷''
‘বিএনপি'র এত বেশি প্রার্থী হওয়ার কারণ তাদের ঝুঁকি আছে, মামলা আছে’
This browser does not support the audio element.
আর সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন-এর প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার মনে করেন,‘‘যেখানে একাধিক প্রার্থীর সমর্থন কাছাকাছি, সেখানে চূড়ান্ত মনোনয়ন পেতে তাঁরা শক্তি প্রদর্শন করতে পারেন, দ্বন্দ্ব-সংঘাত হতে পারে৷ আর যেখানে বিদ্রোহী প্রার্থী আছে, সেখানে ঝুঁকি আরো বেশি৷বিএনপি'র এত বেশি প্রার্থী হওয়ার কারণ তাদের ঝুঁকি আছে, মামলা আছে৷ ফলে যাতে বাতিল হলেও শেষ পর্যন্ত প্রার্থী থাকে৷ আওয়ামী লীগও ঝুঁকি বিচেনায় কিছু আসনে একাধিক প্রার্থী দিয়েছে৷ আরেকটি কারণ, যাতে বিদ্রোহী প্রার্থী না হতে পারে৷ কারণ, দলের মনোনয়ন নিয়ে যাঁরা মনোনয়পত্র দাখিল করেছেন, তাঁরা কিন্তু আর বিদ্রোহী প্রার্থী হতে পারবেন না৷ প্রত্যাহারের শেষ দিনে দল যাঁকে প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দেবে, তিনিই প্রার্থী হবেন৷ বাকিদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যাবে৷''
জনমত: গত পাঁচ বছরে বিএনপির মূল্যায়ন
রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির গত পাঁচ বছরের সাফল্য ও ব্যর্থতা নিয়ে ডয়চে ভেলেকে তাঁদের মতামত জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ৷ গত পাঁচ বছরে বিএনপি কতটা সফল বা ব্যর্থ শুনুন তাঁদের মুখে৷
ছবি: bdnews24.com
কামরুল হাসান
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কামরুল হাসানের মতে গত পাঁচ বছরে বিএনপির সবচেয়ে খারাপ কাজ ‘যুদ্ধাপরাধীদের দল’ জামায়াতে ইসলামির সঙ্গ না ছাড়া৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
নাসরিন সুলতানা
বেসরকারি চাকুরিজীবী নাসরিন সুলতানার মতে, বিএনপির অন্যতম ভুল ছিল বিভিন্ন সময়ে হরতাল-অবরোধ ডেকে মানুষকে দুর্ভোগে ফেলা৷ হরতাল ডেকে বিএনপির নেতা-কর্মীদের মাঠে না নামাটাও ছিল রাজনৈতিক ব্যর্থতা৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
দীপঙ্কর সাহা
স্কুল শিক্ষক দীপঙ্কর সাহা মনে করেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে গত পাঁচ বছরে বিএনপির সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হচ্ছে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেয়া৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
বীথি আক্তার
বীথি আক্তার একজন গৃহিনী৷ তাঁর মতে, রাজনৈতিক দল হিসেবে গত পাঁচ বছরে বিএনপির উল্লেখ করার মতো কোনো সাফল্য নেই৷ তিনি বলেছেন, ‘‘রাজনৈতিক দল হিসেবে পুরোটাই ব্যর্থ তারা৷’’
ছবি: DW/M. M. Rahman
মাহবুবুর রহমান
মাদ্রাসা শিক্ষার্থী মাহবুবুর রহমান৷ রাজনৈতিক দল হিসেবে গত পাঁচ বছরে বিএনপির সফলতা ও ব্যর্থতা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতেই রাজি হননি তিনি৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
রোমান আহমেদ
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী রোমান আহমেদ মনে করেন, রাজনৈতি দল হিসেবে বিএনপির সবচেয়ে বড় সাফল্য প্রবল জনসমর্থন৷ এ সময়ে বিএনপির জন-সমর্থন অন্যান্য সব রাজনৈতিক দলের উর্ধ্বে৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
জলিল মিয়া
দিন মজুর জলিল মিয়া মনে করেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে গত পাঁচ বছরে বিএনপির সফলতা হচ্ছে বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেয়া৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
মাসুদ রানা গণি
ব্যবসায়ী মাসুদ রানা গনি মনে করেন, গত পাঁচ বছরে বিএনপির উপর অনেক মামলা, জেল-জুলুমের মধ্যেও রাজনৈতিক দল হিসেবে টিকে থাকাই সবচেয়ে বড় সফলতা৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
মোহাম্মদ সবুজ
বেসরকারি চাকুরিজীবী মোহাম্মদ সবুজ মনে করেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় জেল দেয়ার পরেও বিএনপির শান্তিপূর্ণ আন্দোলন-কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ায়ই সবচেয়ে বড় সফলতা৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
আব্দুল হালিম
নির্মাণ শ্রমিক আব্দুল হালিম রাজনৈতিক দল হিসেবে গত পাঁচ বছরে বিএনপির তেমন কোনো সফলতার কথা বলতে না পারলেও দলটির ভোট ও সমর্থন অনেক বেড়েছে বলে তিনি মনে করেন৷