কোটা বাতিলের ঘোষণায় সন্দেহ
৯ মে ২০১৮প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে বুধবার সকালে সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ৷ এরপর বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী অবস্থান নেন৷ সেখানে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক নুরুল হক নূর বলেন, ‘‘সরকারের ডাকে আমরা সাড়া দিয়েছি৷ মে মাসের ৭ তারিখের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারির দাবি জানিয়েছিলাম আমরা৷ কিন্তু এমনটা না হওয়ায় ছাত্ররা বিক্ষুব্ধ৷ বাংলার ছাত্রসমাজ তাদের অধিকার আদায়ে আর ছাড় দেবে না৷ আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) প্রজ্ঞাপন জারি না করা হলে রবিবারে সারাদেশের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় কঠোর কর্মসূচি পালন করা হবে৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী যখন কোটা বতিলের ঘোষণা দিয়েছিলেন, তখন আমরা তাঁর বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছি৷ আন্দোলন স্থগিত করে আনন্দ মিছিল করেছি৷ কিন্তু সেই ঘোষণার ২৭ দিন পার হয়ে গেলেও কোনো প্রজ্ঞাপন আমরা পাইনি৷ ছাত্রদের সঙ্গে কেন এমন প্রহসন করা হচ্ছে?''
সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল-মামুন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সরকার কোটা বাতিলে প্রজ্ঞাপন জারি করবে কিনা তা নিয়ে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে৷ ৯ এপ্রিল আমরা সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠক করি৷ তিনি আমাদের ৭ মের মধ্যেকোটা সংস্কারের কথা বলেন৷ এরপর সংসদে প্রধানমন্ত্রী সব ধরনের কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন৷ আমরা আন্দোলন স্থগিত করি৷ প্রধানমন্ত্রী দেশের বাইরে থাকায় আমরা এরপর জাঙ্গির কবির নানকের সঙ্গে দেখা করি৷ তিনি আমাদের বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী দেশে ফেরার পর প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে৷ সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ ও জনপ্রশাসন সচিব বলেছেন, কোটা সংস্কারের ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি নাই৷ তাদের কোনো দিক নির্দেশনা দেয়া হয়নি৷ ফলে বিষয়টি নিয়ে কোনো অগ্রগতি নেই তা স্পষ্ট হয়েছে৷ তাই আমরা চাই বৃহস্পতিবারের মধ্যে সরকার কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি করুক৷ না হলে রবিবার থেকে আমরা নতুন আন্দোলনে যাব৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘আমরা কোটা সংস্কার চেয়েছি, সরকারও কোটা বাতিলের কথা বলেছে৷ বাতিল করলে করতে পারে৷ আর সংস্কার করে প্রচলিত কোটা রাখলে তা হতে হবে সহনীয় মাত্রায়৷''
সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া সফর নিয়ে ২ মে বিকেলে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘কোনো ধরনের ক্ষোভ থেকে সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি৷ ছাত্ররা কোটা ব্যবস্থা বাতিল চেয়েছে, বাতিল করে দেওয়া হয়েছে৷ সেটা নিয়ে এখন প্রশ্ন আনার দরকার কি?''
তিনি আরো বলেন, ‘‘কোটা সংস্কার ছাত্রদের বিষয় না, এটা সরকারি নীতির বিষয়৷ ছাত্ররা দাবি করেছে৷ পরে সেটা মেনে নেয়াও হয়েছে৷ তা এখন হা-হুতাশের কী আছে?''
৭ মে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ‘‘কোটার বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতেশিগগিরই কমিটি গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে৷'' মন্ত্রিসভা বৈঠকে কোটা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা বা কোটার প্রজ্ঞাপন জারির অগ্রগতি কতদূর? এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘‘কোটা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি, কোনো অগ্রগতিও নেই৷ যে অবস্থায় ছিল, তাই আছে৷''
এরপর ৮ মে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সিনিয়র সচিব ড. মো. মোজাম্মেল হক খান সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানান, ‘ ‘প্রধানমন্ত্রী চাকরির কোটা বিষয়ে সংসদে যেঘোষণা দিয়েছেন, তার বিষয়ে আমরা কোনো নির্দেশনা পাইনি৷ নির্দেশনার কাজটা বাকি আছে৷ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নির্দেশনা পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে৷''
কোটা সংস্কার আন্দোলের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী ১১ই এপ্রিল জাতীয় সংসদে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের কথা বলেন৷ প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোটা নিয়ে যখন এত কিছু, তখন কোটাই থাকবে না৷ কোনো কোটারই দরকার নেই৷ যারা প্রতিবন্ধী ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী তাদের আমরা অন্যভাবে চাকরির ব্যবস্থা করে দেব৷
শিক্ষার্থীদের এই কোটা সংস্কার আন্দোলনে সমর্থন দানকারী শিক্ষকেদের একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ফাহমিদুল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী দেশের বাইরে থাকা এবং নানা প্রক্রিয়ায়ার কারণে কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারিতে হয়ত সরকারের একটু সময় লাগতে পারে৷ কিন্তু তা তো সরকারকে বলতে হবে৷ এদিকে নির্ধারিত সময় ৭ মে পার হয়ে গেছে৷ তাই শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি আদায়ে নতুন কর্মসূচি দিতেই পারে৷''
আরেক প্রশ্নের জববে তিনি বলেন, ‘‘প্রজ্ঞাপন নিয়ে আস্থাহীনতা তৈরি হওয়ার নানা কারণ আছে৷ কোটা বাতিলের ঘোষণা দেয়ার পরও ছাত্রদের ওপর মামলার নামে দমনপীড়ন চালান হয়েছে৷ আন্দোলনকারীদের হল থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে৷ এছাড়া সরকারের দায়িত্বশীল মহলের বিভ্রান্তিকর কথাও আস্থাহীনতা তৈরি করেছে৷''
তিনি বলেন, ‘‘সরকারের এখন উচিত হবে যত দ্রুত সম্ভব প্রজ্ঞাপন জারি করা৷'' এ নিয়ে সরকারের নীতি নির্ধারদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি৷''
প্রসঙ্গত, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের জন্য ধারবাহিক আন্দোলন শুরু হয়৷ ১১ই এপ্রিল জাতীয় সংসদে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী৷ এরপর আন্দোলন স্থগিত হয়৷
সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা ৩০, জেলা ১০, নারী ১০ এবং উপজাতি কোটা ৫ শতাংশ৷ এই ৫৫ শতাংশ কোটায় পূরণযোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সেক্ষেত্রে এক শতাংশ পদে প্রতিবন্ধী নিয়োগের বিধান রয়েছে৷ তবে সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত, আধা-স্বায়ত্বশাসিত, বিভিন্ন কর্পোরেশন ও দফতরে সরাসরি নিয়োগে জেলার জনসংখ্যার ভিত্তিতে জেলাওয়ারি কোটা পুনঃনির্ধারণ করা হয়৷ সর্বশেষ ২০০৯ সালের ২০ ডিসেম্বর জেলাওয়ারি কোটা নির্ধারণ করা হয়েছিল৷