যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলছে। দেশটির ৪৭তম প্রেসিডেন্ট বেছে নিতে ভোট দিচ্ছেন ভোটারেরা।
বিজ্ঞাপন
নির্বাচনে বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ও রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে আভাস দিয়েছে বিভিন্ন জনমত জরিপ। নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে প্রায় ৮ কোটি ১০ লাখ ভোটার এরই মধ্যে আগাম ভোট দিয়েছেন।
মঙ্গলবার নির্বাচন শুরুর আগে সোমবার ট্রাম্প এবং হ্যারিস দুই প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীই প্রচার চালালেন গুরুত্বপূর্ণ সুইং স্টেট পেনসিলভানিয়ায়। এই একটি রাজ্য থেকে ১৯টি ইলেকটোরাল ভোট পেতে পারেন দুই প্রার্থীই। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার জন্য প্রয়োজন ২৭০টি ইলেকটোরাল ভোট। ভোট পূর্ববর্তী বিশ্লেষণ এবং জনমত সমীক্ষা বলছে, হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হচ্ছে দুই প্রার্থীর মধ্যে। জনমত প্রায় সমানভাবে বিভাজিত দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর মধ্যে।
গোড়া থেকেই এবার নাটকীয় মোড় নিয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। একাধিক মামলায় জর্জরিত সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প শেষ পর্যন্ত রিপাবলিকান প্রার্থী হতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় ছিল। বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে নিয়েও বহু নাটক হয়েছে। প্রাথমিকভাবে তিনিই এবার রিপাবলিকান প্রার্থী হিসেবে প্রচার শুরু করেছিলেন। জনমত সমীক্ষায় ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছিলেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে আচমকাই ডেমোক্র্যাট নেতৃত্ব তার জায়গায় প্রার্থী হিসেবে সামনে নিয়ে আসেন কমলা হ্যারিসের নাম। কার্যত প্রচারের মধ্য পর্ব থেকে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে আসরে নামেন বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট। তিনি প্রচারে নামার পর ট্রাম্পের দিক থেকে হাওয়া অনেকটাই ঘুরে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন: যে রাজ্যগুলোর ফলাফল পার্থক্য গড়ে দেবে
কমলা হ্যারিস না ডনাল্ড ট্রাম্প কে হবেন পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট তা নির্ধারিত হতে পারে মুষ্টিমেয় কয়েকটি রাজ্যর ফলাফলে৷ এই রাজ্যগুলো পরিচিত ‘সুইং স্টেট’ নামে৷
ছবি: Mario Tama/Getty Images
সুইং স্টেট কেন গুরুত্বপূর্ণ
যুক্তরাষ্ট্রে মোট ৫০টি রাজ্য৷ প্রতিটির রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন সংখ্যক ইলেক্টোরাল ভোট৷ কোন একটি রাজ্যে যেই প্রার্থী জয়ী হবেন তিনি সবকটি ইলক্টোরাল ভোট পাাবেন৷ ব্যতিক্রম শুধু মেইন ও নেব্রাস্কা৷ বেশিরভাগ রাজ্যেই কে এগিয়ে সেটি সমর্থনের ভিত্তিতে ও জরিপের মাধ্যমে আগেভাবে ধারণা করা যায়৷ কিন্তু কয়েকটি রাজ্য আছে যেগুলোতে অনুমান করা কঠিন৷ ‘সুইং স্টেট’ নামে পরিচিত এই রাজ্যগুলোতেই মনযোগ এখন দুই প্রার্থীর শিবিরের৷
ছবি: Nathan Posner/Anadolu/picture alliance
কোন রাজ্যগুলো
সময়ের সাথে সাথে সুইং স্টেটের পরিবর্তন হয়েছে৷ জনসংখ্যা বা ইস্যুর কারণে ভিন্ন ভিন্ন রাজ্য এমন সুইং স্টেটের তালিকায় ঢুকেছে৷ চলতি বছর গর্ভপাতের অধিকারের মতো অভিন্ন ইস্যুর পাশাপাশি রাজ্যগুলোর নিজস্ব ইস্যুও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে৷ দেখে নিন কোন রাজ্যগুলো এবার ‘সুইং স্টেট’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে৷
ছবি: Paul Sancya/AP/picture alliance
অ্যারিজোনা
মেক্সিকো সীমান্তবর্তী অ্যারিজোনা রাজ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু অনিয়মিত অভিবাসন৷ বাইডেন প্রশাসনে এই সীমান্তের অভিবাসন সংকট সমাধানের দায়িত্ব ছিল ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের কাঁধে৷ অনেকে মনে করেন তিনি তাতে ব্যর্থ হয়েছেন৷ ট্রাম্প এই ব্যাপারে হ্যারিসকে আক্রমণ করার সুযোগ কোনোভাবেই হাতছাড়া করছেন না৷ অ্যারিজোনার ভোটারদের এক তৃতীয়াংশ হিস্পানিক৷ এই রাজ্যে ইলেক্টোরাল ভোট ১১টি৷ গতবার জিতেছিলেন বাইডেন৷
ছবি: Go Nakamura/REUTERS
জর্জিয়া
১৯৯২ সালের পর গত নির্বাচনেই প্রথমবারের মতো কোন ডেমোক্রেট প্রার্থী হিসেবে জর্জিয়ায় জয় পেয়েছিলেন বাইডেন৷ কিন্তু ভোটের ব্যবধান ছিল মাত্র দশমিক দুই শতাংশ৷ এই রাজ্যের ৩৩ শতাংশ ভোটার কৃষ্ণাঙ্গ, যা কমলা হ্যারিসের পক্ষে যেতে পারে৷ ২০২০ সালের নির্বাচনের সময় এই রাজ্যের নির্বাচনের ফল পাল্টানোর ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছিল ট্রাম্পের বিরুদ্ধে, যার বিচার প্রক্রিয়া স্থগিত রয়েছে৷ রাজ্যের ইলেক্টোরাল ভোট ১৬টি৷
ছবি: John Moore/Getty Images
মিশিগান
ফোর্ড, জেনারেল মোটর্স, ক্রাইসলারের মতো গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা মিশিগান৷ গত বছর বাইডেন এই রাজ্যে জিতে অ্যামেরিকার বাজারে চীনের ইলেক্ট্রিক গাড়ি রুখতে বিশাল অঙ্কের করারোপ করেন৷ রাজ্যের ভোটারদের উল্লেখযোগ্য অংশ আরব-অ্যামেরিকান৷ এবার গাজা যুদ্ধের প্রেক্ষিতে নতুন করে তাদের সমর্থন আদায়ের চ্যালেঞ্জ ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের সামনে৷ রাজ্যটির ইলক্টোরাল ভোট ১৫টি৷
ছবি: Scott Olson/Getty Images
নেভাদা
দক্ষিণ সীমান্তবর্তী রাজ্য নেভাদার জন্যেও অভিবাসন গুরুত্বপূর্ণ এক ইস্যু৷ এখানকার জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ হিস্পানিক৷ রাজ্যটি অতিমাত্রায় পর্যটননির্ভর৷ বাইডেন দায়িত্ব নেওয়ার পর অন্য সুইং রাজ্যগুলোর মধ্যে নেভাদার অর্থনীতিই সবচেয়ে বেশি এগিয়েছে৷ একইসাথে সব রাজ্যের মধ্যে নেভাদাতে বেকারত্বের হারও শীর্ষে৷ ২০২০ সালের নির্বাচনে নেভাদায় জয় পেয়েছিলেন বাইডেন৷ ইলেক্টোরাল ভোটের সংখ্যা ছয়টি৷
সুইং স্টেটের তালিকায় নবীনতম রাজ্য নর্থ ক্যারোলিনা৷ জুলাইতে বাইডেন সরে দাঁড়ানোর আগ পর্যন্ত ট্রাম্প এখানে এগিয়ে ছিলেন৷ হ্যারিস সেই ব্যবধান কমিয়ে আনতে সক্ষম হন৷ গত ১১টি নির্বাচনে এখান থেকে মাত্র একবার জিতেছেন ডেমোক্রেটরা৷ গত তিন দশকে এখানকার জনসংখ্যায় বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে৷ শ্বেতাঙ্গদের হার ৭৫ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৬০ শতাংশে৷ ২০২০ সালের নির্বাচনে ১৬ ইলোক্টোরাল ভোটের রাজ্যটিতে জয়ী হয়েছেন ট্রাম্প৷
ছবি: Evan Vucci/AP/dpa/picture alliance
পেনসিলভেনিয়া
অন্য রাজ্যের তুলনায় পেনসিলভেনিয়ায় জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির চাপ বেশি৷ প্রাকৃতিক গ্যাস নিষ্কাশনে ফ্র্যাকিং পদ্ধতি ব্যবহারের পরে টেক্সাসের পর এটি সবচেয়ে বড় উৎপাদনকারী রাজ্যে পরিণত হয়েছে৷ ট্রাম্পের অবস্থান ফ্র্যাকিংয়ের পক্ষে৷ হ্যারিস শুরুতে বিপক্ষে থাকলেও এখন বিকল্প খোলা রাখার পক্ষে৷ ১০ সেপ্টেম্বর এই রাজ্যে বিতর্কে মুখোমুখি হন ট্রাম্প-হ্যারিস৷ ১৯ ইলেক্টোরাল ভোটের রাজ্যটিতে ২০২০ সালে জিতেছেন বাইডেন৷
ছবি: Win McNamee/Getty Images
উইসকনসিন
গত দুইটি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভোট পড়া রাজ্যের মধ্যে অন্যতম ছিল উইসকনসিন৷ প্রতিবারই মাত্র ২৫ হাজারের কম ভোটের ব্যবধানে প্রেসিডেন্ট বেছে নিয়েছেন এখানকার ভোটাররা৷ এখানকার প্রতিটি ভোটই তাই পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্টের জন্য গুরুত্বপূর্ণ৷ এই রাজ্যের ইলেক্টোরাল ভোটের সংখ্যা ১০৷ দশমিক ছয়-তিন শতাংশ ভোটের ব্যবধানে ২০২০ সালের নির্বাচনে জিতেছেন ট্রাম্প৷
ছবি: Kevin Lamarque/REUTERS
9 ছবি1 | 9
সুইং স্টেট
হাড্ডাহাড্ডি নির্বাচনে সুইং স্টেটগুলির অপরিসীম। সুইং স্টেট অর্থাৎ, যে রাজ্যগুলির ভোট যে কোনো দিকে যেতে পারে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সুইং স্টেটের ভোট যেদিকে ঘুরবে, প্রেসিডেন্টও তিনি নির্বাচিত হবেন।
এবছর সুইং স্টেট হিসেবে দেখা হচ্ছে পেনসিলভানিয়া, অ্যারিজোনা, জর্জিয়া, মিশিগান, নেভাদা, নর্থ ক্যারোলাইনা এবং উইসকনসিন রাজ্যকে।
এই পরিস্থিতিতে নির্বাচনের আগের দিন ট্রাম্প এবং হ্যারিস দুইজনই শেষ মুহূর্তের প্রচার চালিয়েছেন পেনসিলভেনিয়ায়। মিশিগান থেকে পেনসিলভানিয়ায় পৌঁছে হ্যারিস বলেছেন, জেতার ব্যাপারে তিনি আশাবাদী। পেনসিলভানিয়ায় একাধিক মিছিলে অংশ নিয়েছেন তিনি। সেখানে উপস্থিত ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বরা।
অন্যদিকে ট্রাম্পও এদিন পেনসিলভানিয়ায় প্রচার করেছেন। তার আগে তিনি ছিলেন নর্থ ক্যারোলাইনায়। সেখানে মেক্সিকো এবং শরণার্থী সমস্যা নিয়ে ফের বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন তিনি। পাশাপাশি জানিয়েছেন, বিরোধী প্রার্থীকে তিনি 'অযোগ্য' বলে মনে করেন।
মার্কিন নির্বাচন: ইলেক্টোরাল কলেজ কী?
01:19
মাস্কের অসত্য কথন
শিল্পপতি ইলন মাস্ক এবার সরাসরি সমর্থন করছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্পকে। মাস্ক সাবেক টুইটার, বর্তমান এক্স হ্যান্ডেলের মালিক। সম্প্রতি একটি রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, গত কিছুদিনে মাস্কের একাধিক এক্স পোস্ট অসত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে ফ্যাক্ট চেকে। কিন্তু ইতিমধ্যেই এই মন্তব্যগুলি দুই বিলিয়ন ভিউ পেয়ে গেছে।
মাস্কের অন্তত ৮৭টি পোস্ট ভুল বা অসত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম তার অভিবাসীদের নিয়ে করা মন্তব্য। মাস্কের দাবি ছিল, সুইং স্টেটগুলিতে গত চার বছরে অভিবাসীর সংখ্যা অন্তত তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। যা সম্পূর্ণ অসত্য।
বস্তুত, ডনাল্ড ট্রাম্পকে প্রকাশ্যে সমর্থন জানানোর পর মাস্কের সার্বিক রাজনৈতিক পোস্ট ১৭ দশমিক এক বিলিয়ন ভিউ পেয়েছে। চলতি রাজনৈতিক পটভূমিতে যা কার্যত একটি রেকর্ড।
বুধবার থেকেই ক্রমশ স্পষ্ট হবে, শেষ পর্যন্ত কে হতে চলেছেন পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ট্রাম্প জয়ী হলে দ্বিতীয়বারের জন্য তিনি প্রেসিডেন্টের আসনে বসবেন। অন্যদিকে হ্যারিস জিতলে অ্যামেরিকার ইতিহাসে তিনি হবেন প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট।