কে হচ্ছেন শ্রীলংকার পরবর্তী প্রেসিডেন্ট?
১৬ নভেম্বর ২০১৯নতুন প্রেসিডেন্ট শ্রীলংকার ভূরাজনৈতিক কৌশলের উপর প্রভাব রাখবেন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা৷
এক নজরে নির্বাচনের খুঁটিনাটি
-
বিভিন্ন দলের মোট ৩৫জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দীতা করছেন৷ এটি শ্রীলংকার ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখক প্রার্থী৷ সর্বশেষ নির্বাচনে মোট প্রার্থী ছিল ২২ জন৷
-
প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন দুজন বৌদ্ধ ধর্মীয় নেতা, চারজন মুসলিম ধর্মীয় নেতা ও একজন নারী
-
দেশটির ভোটার সংখ্যা প্রায় ১৬ মিলিয়ন৷
-
নির্বাচনে জয়ী হতে হলে একজন প্রার্থীকে শতকরা ৫০ ভাগের বেশী ভোট পেতে হবে৷
-
বর্তমান প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী কেউই প্রার্থী নন৷ শ্রীলংকার ইতিহাসে এমন ঘটনা প্রথম৷
-
আগামী বছর দেশটির জাতীয়সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে৷
তীব্র প্রতিযোগিতায় প্রার্থীরা
মোট ৩৫জন প্রার্থী থাকলেও প্রতিযোগিতায় এগিয়ে আছেন মূলত দুজন প্রার্থী৷ তাঁরা হলেন শ্রীলংকা পডুজানা পেরামুনা দল থেকে মনোনীত গোতাভায়া রাজাপাকসে আর ন্যশনাল ডেমোক্র্যাটিক দলের সজিত প্রেমাদাসা৷
নির্বাচনকে সামনে রেখে এ দুজন অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে বড় দুটি জোট গড়তে সমর্থ হয়েছেন৷ তবে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ভোটাররা কাকে বেছে নিবেন এ বিষয়ে কোন ধারণা করতে পারছেন না বিশ্লেষকরা৷
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সিংহল গোষ্ঠীর কাছে বেশ জনপ্রিয় গোতাভায়া রাজাপাকসে৷ সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দ রাজাপাকসের ছোট ভাই গোতাভায়া রাজাপাকসে ২০০৯ সালে তামিল বিদ্রোহীদের দমণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন৷
গত এপ্রিলের বোমাহামলার পর সংখ্যাগরিষ্ঠ সিংহল গোষ্ঠীর সদস্যরা প্রেসিডেন্ট হিসেবে এমন একজনকে দেখতে চাইছেন যিনি দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার বিষয়ে কৌশলগত সমাধান দিতে পারবেন৷
নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সিংহল গোষ্ঠীর প্রথম পছন্দ গোতাভায়া রাজাপাকসে, ডয়চে ভেলেকে বলেন হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এবং শ্রীলংকার ওপেন ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ড. হারশানা রাম্বুকএয়েলা৷
তবে তাঁর বিরুদ্ধে গুম, খুনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগও রয়েছে, যেটি প্রতিযোগিতায় তাঁকে কিছুটা পেছনে ফেলতে পারে, বলেন তিনি৷
অন্যদিকে সজিত প্রেমাদাসা দারিদ্রদূরীকরণসহ উন্নয়নমূখী প্রকল্পের জন্য ভোটারদের কাছে বেশ জনপ্রিয় বলে জানা গেছে৷ বর্তমান সরকারের গৃহায়ণমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপালনরত প্রেমাদাসা তাঁর রাজনৈতিক ইশতেহারে দারিদ্রবিমোচনের বিষয়াদিকে বেশি গুরুত্ব দিতে দেখা গেছে৷
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন প্রেসিডেন্ট হতে হলে দেশটির সংখ্যালঘু মুসলিম ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ভোট পাওয়াটাও জরুরি৷
এপ্রিলের বোমা হামলার পর এ দুই সম্প্রদায়ে মধ্যে এক ধরনের অবিশ্বাস জন্ম নিয়েছে আর যে কারণে এ সংখ্যালঘুরা মূলত কোন প্রার্থীর উপর রাজনৈতিক আস্থা রাখবে সে বিষয়টি অনুমান করা যাচ্ছে না৷
সতর্ক ভারত ও চীন
ভৌগলিকভাবে শ্রীলংকা একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থাকায় দির্ঘদিন ধরেই নয়া দিল্লি ও বেইজিং কলম্বোতে নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান শক্তিশালী করার প্রতিযোগীতায় ন্যাস্ত৷
২০০৫ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত মাহিন্দ রাজাপাকসের শাসনামলে শ্রীলংকার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক খাতে চীনের সরব উপস্থিতি দেখা গেছে৷
তবে ২০১৫ সালে মাইথ্রিপালা সিরিসেনা ক্ষমতায় আসার পর এ সম্পর্কে ভাটা পড়তে দেখা গেছে৷
এদিকে গোতাভায়া রাজাপাকসে ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন যে, তিনি ক্ষমতায় আসলে বেইজিংয়ের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করবেন৷
এ বিষয়ে ড. হারশানা ডয়চে ভেলেকে বলেন রাজাপাকসে ক্ষমতায় আসলে তা ভারত-শ্রীলংকার রাজনৈতিক সম্পর্কে কি প্রভাব পড়বে সেটি দেখার বিষয় কেননা তিনি বেইজিং ঘেঁষা রাজনীতিবিদ হিসেবেই পরিচিত৷
তবে রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রেমাদাসা ভারত ও পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে জোর দেবেন বলে মনে করেন অনেকেই, বলেন তিনি৷