ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচনের পর ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্টসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে রদবদলের লক্ষ্যে উদ্যোগ শুরু হয়েছে৷ তবে শীর্ষ নেতাদের মতপার্থক্যের ফলে এই প্রক্রিয়া জটিল হয়ে উঠেছে৷
বিজ্ঞাপন
রবিবার ইইউ পার্লামেন্ট নির্বাচনের পর ইউরোপের ক্ষমতাকেন্দ্রে বেশ বড় রদবদল ঘটেছে৷ মধ্যপন্থি দুই শিবির ভোটারদের সমর্থন হারিয়েছে৷ অন্যদিকে সবুজ ও উদারপন্থি শিবিরের শক্তি বেড়েছে৷ এই পরিবর্তিত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে শীর্ষ নেতারা মঙ্গলবার ব্রাসেলসে মিলিত হলেন৷ পার্লামেন্ট নির্বাচনের পর ইউরোপীয় কমিশনসহ বিভিন্ন ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠানের নতুন নেতৃত্ব বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ঐকমত্য গড়ে তোলাই ছিল তাঁদের প্রধান উদ্দেশ্য৷ আগামী ২০ ও ২১শে জুন পরবর্তী শীর্ষ বৈঠকের আগেই কমিশনের শীর্ষ পদগুলির জন্য প্রার্থী তালিকা স্থির করতে চান তাঁরা৷ এছাড়া ইইউ পরিষদ, ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও ইইউ পররাষ্ট্র নীতির দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান কর্মকর্তার পদের জন্যও নাম স্থির করতে হবে৷
মঙ্গলবারের বৈঠকে অবশ্য গোটা প্রক্রিয়া নিয়ে শীর্ষ নেতাদের মধ্যে মৌলিক মতপার্থক্য উঠে এসেছে৷ বিশেষ করে এই প্রশ্নে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ ও জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের মধ্যে সংঘাত স্পষ্ট হয়ে উঠেছে৷ এতকাল ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সংসদীয় দলগুলি যে যার শীর্ষ প্রার্থীকে ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট পদের জন্য মনোনীত করে এসেছে৷ ইইউ শীর্ষ নেতাদের কমপক্ষে দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থনের পাশাপাশি ইউরোপীয় পার্লামেন্টে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলে তবেই কোনো প্রার্থী কমিশনের প্রেসিডেন্ট হতে পারেন৷
মাক্রোঁসহ একাধিক নেতা এই রীতির বিরোধী৷ কোনো ব্যক্তির নাম নিয়ে আলোচনার বদলে জলবায়ু পরিবর্তন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলি সামনে রেখে তার ভিত্তিতে কোনো প্রার্থীর অভিজ্ঞতা, জ্ঞান, বিশ্বাসযোগ্যতা বিচার করতে চান তাঁরা৷ অন্যদিকে ম্যার্কেলসহ বাকি নেতারা বর্তমান রীতি অনুযায়ী ঐকমত্যের ভিত্তিতে মনোনীত প্রার্থীদের মধ্যে থেকে কমিশনের প্রেসিডেন্ট বাছাইয়ের পক্ষে৷ ম্যার্কেল বলেন, একমাত্র এভাবেই ইইউ ভবিষ্যতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারবে৷
উল্লেখ্য, ম্যার্কেল রক্ষণশীল শিবিরের প্রার্থী মানফ্রেড ভেবার-এর প্রতি পূর্ণ সমর্থন দেখাচ্ছেন৷ অন্যদিকে মাক্রোঁ বর্তমান ইইউ কমিশনর মার্গ্রেটে ভেস্টাগার, কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফ্রান্স টিমারমান্স ও ইইউ-র ব্রেক্সিট মধ্যস্থতাকারী মিশেল বার্নিয়ে-র মতো অভিজ্ঞ ও দক্ষ প্রার্থীর মনোনয়নের পক্ষে৷ ফলে ভেবার-এর জয়ের সম্ভাবনা কিছুটা কমে যাচ্ছে৷ শীর্ষ পদগুলির ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের ভারসাম্য বজায় রাখার পক্ষেও সওয়াল করেছেন মাক্রোঁ-সহ অনেকেই৷
সবার জন্য ইউরোপ: ইইউ নির্বাচনের আগে গর্বিত ইউরোপীয়দের সমাবেশ
আগামী ২৩ থেকে ২৬ মে অবধি অনুষ্ঠিতব্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-এর নির্বাচনের আগে জার্মানিসহ ইউরোপের বিভিন্ন শহরে সমবেত হয়েছেন অনেক মানুষ৷ উদ্দেশ্য ইইউ’র প্রতি সমর্থন জানানো৷
ছবি: Getty Images/T. Lohnes
সবার জন্য একটি ইউরোপ
‘সবার জন্য একটি ইউরোপ’ শিরোনামে জার্মানির রাজধানী বার্লিনে রবিবার জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ ব্রেক্সিটের পর জার্মানির ঐতিহাসিক রাজধানীটি হবে ইইউ’র সবচেয়ে বড় শহর, যেখানে বিদেশি বংশোদ্ভূত অনেক মানুষ বসবাস করেন৷ তাঁদের অধিকাংশই এসেছেন ইইউভুক্ত দেশ, বিশেষ করে পোল্যান্ড, ইটালি, ফ্রান্স এবং ক্রোয়েশিয়া থেকে৷
ছবি: Getty images/AFP/O. Messinger
রাজপথে হাজার হাজার মানুষ
রবিবার সকালে বার্লিন মার্চে অংশ নিতে আগে থেকেই নিবন্ধন করিয়েছিলেন তিন হাজারের মতো মানুষ৷ ইউরোপীয় সংসদের ৭৫১টি আসনের মধ্যে জার্মানিতে নির্বাচিত সংসদ সদস্যের সংখ্যা ৯৬, যা ব্লকটির মধ্যে একক কোনো দেশের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সংখ্যা৷
ছবি: Getty images/AFP/O. Messinger
ইউরোপের পক্ষে ফ্রাঙ্কফুর্ট
ফ্রাঙ্কফুর্টে অবস্থিত ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘সিটে’ ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষে সমর্থন জানাতে শহরটিতে কয়েক হাজার মানুষ মিছিল করেছেন৷ সেখানে পরিবেশবাদী বিভিন্ন গোষ্ঠীর পাশাপাশি রাজনৈতিক দল, গির্জা সংগঠন এবং নারী অধিকার অ্যাক্টিভিস্টদেরও দেখা গেছে৷
ছবি: Getty Images/T. Lohnes
কোলনে সমবেত ৪৫,০০০ মানুষ
কোলনে ‘সবার জন্য একটি ইউরোপ’ সমাবেশ ৪৫,০০০-এর মতো মানুষ অংশ নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা৷ অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে জার্মানির সামাজিক গণতন্ত্রী দল (এসপিডি)-র শীর্ষনেতা আন্দ্রেয়া নালেস এবং জার্মান বিচারমন্ত্রী কাটারিনা বার্লের মতো বড় মাপের রাজনীতিবিদরাও ছিলেন৷
ছবি: DW/R.Staudenmaier
‘ইউরোপকে উদ্ধার করুন’
কোলনের ব়্যালিতে ‘ইউরোপীয় শান্তি প্রকল্পকে উদ্ধার করুন’ শীর্ষক ব্যানারও দেখা গেছে৷ অনেক ইউরোপীয় এ কারণে উদ্বিগ্ন যে জার্মানির উগ্র ডানপন্থি এএফডি দলের মতো রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনি ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে ইউরোপবিরোধী অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে পারে যেমনটা যুক্তরাজ্যে ব্রেক্সিটের সমর্থকরা করেছেন৷
ছবি: Reuters/T. Schmuelgen
‘স্ট্রাখে, আপনি নব্য নাৎসি’
অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনাতে ইউরোপের পক্ষে সমাবেশ করেছেন কয়েক হাজার মানুষ৷ তাঁরা দুর্নীতির দায়ে সদ্য পদত্যাগ করা দেশটির উগ্র ডানপন্থি ভাইস চ্যান্সেলর হাইন্স ক্রিস্টিয়ান স্ট্রাখেকে ‘নব্য নাৎসি’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন৷ অস্ট্রিয়ায় ১৯৫৬ সালে প্রাক্তন নাৎসিদের তৈরি উগ্র ডানপন্থি দল ফ্রিডম পার্টি ২০১৭ সালের অক্টোবর থেকে ক্ষমতাসীন জোটের অংশ হিসেবে দেশটি শাসন করছে৷
ছবি: picture-alliance/PA/picturedesk/H. P. Oczeret
বর্ণবাদের বিরুদ্ধে অস্ট্রীয়রা
অস্ট্রিয়ার ক্ষমতাসীন জোটের বিরুদ্ধে ইউরোপন্থিদের যেসব অভিযোগ রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ইউরোপের বাইরে থেকে আসা অভিবাসীদের কমাতে নানারকম উদ্যোগ নিয়েছে জোটটি৷ ইউরোপের অন্যান্য কয়েকটি দেশের উগ্র ডানপন্থি দলগুলোকেও সাহস জোগাচ্ছে তারা৷
ছবি: Reuters/L. Niesner
ইউরোপের মধ্যে পোল্যান্ড
ইইউ সদস্যভুক্ত দেশ ইটালি, স্পেন, নেদারল্যান্ডস, এবং পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশ’তেও ব়্যালি দেখা গেছে৷ বিচার ব্যবস্থায় বিতর্কিত এক সংস্কার নিয়ে দেশটির সঙ্গে, যেখানে ক্ষমতায় রয়েছে ডানপস্থি জাতীয়তাবাদী দল, ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক আইনি লড়াই চলছে এখন৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Skarzynski
ইইউ’র প্রেসিডেন্ট থেকে পোলিশ প্রেসিডেন্ট?
ইইউ কাউন্সিলের বর্তমান প্রেসেডেন্ট ডোনাল্ড টুস্ক নিজের দেশ পোল্যান্ডে ব়্যালিতে অংশ নিয়েছিলেন৷ পোল্যান্ডের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর কাউন্সিল প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব শেষ হবে ডিসেম্বর মাসে এবং ধারণা করা হচ্ছে যে, তিনি ২০২০ সালে পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট পদের জন্য লড়বেন৷