লাতিন অ্যামেরিকার মাদক চোরাকারবারি গোষ্ঠীগুলোর কাছে এখন কোকেন, গাঁজার চেয়ে সিনথেটিক মাদক বেশি আয়ের উৎস৷ এইসব মাদক সেবনে মেক্সিকোসহ বিভিন্ন দেশের মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে৷
ছবি: Guillermo Arias/APF/Getty Images
বিজ্ঞাপন
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতেআর্জেন্টিনার বুয়েনস আইরেসে ভেজাল কোকেন সেবন করে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হন অনেকে৷ তাদের মধ্যে মারা যান ২৪ জন৷ পরবর্তীতে আর্জেন্টিনা কর্তৃপক্ষ গণমাধ্যমে আবেদন জানিয়ে সবাইকে সতর্ক করে৷ সাম্প্রতিক সময়ে কেনা কোকেন কেউ যাতে কোনভাবেই সেবন না করে সেই আহ্বান জানানো হয় সরকারের পক্ষ থেকে৷ কেননা পরীক্ষায় সেই কোকেনে কারফেন্টানিল নামের মারাত্মক রাসায়নিক উপাদানের উপস্থিতি পাওয়া যায়৷
কারফেন্টানিল শক্তিশালী সিনথেটিক অপিওড ফেন্টানিল থেকে তৈরি হয় ৷ সাধারণত হাতির মতো বৃহৎ বন্যপ্রাণী অচেতন করতে এই রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়৷ এজন্য মাত্র দুই মিলিগ্রাম মাত্রা প্রয়োগ করলেই চলে, যা একজন মানুষের মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট৷
হেরোইনের সঙ্গে তুলনা করলে ফেন্টানিল ৫০ গুণ আর মরফিনের তুলনায় শতগুণ বেশি শক্তিশালী৷ সাম্প্রতিক সময়ে মেক্সিকোর মাদক চোরাকারবারীদের জন্য আয়ের বড় উৎস হয়ে উঠেছে এই সিনথেটিক ড্রাগটি৷
বিশ্বব্যাপী মাদকের কারণে মৃত্যুর প্রবণতার সূচক
স্বল্পব্যয়েঅধিকমুনাফা
প্রচলিত মাদকের চেয়ে এটি উৎপাদনে খরচ কম পড়ে৷ মেক্সিকোর স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির কুখ্যাত মাদক চোরকারবারি গোষ্ঠী সিনালোয়া কোকেন, গাঁজা বা অন্য যেকোন মাদকের চেয়ে এখন ফেন্টানিল থেকে বেশি আয় করে৷
জুলাইতে মেক্সিকোর সেনারা দেশটির কুলিয়াকান শহর থেকে ৫৪৩ কিলোগ্রাম ফেন্টানিল জব্দ করে৷ এটি এই মাদকের জব্দকৃত সবচেয়ে বড় চালান বলে অভিযান শেষে সরকার থেকে বলা হয়৷
এর আগে মে মাসে সরকারের পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে এই মাদকের দ্রুত বিস্তারের কারণ তুলে ধরা হয়েছিল৷ জননিরাপত্তা বিষয়ক কর্মকর্তা রিকার্ডো মেহিয়া সেসময় গণমাধ্যমকে জানান, এক কিলোগ্রাম ফেন্টানিল তৈরিতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগে৷ মেক্সিকোতে যার গড়পতা দাম পাঁচ হাজার ডলার৷ আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে তা বিক্রি হয় দুই লাখ ডলারে৷
মেক্সিকো: মাদকেরআকর্ষণীয়বাজার
মেক্সিকোয় উৎপাদিত সিনথ্যাটিক ড্রাগের বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র৷ ২০২১ সালে অপিওয়েড সেবনে দেশটিতে লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে৷ ১৩ জুলাই ওয়াশিংটনে মেক্সিকো ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের বৈঠকেও তাই বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে৷ মানুয়েল লোপেজ ওবরাডোর এবং জো বাইডেন দুইজনই সিনথেটিক ড্রাগের বিরুদ্ধে লড়াই জোরদার ও অব্যাহত রাখার বিষয়ে একমত হয়েছেন৷
অন্যদিকে মেক্সিকো নিজেও এখন লাতিন অ্যামেরিকায় মাদকের ট্রানজিট বা উৎপাদক দেশে সীমাবদ্ধ নেই৷ সেখানেওক্রমশ মাদকের ব্যবহার ও বেচাকেনা বেড়ে চলেছে৷ যার প্রমাণ মেলে হাসপাতালের রোগীদের তথ্যে৷ ২০১৩ থেকে ২০২০ সালে সিনথেটিক ড্রাগের কারণে চিকিৎসা নেয়া ব্যক্তির সংখ্যা দেশটিতে চারগুণের বেশি বেড়েছে৷
কোন দেশের মাদক আইনে কী শাস্তি?
বাংলাদেশের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বিল ২০১৮ অনুযায়ী মাদক সেবন ও বহনের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড৷ ছবিঘরে বিশ্বের আরো কয়েকটি দেশের মাদক আইনের তথ্য থাকছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Walton
মালয়েশিয়া
মাদক বিক্রি করতে গিয়ে ধরা পড়লে মৃত্যুদণ্ড হতে পারে৷ এজন্য মাদক রাখার জন্য জেল, জরিমানার ব্যবস্থা আছে৷ অভিবাসীদের কাছে মাদক পাওয়া গেলে তাদের দেশে পাঠিয়ে দেয়া হতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/L. Seng Sin
চীন
মাদকসহ ধরা পড়লে সরকারের মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে যেতে বাধ্য করা হয়৷ মাদক সংক্রান্ত কিছু অপরাধের জন্য ফাঁসিও দেয়া হয়৷
ছবি: Getty Images/Afp/Y. A. Thu
ভিয়েতনাম
০.৫৯ কেজি হেরোইনসহ ধরা পড়লে নিশ্চিত ফাঁসি৷
ছবি: Bulgarian Prosecutor's Office/picture-alliance/AP
ইরান
প্রতিবেশী আফগানিস্তানে আফিমের চাষ হওয়ায় ইরানে এটা একটা অন্যতম সমস্যা৷ সেখানে মাদকসহ ধরা পড়লে বড় অংকের জরিমানা থেকে শুরু করে মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে৷
ছবি: ilna
থাইল্যান্ড
মাদক পাচারের কারণে মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে৷ মাদকসেবীদের বাধ্যতামূলকভাবে নিরাময় কেন্দ্রে পাঠানো সে দেশে একটি নিয়মিত ঘটনা৷
ছবি: Lilian Suwanrumpha/AFP/Getty Images
সৌদি আরব
মাদক বিক্রি করতে গিয়ে ধরা পড়লে মৃত্যুদণ্ড প্রায় নিশ্চিত৷ অ্যালকোহল কিংবা মাদক সেবন কিংবা সেগুলো রাখার জন্য প্রকাশ্যে বেত্রাঘাত, জরিমানা, দীর্ঘদিনের কারাবাস কিংবা মৃত্যুদণ্ড হতে পারে৷
ছবি: Yasin Akgul/AFP/Getty Images
সিঙ্গাপুর
মাদক বিক্রির দায়ে অভিযুক্ত হলে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়৷
ছবি: Bodo Marks/dpa/picture-alliance
কম্বোডিয়া
মাদক রাখার দায়ে এমনকি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডও হতে পারে৷ তবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশের মতো কম্বোডিয়ায় মাদক পাচারের জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান নেই৷
ছবি: Reuters/S. Pring
ইন্দোনেশিয়া
গাঁজাসহ ধরা পড়লে সর্বোচ্চ ২০ বছরের জেল হতে পারে৷ অন্যান্য মাদকের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১২ বছর পর্যন্ত জেলের বিধান রয়েছে৷ মাদক বিক্রির দায়ে মৃত্যুদণ্ড হতে পারে৷
ছবি: M Risyal Hidayat/Antara Foto/REUTERS
লাওস
মাদকসহ ধরা পড়লে প্রায় ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে৷ আর চেতনানাশক ওষুধসহ ধরা পড়লে ১০ বা তার বেশি সময়ের জেল হতে পারে৷
ছবি: Getty Images/Afp/A. Jones
ফিলিপাইন্স
মাদকপাচারকারীদের জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান আছে৷ কারো কাছে ১০ গ্রামের বেশি মাদক পাওয়া গেলে তাকে পাচারকারী হিসেবে ধরে নেয়া হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Celis
তুরস্ক
মাদক রাখার জন্য বড় অংকের জরিমানা ও দীর্ঘ কারাবাসের বিধান রয়েছে৷ মাদক বিক্রির অপরাধের শাস্তি আরো কঠোর হতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/TASS/dpa/S. Bobylev
বাংলাদেশ
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বিল ২০১৮ অনুযায়ী ৫ গ্রাম পর্যন্ত কোকেন, হেরোইন, মরফিন ও পেথিডিন পাওয়া গেলে ১ থেকে ৫ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া যাবে৷ মাদকের পরিমাণ ৫ থেকে ২৫ গ্রামের মধ্যে হলে ৫ থেকে ১০ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড এবং মাদকের পরিমাণ ২৫ গ্রাম বা তার বেশি হলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া যাবে৷
ছবি: bdnews24.com
ইয়াবার শাস্তি
ইয়াবা সেবনের শাস্তি তিন মাস থেকে দুই বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড৷ এছাড়া ইয়াবা সরবরাহ, বিপণন, কেনা-বেচা, হস্তান্তর, গ্রহণ-প্রেরণ, লেনদেন ও প্রদর্শনের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে - ২০০ গ্রাম পর্যন্ত ইয়াবা পাওয়া গেলে ১ থেকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া যাবে৷ পরিমাণ ২০০ থেকে ৪০০ গ্রামের মধ্যে হলে ৫ থেকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া যাবে৷ পরিমাণ ৪০০ গ্রাম বা তার বেশি হলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যাবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Walton
অ্যালকোহল পানের নিয়ম
অনুমতি ছাড়া কেউ অ্যালকোহল পান করতে পারবেন না৷ চিকিৎসার প্রয়োজনে সিভিল সার্জন বা সরকারি মেডিকেল কলেজের কমপক্ষে সহযোগী অধ্যাপকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া কোনো মুসলমানকে অ্যালকোহল পানের অনুমতি দেওয়া যাবে না৷ তবে মুচি, মেথর, ডোম, চা শ্রমিক ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর তাড়ি ও পঁচুই এবং পার্বত্য জেলা বা অন্যান্য অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ঐতিহ্যগতভাবে তৈরি করা মদ পান করার ক্ষেত্রে এই বিধান প্রযোজ্য হবে না৷