সরকারি চাকরিতে সব ধরনের কোটার হার বিবেচনার সুপারিশের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এ সংক্রান্ত সরকারি কমিটি৷ মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিষয়ে মতামত চাওয়া হবে সুপ্রিম কোর্টের কাছে৷
বিজ্ঞাপন
সোমবার মন্ত্রিসভাকে এ বিষয়ে অবহিত করেছেন কোটা পর্যালোচনা কমিটির নেতৃত্বে থাকা মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম৷
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সামনে বিস্তারিত তুলে ধরেন মোহাম্মদ শফিউল আলম৷ এ সংক্রান্ত সুপারিশ প্রায় চূড়ান্ত বলে জানিয়েছে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম৷
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, সরকারি চাকরির কোটা ‘যতটা সম্ভব' তুলে দিয়ে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের সুপারিশ করবে কমিটি৷
তবে মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংক্রান্ত আদালতের একটি রায় রয়েছে৷ ফলে, এই কোটার বিষয়ে বাস্তবতা তুলে ধরে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়া হবে বলেও জানান সচিব৷ তিনি বলেন, আদালত এ বিষয়ে যে মত দিবে, সে অনুযায়ীই ব্যবস্থা নেয়া হবে৷
একনজরে কোটা সংস্কার আন্দোলন
সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে বেশ কিছুদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছিল ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’৷ প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার মধ্য দিয়ে তা শেষ হয়৷ দেখে নেয়া যাক আন্দোলনের খণ্ডচিত্র...
ছবি: bdnews24.com
পদযাত্রা
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে নানা কমর্সূচি পালনের পর রোববার পদযাত্রার কর্মসূচি দেয় ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’৷
ছবি: bdnews24.com
অবস্থান কর্মসূচি
পদযাত্রা কর্মসূচি শেষে ঢাকার শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেয় আন্দোলনরতরা৷
ছবি: bdnews24.com
দিনব্যাপী বিক্ষোভ
রোববার দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি চলতে থাকে৷ এ সময় পুলিশ আন্দোলনকারীদেরকে বেশ কয়েকবার উঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও শিক্ষার্থীরা অনড় থাকে৷
ছবি: bdnews24.com
পুলিশের অ্যাকশন
রাত ৮টার দিকে লাঠিপেটা ও রাবার বুলেট-কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে অবরোধকারীদের উঠিয়ে দেয় পুলিশ৷ অবরোধকারীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির দিকে পিছু হটলে তাঁদের উপর ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মীর চড়াও হওয়ার অভিযোগ ওঠে৷
ছবি: bdnews24.com
সংঘাত
শাহবাগ ছাড়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন এলাকায় রাতে খণ্ড খণ্ড বিক্ষোভ চলে; পুলিশও তাঁদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোঁড়ে৷ দু’পক্ষের সংঘাত ছড়িয়ে পরে৷
ছবি: bdnews24.com
উপাচার্যের বাড়িতে ভাংচুর
গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাড়িতে ভাঙচুর হয়৷ বাড়িতে ব্যাপক ভাংচুরের পাশাপাশি দুটি গাড়িতেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়৷ ভাংচুর শুরুর আগে সব সিসি ক্যামেরা ভেঙ্গে ফেলা হয়৷
ছবি: bdnews24.com
উপাচার্যের অভিযোগ
সোমবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, তাঁর প্রাণনাশের জন্যই বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে৷ তবে তিনি আরো বলেন, এমন হামলা সাধারণ ছাত্ররা চালাতে পারে তাঁর কাছে তা বিশ্বাসযোগ্য নয়৷
ছবি: bdnews24.com
সমঝোতা
সোমবার যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে সরকারের একটি প্রতিনিধি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেন৷ মীমাংসাও হয়৷ ফলে আলোচনায় অংশ নেয়া নেতারা আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করেন৷ তবে আন্দোলনকারীদের একাংশ আন্দোলনে থাকে৷
ছবি: bdnews24
নারী অংশগ্রহণ
সরকারি চাকরিতে ১০ ভাগ নারী কোটা থাকলেও কোটা সংস্কার আন্দোলনে প্রচুর নারী অংশ নেন৷
ছবি: bdnews24
স্থবিরতা
ঢাকা তো বটেই পুরো দেশের অনেক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানই একে একে অচল হয়ে পড়ে৷ রাস্তা বন্ধ করে শিক্ষার্থীরা দাবি আদায়ের আন্দোলন শুরু করেন৷
দেশব্যাপী আন্দোলনের তীব্রতা বেড়ে যায়৷ আন্দোলনরতরা ছাত্রলীগের একাংশের নির্যাতন এবং সরকারের দুই মন্ত্রীর ‘আপত্তিকর’ বক্তব্যের প্রতিবাদে সমাবেশ ও প্রতিবাদ অব্যাহত রাখে৷
ছবি: bdnews24.com
হেনস্থার শিকার পুলিশ ও সাংবাদিক
আন্দোলন চলার সময় বেশ কয়েকজন সাংবাদিক ও পুলিশ হেনস্থার শিকার হন৷ এখানে এক পুলিশ কর্মকর্তার আন্দোলনকারীদের হাতে নাজেহাল হতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: bdnews24.com
অপেক্ষা
কোটা বৈষম্যের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য দাবি করে আন্দোলনকারীরা৷ বুধবার বিকালে প্রধানমন্ত্রী সংসদে এ বিষয়ে কথা বলছেন জানালে শুরু হয় অপেক্ষার প্রহর৷
ছবি: bdnews24.com
অবশেষে অপেক্ষার অবসান
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে সব কোটা তুলে দেওয়ার ঘোষণা দিলে আন্দোলনরতরা তাঁর এবং বঙ্গবন্ধুর ছবি নিয়ে আনন্দ মিছিল করে৷
ছবি: bdnews24.com
15 ছবি1 | 15
কমিটিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ছাড়াও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সরকারি কর্ম কমিশন, অর্থ বিভাগ এবং লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিবরা সদস্য হিসেবে আছেন৷
বর্তমানে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষিত; এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ৷
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী ‘ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ' কোটার পরিমাণ ১০ শতাংশে কমিয়ে আনার দাবি তুলেছিল৷ কোটায় প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধা তালিকা থেকে তা পূরণের দাবিও জানিয়েছিল তারা৷
শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদে কোটা পদ্ধতিকে বাতিল ঘোষণা করেন৷ তবে পরে সংসদে তিনি বলেন, কোটা পদ্ধতি থাকবে৷ মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ রাখতে হাই কোর্টের রায় আছে৷
তবে এ মন্তব্যে আবার আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে৷ পরে ২ জুন পর্যালোচনা কমিটি গঠন করে ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়৷ পরে ১৯ জুলাই কমিটিকে আরো ৯০ কার্যদিবস সময় দেয়া হয়৷