ইচ্ছে করেই বিমান বিধ্বস্ত করেছিলেন জার্মান কো-পাইলট? একসময় তিনি ‘আত্মহত্যাপ্রবণ' ছিলেন- এ তথ্য বেরিয়ে আসার পর প্রশ্নটা আরো বড় হয়েছে৷ বিমান কর্তৃপক্ষ বলছে, অনুমানভিত্তিক তথ্যকে গুরুত্ব দেয়া অনুচিত৷
বিজ্ঞাপন
ফ্রেঞ্চ আল্পসে বিধ্বস্ত জার্মানউইংসের বিমানের কো-পাইলট আন্দ্রেয়াস লুবিৎস শারীরিক এবং মানসিকভাবে বিমান চালানোর উপযুক্ত ছিলেন না- কিছু তথ্যের ভিত্তিতে এমনটি প্রমাণ করার চেষ্টা শুরু হলেও এমন সিদ্ধান্তকে অনুমানভিত্তিক মনে করার পক্ষে জার্মান বিমান কর্তৃপক্ষ যুক্তিও দেখিয়েছে৷ ড্যুসেলডর্ফের প্রসিকিউটর অফিসের কর্মকর্তা হেয়ারেনব্রুক জানিয়েছেন, আন্দ্রেয়াস লুবিৎসের শারীরিক এবং মানসিক সমস্যা সম্পর্কে যেসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে তার সবই তাঁর জার্মানউইংসে কর্মজীবন শুরুর আগের৷ তিনি জানান, লুবিৎস একসময় মনস্তাত্ত্বিকের পরামর্শ নিতেন এবং তখন তাঁর মাঝে ‘আত্মহত্যার প্রবণতা' ছিল, এটা হয়তো ঠিক৷ তবে তাঁর সেই অবস্থাটা ছিল বৈমানিক হিসেবে কাজ শুরুর আগে৷ হেয়ারেনব্রুক জানান, ২০১৩ সালে বৈমানিকের সনদ পাওয়ার পর থেকে একবারও তাঁর মধ্যে সেরকম কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি৷ অথচ নিয়ম অনুযায়ী নিয়মিতই তিনি স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়েছেন এবং সেই প্রক্রিয়ায় মানসিক স্বাস্থ্যের পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হতে হয়েছে তাঁকে৷ সুতরাং চাকরিতে যোগ দেয়ার পর থেকে দুর্ঘটনার দিন পর্যন্ত লুবিৎসকে অসুস্থ বা অনুপযুক্ত ভাবার কোনো কারণ ছিলনা- এমন মত প্রকাশ করে হেয়ারেনব্রুক জানান, জার্মান কর্তৃপক্ষ কোনো রকমের অনুমানভিত্তিক আলোচনায় অংশ নেবেনা৷
জার্মানিতে কিশোর-কিশোরীদের মানসিক সমস্যা
কিশোর-কিশোরীরা ভোগেন নানা মানসিক সমস্যায়৷বড়রা ওদের দিকে একটু খেয়াল রাখলেই হয়তো বেচে যেতে পারে ফুলের মতো সুন্দর অনেক জীবন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কেমন আছে নিজের সন্তান ?
অনেক মা-বাবা প্রায়ই জানেন না যে তাদের আদরের সন্তান কেমন আছে৷ ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সিদের মৃত্যুর প্রধান কারণ দুর্ঘটনা আর দ্বিতীয় স্থানেই রয়েছে আত্মহত্যা৷ জার্মানিতে প্রায় প্রতিদিনই দু’একজন আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে৷
ছবি: fotolia/Mikael Damkier
শেষ চিঠি
লেনার মা সুজানে বলেন, তাঁর মেয়ে ১৬ বছর বয়সে ব্লেড এবং ছুরি দিয়ে কয়েকবারই আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলো৷ প্রথমদিকে বাবা-মা বা স্কুলের শিক্ষক কেউ সেটা খেয়ালই করেনি৷ চিঠির বাক্সে লেনার লেখা বিদায়ী চিঠি পেয়ে বুঝেছেন, যে তাঁর মেয়ে মানসিক সমস্যায় ভুগছে, জরুরি সাহায্য বা চিকিৎসার প্রয়োজন৷
ছবি: DW/Janine Albrecht
অনুভূতির প্রকাশ
হাইডেলব্যার্গ ইউনিভার্সিটি ক্লিনিকের প্রফেসার ড. রমুয়াল্ড ব্রুনার বলেন, যদি কেউ নিজের হাত বা পায়ের রগ কেটে ফেলে বা এ ধরনের কিছু একটা করে বসে, তাহলে বুঝতে হবে এটা ওদের রাগ, দুঃখ বা হতাশার প্রকাশ মাত্র৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নিজেকে কষ্ট দেওয়া
১৪ থেকে ১৬ বছর বয়সি কিশোর-কিশোরীদের ওপর একটি সমীক্ষা চালানো হয় এবং সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের পরিচয় গোপন রাখা হয়৷ সমীক্ষার ফলাফলে ছেলেদের মধ্যে ৮ জন এবং মেয়েদের মধ্যে ১৮ জন স্বীকার করেছে, তাদের এই ছোট্ট জীবনে অন্তত তিনবার হাত পা কেটেছে, নিজেদের কষ্ট দিয়েছে, তাদের জীবনের দুঃখ, কষ্ট বা হতাশা ভুলে যাবার জন্য৷
ছবি: picture-alliance/ dpa/dpaweb
ইন্টারনেট, ফেসবুক, মোবাইল
আজকের আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির যুগে এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা অনেকেই যোগাযোগের জন্য বেছে নেয় কৃত্রিম মাধ্যম ইন্টারনেট, ফেসবুক৷ তাদের মধ্যে অনেকেই ইন্টারনেট নেশাগ্রস্ত৷ এদের অনেকের মতে, মোবাইল ছাড়া জীবন চলাই সম্ভব নয়৷
ছবি: Fotolia/Konstantin Yuganov
আসল বন্ধু পাওয়া যায়না
একথা ঠিক, যে আজকের দিনে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যোগাযোগ অনেক সহজ হয়েছে এবং ব্যবহারও হচ্ছে৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব যোগাযোগ আসল বন্ধু পেতে কোনো কাজে আসেনা৷ বরং এসব বিষণ্ণতার দিকেই ঠেলে নিয়ে যায় এবং ভয় ও আত্মহত্যার চিন্তা করতে সহায়তা করে৷
ছবি: picture-alliance/ZB
বসঃসন্ধিকাল
ছেলে মেয়েদের বসঃসন্ধির সময় ওদের আত্মসম্মানবোধ, অকারণেই মন খারাপ হওয়া বা ঘুমের সমস্যা দেখা দেওয়া প্রাকৃতিক নিয়মেই ঘটে থাকে৷ তবে এ সব সমস্যা যদি ঘনঘন দেখা দেয় বা বাড়াবাড়ি হয়, তাহলে সেটা মানসিক অসুস্থতা বলেই ধরতে হবে এবং চিকিৎসকের সাহায্য নিতে হবে, বলেন ড.ব্রুনার৷
ছবি: Fotolia/Alliance
শিক্ষকদের এগিয়ে আসতে হবে
কিশোর-কিশোরীদের এই ধরনের সমস্যায় স্কুলের শিক্ষকদের আরো বেশি এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আলোচনা করতে হবে
মানসিক সমস্যায় শিশু, কিশোর, তরুণ, যুবক, ছোট-বড় অনেকেই ভোগে এবং আত্মহত্যার মতো পথ বেছে নেয়৷ এ ধরনের সমস্যাগুলোর শুরুতেই গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন বলে মনে করেন মনোবিজ্ঞানীরা৷
ছবি: Fotolia/JenKedCo
শরীর চর্চা
রাগ, দুঃখ বা হতাশা থেকে সহজে বের হওয়ার উপায় শারীরিকভাবে বা অন্য কোনোভাবে ব্যস্ত থাকা৷ কোনো কাজে যুক্ত হওয়া৷ হতে পারে খেলাধুলা বা যে কোনো ধরনের শরীরচর্চা৷ হতে পারে বাগানের কাজে কাউকে সাহায্য করা, যে কাজ সত্যিকার অর্থেই মনকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
10 ছবি1 | 10
তাতেও অবশ্য বিতর্কের অবসান হয়নি৷ সংবাদ মাধ্যমে এমন খবরও এসেছে যে, লুবিৎস এক সময় মানসিক বিষাদ কাটাতে নিয়মিত ওষুধ খেতেন, চোখেও নাকি সমস্যা ছিল তাঁর৷ তাই প্রশ্ন উঠেছে- এমন একজনকে বিমান চালনার সুযোগ দেয়া হলো কীভাবে?
জার্মানির কেন্দ্রীয় বিমান কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র কর্নেলিয়া ক্রামার জানান, বিমান চালকের স্বাস্থ্য পরীক্ষার বিষয়টি সরাসরি তাঁদের হাতে নেই৷ বৈমানিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন প্রশিক্ষিত চিকিৎসকরা৷ তাঁদের প্রতিবেদন যায় সংশ্লিষ্ট বিমান সংস্থার কাছে৷ বিমান সংস্থা পরে সেই প্রতিবেদন পাঠায় কেন্ত্রীয় বিমান কর্তৃপক্ষের কাছে৷ তবে মনস্তত্ববিদ হান্স-ভ্যার্নার টাইশম্যুলার তুলে ধরেছেন অন্য একটি দিক৷ তিনি জানান, চিকিৎসকদের একটা পর্যায়ে রোগীর কথার ওপরে বিশ্বাস করেই সিদ্ধান্ত নিতে হয়৷ রোগী যদি তাঁর সাম্প্রতিক মানসিক অবস্থা সম্পর্কে কোনো তথ্য গোপন করেন তাহলে চিকিৎসকের কিছু করার থাকেনা৷ প্রশ্ন হলো, আন্দ্রেয়াস লুবিৎসও কি শেষ দিকে কোনো কারণে আবার বিষাদগ্রস্থ হয়ে পড়েছিলেন এবং সেই তথ্য কি তিনি গোপন করেছেন?