1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কোটা নিয়ে আবার বিতর্ক কেন?

সমীর কুমার দে ঢাকা
৩০ জুন ২০২৪

সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা নিয়ে ফের বিতর্ক শুরু হয়েছে। কোটা সংস্কারের দাবিতে ২০১৮ সালে বড় ছাত্র আন্দোলন হয়েছিল। সেই আন্দোলনের জেরে এক পরিপত্রের মাধ্যমে সরকার কোটাব্যবস্থাই বাতিল করে দেয়।

কোটা সংস্কার আন্দোলন, ঢাকা
২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে নবম থেকে ত্রয়োদশ গ্রেড পর্যন্ত চাকরির ক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থা পুরোপুরি বাতিল করে দেয় সরকার। (ফাইল ছবি)ছবি: bdnews24.com

গত ৫ জুন এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটার অংশটি বাতিল করেন উচ্চ আদালত। এরপর আবারও শুরু হয়েছে আন্দোলন। সোমবার দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে একযোগে ছাত্রসমাবেশ হওয়ার কথা।

কোটা নিয়ে নতুন করে সংকট হলো কেন? জানতে চাইলে কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, "সবকিছু তো ঠিকই ছিল। কিন্তু আদালতের একটি আদেশ ছাত্র সমাজের ইচ্ছার প্রতিফলন না হওয়ায় আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। আমরা ঈদের আগে এটর্নি জেনারেলের কাছে একটি আবেদন করেছিলাম। আমাদের দাবি মূলত তিনটি, ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে সব গ্রেডে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ কোটা রেখে কোটা পুনর্বণ্টন বা সংস্কার; চাকরির পরীক্ষায় কোটাসুবিধাএকাধিকবার ব্যবহারের সুযোগ বন্ধ করা ও কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া এবং দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া।”

কোটা ন্যায্যতা নিশ্চিত করে: ছাত্রলীগের সাবেক নেতা

This browser does not support the audio element.

২০১৮ সালে কোটা বিরোধী বড় আন্দোলন করেছিল ছাত্ররা। সেই সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, "ছাত্ররা কোটা ব্যবস্থা চায় না। তারা আন্দোলন করেছে। ফলে কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। এনিয়ে আর আলোচনা করার বা হা-হুতাশ করার কিছু নেই। আমি বলে দিয়েছি থাকবে না।”

সেই থাকবে নাকি কীভাবে কার্যকর করা যায়, সেজন্য ক্যাবিনেট সেক্রেটারিকে দিয়ে একটি কমিটি করে দেয়া হয়েছে, যাতে এটা বাস্তবায়ন করা যায়। এরপর ওই বছরের ৪ অক্টোবর একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে কোটা ব্যবস্থা পুরোপুরি বাতিল করে দেয় সরকার।

২০২১ সালে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হাইকোর্টে রিট করেন। সে রিটের শুনানি নিয়ে কেন ওই ৩০ শতাংশ কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়। সর্বশেষ ৫ জুন সেই রুল যথাযথ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। এরপর থেকেই মূলত ছাত্ররা আবারও সংগঠিত হচ্ছে। তারা কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন শুরু করছে। এ অবস্থায় আদালতের ওই রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করেছে। আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে আবেদনটির ওপর শুনানির জন্য ৪ জুলাই দিন নির্ধারণ করা হয়।

২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে নবম থেকে ত্রয়োদশ গ্রেড পর্যন্ত চাকরির ক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থা পুরোপুরি বাতিল করে দেয় সরকার। তার আগে এসব পদে চালু থাকা কোটার ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এবং তাদের নাতি-নাতনিদের জন্য সংরক্ষিত ছিল। এর বাইরে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ, অনগ্রসর জেলার বাসিন্দাদের জন্য ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ আর প্রতিবন্ধীদের জন্য এক শতাংশ আসন নির্ধারিত থাকতো।

'ছাত্রসমাজের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেনি আদালতের আদেশে'

This browser does not support the audio element.

এদিকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড ও বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের উদ্যোগে ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল আন্দোলন' ব্যানারে আগামী বুধবার মিছিল ও সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে। ওই দিন বেলা তিনটায় রাজধানীর শাহবাগে এই কর্মসূচি পালিত হবে। এই আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আল মামুন ডয়চে ভেলেকে বলেন, "১৯৯৬ সালে যখন কোটা করা হয় তখনই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবির আন্দোলন শুরু করেছিল। এরপর ২০০১ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত এটা বাস্তবায়ন করা হয়নি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর স্বাধীনতা বিরোধী একটি চক্রের প্ররোচনায় আবারও আন্দোলন শুরু হয়। যা সফল হয় ২০১৮ সালে। আমরা মনে করি, কোটা কোন বৈষম্য সৃষ্টি করে না। বরং কোটা নায্যতা নিশ্চিত করে। পিছিয়ে পড়া জেলা বা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সদস্যদেরও এই সুবিধা পাওয়া উচিত। নারী কোটা ছিল বলেই নারীরা আজ সচিব। অনেক মুক্তিযোদ্ধার পরিবার এখনও পিছিয়ে আছেন। ফলে আমরা বলছি, শুধু মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বা নাতি-নাতনিদের জন্য নয়, সবার জন্যই কোটা থাকা উচিত।”

গত ৫ জুন আদালতের আদেশ দেওয়ার পর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কিছু শিক্ষার্থী আন্দোলনে নামেন। ঈদের ছুটি শুরু হওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ফাঁকা হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় ১০ জুন দাবি মানতে সরকারকে ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে (আলটিমেটাম) দিয়ে আন্দোলনে বিরতি টানা হয়। ঘোষণা অনুযায়ী, সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসমাবেশের কর্মসূচি পালন করবেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। দাবি আদায়ে ১ জুলাই সব বিশ্ববিদ্যালয়ে একযোগে ছাত্রসমাবেশে করা হবে উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, "দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ধারাবাহিক আন্দোলন চলবে।”

কোটা সংস্কার নিয়ে একাধিক প্রবন্ধ লিখেছেন সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার। এই সংকটের সামাধান কিভাবে হতে পারে? জানতে চাইলে জনাব মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, "বিষয়টি এখন আদালতে বিচারাধীন ফলে এখন আর এ নিয়ে কোন মন্তব্য করা যাবে না।” একই প্রশ্নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আমি মনে করি, এখন আর কোনো কোটা থাকা উচিত না। সব কোটা তুলে দেওয়া উচিত। বিষটি যেহেতু আদালতে বিচারাধীন ফলে এর বেশি কিছু বলা যাবে না।” 

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ