1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কোটা বাতিলের ঘোষণায় সন্দেহ

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৯ মে ২০১৮

কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া আবারো কঠোর আন্দোলেনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ৷ তাদের কথায়, ‘‘বৃহস্পতিবারের মধ্যে সরকার কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি না করলে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে৷''

ছবি: bdnews24.com

প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে বুধবার সকালে সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ৷ এরপর বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী অবস্থান নেন৷ সেখানে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক নুরুল হক নূর বলেন, ‘‘সরকারের ডাকে আমরা সাড়া দিয়েছি৷ মে মাসের ৭ তারিখের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারির দাবি জানিয়েছিলাম আমরা৷ কিন্তু এমনটা না হওয়ায় ছাত্ররা বিক্ষুব্ধ৷ বাংলার ছাত্রসমাজ তাদের অধিকার আদায়ে আর ছাড় দেবে না৷ আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) প্রজ্ঞাপন জারি না করা হলে রবিবারে সারাদেশের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় কঠোর কর্মসূচি পালন করা হবে৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী যখন কোটা বতিলের ঘোষণা দিয়েছিলেন, তখন আমরা তাঁর বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছি৷ আন্দোলন স্থগিত করে আনন্দ মিছিল করেছি৷ কিন্তু সেই ঘোষণার ২৭ দিন পার হয়ে গেলেও কোনো প্রজ্ঞাপন আমরা পাইনি৷ ছাত্রদের সঙ্গে কেন এমন প্রহসন করা হচ্ছে?''

‘সরকার কোটা বাতিলে প্রজ্ঞাপন জারি করবে কিনা তা নিয়ে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে’

This browser does not support the audio element.

সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল-মামুন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সরকার কোটা বাতিলে প্রজ্ঞাপন জারি করবে কিনা তা নিয়ে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে৷ ৯ এপ্রিল আমরা সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠক করি৷ তিনি আমাদের ৭ মের মধ্যেকোটা সংস্কারের কথা বলেন৷ এরপর সংসদে প্রধানমন্ত্রী সব ধরনের কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন৷ আমরা আন্দোলন স্থগিত করি৷ প্রধানমন্ত্রী দেশের বাইরে থাকায় আমরা এরপর জাঙ্গির কবির নানকের সঙ্গে দেখা করি৷ তিনি আমাদের বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী দেশে ফেরার পর প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে৷ সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ ও জনপ্রশাসন সচিব বলেছেন, কোটা সংস্কারের ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি নাই৷ তাদের কোনো দিক নির্দেশনা দেয়া হয়নি৷ ফলে বিষয়টি নিয়ে কোনো অগ্রগতি নেই তা স্পষ্ট হয়েছে৷ তাই আমরা চাই বৃহস্পতিবারের মধ্যে সরকার কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি করুক৷ না হলে রবিবার থেকে আমরা নতুন আন্দোলনে যাব৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘আমরা কোটা সংস্কার চেয়েছি, সরকারও কোটা বাতিলের কথা বলেছে৷ বাতিল করলে করতে পারে৷ আর সংস্কার করে প্রচলিত কোটা রাখলে তা হতে হবে সহনীয় মাত্রায়৷''

সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া সফর নিয়ে ২ মে বিকেলে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘কোনো ধরনের ক্ষোভ থেকে সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি৷ ছাত্ররা কোটা ব্যবস্থা বাতিল চেয়েছে, বাতিল করে দেওয়া হয়েছে৷ সেটা নিয়ে এখন প্রশ্ন আনার দরকার কি?''

তিনি আরো বলেন, ‘‘কোটা সংস্কার ছাত্রদের বিষয় না, এটা সরকারি নীতির বিষয়৷ ছাত্ররা দাবি করেছে৷ পরে সেটা মেনে নেয়াও হয়েছে৷ তা এখন হা-হুতাশের কী আছে?''

‘সরকারের এখন উচিত হবে যত দ্রুত সম্ভব প্রজ্ঞাপন জারি করা'

This browser does not support the audio element.

৭ মে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন,  ‘‘কোটার বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতেশিগগিরই কমিটি গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে৷'' মন্ত্রিসভা বৈঠকে কোটা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা বা কোটার প্রজ্ঞাপন জারির অগ্রগতি কতদূর? এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘‘কোটা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি, কোনো অগ্রগতিও নেই৷ যে অবস্থায় ছিল, তাই আছে৷''

এরপর ৮ মে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সিনিয়র সচিব ড. মো. মোজাম্মেল হক খান সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানান, ‘ ‘প্রধানমন্ত্রী চাকরির কোটা বিষয়ে সংসদে যেঘোষণা দিয়েছেন, তার বিষয়ে আমরা কোনো নির্দেশনা পাইনি৷ নির্দেশনার কাজটা বাকি আছে৷ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নির্দেশনা পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে৷''

কোটা সংস্কার আন্দোলের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী ১১ই এপ্রিল জাতীয় সংসদে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের কথা বলেন৷ প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোটা নিয়ে যখন এত কিছু, তখন কোটাই থাকবে না৷ কোনো কোটারই দরকার নেই৷ যারা প্রতিবন্ধী ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী তাদের আমরা অন্যভাবে চাকরির ব্যবস্থা করে দেব৷

শিক্ষার্থীদের এই কোটা সংস্কার আন্দোলনে সমর্থন দানকারী শিক্ষকেদের একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ফাহমিদুল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী দেশের বাইরে থাকা এবং নানা প্রক্রিয়ায়ার কারণে কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারিতে হয়ত সরকারের একটু সময় লাগতে পারে৷ কিন্তু তা তো সরকারকে বলতে হবে৷ এদিকে নির্ধারিত সময় ৭ মে পার হয়ে গেছে৷ তাই শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি আদায়ে নতুন কর্মসূচি দিতেই পারে৷''

আরেক প্রশ্নের জববে তিনি বলেন, ‘‘প্রজ্ঞাপন নিয়ে আস্থাহীনতা তৈরি হওয়ার নানা কারণ আছে৷ কোটা বাতিলের ঘোষণা দেয়ার পরও ছাত্রদের ওপর মামলার নামে দমনপীড়ন চালান হয়েছে৷ আন্দোলনকারীদের হল থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে৷ এছাড়া সরকারের দায়িত্বশীল মহলের বিভ্রান্তিকর কথাও আস্থাহীনতা তৈরি করেছে৷''

তিনি বলেন, ‘‘সরকারের এখন উচিত হবে যত দ্রুত সম্ভব প্রজ্ঞাপন জারি করা৷'' এ নিয়ে সরকারের নীতি নির্ধারদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি৷''

প্রসঙ্গত, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের জন্য ধারবাহিক আন্দোলন শুরু হয়৷ ১১ই এপ্রিল জাতীয় সংসদে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী৷ এরপর আন্দোলন স্থগিত হয়৷

সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা ৩০, জেলা ১০, নারী ১০ এবং উপজাতি কোটা ৫ শতাংশ৷ এই ৫৫ শতাংশ কোটায় পূরণযোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সেক্ষেত্রে এক শতাংশ পদে প্রতিবন্ধী নিয়োগের বিধান রয়েছে৷ তবে সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত, আধা-স্বায়ত্বশাসিত, বিভিন্ন কর্পোরেশন ও দফতরে সরাসরি নিয়োগে জেলার জনসংখ্যার ভিত্তিতে জেলাওয়ারি কোটা পুনঃনির্ধারণ করা হয়৷ সর্বশেষ ২০০৯ সালের ২০ ডিসেম্বর জেলাওয়ারি কোটা নির্ধারণ করা হয়েছিল৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ