বিশ্ব আবহাওয়া দপ্তর বা ডাব্লিউএমও-র তথ্য বলছে, ২০২৪ ছিল উষ্ণতম বছর। জলবায়ু পরিবর্তনই তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণ।
জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম ফল হলো গরম বেড়ে যাওয়া। ছবি: Ted Aljibe/AFP
বিজ্ঞাপন
গত ১২ মাসের হিসেবও খুব একটা আশাব্যাঞ্জক নয়। ১৮৫০ থেকে ১৯০০ সালের তুলনায় গত এক বছরে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা এক দশমিক ৫৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস (দুই দশমিক ৭৮ ফারেনহাইট) বেশি থেকেছে। এর আগে এতটা ব্যাপক হারে ফসিল ফুয়েল বা জীবাশ্ম থেকে তৈরি জ্বালানির ব্যবহার ছিল না। বর্তমান তাপমাত্রা ২০২৩ এর রেকর্ডকেও ছাপিয়ে গেছে।
প্যারিস জলবায়ু চুক্তি অনুসারে সরকারগুলি বিশ্বের উষ্ণায়নকে শিল্পযুগের আগের পর্যায়ের তুলনায় দুই ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে রাখার অঙ্গিকার করেছিল। একইসঙ্গে তারা উষ্ণায়নের মাত্রাকে এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রির নিচে রাখতে চেষ্টা চালাবে বলেও জানিয়েছিল।
উষ্ণায়নের গড় তাপমাত্রা দশক ধরে মাপা হয়। ডাব্লিউএমও বার্ষিক রিপোর্টে প্যারিসের লক্ষ্যমাত্রা না ছাড়ালেও উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ আছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এই রিপোর্ট অনুযায়ী বর্তমানে দীর্ঘমেয়াদী উষ্ণায়ন এক দশমিক ৩৪ থেকে এক দশমিক ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রয়েছে।
ডাব্লিউএমও-র প্রধান সেলেস্টে সাউলোর মতে, এই নতুন তথ্য আমাদের জীবন, অর্থনীতি এবং সর্বোপরি পৃথিবীর জন্য যথেষ্ট উদ্বেগের।
জলবায়ু সম্মেলনে জলবায়ু-ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার দাবি
জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক সর্বোচ্চ সম্মেলন ‘কপ’-এর ২৭তম আসর ৬ নভেম্বর মিশরের শারম আল শাইখে শুরু হয়েছে৷ সেখানে ক্লাইমেট অ্যাক্টিভিস্টরা বিশ্বকে বাঁচাতে জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব রোধে ন্যায়বিচারের দাবি তুলেছেন৷ দেখুন ছবিঘরে..
ছবি: Emilie Madi/REUTERS
ক্লাইমেট জাস্টিস'
শারম আল শাইখের আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেন অ্যাক্টিভিস্টরা। 'ক্লাইমেট জাস্টিস' লেখা পোস্টারও চোখে পড়েছে তাদের হাতে। কার্যকরী নীতি প্রণয়ণ করে বিশ্বনেতৃত্ব বুঝিয়ে দিক, ক্ষমতা কিংবা বাজারের তুলনায় আমাদের এই পৃথিবী ও তার পরিবেশ কতটা গুরুত্বপূর্ণ, এমনটাই আশা তাদের৷
ছবি: Mohamed Abd El Ghany/REUTERS/REUTERS
ভেগান অ্যাক্টিভিস্টরাও ছিলেন
'ডোন্ট ইট মি', অর্থাৎ আমাদের খেয়ে ফেলো না- এমনই একটি পোস্টার নিয়ে মাংস খাওয়ার বিরুদ্ধে প্রচার চালাতে দেখা গেছে এক ভেগান অ্যাক্টিভিস্টকে। সেই পোস্টারে ছিল গরু, শূকর, ছাগলসহ নানা প্রাণীর ছবি। মিট ইন্ডাস্ট্রি পরিবেশের চরম ক্ষতি করছে, এই বক্তব্যকে সামনে রেখে প্রতিবাদ জানিয়েছেন তারা।
ছবি: Mohamed Abd El Ghany/REUTERS
বিটিএস আর্মিদের প্রতিবাদ
দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২১ মিলিয়ন কপি অ্যালবাম বিক্রি করা দলের নাম বিটিএস। দেশের অর্থনীতিতে তারা জোয়ার এনেছেন। তাদের বিপুল সংখ্যক ফ্যানবেস, অর্থাৎ বিটিএস আর্মির সদস্যরাও জলবায়ু ইস্যুতে সরব হন। এক প্রতিবাদীর হাতে লেখা ছিল, ‘‘জলবায়ুর বিচার চাই এখনই।’’
ছবি: Mohamed Abd El Ghany/REUTERS/REUTERS
একজোট হয়ে
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ একাধিক দেশ মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ছে৷ একাধিক দেশের মানুষ, পরিবেশকর্মীরা দীর্ঘ সময় ধরে স্লোগান দিয়েছেন চত্বরের সামনে। অতীতের সম্মেলনগুলির প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা হোক, এই সুরেই প্রতিবাদ করেন তারা।
ছবি: Thaier Al-Sudani/REUTERS
ছিল ডায়নোসরও!
ডায়নোসরটির নাম ফ্র্যাঙ্কি। ডায়নোসরের এই প্রতিলিপির মাধ্যমে পরিবেশ সম্মেলনে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। জলবায়ু নিয়ে সচেতনতা না বাড়লে ডায়নোসরের মতো মানুষও হয়ত বিলুপ্ত হয়ে যাবে, এমনই বার্তা দিতে চেয়েছে ফ্র্যাঙ্কি।
ছবি: Mohammed Salem/REUTERS
রাজনৈতিক বন্দিদের পাশে
সিভিক স্পেস কোয়ালিশনের সদস্যরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারের সামনে রাজনৈতিক বন্দিদের প্রতি সংহতি প্রকাশের বার্তা দেন। প্রায় প্রত্যেকের পরনেই ছিল সাদা-কালো পোশাক। তারা জানান, জলবায়ু ইস্যুতে বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজের পাশে রয়েছেন সদস্যরা।
ছবি: Mohammed Salem/REUTERS
কিক বিগ পলিউটার্স
একাধিক সংস্থা রয়েছে, যারা সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি কার্বন নির্গমনের জন্য দায়ী। সবথেকে বেশি দূষণের কারণও তারা। তাদের স্রেফ সরিয়ে দেয়া হোক। ‘কিক বিগ পলিউটার্স’ লেখা পোস্টারে এমনই বার্তা দেন প্রতিবাদীরা।
ছবি: Emilie Madi/REUTERS
প্রতিবাদ রোখা যায় না
আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে জলবায়ুর জন্য ন্যায়বিচার এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি জানান জেলবন্দি এক অনশনকারীর বোন। "নো ক্লাইমেট জাস্টিস উইদাউট হিউম্যান রাইটস" লেখা মাস্ক পরে প্রতিবাদ তিনি।
ছবি: Mohamed Abd El Ghany/REUTERS/REUTERS
আবেগঘন প্রতিবাদ
জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন কমিয়ে আনা আর ভুক্তভোগী দেশগুলোর জন্য জলবায়ু তহবিলের প্রতিশ্রুতি আদায় করার দাবিতে সরব প্রতিবাদীরাও। আবেগের মুহূর্তে পরস্পরকে আলিঙ্গন করতেও দেখা যায় দুই নারীকে।
ছবি: Mohamed Abd El Ghany/REUTERS/REUTERS
দিনভর পোস্টারে, স্লোগানে সরগরম চত্বর
মাথায় পালকের তৈরি টুপি পরে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মানুষের কথাই বোধহয় তুলে ধরতে চাইছেন এই নারী। প্রকৃতির উপর সবচেয়ে বেশি নির্ভরশীল মানুষগুলোর কথা ভেবেই তার এই সাজ। কারণ, পৃথিবীর ফুসফুস আমাজনের মতো অরণ্য বিপন্ন হলে সবথেকে বেশি ক্ষতির মুখে পড়বেন বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মানুষ।
ছবি: Emilie Madi/REUTERS
10 ছবি1 | 10
ডাব্লিউএমও-র রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৪ এর তাপমাত্রার পরিবর্তনের পিছনে শৈত্য প্রবাহ লা নিনা থেকে উষ্ণ প্রবাহ এল নিনোতে পরিবর্তনই দায়ী। যদিও গবেষকদের মতে হাওয়ার উষ্ণতা বৃদ্ধি আসলে একটা বড় পরিবর্তনের অংশ মাত্র।
এই উষ্ণায়নের প্রভাব পড়ছে সামুদ্রিক ইকোসিস্টেমে। এর ফলে সমুদ্রের জীববৈচিত্র হ্রাস পাচ্ছে। সমুদ্রের কার্বন শোষণের ক্ষমতা কমছে। একই ভাবে তাপমাত্রা বাড়ার জন্য সামুদ্রিক ঝড় তৈরি হচ্ছে। জলে অ্যাসিড বেড়ে যাওয়ার কারণে মাছেদের ক্ষতি হচ্ছে, যার প্রভাব পড়ছে মৎস্যজীবীদের উপর।
উপরন্তু, সমুদ্র-স্তর বেড়ে যাওয়ার কারণে উপকূলবর্তী অঞ্চলের স্বাভাবিক জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
পরিবেশ-বান্ধব জ্বালানি কি পারবে পৃথিবীকে রক্ষা করতে?
২০২৩-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশ্বের সামগ্রিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৩০ শতাংশ সৌর ও বায়ু শক্তির সাহায্যে তৈরি হয়।
খরায় শুকানো নদী, জলশূন্য হ্রদ
কোথাও নদী শুকিয়ে মরুভূমি, কোথাও হারিয়ে গেছে হ্রদ, ইয়ট ভাসছে বালুভূমির উপরে৷ বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবে খরায় পুড়ে যাওয়া বিভিন্ন দেশের জলাশয়ের এমন কিছু পরিণতি দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: Daniel Becerril/REUTERS
জলের স্কেল
যুক্তরাষ্ট্রের নেভাদায় লাস ভেগাসের কাছে অবস্থিত মিড হ্রদের ছবি এটি৷ এই জলাশয়ে পানির স্তর কতটা নেমেছে তা রং দেখেই অনুমান করে নেয়া যেতে পারে৷
ছবি: Caitlin Ochs/REUTERS
ইয়ট ভাসছে বালুতে
কতটা ভয়াবহ খরার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে মেক্সিকো, গত মার্চে তোলা এই ছবি তার নমুনা৷ দেশটির ‘লা বোকা’ বাঁধে জলাশয় পুরোটা শুকিয়ে গেছে৷ সেখানে ইয়টের বদলে চলছে কার৷
ছবি: Daniel Becerril/REUTERS
জলাশয়ের তলদেশ
জলাভূমির নিচে থাকা গাছও শুকিয়ে গেছে৷ চিলির রুনগু হ্রদের এপ্রিলের ছবি এটি৷
ছবি: Ivan Alvarado/REUTERS
সেতুর কী প্রয়োজন?
বোরেত্তোতে ইটালির দীর্ঘতম নদী পো এর উপরে সেতু দিয়ে চলছে ট্রাক৷ তবে পরিস্থিতি যা হয়েছে তাতে সামনে এই সেতু না হলেও হয়ত চলবে৷
ছবি: Guglielmo Mangiapane/REUTERS
নদীর দশা
এটি একটি নদীর ছবি, বিশ্বাস হয়? ইটালির বিয়েনাস্কোতে পো নদীর উপনদী সানগোন এর জুনের ছবি এটি৷ ৭০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ খরায় পুড়ছে এলাকাটি৷
ছবি: Massimo Pinca/REUTERS
হ্রদে চারণভূমি
এটি সান্তিয়াগোর একটি উপহ্রদের ছবি৷ একসময় সেখানে জল থাকলেও এখন তা ঘোড়ার চারণভূমি৷
ছবি: Ivan Alvarado/REUTERS
অবশিষ্ট নৌকা
ক্যালিফোর্নিয়ায় শুকিয়ে যাওয়া ম্যাদেরা হ্রদের উপর থেকে তোলা ছবিতে একটি নৌকা পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: REUTERS
7 ছবি1 | 7
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের কথা বললেও সে দেশে সৌরশক্তির ব্যবহার বাড়ছে। গত বছরের তথ্য অনুযায়ী সৌরশক্তি দিয়ে দেশের সাত শতাংশ বিদ্যুৎ প্রয়োজন মিটতে পারে।
পরিবেশ বান্ধব শক্তি ব্যবহারের ব্যয় বিগত কয়েক বছরে অনেক কমেছে।
তা সত্ত্বেও চিন্তিত বিশ্বের বৈজ্ঞানিকরা। ডাব্লিউএমও-র রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পরে যুক্তরাজ্যের জাতীয় আবহাওয়া ও জলবায়ু দপ্তরের প্রধান বিজ্ঞানী স্টিফেন বেলচার জানিয়েছেন, "পৃথিবীর শরীর ভাল নেই।" তিনি আরো জানান এই পরিস্থিতিতেই সাবধান না হলে বন্যা বা খরার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্ভবনা ক্রমশই বাড়বে।