বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরে কোকেনের চালান ধরা পড়াকে ‘ওয়েক আপ কল’ হিসেবে দেখছে জাতিসংঘ৷ জাতিসংঘ মনে করে, দক্ষিণ এশিয়া থেকে আরো কোকেন পাচার হচ্ছে যা চিহ্নিত করা যায়নি৷ বাংলাদেশ হতে পারে পাচারের নতুন রুট৷
ফাইল ফটোছবি: picture-alliance/dpa
বিজ্ঞাপন
জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিষয়ক সংস্থার (ইউএনওডিসি) দক্ষিণ এশিয়া প্রতিনিধি ক্রিস্টিনা আলবার্টিন মনে করেন, ‘‘এটা বড় ধরনের ওয়েক আপ কল৷’’ আর মেক্সিকোর প্রতিনিধি আন্টোনিও মেজিটেলি জানান, ‘‘ল্যাটিন অ্যামেরিকার মাদক চোরাচালানকারীরা সুসংগঠিত এবং তারা মাদকের বিশেষ করে কোকেনের নতুন বাজার খুঁজছে৷ আর এশিয়া হলো এখন এই মাদকের বড় বাজার৷’’
ইউএনওডিসি চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তাদের মাদক দ্রব্যের চালান অনুসন্ধানের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে৷ কিন্তু তাদের যে সব কিট দেয়া হয়েছে, তা দিয়ে কোকেন পরীক্ষা করা যায় না৷ তাই এই চালানে ধরা পড়া কোকেন পরীক্ষায় জাতিসংঘের সহায়তা চাওয়া হয়েছে৷
গত মাসের মাসের শুরুতে বলিভিয়া থেকে ১০৭ ড্রাম সূর্যমুখী ভোজ্যতেলের চালান চট্টগ্রাম বন্দরে আসে৷ এ চালানটি উরুগুয়ের মন্টিভিডিও থেকে জাহাজিকরণ করা হয় এবং তা সিঙ্গাপুর হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আসে৷ ৮ই জুন বাংলাদেশের শুল্ক গোয়েন্দারা এ চালানটি আটক করে পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করে একটি ড্রামে তরল কোকেনের অস্তিত্ব পায়৷ ড্রামটিতে ১৮৫ কেজি তরল ছিল এবং তাতে এর এক-তৃতীয়াংশ – অর্থাৎ প্রায় ৬০ লিটার তরল কোকেন রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷গোয়েন্দা সূত্র জানায়, কোকেন চোরাচালানের রুট হিসেবে এখন বাংলাদেশকে ব্যবহার করা হচ্ছে৷ কলম্বিয়া, বলিভিয়া, মেক্সিকো, পেরুসহদক্ষিণ অ্যামেরিকার দেশগুলো থেকেই সাধারণত উত্তর অ্যামেরিকা ও পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোতে কোকেনের চালান যায়৷ দক্ষিণ অ্যামেরিকার দেশ থেকে বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, থাইল্যান্ডের মতো দেশ হয়ে তা আবার উত্তর অ্যামেরিকা ও পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলিতে যায়৷
বাংলাদেশে কোকেনের তেমন বাজার নেই৷ এখানে নেশাদ্রব্য হিসেবে কোকেনের ব্যবহার নেই বললেই চলে৷ এ দেশে ফেনসিডিল, ইয়াবা, গাঁজা – এ সব অপেক্ষাকৃত কম দামের মাদকের ব্যবহার বেশি৷
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মঈনুল খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশে ব্যবহারের জন্যে কোকেনের চালানটি আনা হয়নি, এর গন্তব্য অন্য কোনো দেশ৷’’ তিনি বলেন, কোকেনের চালানটি চট্টগ্রামে আসার পর ২৫ দিন সেটি বন্দরে পড়েছিল এবং যার নামে এসেছিল, তিনি এটি আমদানির কথা অস্বীকার করেন৷ এই চালানের পেছনে একটি আন্তর্জাতিক চক্র থাকতে পারে৷’’
শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, ‘‘কোকেনের এ চালানটির গন্তব্য বাংলাদেশ নয়, কারণ এই তরল কোকেনকে গুঁড়া বা পাউডার কোকেনে রূপান্তর করার মতো প্রযুক্তি বা যন্ত্রপাতি বাংলাদেশে নেই৷’’
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. তাজুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশে মাদকাশক্তরা কোকেন ব্যবহার করে, এমন নজির নেই বললেই চলে৷ তাই ধরা পড়া কোকেন বাংলাদেশে ব্যবহারের জন্য আনা হয়েছে এমন সম্ভাবনা খুবই কম৷ সাধারণত যুক্তরাষ্ট্র, ক্যানাডাও পশ্চিম ইউরোপের মতো উন্নত দেশে এর ব্যবহার বেশি৷’’তবে এটা নিশ্চিত যে বাংলাদেশকে কোকেন পাচারের রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে৷ শুল্ক বিভাগের গোয়েন্দারা বলেন, ‘‘আমাদের ধারণা, দক্ষিণ আমেরিকা থেকে অন্য কোনো দেশে মাদক চোরাচালানের জন্যে বাংলাদেশকে মধ্যবর্তী রুট হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করা হচ্ছে৷’’
কর্মকর্তারা জানান, ‘‘মাদকের আসল গন্তব্য পশ্চিম ইউরোপ কিংবা উত্তর অ্যামেরিকার কোনো দেশ হলেও উত্স দেশ সম্পর্কে ভুল ধারণা জন্যই হয়ত চালানটি বাংলাদেশে আনা হয়৷’’
আর বাংলাদেশের অবস্থান পৃথিবীর দুটি প্রধান মাদক উত্পাদনও চোরাচালানের কেন্দ্র গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল ও গোল্ডেন ক্রিসেন্টের ঠিক মাঝখানে৷ এর আগে বাংলাদেশে ২০১৩ সালে পাউডার কোকেনের বড় একটি চালান উদ্ধার করা হয়েছিল৷
জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিষয়ক সংস্থার (ইউএনওডিসি) ২০১৪ সালের ওয়ার্ল্ড ড্রাগ রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১২ সালের ৩১শে ডিসেম্বরের হিসাবে দক্ষিণ অ্যামেরিকার দেশ পেরুর ৬০ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে কোকেন চাষ হয়৷ আর কলম্বিয়ায় ৪০ হাজার হেক্টর ও বলিভিয়ায় ২৫ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে কোকেন চাষ হয়৷ এ অঞ্চলের মাদক ব্যবসায়ীদের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক রয়েছে৷ কোকেন চোরাচালানের প্রচলিত রুট হলো দক্ষিণ অ্যামেরিকা থেকে পশ্চিম আফ্রিকায় হয়ে উত্তর অ্যামেরিকা ও পশ্চিম ইউরোপ৷ গত কয়েক বছর ধরে কোকেন চোরাচালানের রুট হিসেবে এশিয়াকে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে৷ আর জাতিসংঘ বলছে এশিয়ায় নতুন বাজার তৈরি করছে কোকেন পাচারকারীরা৷ তাই বাংলাদেশে ধরা পড়া কোকেনের গন্তব্য এশিয়ার কোনো দেশও হতে পারে৷
আর এই পরিস্থিতিতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক নজরুল ইসলাম শিকদার সংবাদ মাধ্যমকে বলছেন, ‘‘কোকেনের চালান আটকের ঘটনার পর মাদক নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে নতুন করে ভাবতে হবে৷’’
বিশ্বের অদ্ভুত সব মাদক নিরাময় কেন্দ্র
আমাদের দেশে মাদকাসক্তি এখন বড় ধরনের সমস্যা৷ তবে মাদকাসক্তদের জন্য এখন বেশ কিছু নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র রয়েছে৷ কিন্তু সেগুলো এতটা অদ্ভুত হয়ত নয়৷ বিশ্বের অদ্ভুত কিছু মাদক নিরাময় কেন্দ্রের তথ্য থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/R.Gul
থাইল্যান্ডের পুনর্বাসন কেন্দ্র
থাইল্যান্ডে ফ্রা পুত্থাবাতের কাছে থামক্রাবক মঠ৷ এখানে মাদকাসক্তদের ভিন্ন উপায়ে চিকিৎসা করা হয়৷ আধ্যাত্মিক ও প্রাকৃতিক উপায়ে মাদকাসক্তদের মানসিক ও শারীরিক প্রশান্তি এনে দেয়ার চেষ্টা করেন মঠের সন্ন্যাসীরা৷
ছবি: N.Asfouri/AFP/Getty Images
বমনের মাধ্যমে শুদ্ধি
এখানে সাধারণত মাদকাসক্তদের ১০দিনের একটি কর্মসূচিতে রাখা হয়৷ তবে এর মধ্যে বহির্বিশ্বের সাথে মোকাবিলা করার ক্ষমতা গড়ে না উঠলে আরো দীর্ঘ সময় সেখানে থাকতে পারেন তারা৷ ভোর বেলা প্রত্যেককে একটি পানীয় খেতে বাধ্য করা হয়, যার ফলাফল বমি৷ মঠের সন্ন্যাসীদের মতে পানীয়টি খুবই বাজে, কিন্তু কার্যকর৷ এছাড়া মঠ ছাড়ার আগে প্রতিটি অংশগ্রহণকারীকে অঙ্গীকার করতে হয় যে, সে আর কখনো মাদক ছুঁয়ে দেখবে না৷
ছবি: Getty Images/Paula Bronstein
আধ্যাত্মিক চেতনা
পেরুর আয়াহুয়াস্কা নিরাময় কেন্দ্রে প্রতি বছর কয়েক হাজার মানুষ প্রাকৃতিক উপায়ে মাদকাসক্তি থেকে মুক্তির চিকিৎসা নিতে যান৷ সেখানকার আদিবাসীদের বিশ্বাস আয়াহুয়াস্কা প্রত্যেকের মধ্যে আধ্যাত্মিক চেতনার উন্মেষ ঘটিয়ে মানসিক ও শারীরিক প্রশান্তি এনে দেয়৷ তবে পশ্চিমা চিকিৎসকদের মতে এ ধরনের চিকিৎসার ফলে ভয়ের স্মৃতি, বমি, প্রচুর ঘাম এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে৷ তাই বিশ্বের অনেক দেশে এখন আয়াহুয়াস্কা নিষিদ্ধ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/V.Donev
ধর্মীয় পন্থা
ব্রাজিলের রিও ডি জানেরোর পুনর্বাসন কেন্দ্র এটি৷ এখানে আধ্যাত্মিক উপায়ে চিকিৎসা করা হয়৷ প্রতিদিন সকালে সব মাদকাসক্ত ব্যক্তি জড় হয়ে ঈশ্বরের বন্দনা করেন৷ প্রত্যেককেই একটি গির্জার পাশে থাকতে দেয়া হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP/ F.Dana
শিকল বেঁধে চিকিৎসা
এই ব্যাক্তির নাম আমানউল্লাহ, যাকে আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে জালালাবাদে একটি মাজারে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে৷ এখানে মাদকাসক্তদের চিকিৎসা করা হয়৷ শিকল দিয়ে ৪০ দিন বেঁধে রাখা হয় তাদের৷ খেতে দেয়া হয় একটু রুটি, অল্প পানি আর একটু মরিচের গুড়া৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/R.Gul
আধ্যাত্মিক সাহায্য
মীর আলী বাবা, যাঁর নামে এই মাজার৷ স্থানীয়দের বিশ্বাস, মাদকাসক্তদের এখানে এভাবে বেধে রাখার ফলে আলী বাবা তাদের এই আসক্তি থেকে বের হতে সাহায্য করেন৷ এই ধারণা কেবল আফগানিস্তানেই নয় বিশ্বের অনেক স্থানে রয়েছে৷ কিছু স্থানে মাদকাসক্তদের শাস্তি দেয়া হয়, এমনকি হত্যা করাও হয়৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/R.Gul
শ্রমিক শিবির
চীনে মাদকাসক্তদের পুনর্বাসন হয় জেলখানায়৷ কারাদণ্ড হওয়ার পর ঐ ব্যক্তিকে নিরাময় কেন্দ্রে পাঠানো হয়৷ কোকেইন, হেরোইন বা মারিজুয়ানা নিয়ে কেউ ধরা পড়লেও একই শাস্তি৷ তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অভিযোগ, চীন মাদকাসক্তদের ক্লিনিকগুলোকে শ্রমিক ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করে৷ অর্থাৎ তাদের দিয়ে নানা কাজ করিয়ে নেয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Shenglian
মৃত্যু অভিজ্ঞতা
কিরঘিজস্তানে যে পুনর্বাসন পদ্ধতিটি ব্যবহার করা হয় তা ভয়াবহ৷ এটাকে বলা হয় ‘কোমা চিকিৎসা’৷ মাদকাসক্তদের একটি ইনজেকশন দেয়া হয় যার প্রভাবে তারা কয়েক ঘণ্টা কোমা’র মতো অবস্থায় থাকে৷ এরপর যখন তারা ঘুম থেকে জেগে ওঠে তখন পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যায় বলে বিশ্বাস সেখানকার মানুষের৷ বিশেষজ্ঞরা অবশ্য এর ব্যাপক সমালোচনা করেছেন৷
ছবি: picture alliance/Robert Harding World Imagery
বিলাসবহুল পন্থা
অনেক তারকারা মাদকাসক্তি থেকে মুক্তি পেতে বিলাসবহুল পথ বেছে নেন৷ সবচেয়ে বিখ্যাত পদ্ধতিটি হয় অ্যামেরিকার বেটি ফোর্ড ক্লিনিকে৷ এখানে বিখ্যাত সংগীত শিল্পী ও অভিনেতারা চিকিৎসা করান৷ এই ক্লিনিকে এমন কিছু সুযোগ সুবিধা থাকে যাতে আপনার মনে হবে আপনি একটি বিলাসবহুল হোটেলে আছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A.Rain
সবার চিকিৎসার সুযোগ নেই
বিশ্বের বেশিরভাগ মাদকাসক্তের চিকিৎসার সুবিধা নেই৷ যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জরিপ অনুযায়ী, সে দেশের মাত্র ১০.৪ শতাংশ মাদকাসক্ত ব্যক্তি চিকিৎসার সুবিধা পান৷ গরীব দেশগুলোতে এ অবস্থা আরো শোচনীয়৷
ছবি: picture alliance/JOKER
10 ছবি1 | 10
আজব নেশাদ্রব্য ‘খাট’
সোমালিল্যান্ডের অর্থনীতি, সংস্কৃতি এবং জনজীবনকে নিয়ন্ত্রণ করছে নেশাদ্রব্য ‘খাট’৷ ছেলে-বুড়ো, ধনী-গরীব সবাই এখন ‘খাট’-এ আসক্ত৷ ছবিঘরে আজ থাকছে সোমালিয়ার স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল সোমালিল্যান্ডের আজব এক মাদক ‘খাট’-এর কথা৷
ছবি: DW/J. Jeffrey
সবারই চাই ‘খাট’
সোমালিল্যান্ডের প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ ‘খাট’-এ আসক্ত৷ এটা না চুষলে তাঁদের যেন জীবন অচল৷ এ নেশার জন্য বেকারদেরও টাকার অভাব হয়না৷ বেকার যুবক আব্দিখালিদ ধার করে নেশা করে যাচ্ছেন এবং নিশ্চিন্তেই বলছেন, ‘‘নেশা করার টাকা এখন বন্ধুরা দেয়৷ আমি কোনো কাজ পেলেই ধারটা শোধ করে দেবো৷’’ প্রতিদিন খাট-এর পেছনে ১ মিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ প্রায় ৯ লক্ষ ৩০ হাজার ইউরো খরচ করে সোমালিল্যান্ডের মানুষ৷
ছবি: DW/J. Jeffrey
মদের চেয়ে ভালো? শক্তি জোগায়?
খাট নাকি মদের চেয়ে ভালো, এই নেশা নাকি শক্তি জোগায়৷ খাট-এ আসক্তদের অনেকে মনেপ্রাণে তা বিশ্বাস করেন৷ এক সাংবাদিক বললেন, ‘‘এটা নেয়ার পর স্বাভাবিকভাবে কাজ করা যায়৷’’
ছবি: DW/J. Jeffrey
‘খাট মা’
রাস্তার পাশেই অসংখ্য ‘খাট’-এর দোকান৷ ব্যবসাটা মূলত মহিলারাই চালান৷ স্থানীয়রা তাঁদের ডাকেন ‘খাট মা’ নামে৷ জাহরে আইদিদ একসময় ছিলেন কফি বিক্রেতা৷ অন্য ব্যবসাও করেছেন৷ কিছুতেই দারিদ্র্য যাচ্ছিল না৷ অবশেষে এলেন খাট ব্যবসায়৷ এখন ভালো আছেন৷ এক দাঁতের ডাক্তারের চেম্বারের পাশেই তাঁর দোকান৷ শত শত ক্রেতা আসে প্রতিদিন৷ জনপ্রতি অন্তত ৬ থেকে ১০ ডলার খরচ করেন খাট-এর পেছনে৷
ছবি: DW/J. Jeffrey
গৃহযু্দ্ধের ‘উপহার’!
২০০৬ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত সোমালিল্যান্ড ছিল গৃহযুদ্ধের কবলে৷ গৃহযুদ্ধ শেষে ভয়াবহ রূপে দেখা দেয় অর্থনৈতিক সংকট৷ নারীরা উপার্জনের কোনো পথ পাচ্ছিলেন না৷ খাট ব্যবসা সহজ, বেশি পুঁজিরও প্রয়োজন হয় না বলে অসংখ্য নারী চলে আসেন এই ব্যবসায়৷ এখন খাট-আসক্ত নারীও বাড়ছে৷ সোমালিল্যান্ডের ২০ ভাগ নারী এখন খাট-এ আসক্ত৷ নারীরা অবশ্য নেশা করেন গোপনে৷
ছবি: DW/J. Jeffrey
‘খাট এক্সপ্রেস’
ইথিওপিয়ার উত্তরাঞ্চলে উৎপাদিত হয় খাট৷ সেখান থেকে ট্রাকে করে নিয়ে আসা হয় সোমালিল্যান্ডে৷ নতুন ঠিকানায় খাট আশ্রয় নেয় বিশেষ নাম্বারে চিহ্নিত কোনো দোকানে৷ ক্রেতাদের সুবিধার্থে প্রতিটি দোকানের সামনেই লেখা হয় শনাক্তকরণ নম্বর৷
ছবি: DW/J. Jeffrey
রাজস্ব আয়ের উৎস
সোমালিল্যান্ডের অর্থনীতিতেও অবদান রাখছে খাট৷ অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী গত অর্থবছরে সোমালিল্যান্ডের ১৫২ মিলিয়ন ডলারের বার্ষিক বাজেটের ২০ শতাংশই এসেছিল খাট খাত থেকে৷ তাতে অবশ্য নেশাদ্রব্য নিয়ে সমালোচনা থামেনি৷ পরিবার ও সমাজ জীবনে নেশাদ্রব্য এবং নেশাগ্রস্তদের কুপ্রভাব নিয়ে অনেকেই চিন্তিত৷
ছবি: DW/J. Jeffrey
পুরুষ নেশা করছে, খেটে মরছে নারী
খাট-এর কারণে অনেক পরিবারই ভুগছে৷ নেশাগ্রস্ত পুরুষরা ঘরেই কাটাচ্ছে সময়, অন্যদিকে সংসার চালানোর দায়িত্ব এককভাবে পালন করতে গিয়ে খেটে মরছে মেয়েরা৷ রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফাতিমা সাঈদ জানালেন, ‘‘পুরুষরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে বসে (খাট) চুষে৷ এর আসক্তি খুব ভয়ংকর৷ খাটের কারণে দৃষ্টিভ্রম, অনিদ্রা, ক্ষুধামন্দাসহ নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে৷’’
ছবি: DW/J. Jeffrey
নেশাগ্রস্তদের ‘সাফাই’
আসক্তরা খাট-এর পক্ষে সবসময়ই সোচ্চার৷ তাঁরা মনে করেন, এই নেশার উপকারই বেশি৷ আব্দুল মনে করেন, খাট মানুষকে একতাবদ্ধ করে এবং খাট সেবনের সময় সবার মধ্যে সুখ-দুঃখের কথা হয়৷ যাঁরা নেশা করছেন তাঁরা তো চাইবেনই না, খাট সেবন বন্ধ হোক, ইথিওপিয়াও তা কখনো চাইবেনা৷ সোমালিল্যান্ডে বছরে ৫২৪ মিলিয়ন ডলারের খাট বিক্রি করে ইথিওপিয়া৷ খাট বন্ধ হলে আয়টাও যে বন্ধ হবে!