তাঁরা ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ছোটবেলায় ক্লাবে গিয়েছিলেন৷ কিন্তু সেখানে গিয়ে কোচদের হাতে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে৷ এখন পর্যন্ত সাড়ে তিনশ' জন এই অভিযোগ এনেছেন৷
বিজ্ঞাপন
এই ঘটনায় স্তম্ভিত পুরো ব্রিটেন৷ প্রথম অভিযোগ আনেন অ্যান্ডি উডওয়ার্ড৷ বর্তমানে ৪৩ বছর বয়সি উডওয়ার্ডের বক্তব্য প্রকাশ হয় ১৬ নভেম্বর, গার্ডিয়ান পত্রিকায়৷ উডওয়ার্ড জানান, ১১ বছর বয়সে তিনি ‘ক্রুয়ে আলেকজান্দ্রা' (বর্তমানে ইংল্যান্ডের চতুর্থ বিভাগে খেলছে দলটি) ক্লাবে খেলতে গিয়েছিলেন৷ সেখানে কোচ ব্যারি বেনেলের কাছে যৌন নিগ্রহের শিকার হন তিনি৷ এত বছর পর এসে এই ঘটনা প্রকাশ করার মাধ্যমে তিনি অন্যদেরও তাঁদের ঘটনা বলতে উৎসাহিত করতে চেয়েছেন বলে জানান উডওয়ার্ড৷
798845492461350917
উডওয়ার্ডের এই বক্তব্য প্রকাশের পর একে একে অনেকেই এমন অভিযোগ আনছেন৷ এখন পর্যন্ত সাড়ে তিনশ' জন পুলিশের কাছে তাঁদের কোচ দ্বারা যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার অভিযোগ এনেছেন৷ সংখ্যাটি জানিয়েছে ব্রিটেনের ‘ন্যাশনাল পুলিশ চিফস কাউন্সিল' বা এনপিসিসি৷ অভিযোগকারীদের মধ্যে একসময় ইংল্যান্ডের জাতীয় দলে খেলা ফুটবলারও রয়েছেন৷ এর মধ্যে কয়েকজন বছরের পর বছর ধর্ষিত হওয়ার অভিযোগও এনেছেন৷
যৌন হয়রানির হাত থেকে কীভাবে বাঁচাবেন শিশুকে
শিশুরা বিকৃতকাম মানুষের সহজ শিকার৷ সারল্যের সুযোগ নিয়ে সহজে ভোলানো যায় তাদের৷ অনেক সময় শিশুরা বুঝতে পারে না, চিনতে পারে না পিশাচের থাবা৷ আর বুঝলেও করতে পারে না প্রতিবাদ, প্রতিরোধ৷ শুধু একটা অস্বস্তি থেকে যায় সারাটা জীবন৷
ছবি: picture alliance/abaca
ভয়াবহ অবস্থা ভারতে
ভারতের জাতীয় ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের অর্ধেকেরও বেশি বাচ্চা যৌন নিগ্রহের শিকার৷ তবে সবচেয়ে ভয়ংকর সত্য হলো, নাবালিকা বা শিশুর ওপর যৌন হেনস্থার ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটছে পরিবারের মধ্যে, পরিবারেরই কোনো মানসিক বিকারগ্রস্ত সদস্যের হাতে৷ তাই সে সব ঘটনা পুলিশের কাছে পৌঁছাচ্ছে না, হচ্ছে না কোনো ডাইরি অথবা মামলা৷
ছবি: Fotolia/Gina Sanders
হারিয়ে যাচ্ছে শৈশব
এভাবে প্রতিদিন বিকৃত যৌন নির্যাতনে হারিয়ে যাচ্ছে অগুন্তি শৈশব৷ অনেকক্ষেত্রেই শিশুরা বুঝে উঠতে পারছে না, বলে উঠতে পারছে না তাদের অমানবিক সেই সব অভিজ্ঞতার কথা৷ তাই শিশুদের প্রতি যৌনাসক্ত, বিকৃত মানুষগুলো থেকে যাচ্ছে লোকচক্ষুর আড়ালে৷ সমাজবিদরা বলছেন, এ জন্য আগাম সতর্কতার দায়িত্ব নিতে হবে অভিভাবক এবং স্কুলের৷ শিশুকে দিতে হবে তার প্রাপ্য শৈশব৷
ছবি: Fotolia/Kitty
যেভাবে বোঝাবেন বাচ্চাদের
সহজ ভাষায় খেলা বা গল্পচ্ছলে শিশুদের এ বিষয়ে একটা ধারণা গড়ে তোলা যেত পারে৷ বাচ্চাদের বলতে হবে যে, তাদের শরীরটা শুধুমাত্র তাদের৷ অর্থাৎ কেউ যেন তাদের ‘গোপন’ জায়গায় হাত না দেয়৷ তাই কোনো আত্মীয় বা পরিচিত ব্যক্তির আচরণ অস্বস্তিকর ঠেকলে, কেউ তাদের জোর ঘরে কোনো ঘরে নিয়ে গেলে, খেলার ছলে চুমু দিলে বা শরীরের কোথাও হাত দিলে – তা যেন মা-বাবাকে জানায় তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চিনিয়ে দিন যৌনাঙ্গ
অনেক বাবা-মা নিজ সন্তানের সঙ্গে যৌনাঙ্গ নিয়ে কথা বলতে কুণ্ঠা বোধ করেন৷ কিন্তু এই লজ্জা কাটিয়ে উঠতে হবে এবং খুব ছোটবেলাতেই ছবি এঁকে অথবা গল্পে-গানে বাচ্চাকে তার শরীরের অন্য সব অঙ্গের মতো যৌনাঙ্গ, লিঙ্গ ইত্যাদি চিনিয়ে দিতে হবে৷ এমনটা করলে কেউ যদি তাদের সঙ্গে পিশাচের মতো ব্যবহার করে, তাহলে শিশুরা সহজেই বলতে পারবে কে, কখন, কোথায় হাত দিয়েছিল৷
ছবি: DW/S.Rahman
শিশুর কথা শুনুন, তার পক্ষ নিন
শিশু যাতে আপনাকে বিশ্বাস করতে পারে, বন্ধুর মতো সবকিছু খুলে বলতে পারে – সেটা নিশ্চিত করুন৷ আপনার বাচ্চা যদি পরিবারের কাউকে বা আপনার কোনো বন্ধুকে হঠাৎ করে এড়িয়ে যেতে শুরু করে অথবা আপনাকে খুলে বলে বিকৃত সেই মানুষের কৃতকর্মের কথা, তবে সময় নষ্ট না করে শিশুটির পক্ষ নিন আর তিরস্কার করে বাড়ি থেকে বার করে দিন ঐ ‘অসুস্থ’ লোকটাকে৷
ছবি: Fotolia/pegbes
স্কুলেরও দায়িত্ব আছে
বাচ্চারা দিনের অনেকটা সময় স্কুলে কাটায়৷ তাই যৌন শিক্ষার ক্ষেত্রে স্কুলের একটা বড় দায়িত্ব থেকে যায়৷ তবে স্কুলের মধ্যে, বিদ্যালয় চত্বরেও ঘটতে পারে শিশু নির্যাতনের ঘটনা৷ তাই স্কুল থেকে ফেরার পর বাচ্চা যদি অতিরিক্ত চুপচাপ থাকে, একা একা সময় কাটায় বা পড়াশোনা করতে না চায়, তাহলে ওর সঙ্গে কথা বলুন৷ জানতে চান কী হয়েছে, প্রয়োজনে স্কুল কর্তৃপক্ষকেও জানান৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel
ছেলে-মেয়ে সমান!
আমাদের সমাজে ছোট থেকেই মেয়েদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়৷ মেয়ে হলেই হাতে একটা পুতুল আর ছেলে হলে ধরিয়ে দেয়া হয় বল বা খেলনার পিস্তল৷ ছেলের পাতে যখন তুলে দেয়া হয় মাছের বড় টুকরোটা, তখন মেয়েটির হয়ত এক গ্লাস দুধও জোটে না৷ এ বৈষম্য বন্ধ করুন৷ বাবা-মায়ের চোখে ছেলে-মেয়ে সমান – সেভাবেই বড় করুন তাদের৷ তা না হলে নারীর ক্ষমতায়ন হবে কীভাবে? কীভাবে কমবে শিশু নির্যাতন?
ছবি: picture alliance/abaca
7 ছবি1 | 7
এনপিসিসি-র শিশু নিরাপত্তা বিষয়ক প্রধান কর্মকর্তা সিমন বেইলি বলছেন, ‘‘সব অভিযোগগুলো যেন ঠিকভাবে খতিয়ে দেখা যায় সে ব্যাপারে ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে আমরা কাজ করছি৷'' যাদের সঙ্গে এবং যত আগে এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকুক না কেন, সে বিষয়গুলো পুলিশকে জানাতে ভুক্তভোগীদের আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি৷
এদিকে, ব্রিটিশ চ্যারিটি এনএসপিসিসি এ বিষয়ে একটি হটলাইন চালু করেছে৷ প্রথম সপ্তাহেই ৮৬০টি কল এসেছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি৷ প্রথম তিন দিনে ৬০টি ঘটনার কথা তারা পুলিশ কিংবা ‘সোশ্যাল সার্ভিস'-কে জানিয়েছে বলে দাবি এনএসপিসিসি-র৷
কে এই ব্যারি বেনেল?
অ্যান্ডি উডওয়ার্ডকে যৌন নিপীড়নকারী বেনেল সত্তরের দশকের শুরু থেকে তিন দশক পর্যন্ত ক্রুয়ে আলেকজান্দ্রা, ম্যানচেস্টার সিটি ও স্টোক সিটি ক্লাবে কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন৷ এই সময়ে তাঁর হাতে যৌন নিগ্রহের শিকার হন অনেকেই৷ গত মঙ্গলবার বেনেলের বিরুদ্ধে ১৯৮১ থেকে ১৯৮৫ সালের মধ্যে ১৪ বছরের কমবয়সি এক ছেলেকে আট উপায়ে যৌন নিগ্রহ করার অভিযোগ আনা হয়৷ ১৪ ডিসেম্বর বেনেলের আদালতে হাজির হওয়ার কথা৷