1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কোন দিকে চলেছে ইউরোপ?

গ্রেহেম লুকাস/এসিবি২১ জানুয়ারি ২০১৫

প্যারিসের বিদ্রূপ ম্যাগাজিন শার্লি এব্দোয় আক্রমণের ঘটনা ইউরোপীয় দেশগুলোকে বেশ নাড়িয়ে দিয়েছে৷ তারপর থেকে এ অঞ্চলে অভিবাসী জনগোষ্ঠীর অবস্থান নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক৷ এ বিষয়েই লিখেছেন গ্রেহেম লুকাস৷

Trauermarsch in Paris
ছবি: Reuters/Platiau

চরমপন্থি ইসলামি সংগঠন এবং ইতিমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন অঞ্চল থেকে ইরাক ও সিরিয়ায় গিয়ে ইসলামিক স্টেট-এর হয়ে যুদ্ধ শুরু করা মুসলমানদের রুখতে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার প্রস্তুতি চলছে৷ এ উদ্দেশ্যে সন্ত্রাসবিরোধী কিছু নতুন আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দের বুধবারই এক সভা শেষে সেগুলো ঘোষণা করার কথা৷ নতুন আইনের ফলে শেঙেনভুক্ত দেশগুলোতে অবাধে চলাফেরা করার বিষয়টিতেও পরিবর্তন আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ সন্দেহভাজন এবং অভিযুক্ত চরমপন্থিদের রুখতেই এমন পদক্ষেপের কথা ভাবা হচ্ছে৷

চরমপন্থি মুসলমানদের বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নেয়ার প্রয়োজনীয়তা এখন অস্বীকার করার জো নেই৷ তবে তার আগে আমাদের, অর্থাৎ ইউরোপীয়দের মুসলিম তরুণদের মাঝে অসন্তোষের মূল কারণগুলোও খতিয়ে দেখতে হবে৷ যদি তা না দেখি তাহলে হয়তো আমাদের দশকের পর দশক ধরে শহরে শহরে, রেল স্টেশনে, বিমানবন্দরে বা শপিং মলে ইসলামপন্থি সন্ত্রাসবাদীদের হামলা দেখতে হবে৷

অভিবাসীদের ব্যাপারে ইউরোপের দৃষ্টিভঙ্গি বা ঐতিহ্য ঠিক যুক্তরাষ্ট্রের মতো নয়৷ যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসীদের আকৃষ্ট করা কিংবা সমাজের অংশ করে নেয়ার প্রয়াসের ঐতিহ্য রয়েছে৷ ইউরোপের তা নেই৷ এ ক্ষেত্রে জার্মানির অবস্থাটাই একটু ব্যাখ্যা করা যেতে পারে৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হাজার হাজার জার্মান তরুণ নিহত হওয়ায় তুরস্কসহ দক্ষিণ ইউরোপের কয়েকটি দেশ থেকে কয়েক লক্ষ মানুষকে সাদরে গ্রহণ করেছিল জার্মানি৷ কিন্তু প্রথম থেকেই সেই অভিবাসীদের বলা হতো ‘অতিথি কর্মী'৷ ভাবটা ছিল এমন, এরা এখন এসেছে ঠিকই, তবে বেশিদিন এদের এখানে দরকার হবে না, কিছুদিন পর তাই এরা নিজেদের দেশে ফিরে যাবে৷ কিন্তু অন্য দেশগুলোতে অভিবাসীরা এসেছিল সেসব দেশের সাবেক উপনিবেশ থেকে৷ তাই ওই দেশগুলোতেও অভিবাসীদের রাজনৈতিকভাবে খুব বেশি গ্রহণযোগ্যতা ছিলনা৷ ওসব দেশেও খুব গভীরভাবে এমনটি ভাবা হয়নি যে অভিবাসীরা দীর্ঘদিন থাকবে এবং এক সময় তাঁরাও ইউরাপিয়ান হয়ে যাবে৷

আজকের দিনে তৃতীয় প্রজন্মের অভিবাসীরা ইউরোপে তাঁদের জীবন নিয়ে যারপর নাই অসন্তুষ্ট৷ তাঁরা তাঁদের বাবা-মায়ের মতো সদ্য ইউরোপে আসেনি, অথচ জার্মানরা তাঁদের সমাজে পূর্ণ সদস্য হিসেবেও গণ্য করছে না৷ অনেকেই স্কুলে লেখাপড়ায় খুব খারাপ করেছে৷ তাঁরা সব সময় নিজেদের মধ্যেই সময় কাটায়৷ তাই জার্মান ভাষাটা ভালো করে শিখতে পারেনি৷ এ পরিস্থিতিতে সমাজের মূল অংশে স্থান পাওয়াটা তাঁদের জন্য সত্যিই কঠিন৷

হালে চরম ডানপন্থিরা ইউরোপে ইসলামবিরোধী সমাবেশ শুরু করেছে৷ বিষয়টি স্বাভাবিক কারণেই ইউরোপে বসবাসরত মুসলমানদের আহত করেছে৷ মূল সমাজ তাঁদের প্রকারান্তরে প্রত্যাখ্যান করায় মুসলিম তরুণরা সিরিয়া এবং ইরাকে গিয়ে ইসলামিক স্টেটস-এর হয়ে যুদ্ধে অংশ নিচ্ছে৷ ইউরোপীয়দের আশঙ্কা, ওই তরুণরা ফিরে এসে ইউরোপের দেশগুলোতেও শার্লি এব্দোর মতো ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী হামলা শুরু করবে৷

যারা ইরাক ও সিরিয়ায় গিয়ে যুদ্ধ করছে ইউরোপে ফিরলেই তাদের দীর্ঘমেয়াদে কারাভোগ করতে হবে৷ সমাজ থেকে তারা এখন আরো বেশি বিচ্ছিন্ন৷ ইউরোপের সমাজে মুসলিম তরুণদের কীভাবে একটা গ্রহণযোগ্য আত্মপরিচয় দেয়া যায় – এ মুহূর্তে সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন৷ অনেকেই স্কুলে অকৃতকার্য হয়েছে, ভাষা শেখেনি, কোনো বিশেষ পেশার জন্য নিজেকে যথাযথভাবে তৈরি করেনি, অবশেষে হতাশা থেকে আশ্রয় নিয়েছে ইসলামিক স্টেট-এর শিবিরে৷ এই অবস্থার পরিবর্তন করতেই হবে৷ কীভাবে? নিশ্চয়ই প্রত্যাখ্যান করে নয়, সমাজের অংশ করে নিয়ে৷

গ্রেহেম লুকাস, ডিডাব্লিউ-র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিভাগের প্রধানছবি: DW/P. Henriksen

আরেকটা বিষয় হলো, ইউরোপে অনেক বছর ধরেই শিশু জন্মের হার কমছে৷ ইউরোপের মেয়েরা বিয়ে করার চেয়ে নিজের ক্যারিয়ার গড়ার দিকেই বেশি মনযোগী৷ তা হবেনাইবা কেন? নিজের ভবিষ্যৎ গড়ায় মনোযোগী হওয়াতো তাঁদের অধিকার! কিন্তু মেয়েরা তা করছে বলে অভিবাসীদের প্রয়োজন আরো বেড়েছে৷ এ অবস্থায় আমাদের শ্রমবাজারের চাহিদা অনুযায়ী একটি অভিবাসন নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে৷ যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশ ইতিমধ্যে তা করতে পারলে আমরা কেন পারবোনা?

ইউরোপকে খুব শিগগিরই এই বাস্তবতা মেনে নিতে হবে যে, রক্ষণশীলতাকে বহু আগেই বর্জন করা হয়েছে৷ ইউরোপের সমাজ বহু সংস্কৃতির মেলবন্ধনের সমাজ৷ ইসলাম তার অংশ৷ জার্মানি, ব্রিটেন, ফ্রান্স আর নেদারল্যান্ডসে চরম ডানপন্থিরা জাতিগত এবং ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোর উদ্দেশ্যে যে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করছে আমাদের এখানে এসবের কোনো দরকার নেই৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ