1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কোটা বাতিলের সুপারিশ এবং মুক্তিযোদ্ধা কোটা

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৪ আগস্ট ২০১৮

সরকারি চাকরিতে কোটা বাদ দিয়ে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের সুপারিশ করছে সরকারের কমিটি৷ মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিষয়টি আদালতের মতামতের ভিত্তিতে ঠিক হবে৷ তবে অনেকেই মনে করছেন, কোটার যৌক্তিক সংস্কার প্রয়োজন৷

Bangladesh Dhaka Quota Protest auf einen Blick
ছবি: bdnews24.com

বর্তমানে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে শতকরা ৫৬ ভাগ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষিত৷ এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ৫ শতাংশ, প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ৷

আর বাংলাদেশের সংবিধানের ২৮ এবং ২৯ নাম্বার অনুচ্ছেদে প্রজাতন্ত্রের কর্মে (সরকারি চাকরি) নিয়োগের সমতা এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কোটার ব্যাপারে রাষ্ট্রকে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে৷ কিন্তু পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য রাষ্ট্র কোটা ব্যবস্থা প্রচলনে বাধ্য কিনা, তা সংবিধানে সরাসরি বলা হয়নি৷

সংবিধানের ২৮ অনুচ্ছেদ: ধর্ম, প্রভৃতির কারণে বৈষম্য

(১) কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষ ভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করিবেন না৷

(২) রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী পুরুষের সমান অধিকার লাভ করিবেন৷

(৩) কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী পুরষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে জনসাধারণের কোনো বিনোদন বা বিশ্রামের স্থানে প্রবেশের, কিংবা কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির বিষয়ে কোনো নাগরিককে কোনোরূপ অক্ষমতা, বাধ্যবাধকতা, বাধা বা শর্তের অধীন করা যাইবে না৷

(৪) নারী বা শিশুদের অনুকূলে, কিংবা নাগরিকদের যে কোনো অনগ্রসর অংশের অগ্রগতির জন্য বিশেষ বিধান প্রণয়ন হইতে এই অনুচ্ছেদের কোনো কিছুই রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করিবে না৷

সংবিধানের ২৯ অনুচ্ছেদ: সরকারি নিয়োগ-লাভে সুযোগের সমতা

(১) প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ-লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকিবে৷

(২) কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিক প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদলাভের অযোগ্য হইবেন না, কিংবা সেই ক্ষেত্রে তাহার প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করা যাইবে না৷

(৩) এই অনুচ্ছেদের কোনো কিছুই-

(ক) নাগরিকদের যে কোনো অনগ্রসর অংশ যাহাতে প্রজাতন্ত্রের কর্মে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভ করিতে পারেন, সেই উদ্দেশ্যে তাঁহাদের অনুকূলে বিশেষ বিধান-প্রণয়ন করা হইতে,

(খ) কোনো ধর্মীয় বা উপ-সম্প্রদায়গত প্রতিষ্ঠানে উক্ত ধর্মাবলম্বী বা উপ-সম্প্রদায়ভুক্ত ব্যক্তিদের জন্য নিয়োগ সংরক্ষণের বিধান-সম্বলিত যে কোনো আইন কার্যকর করা হইতে,

(গ) যে শ্রেণির কর্মের বিশেষ প্রকৃতির জন্য, তাহা নারী বা পুরুষের পক্ষে অনুপযোগী বিবেচিত হয়, সেইরূপ যে কোনো শ্রেণির নিয়োগ বা পদ যথাক্রমে পুরুষ বা নারীর জন্য সংরক্ষণ করা হইতে, রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করিবে না৷

আদিবাসীরা শুরু থেকেই বৈষম্যের শিকার৷ কোটা তুলে দিলে আরো বৈষম্যের শিকার হবে’

This browser does not support the audio element.

আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বলা হয়েছে বাংলাদেশের এখন সবাই অগ্রসর৷ তাই মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাদে আর সব কোটা বাতিল হবে৷ বাংলাদেশের সবাই অগ্রসর, এটা কোনো তথ্য বা গবেষণাভিত্তিক কথা নয়৷ বাংলাদেশের যাঁরা আদিবাসী, যাঁরা পাহাড়সহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাস করেন, সেখানে স্কুলগুলো ভালো নয়৷ কাউকে কাউকে পাহাড় ডিঙিয়ে , নদী পেড়িয়ে স্কুলে যেতে হয়৷ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মান ভালো নয়৷ আদিবাসীরা শুরু থেকেই বৈষম্যের শিকার৷ যদি এখন কোটা তুলে সমান করে দেয়া হয়, তাহলে আদিবাসীরা বৈষম্যের শিকার হবে৷ সরকারি টাকরিতে তাদের দেখা যাবে না৷ এমনিতেই আদিবাসীদের মধ্যে যারা ছোট ছোট গোষ্ঠী, যেমন, বানাই, হাজং, চাক, লুসাই, তাদের সরকারি প্রশাসনে খুঁজেও পাওয়া যায় না৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘সংবিধানে পিছিয়ে পড়া বা বৈষম্যের শিকার জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নেয়ার জন্য বিশেষ সুবিধা দেয়ার কথা বলা আছে৷ আর প্রধানমন্ত্রীও যখন কোটা বাতিলের কথা বলেছেন, তখন আদিবাসী এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখার কথা বলেছেন৷ কিন্তু কামিটি এখন যা বলছে, তা আমাদের হতাশ করছে৷''

‘উচ্চশিক্ষায় নারীরা এখনো পিছিয়ে আছেন৷ তাই নারী কোটা বিলুপ্ত করার সময় এখনো আসেনি’

This browser does not support the audio element.

মানবাধিকার কর্মী ও সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মিতি সানজানা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের নারীশিক্ষা নিয়ে অনেক উচ্ছ্বাস আছে৷ যে নারীরা শিক্ষায় অনেক এগিয়ে গেছে৷ এটা প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ৷ কিন্তু উচ্চশিক্ষায় নারীরা এখনো পিছিয়ে আছেন৷ তাঁরা এখনো অনগ্রসর রয়ে গেছেন৷ তাই আমার মনে হয়, নারী কোটা বিলুপ্ত করার সময় এখনো আসেনি৷ বাংলাদেশের সংবিধানে বলা হয়েছে, যারা অনগ্রসর তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা, বিশেষ আইন করা৷ এটাকে ইতিবাচক হিসেবেই আমরা দেখি৷ সংবিধানে এই পজিটিভ ডিসক্রিমিনিশনের কথা বলা হয়েছে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সহায়তা করার জন্য৷''

তিনি বলেন, ‘‘কোটা সংস্কার করা দরকার বাস্তবতার নিরিখে৷ এখন জেলা কোটার প্রয়োজন নেই৷ জেলা কোটা একটা অসাম্য বা বৈষম্য সৃষ্টি করে৷ এইসব বিষয় বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন৷''

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমর্থক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. ফাহমিদুল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সব কোটা বাতিল নয়, কোটার যৌক্তিক সংস্কার প্রয়োজন৷ যারা কোটা সংস্কারের আন্দোলন করছেন এবং আমরা যারা তাদের সঙ্গে আছি, তারাও কখনো সরকারি চাকরিতে কোটা পুরোপুরি বাতিলের দাবি করিনি৷ যেখানে কোটা বাদ দেয়া দরকার, সেখানে বাদ দেয়া, আর যেখানে কমানো দরকার, সেখানে যৌক্তিকভাবে কমিয়ে আনা৷ মোট চাকরির ৫৬ ভাগ তো কোটায় চলে যেতে পারে না৷ এটা সর্বোচ্চ ৩০-৩৫ ভাগ হতে পারে, যাতে চোখে না পড়ে৷''

‘সব কোটা বাতিল নয়, কোটার যৌক্তিক সংস্কার প্রয়োজন’

This browser does not support the audio element.

তিনি আরো বলেন, ‘‘পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী, যেমন আদিবাসী, নারী, তাঁদের কোটার প্রয়োজন আছে৷ কমপক্ষে ৫ ভাগ হলেও রাখা প্রয়োজন৷ জেলা কোটার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না৷ মুক্তিযোদ্ধা কোটা ১০ ভাগ রাখা যেতে পারে৷ আসল কথা হলো, কোটার সংস্কার প্রয়োজন৷''

কোটা সংস্কার আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা কোটার যৌক্তিক সংস্কারের আন্দোলন করছি৷ আমরা একবারও কোটা উঠিয়ে দেয়ার কথা বলিনি৷ কোটা উঠিয়ে দেয়ার কথা বলেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী৷ আমরা তাঁর প্রতি সম্মান রেখে, তাঁর কথা সরাসরি প্রত্যাখ্যান না করে আমরা প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছি, যাঁদের জন্য কোটা আছে, তাঁদের কোটা পুরোপুরি তুলে না দিয়ে কিছুটা রেখে একটা সম্মানজনক সংস্কার করা হোক৷''

তিনি বলেন, ‘‘তবে সরকার এখন যে প্রক্রিয়ায় যাচ্ছে, তাতে মনে হচেছ আদালতের  মাধ্যমে সরকার মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ ভাগই রেখে দেবে, আর সব কোটা তুলে দেবে৷ আর সবচেয়ে দুর্নীতি হয় এই কোটায়৷ তাহলে তো কোনো লাভ হচ্ছে না৷ মুক্তিযোদ্ধা কোটার ব্যাপারে আদালতের কোনো রায় নেই৷ ওটা একটা পর্যবেক্ষণ৷ এটা মানার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই৷''

‘আমরা কোটার যৌক্তিক সংস্কারের আন্দোলন করছি৷ আমরা একবারও কোটা উঠিয়ে দেয়ার কথা বলিনি’

This browser does not support the audio element.

কোটা সংস্কার আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন আরো বলেন, ‘‘সরকার এখন যেদিকে যাচ্ছে, সেটা প্রহসন ছাড়া আর কিছুই না৷ প্রতিবন্ধী কোটা, উপজাতি কোটা এগুলো কি বাংলাদেশের বাস্তবতায় উঠিয়ে দেয়া সম্ভব? সরকার আসলে বিষয়টি দীর্ঘায়িত করতে চাইছে৷ আর আমাদের যাদের আটক করা হয়েছে, তাদের কারাগারেই রাখতে চাইছে৷ আমরা আমাদের দাবি মানার জন্য সরকারকে ৩১ অগাস্ট পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়েছি৷ ওই সময়ের মধ্যে আমাদের দাবি না মানলে আমরা বড় কর্মসূচিতে যাবো৷''

প্রসঙ্গত, সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, সরকার বনাম জামাল উদ্দিন সিকদার মামলার রায়ে সাতটি পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট৷ ৩ নম্বর নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ‘‘মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য সংরক্ষিত ৩০ ভাগ কোটা যতটা সম্ভব কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগ মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের কোটা পূরণ করতে সব দরকারি পদক্ষেপ নেবে৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ