স্বাধীনতার প্রশ্নে একতরফা গণভোট আয়োজন করে প্রবল চাপের মুখে পড়েছে ইরাকি কুর্দিস্তানের নেতৃত্ব৷ বেশ কিছু এলাকার উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সেই গণভোটের রায় স্থগিত করে বাগদাদের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন কুর্দি নেতারা৷
বিজ্ঞাপন
স্বাধীনতার প্রশ্নে গণভোটের পর প্রবল চাপের মুখে পড়েছে ইরাকের কুর্দিস্তান এলাকা৷ বাগদাদের ফেডারেল সরকার কিরকুক শহরের নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে নিতে জোরালো তৎপরতা শুরু করেছে৷ ইরানের মদতপুষ্ট মিলিশিয়া বাহিনীও এই উদ্যোগে অংশ নিচ্ছে৷
এমন পরিস্থিতিতে হিংসা বন্ধ করে সংলাপের মাধ্যমে উত্তেজনা কমাতে চাইছে কুর্দি নেতৃত্ব৷ সেই সদিচ্ছার পরিচয় হিসেবে তারা গত মাসে গণভোটে স্বাধীনতার রায়কে আপাতত ‘ফ্রিজ' বা মূলতুবি রাখার প্রস্তাব দিয়েছে৷ ইরাকের সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যেই বাগদাদের সঙ্গে আলোচনা চাইছে কুর্দি আঞ্চলিক সরকার৷ উল্লেখ্য, ইরাকি কুর্দিস্তানে প্রায় ৯২ শতাংশ ভোটার স্বাধীনতার পক্ষে রায় দিয়েছিলেন৷
বর্তমান পরিস্থিতির কারণে ইরাকের কুর্দি অঞ্চলের নেতৃত্ব কতটা দুশ্চিন্তায় পড়েছে, মঙ্গলবারের আরেকটি সিদ্ধান্ত তা স্পষ্ট করে দিয়েছে৷ আগামী ১লা নভেম্বর সেখানে সংসদ ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার কথা ছিল৷ কিছু এলাকা হাতছাড়া হবার পর সেই নির্বাচন আরও ৮ মাস পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ তবে কোনো নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা হয়নি৷ কুর্দি আঞ্চলিক সংসদ পরে উপযুক্ত তারিখ স্থির করবে বলে কুর্দিস্তান গণতন্ত্রী পার্টির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে৷
কুর্দি আঞ্চলিক সংসদ কুর্দি প্রেসিডেন্সির কার্যকলাপও মূলতুবি রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ ফলে কুর্দি অঞ্চলের প্রেসিডেন্ট মাসুদ বারজানির ক্ষমতা অনেকটাই খর্ব করা হয়েছে৷ তাঁর একতরফা গণভোট আয়োজনের সিদ্ধান্তের পরিণতি প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছে৷ ঘনিষ্ঠ সহযোগী অ্যামেরিকাও তাঁর প্রতি সমর্থন দেখাচ্ছে না৷ এই অবস্থায় কুর্দি রাজনীতি জগত উত্তাল হয়ে পড়েছে৷
যুদ্ধে নারী, নারী যোদ্ধা
২০১৪ সালের গ্রীষ্মে ইসলামিক স্টেট উত্তর ইরাকের ইয়াজিদি এলাকাগুলি দখল করে৷ হাজার হাজার ইয়াজিদি মহিলা ও কিশোরীকে ধরে নিয়ে গিয়ে দাসী হিসেবে রাখা হয় ও ধর্ষণ করা হয়৷ আজ সেই ইয়াজিদি নারীরাই সন্ত্রাসবাদিদের বিরুদ্ধে লড়ছেন৷
ছবি: Reuters/A. Jadallah
শত্রুর খোঁজ
শত্রু বাইরে কোথাও - কুর্দি নারী যোদ্ধা হাসেবা নৌজাদ ইরাকের মোসুল শহরের কাছে চোখে দুরবিন লাগিয়ে ‘ফ্রন্ট লাইন’ পরখ করে দেখছেন৷ কুর্দ এলাকা ও আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকার মধ্যে সীমারেখা হলো এই ফ্রন্ট৷ কুর্দিরা ইরাকি সামরিক বাহিনীর সহযোগিতায় ক্রমেই আরো এগিয়ে যাচ্ছে, পিছু হটছে ইসলামিক স্টেট৷
ছবি: Reuters/A. Jadallah
গুপ্তপ্রতিরোধের ভ্যানগার্ড
শত্রু নজরে পড়েছে, এবার তাদের দিকে গুলি চালানো হবে৷ হাসেবা নৌজাদ দেখাচ্ছেন কোনদিকে; আসেমা দাহির (ডান দিক থেকে তৃতীয়) ও অন্যান্য ইয়াজিদি নারী যোদ্ধারা নিশানা ঠিক করছেন৷ শুধুমাত্র বিমান থেকে আইএস সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে লাভ নেই৷ তাই ইয়াজিদি আর কুর্দ মহিলাদের নিয়ে রণক্ষেত্রে এই ভ্যানগার্ড তৈরি করা হয়েছে৷
ছবি: Reuters/A. Jadallah
সুন্দর দেখানোর জন্য নয়
বন্দুক নিয়ে ঠিকমতো নিশানা করার জন্য মাথার চুল কপালে বা চোখে পড়লে চলবে না৷ তাই চুল টান টান করে বেঁধে নেন হাসেবা নৌজাদ, ‘মিলিটারি লুক’ ফ্যাশনের জন্য নয়৷
ছবি: Reuters/A. Jadallah
লাকি চার্ম
যুদ্ধের ফাঁকে আসেমা দাহির৷ হাতে যে লাল রঙের টেডি বেয়ারটি রয়েছে, সেটা হয়তো অতীতের সেই সুন্দর, শান্তিপূর্ণ দিনগুলির প্রতীক, যখন আইএস ইয়াজিদিদের স্বদেশকে দখল করেনি৷ ২০১৪ সালের গ্রীষ্মে সেই শান্তি শেষ হয়ে যায়, শুরু হয় আইএস-এর সন্ত্রাস৷
ছবি: Reuters/A. Jadallah
পালানো ছাড়া পথ ছিল না
শিশু, মহিলা, বৃদ্ধ, আইএস কাউকে ক্ষমা করেনি৷ ২০১৪ সালের গ্রীষ্মে লক্ষ লক্ষ ইয়াজিদি বাস্তু ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করেন, তাদের পিছনে আইএস৷ এক বৃদ্ধ ও দুই তরুণীর এই ছবিটি যেন বিশ্বের সামনে ইয়াজিদিদের যন্ত্রণাকে তুলে ধরে৷
ছবি: Reuters
বিভীষিকা
এই ইয়াজিদি কিশোরী ক্যামেরার সামনে তার মুখ দেখাতে চায় না৷ ২০১৪ সালে এই ১৫ বছর বয়সের মেয়েটিকে ধরে নিয়ে গিয়ে একজন আইএস যোদ্ধার সঙ্গে জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল৷ তার দু’মাস পরে মেয়েটি পালাতে সমর্থ হয়৷ আজ সে আবার নিজের পরিবারের সঙ্গেই বাস করছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/D. Bennett
ধ্বংসস্তূপ
উত্তর সিরিয়ার কোবানি শহরটি তুর্কি সীমান্তের অদূরে৷ আইএস যোদ্ধারা মাসের পর মাস শহরটি অবরুদ্ধ করে রেখেছিল৷ কুর্দিরা সব কিছুর পরও প্রতিরোধ চালিয়ে যায় ও শেষমেশ মার্কিন বিমানবাহিনীর সাহায্যে সন্ত্রাসবাদীদের পরাজিত করতে সমর্থ হয়৷ পড়ে থাকে একটি শহর নয়, যেন শহরের ধ্বংসস্তূপ৷
ছবি: Getty Images/AFP/Y. Akgul
সবে মিলে করি কাজ
যারা আইএস-এর আদর্শে বিশ্বাস করে না, আইএস-এর দৃষ্টিতে তারা সবাই শত্রু৷ বিভিন্ন ধর্ম, সম্প্রদায় ও জাতির মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করাই হলো আইএস-এর উদ্দেশ্য৷ সে উদ্দেশ্য সর্বক্ষেত্রে সফল হয় না৷ কুর্দি আর ইয়াজিদি মেয়েদের মধ্যে যে বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে, এক অর্থে তা আইএস-এর প্রতীকী পরাজয়৷
ছবি: Reuters/A. Jadallah
স্বাধীনতার সড়ক
শুধু অস্ত্র দিয়ে আইএস-কে হারানো যাবে না৷ সিরিয়া আর ইরাকের অনেক এলাকা এখনও আইএস-এর নিয়ন্ত্রণে৷ কুর্দি আর ইয়াজিদি মেয়েরাও তাদের সংগ্রাম চালিয়ে যাবে৷ তাদের প্রতিরোধের আর একটি শিক্ষা হলো, মেয়েরা পুরুষের দাস নয় - সন্ত্রাসবাদিদের যা কাজে লাগার কথা!