যুক্তরাষ্ট্রে মোটা মানুষদের মধ্যে চিনিমুক্ত কোমল পানীয় খুব জনপ্রিয়৷ কিন্তু চিনিযুক্ত পানীয় এড়িয়েও লাভ হচ্ছে না৷ এ কারণে ডায়েট ড্রিংক্সের কার্যকারীতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷
বিজ্ঞাপন
ডায়েট ড্রিংক্স পান করার ফলে কোথায় সবার দেহে ক্যালরি কমবে, তা নয়, ক্যালরি তো বাড়ছেই অনেকে আরো মুটিয়েও যাচ্ছেন৷ তাহলে আর ডায়েট ড্রিংক্স পান করে কী লাভ! যুক্তরাষ্ট্রের হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা সরকারি এক জরিপের তথ্য নিয়ে কাজ করেছেন৷ কাজ করে যা দেখেছেন তা রীতিমতো বিস্ময়কর৷ জরিপে অংশ নিয়েছিলেন ২৪ হাজার মোটা মানুষ৷ দেখা গেছে তাঁদের অধিকাংশই কম ক্যালরিযুক্ত বা ক্যালরিহীন পানীয় পান করলেও শরীরে ক্যালরি কমেনি৷ এ নিয়েই একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে অ্যামেরিকান জার্নাল অফ পাবলিক হেল্থ-এ৷
মিষ্টিমিশ্রিত পানীয় ওজন বাড়ায়
অল্প বয়সিরা পান করা বলতেই বোঝে মিষ্টি পানীয়, অর্থাৎ পানির সাথে প্রচুর চিনি৷ কিন্তু তারা বোঝে না যে এর পরিণাম কতটা ভয়ঙ্কর! শুধুমাত্র অতিরিক্ত মিষ্টির কারণে ডায়াবেটিসের মতো কঠিন অসুখও হতে পারে৷
ছবি: Fotolia/runzelkorn
মিষ্টি পানীয় থেকে সাবধান!
কোকাকোলা, ফান্টা বা এ ধরনের মিষ্টি পানীয় নিয়মিত পান করলে মানুষ স্থায়ীভাবে মোটা হয়ে যায়, অর্থাৎ পরে এই অতিরিক্ত ওজন কমানো খুবই কঠিন হয়ে পড়ে৷ বিশেষ করে শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের ক্ষেত্রে৷ বিভিন্ন ফলের রস, চা, মিল্ক শেক-এ যথেষ্ট পরিমাণে চিনি মেশানো থাকে যা পান করলে ওজন তো বাড়েই, সেই সাথে ডায়াবেটিস টাইপ- ২ হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে খুব বেশি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শুধু সফ্ট ড্রিংক থেকে ৩০ কেজি চিনি
জার্মানিতে ছয় বছরের একটি বাচ্চা লিমোনেড বা ফান্টা জাতীয় মিষ্টি পানীয় পান করার মধ্য দিয়ে বছরে প্রায় ৫ কেজি চিনি শরীরে ঢুকিয়ে থাকে৷ আর ১৪ থেকে ১৭ বছর বয়সিদের মধ্যে এই হিসেব বেড়ে দাড়ায় ৩০ কেজি৷ সেজন্যই জার্মানির ডায়াবেটিস সাহায্য সংস্থা স্কুল, কিন্ডারগার্টেন বা কাছাকাছি দোকানগুলোতে মিষ্টি পানীয় বিক্রি নিষিদ্ধ করার পক্ষে৷
ছবি: picture alliance/dpa
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি শতকরা ২২ ভাগ
ডায়াবেটিস সাহায্য সংস্থার সভাপতি ও হানোভার শিশু হাসপাতালের প্রধান প্রোফেসর ড. টোমাস ডানে সতর্ক করে দিয়ে বলছেন, দিনে নিয়মিত মাত্র এক গ্লাস করে এ জাতীয় মিষ্টি পানীয় পানের ফলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে শতকরা ২২ ভাগ৷ তাই এসব পানীয়ের লোভনীয় বিজ্ঞাপণ দেখে না ভোলার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/ZB
কৃত্রিম গন্ধ
কোকাকোলা, লিমোনেড বা ফান্টা জাতীয় পানীয়গুলোতে থাকে কৃত্রিমগন্ধ আর চিনি৷ ফলের রসগুলোতেও বেশিরভাগই থাকে ফলের রসের বদলে শুধু ফলের কৃত্রিম গন্ধ ও চিনি৷ মাল্টিভিটামিন জুস-এ থাকে অত্যন্ত বেশি পরিমাণে চিনি, ফলে এ সব জুস পান করা পিপাসা মেটানোর জন্য কোনো ভালো সমাধান নয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
বাবা-মায়ের উচিত বাচ্চাদের ছোটবেলা থেকেই মিষ্টি জাতীয় সফ্ট ড্রিংক পান করার অপকারিতা সম্পর্কে জানানো৷ কারণ, পরে অতিরিক্ত মোটা হয়ে গেলে তা কমানো খুবই কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়৷ সময়মতো এদিকে নজর দিলে অনেক সমস্যার সমাধান নিজে থেকেই হয়ে যায়৷ এ বিষয়ে শিশু বিশেষজ্ঞদেরও উচিত বাচ্চার বাবা-মাকে আগে থেকে জানানো, পরামর্শ ড. ডানের৷
ছবি: picture-alliance / dpa/dpaweb
তাজা ফলের জুস
মিষ্টি পানীর বদলে বাচ্চাদের কম চিনি মিশ্রিত পানীয়, চিনি ছাড়া চা এবং ঘন ও অতিরিক্ত মিষ্টি ফলের জুসের সাথে বেশি পরিমাণে পানি মিশিয়ে পান করানো যেতে পারে৷ তাজা ফলের রস প্রতিদিন না হলেও মাঝে মাঝে পান করা উচিত৷
ছবি: pressmaster/Fotolia
জীবনযাত্রায় পরিবর্তন
ডায়াবেটিস সাহায্য সংস্থার উদ্যোগে ডায়াবেটিস বন্ধ করার লক্ষ্যে একটি প্রচারণা চালানো হয়৷ সুস্থ্য জীবনযাপনের জন্য লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন, স্কুলের কাছাকাছি ছোট দোকানগুলোতে মিষ্টি জাতীয় খাবার এবং পানীয় বিক্রি বন্ধ,প্রতিদিন পুরো এক ঘণ্টা শরীর চর্চা৷ অতিরিক্ত মোটা হওয়ার মতো এমন খাবার বা পানীয়র বিজ্ঞাপন স্কুলে বন্ধ করতে হবে৷ ফাস্টফুডের দোকানগুলোতে খাবারের পাশেই লেখা থাকা প্রয়োজন খাবারে পুষ্টিগুণের তালিকা৷
ছবি: imago/imagebroker
টিভি দেখার সময় খাওয়া নয়
যখন তখন টিভির সামনে বসে চিপস বা এ জাতীয় খাবারের সাথে মিষ্টি জাতীয় পানীয় পান করা কমাতে হবে৷ অতিরিক্ত মোটা হওয়ার কারণে কিশোর-কিশোরীদের শুধু শরীরিক সমস্যা নয়, মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ারও আশঙ্কাও থাকে অনেক, মত বিশেষজ্ঞদের৷
ছবি: Fotolia/runzelkorn
8 ছবি1 | 8
তবে হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের গবেষণা থেকে অন্য একটি বিষয়ও বেরিয়ে এসেছে৷ দেখা গেছে, ২৪ হাজার স্থূলকায় মানুষের মধ্যে যাঁরা ডায়েট ড্রিংক্স পান করেন তাঁদের দেহে প্রতিদিন গড়ে ১৯৬৫ ক্যালরি যোগ হয়েছে আর যাঁরা বাজারচলতি চিনিযুক্ত পানীয় পানে অভ্যস্ত তাঁদের শরীরে যোগ হয়েছে ১৮৭৪ ক্যালরি৷ প্রশ্ন হলো, ডায়েট ড্রিংক্সে কি তাহলে উল্টো ফল হয়?
ধারণা করা হচ্ছে, মুটিয়ে যাওয়া মানুষগুলো পানীয়ের বেলায় সতর্ক হলেও খাদ্যগ্রহণে ছিলেন অসতর্ক৷ বেশি খেয়েছেন বলেই তাঁদের ক্যালরি কমেনি, মুটিয়ে যাওয়াও থামেনি৷ যুক্তরাষ্ট্রের বেভারেজ অ্যাসোসিয়েশন এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘‘ওজন কমানো বা ঠিক রাখা আপনি কতটুকু ক্যালরি খাদ্যের সঙ্গে গ্রহণ করেন আর কায়িক শ্রমের মাধ্যমে কতটা কমান – তার ভারসাম্যের ওপর নির্ভর করে৷'' বিবৃতির ইঙ্গিত খুব পরিষ্কার – আপনি পান করেন বুঝেশুনে, কিন্তু খাওয়ার বেলায় অবুঝ, ব্যায়াম বা খেলাধুলাও করেন না, তাহলে ওজন বা ক্যালরি কমবে কী করে!