কোলনে যৌননিপীড়নের ‘ঘটনায় জড়িতদের মধ্যে মাত্র তিনজন শরণার্থী' বলে যে খবর প্রচার করা হয়েছে তাকে ‘বাজেকথা' বলে উড়িয়ে এক আইনজীবী জানিয়েছেন, সন্দেহভাজনদের মধ্যে মাত্র তিনজন জার্মান, বাকি সবাই শরণার্থী৷
বিজ্ঞাপন
এ সপ্তাহে কোলনের এক আইনজীবীর বরাত দিয়ে কয়েকটি বিদেশি সংবাদমাধ্যম জানায়, গত ৩১ ডিসেম্বর উৎসবের আনন্দকে ম্লান করে দেয়া যে ঘটনা ঘটেছিল তার সঙ্গে জড়িতদের অধিকাংশই নাকি শরণার্থী নয়, মাত্র তিনজন শরণার্থী৷ সেই খবরে অবশ্য এ তথ্যও জানানো হয়, সন্দেহভাজনদের অধিকাংশই সাম্প্রতিক সময়ে মধ্যপ্রাচ্য বা আফ্রিকা থেকে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশী না হলেও তারা সেইসব অঞ্চলেরই মানুষ৷ তবে তারা অনেক আগে থেকেই জার্মানিতে রাজনৈতিক কারণে আশ্রিত বা শরণার্থী হিসেবেই বসবাস করছেন৷
তবে বার্তা সংস্থা এপিকে কোলনের আলোচিত যৌন নিপীড়ন মামলার আইনজীবী উলরিশ ব্রেমার জানিয়েছেন, সন্দেহভাজনদের অধিকাংশ শরণার্থী নয় – এই তথ্য বানোয়াট এবং এ সংক্রান্ত খবরটি নিছক ‘বাজেকথা'৷
জার্মানিতে এত শরণার্থী চায় না তারা
শরণার্থীরা তাদের গন্তব্য হিসেবে জার্মানিকে বেছে নিচ্ছে৷ জার্মানিও তাদের প্রতি সহানুভূতি দেখাচ্ছে৷ কিন্তু জার্মানিতে এত শরণার্থী চান না অনেকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘বিশ্বাসঘাতক’ ম্যার্কেল
জার্মানির ইসলাম ও অভিবাসী বিরোধী গোষ্ঠী পেগিডার হাজার হাজার সমর্থক সোমবার জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের শরণার্থী নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে৷ শরণার্থীদের প্রতি নরম মনোভাবের কারণ তারা ম্যার্কেলের বিরুদ্ধে ‘উচ্চ পর্যায়ের বিশ্বাসঘাতকতা’ ও ‘জার্মানির মানুষের বিরুদ্ধে অপরাধ’-এর অভিযোগ আনেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Settnik
শরণার্থীদের নিয়ে কটূক্তি
পেগিডার (প্যাট্রিয়টিক ইউরোপিয়ান অ্যাগেনস্ট দ্য ইসলামাইজেশন অফ দ্য অক্সিডেন্ট) প্রতিষ্ঠাতা লুটৎস বাখমান সম্প্রতি শরণার্থীদের ‘পশু’, ‘আবর্জনা’ ও ‘উচ্ছৃঙ্খল জনতা’ বলে আখ্যায়িত করেন৷ এ জন্য তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেছে সরকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O.Berg
সমাজে অন্তর্ভুক্তি সম্ভব নয়
সোমবার বিক্ষোভের সময় বাখমান বলেন, শরণার্থীর সংখ্যা দেড় কিংবা দুই মিলিয়নেই থেমে থাকবে না৷ এরপর আসবে তাদের স্ত্রী; আসবে এক, দুই কিংবা তিন সন্তান৷ ফলে এতগুলো লোকের জার্মান সমাজে অন্তর্ভুক্তির কাজ অসম্ভব হয়ে পড়বে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Settnik
জার্মান সরকারের অস্বীকার
জার্মানির জনপ্রিয় পত্রিকা ‘বিল্ড’ সরকারের গোপন ডকুমেন্টের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, চলতি বছর জার্মানিতে প্রায় দেড় মিলিয়ন শরণার্থী আসবে বলে মনে করছে সরকার৷ যদিও প্রকাশ্যে সরকার বলছে সংখ্যাটা এক মিলিয়ন হতে পারে৷ তবে জার্মান সরকারের এক মুখপাত্র এ ধরনের কোনো গোপন ডকুমেন্টের কথা তিনি জানেন না বলে সাংবাদিকদের বলেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Thalia Engel
শরণার্থীর মৃত্যু
জার্মানির পূর্বাঞ্চলের এক শরণার্থীদের বাসস্থানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ইরিত্রিয়া থেকে আসা ২৯ বছরের এক শরণার্থীর মৃত্যু হয়েছে৷ অগ্নিকাণ্ডের কারণ এখনও জানা যায়নি৷ এদিকে, জার্মান সরকারের হিসেবে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছর শরণার্থী ও তাদের বাসস্থানের উপর হামলার সংখ্যা বেড়েছে৷ এ বছরের প্রথম ছয় মাসেই এরকম ২০২টি ঘটনা ঘটেছে বলে সরকার জানিয়েছে, যেখানে গত বছর সংখ্যাটি ছিল ১৯৮৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিপদে ম্যার্কেল
শরণার্থীদের সঙ্গে এমন আচরণের কারণে নিজ দল সহ অন্যান্য দলের রাজনীতিবিদদের তোপের মুখে পড়েছেন ম্যার্কেল৷ তাঁরা জার্মানির শরণার্থী নীতি ও শরণার্থীদের আগমনের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে চ্যান্সেলরকে আরও কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন৷
ছবি: Reuters/F. Bensch
6 ছবি1 | 6
গত ৩১ ডিসেম্বর রাতের যৌন নিপীড়ন, ছিনতাই ও ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত বলে যাদের সন্দেহ করা হচ্ছে তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে গিয়ে তিনি আরো বলেন, এ পর্যন্ত মোট ৭৩ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে, তাদের মধ্যে ৩০ জন মরোক্কা থেকে, ২৭ জন আলজেরিয়া থেকে, ৪ জন ইরাক, ৩ জন সিরিয়া, ৩ জন তিউনিসিয়া থেকে আর একজন করে আছেন যারা লিবিয়া, ইরান এবং মন্টেনেগ্রো থেকে এসেছেন জার্মানিতে৷ বাকি ৩ জন জার্মান৷
মামলার সংখ্যা এবং ধরণ সম্পর্কেও জানিয়েছেন উলরিশ ব্রেমার৷ তাঁর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত মোট ১ হাজার ৭৫টি মামলা হয়েছে, যার মধ্যে ৪৬৭টি যৌন নিপীড়ন, নির্যাতন বা ধর্ষণের অভিযোগসংশ্লিষ্ট৷
আইনজীবী উলরিশ ব্রেমার আরো জানান, সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত ৭৩ জনের মধ্যে ১২ জনের বিরুদ্ধে সরাসরি যৌন নিপীড়নের অভিযোগ রয়েছে৷ তবে ওই ১২ জনের মধ্যে মাত্র একজন এই মুহূর্তে কারাগারে৷ কারাবন্দি ব্যক্তি ২০১৫ সালের নভেম্বরে মরক্কো থেকে জার্মানিতে এসে ‘রাজনৈতিক আশ্রয়' চেয়েছেন৷
এসিবি/ডিজি (এপি)
আপনার কী মনে হয়? কোলন-কাণ্ডে আসলে কারা জড়িত? জানান আপনার মতামত৷
জুতা যতদূর নিয়ে যায়
শরণার্থীরা জার্মানির কোলন-বন বিমানবন্দরে পৌঁছালে একজোড়া করে নতুন জুতা পান৷ কয়েক’শ কিলোমিটার যাত্রার পর পুরানো জুতার অবস্থা বেহাল হয়ে পড়ে৷ সেই জুতার দিকে তাকালে তার মালিকের করুণ কাহিনি স্পষ্ট হয়ে উঠে৷
ছবি: Tanja Schmieder
জয়নাব, ৩৭, বাগদাদের বাসিন্দা
এই জুতাজোড়া ৪,৬০০ কিলোমিটারের বেশি পথ অতিক্রম করেছে৷ এই জুতা পরে ইরাক থেকে রওয়ানা হয়ে জয়নাব প্রায় ১৮ দিন ধরে যাত্রা করেছেন৷ আদম ব্যবসায়ীদের কুখ্যাত নৌকাতেও চড়তে হয়েছে তাঁকে৷ তুরস্ক ও গ্রিসের মধ্যে দুর্ঘটনা সত্ত্বেও সপরিবারে জীবিত অবস্থায় গন্তব্যে পৌঁছতে পেরেছেন তিনি৷
ছবি: DW/N. Shtrauchler
ক্লান্ত, বিধ্বস্ত
জয়নাব (বামে) ও তাঁর ভাবী হায়াতের মুখে প্রায় তিন সপ্তাহের কঠিন যাত্রার ফলে ক্লান্তির ছাপ দেখা যাচ্ছে৷ তাঁরা দু’জনেই নীরব রয়েছেন৷ জয়নাবের স্বামী সালিম দাবি করছেন, যে অস্ট্রিয়া-জার্মানির সীমান্তে তাঁদের মারধোর করা হয়েছে৷
ছবি: DW/N. Shtrauchler
মোরতাজার, ৫, হেলমন্দ, আফগানিস্তান
যুদ্ধ ও সন্ত্রাস থেকে পালাবার সময় পছন্দ-অপছন্দের কোনো অবকাশ থাকে না৷ যেমন এই বালককে মেয়েদের জুতা পরেই ভিটেমাটি ছাড়তে হয়েছে৷ যাত্রাপথেই কোথাও এই জুতা কুড়িয়ে পায় ছেলেটি৷ ২১ দিন ধরে সাড়ে ছয় হাজার কিলোমিটারেও বেশি পথ অতিক্রম করেছে মোরতাজার৷ তার মধ্যে প্রায় ১২ ঘণ্টা বরফ-ঢাকা পথ দিয়ে যেতে হয়েছে তাকে৷
ছবি: DW/N. Shtrauchler
হতবাক
মোরতাজারকে কোনো প্রশ্ন করলে সে ফিসফিস করে তার জবাব দেয়৷ ছেলেটির অভিজ্ঞতা সম্পর্কে কেউ কিছু জানে না৷ কিন্তু তার চোখের দিকে তাকালে গভীর বেদনা ও ক্লান্তি অনুভূতি দেখা যায়৷ পাঁচ বছরের এই বালক তার বড় বোনের সঙ্গে জার্মানিতে এসেছে৷ তালেবান তাদের বাবাকে হত্যা করেছে৷ বয়সের কারণে মা এই যাত্রায় সঙ্গী হতে পারেননি৷
ছবি: DW/N. Shtrauchler
হাসান ইউসেফ বারাকাত, সিনজার, ইরাক
কালো, সুন্দর এই জুতোজোড়া দেখলে মনে হবে কোনো স্যুট-টাই পরা মানুষ এর মালিক৷ কিন্তু ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের হাসান ইউসেফ অতি সাধারণ জামাকাপড় পরে ইরাকের উত্তরে সিনজার থেকে রওয়ানা দিয়ে ৪,৩০০ কিলোমিটারের বেশি পথ অতিক্রম করেছেন৷
ছবি: DW/N. Shtrauchler
নিশ্চিন্ত...
এবং উত্তেজিত হাসান ইউসেফ৷ বিমানবন্দরের তাঁবুতে ঢুকে শান্তি পেয়েছেন তিনি৷ এক সাহায্যকারীর কাছ থেকে মোবাইল ফোন চেয়ে নিয়ে নিজের ভাগ্নেকে পৌঁছ সংবাদ দিলেন তিনি৷ স্ত্রীকে নিয়ে প্রায় ১৫ দিন যাত্রার পর অবশেষে জার্মানিতে পৌঁছেছেন তিনি৷ স্মৃতিশক্তিও ঠিকমতো কাজ করছে না৷
ছবি: DW/N. Shtrauchler
সিয়াওয়ার, হাজারাজাত, আফগানিস্তান
এই তরুণ মা বড়ই লাজুক৷ বেশি কিছু বলতে চান না৷ শুধু জানা গেছে, যে তিনি সংখ্যালঘু হাজারা সম্প্রদায়ের মানুষ৷ তালেবানের নিপীড়নে তাদের টেকাই দায়৷ ৬,৮০০ কিলোমিটারের বেশি পথ পাড়ি দিয়ে তিনি জার্মানিতে পৌঁছেছেন৷ পায়ের আঙুল অক্ষত রাখতে মোটা মোজার উপর পাতলা স্নিকার্স পরেছেন৷
ছবি: DW/N. Shtrauchler
মনে ভীতি
ফটো তোলার সময়েও সাহারনাজ তাঁর মা সিয়াওয়ারকে চোখে চোখে রেখেছিল৷ বয়স মাত্র দেড় বছর৷ জার্মানিতে এসে স্ট্রলার পেয়েছে তারা৷ তার আগে মেয়েকে বেশিরভাগ সময়ে কোলে নিয়ে থাকতে হতো৷ কেন তাদের ভিটেমাটি ছাড়তে হয়েছে, ক্লান্ত ছোট্ট মেয়েটি সেটা বুঝতে পারছে না৷