1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কেন এই আন্দোলন

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৯ এপ্রিল ২০১৮

বাংলাদেশে সরকারি চাকরির কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সহিংস ঘটনা ঘটেছে৷ এবার দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতেও ছড়িয়ে পড়ছে আন্দোলন৷ ঘটেছে মহাসড়ক অবরোধের ঘটনাও৷ অথচ সরকার এই দাবি পুরণের ব্যাপারে অনমনীয়৷

Bangladesch Dhaka Protest gegen Quotensystem bei Regierungsjobs
ছবি: bdnews24.com

রবিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলকার শাহবাগে কোটা সংস্কারের পক্ষে ছাত্রদের পূর্ব নির্ধারিত র‌্যালিটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা প্রদক্ষিণের সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে লিপ্ত হয়৷ পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে৷ এরপর সারদিনই ক্যাম্পাসে উত্তপ্ত অবস্থা বিরাজ করে৷ রাত একটার পর আন্দোলনকারী ছাত্ররা উপচার্যের বাসভবনে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর করে৷ এর পরপরই ছাত্রলীগ কোটা সংস্কারের বিরুদ্ধে মিছিল করে৷

ঐ মিছিল থেকে আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর গুলি ছোড়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে৷ রাতে বিভিন্ন হলের ছাত্রীরা আন্দোলনে যোগ দেয়৷ সোমবার সকাল নাগাদ পুলিশ ক্যাম্পাসের নিয়ন্ত্রণ নেয়৷ ছাত্র-ছাত্রীরা হলে চল যায়৷ কিন্তু সাকাল ১০টার দিকে আন্দোলকারী আরো বড় আকারে ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয়৷ এরপর তাদের সঙ্গে ছাত্রলীগের কর্মীদের কয়েক দফা ধাওয়া-পালটা ধাওয়া হয়৷ সংঘর্ষে এ পর্যন্ত দেড় শতাধিক ছাত্র আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে৷ পুলিশ বেশ কিছু ছাত্রকে আটক করেছে বলেও খবর৷

এদিকে সোমবার সকাল থেকে দেশের আরো অনেক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে৷ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ঢাকা আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে৷ ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলরাইন অবরোধের খবরও পাওয়া যায়৷ এছাড়া সারাদেশের অন্তত ২০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রদের বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে৷

সোমবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মোহাম্মদ আখতারজ্জামান দাবি করেন, যারা তার বাসায় হামলা করেছে তারা মুখোশধারী৷ সরকারের পতন ঘটানোর উদ্দেশ্যে ক্যাম্পাসে অস্থিরতা সৃষ্টির ষড়যন্ত্র হচ্ছে৷

পুলিশ কমিশনারও ক্যাম্পাসে অনাকাঙ্খিত ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন৷

অন্যদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে জড়িতরা দাবি করেছেন, ‘‘যারা হামলা করেছেন তাদেরকে আমরা চিনি না৷ আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি৷ পুলিশ আমাদের ওপর হামলা চালাচ্ছে৷ অনেককে আটক করেছে৷ আমরা তাদের মুক্তি চাই৷''

বিষয়টি নিয়ে একটি সমঝোতায় আসার জন্য সোমবার যে কোনো সময় আন্দোলনরত ছাত্রদের সঙ্গে সরকারের একটি প্রতিনিধি দলের বেঠক হওয়ার কথা রয়েছে৷

শহিদ নিলয়

This browser does not support the audio element.

কেন এই আন্দোলন?

কোটা সংস্কারের এই আন্দোলন চলছে দীর্ঘদিন ধরে৷ শুরুতে এটা ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা বাতিলের আন্দোলন৷ পরে এটা সামগ্রিকভাবে কোটা বাতিলের আন্দোলনে পরিণত হয়৷ আর বর্তমানে এটা কোটা সংস্কারের আন্দোলনের রূপ নিয়েছে৷ আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ছাত্র শাহীদ নিলয় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘দেশের মাত্র ২ দশমিক ৬৩ শতাংশ মানুষের জন্য ৩৬ শতাংশ কোটা রয়েছে৷ জেলা কোটা ও নারী কোটাসহ মোট কোটা ৫৬ শতাংশ৷ কিন্তু এই কোটাগুলোর ১০ ভাগের বেশি পুরণ হচ্ছে না৷ তাই আমাদের দাবি, সর্বোচচ ১০ ভাগ কোটা রেখে কোটা সংস্কার করা হোক৷''

তিনি বলেন, ‘‘আমরা মোট পাঁচটি দাবি নিয়ে আন্দোলন করছি৷ তার মধ্যে কোটা সংস্কার ছাড়াও সরকারি চাকরিতে কোটায় বিশেষ নিয়োগ বন্ধ, চাকরিতে প্রবেশে বয়সসীমায় সমতা আনা, কোটা পুরণ না হলে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া রয়েছে৷''

তাঁর কথায়, ‘‘কোটার কারণে মেধাবীরা যেমন বেকার থাকছে, তেমনি প্রশাসনে দক্ষ ও যোগ্য লোকের অভাব দেখা দিচ্ছে৷''

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘সরকার সম্প্রতি খালি কোটা মেধার ভিত্তিতে পুরণের কথা বললেও প্রজ্ঞাপনে শুভঙ্করের ফাঁকি আছে৷ খালি কোটা অন্যান্য কোটার লোক দিয়ে প্রথম পুরণ হবে৷ তারপরও যদি খালি থাকে তখন মেধার ভিত্তিতে পুরণ হবে৷''

মেহেদি হাসান

This browser does not support the audio element.

ওদিকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের কোটার পক্ষে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কমান্ড কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মেহেদি হাসান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যারা কোটাবিরোধী আন্দোলন করছেন, তাদের উদ্দেশ্য ভিন্ন৷ তারা মুক্তিযোদ্ধাদের কটাক্ষ করছেন৷ মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে কথা বলছেন৷ সাধারণ ছাত্রদের ব্যানার ব্যবহার করে ছাত্র শিবির এই আন্দোলন করছে৷ এর সঙ্গে তারা কৌশলে ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মীদেরও ব্যবাহার করছে৷''

তিনি বলেন, ‘‘১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা চালু করেন৷ কিন্তু ৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর, জিয়াউর রহমান ১৯৭৬ সালে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে দেন৷ শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য আবারো কোটা চালু করেন৷ আমাদের ২০ বছর কোটা বঞ্চিত রাখা হয়েছে৷ এ সময়ে কোটা পুরণ করা হলে এখন আর কোটা লাগত না৷''

তিনি দাবি করেন, ‘‘বিএনপি, জামায়াত, ছাত্রদল ,ছাত্রশিবিরের এখন কোনো কাজ নাই৷ ‘আন্দোলন নাই, কাজ নাই' – এখন তারা এভাবে ছাত্রদের মধ্যে ঢুকে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাইছে৷''

সাইফুদ্দীন আহমেদ

This browser does not support the audio element.

সরকারি চাকরিতে কোটা

বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে অনগ্রসর শ্রেণিকে সুবিধা দিয়ে সমতা বিধানের লক্ষ্যে কোটার প্রবর্তণ করা হয় স্বাধীনতার পরেই৷ কিন্তু মোট কোটার পরিমাণ শতকরা ৫৫ ভাগেরও বেশি৷ সরকারি চাকরির অর্ধেকেরও বেশি কোটার দখলে, মেধার দখলে অর্ধেকেরও কম শতকরা ৪৫ ভাগ৷

সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা ৩০, জেলা ১০, নারী ১০ এবং উপজাতি কোটা ৫ শতাংশ৷ এই ৫৫ শতাংশ কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সেক্ষেত্রে এক শতাংশ পদে প্রতিবন্ধী নিয়োগের বিধান রয়েছে৷ তবে সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত, আধা-স্বায়ত্বশাসিত, বিভিন্ন কর্পোরেশন ও দপ্তরে সরাসরি নিয়োগে জেলার জনসংখ্যার ভিত্তিতে জেলাওয়ারি কোটা পুনঃনির্ধারণ করা হয়৷ সর্বশেষ ২০০৯ সালের ২০ ডিসেম্বর জেলাওয়ারি কোটা নির্ধারণ করা হয়েছিল৷

তবে কোটা সংস্কারের আন্দোলনের মুখে সরকার ৫ এপ্রিল এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে খালি কোটা মেধার ভিত্তিতে পুরণের কথা বলে৷ তবে সেটা সরাসরি নয়৷ খালি কোটা প্রথমে অন্য কোটার যোগ্য লোক দিয়ে পুরণ করা হবে৷ তারপর খালি থাকলে সাধারণ মেধা কোটা দিয়ে পুরণ করা হবে৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের অধাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশের সরকারি চাকরিতে এখন কোটার যে ব্যবস্থা আছে, তা সংবিধানের ২৮ নম্বর অনুচ্ছেদের পরিপন্থি৷ কারণ ঐ অনুচ্ছেদে শুধু নারী ও শিশুদের মধ্যে যারা অনগ্রসর, তাদের সুবিধা দেয়ার কথা বলা হয়েছে৷

আরেফিন সিদ্দিক

This browser does not support the audio element.

কিন্তু এখানে যাদের কোটা দেয়া হয়েছে, তারা সবাই অনগ্রসর শ্রেণির? মুক্তিযোদ্ধারা কি আসলেই অনগ্রসর সম্প্রদায়ের মানুষ? আর ৫০ ভাগের বেশি সিভিল সার্ভেন্ট কোটা থেকে আসবেন, সেটা তো ন্যায়-নীতির পরিপন্থি৷ কারণ মেধার চেয়ে সংরক্ষিত কোটা বেশি হতে পারে না৷ বাংলাদেশের সংবিধানে কিন্তু সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সমতা নীতির কথা বলা হয়েছে৷''

তিনি বলেন, ‘‘একটি গ্রুপ এই কোটার কারণে বঞ্চিত হচ্ছে৷ তাই ‘কনফ্লিক্ট' আসবেই৷ সে কারণে সরকারের উচিত হবে এর দ্রুত সমাধান করা৷''

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘এই কোটা ব্যবস্থা সিভিল সার্ভিসে অদক্ষতার জন্ম দিচ্ছে৷''

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কোটা বাতিল বা সংস্কারের দাবি নিয়ে যারা আন্দোলন করবেন, তারা তা করতেই পারেন৷ এটা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার৷ তারা তাদের দাবি নিয়ে সরকারের সঙ্গে বসবেন৷ সরকার তাদের দাবি বিবেচনা করে দেখতে পারে৷ কিন্তু এর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সম্পর্ক নাই৷ ছাত্র-ছাত্রীরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতেই পারেন৷ কিন্তু উপাচার্যের বাসভবনে হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়৷ আমি যখন উপাচার্য ছিলাম তখনও আমার বাসভবনে কোটাবিরোধী আন্দোলনের নামে হামলা চালানো হয়৷ এটা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন৷ সহিংসতায় জড়িদের চিহ্নিত করা প্রয়োজন৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ