এই স্যাটেলাইট আর রাডারের যুগে একটি বিশালায়তন যাত্রীবাহী জেট কখনোই ‘চোখের আড়াল' হতে পারে না, বলে ধরে নেওয়া যেতে পারতো৷ সব সত্ত্বেও মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের বিমানটি উধাও হয়েছে কোনোরকম চিহ্ন না রেখেই৷
বিজ্ঞাপন
বোয়িং ৭৭৭ বিমানের পাখার দৈর্ঘই হলো ৬০ মিটার! এতবড় একটা প্লেন হঠাৎ হাওয়ায় মিলিয়ে যেতে, রাডার স্ক্রিন থেকে উপে যেতে পারে কী করে? অপরদিকে উধাও হবার মানেই যে দুর্ঘটনায় পতিত হওয়া, এ কথা বিশ্বাস করেন না জার্মানির বিমানচালক ও ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ারদের সমিতি ‘ককপিট'-এর প্রতিনিধি ইয়র্গ হান্ডভেগ৷ তবে কিছুদিন পরই সেই বিমান কোথাও না কোথাও আবার ভসে উঠবে বলে তাঁর বিশ্বাস৷
রাডার থেকে অন্তর্ধানের রহস্যও ব্যক্ত করলেন হান্ডভেগ: সাগরবক্ষে কোনো রাডার কেন্দ্র নেই, কেননা রাডরের রেঞ্জ নিয়ে আজও সমস্যা আছে৷ নয়ত ভূপৃষ্ঠের রাডার কেন্দ্রগুলি থেকে যে সংকেত পাঠানো হয়, তা বিমানে প্রতিফলিত হয়ে আবার রাডারে ফিরে আসে এবং সেখানে গৃহীত ও নথিভুক্ত হয়৷ কাজেই বিমানগুলি খোলা সমুদ্রে গেলেই, সেগুলি রাডার থেকে হারিয়ে যায়৷ ‘‘আবার উপকূলের কাছে এলে তবে সেগুলোর আবার খোঁজ পাওয়া যায়,'' জানালেন হান্ডভেগ৷
কয়েকটি বিমান দুর্ঘটনা ও তার কারণ
আজকের এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির যুগেও কীভাবে একটি বিমান হারিয়ে যেতে পারে সেটা অনেকেই ভেবে পাচ্ছেন না৷ মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের ক্ষেত্রে হয়েছে সেটি৷ ছবিঘরে থাকছে কয়েকটি বিমান দুর্ঘটনার কথা ও তার কারণ৷
ছবি: AP
মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স
৮ই মার্চ, ২০১৪৷ মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের একটি বিমান ২৩৯ জন যাত্রী নিয়ে কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিং যাওয়ার পথে হারিয়ে যায়৷ এখনো সেই বিমানের হদিশ মেলেনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
এয়ার ফ্রান্স
বিমান হারানোর ঘটনা ঘটেছিল ২০০৯ সালের ১ জুনেও৷ সে সময় ব্রাজিল থেকে ফ্রান্স যাওয়ার পথে অ্যাটলান্টিক মহাসাগরে হঠাৎ করে হারিয়ে যায় এয়ার ফ্রান্সের একটি বিমান৷ প্রায় দু বছর পর সাগরের নীচে ধ্বংসপ্রাপ্ত অবস্থায় এর খোঁজ পাওয়া যায়৷ এতে ২২৮ যাত্রীর সবাই নিহত হন৷ বিমান চালানোর অত্যাধুনিক ব্যবস্থা কাজ না করায় বিমানটি দ্রুতগতিতে নীচে নেমে অ্যাটলান্টিকের পানিতে তলিয়ে যায় বলে পরবর্তীতে তদন্ত রিপোর্টে জানা গেছে৷
ছবি: dapd
ভোজা এয়ার
২০১২ সালের ২০শে এপ্রিল পাকিস্তানের বেসরকারি ‘ভোজা এয়ার’-এর একটি বিমান ল্যান্ডিং-এর সময় নামতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়লে ১২৭ জন যাত্রীর সবাই নিহত হন৷ বৃষ্টিপাত ও ঝোড়ো হাওয়ার মধ্যে ইসলামাবাদ বিমানবন্দরে নামার চেষ্টাই দুর্ঘটনার কারণ বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে৷ বোয়িং ৭৩৭-২০০ বিমানটি করাচি থেকে ইসলামাবাদ যাচ্ছিল৷
ছবি: Reuters
ইরান এয়ার
২০১১ সালের ৯ জানুয়ারি ইরান এয়ারের একটি বোয়িং ৭২৭-২০০ বিমান তেহরান থেকে অরুমিয়ে যাওয়ার পথে নামতে গিয়ে খারাপ আবহাওয়ার কারণে দুর্ঘটনায় পড়লে ১০৫ জন যাত্রীর মধ্যে ৭৭ জন নিহত হন৷ বেঁচে যায় ২৮ জন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস
দুবাই থেকে ভারতের ম্যাঙ্গালোর বিমানবন্দরের রানওয়েতে নামার পর এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের একটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ বিমান রানওয়ে থেকে ছিটকে দূরের পাহাড়ে গিয়ে আঘাত করলে বিমানটিতে আগুন ধরে যায়৷ এতে ১৫৮ জন নিহত হন৷ আর বেঁচে যান আটজন৷ পাইলটের গাফিলতি দুর্ঘটনার কারণ বলে তদন্তে জানা যায়৷ ঘটনাটি ঘটে ২০১০ সালের ২২শে মে তারিখে৷
ছবি: AP
আফ্রিকিয়া এয়ারওয়েজ
পাইলটের ভুলের কারণে ২০১০ সালের ১২ মে আফ্রিকিয়া এয়ারওয়েজের একটি বিমান লিবিয়ার ত্রিপোলিতে ল্যান্ডিং-এর আগে দুর্ঘটনায় পড়লে ১০৩ জন যাত্রী নিহত হন৷ তবে অবিশ্বাস্যভাবে বেঁচে যায় হল্যান্ডের নয় বছরের এক ছেলে!
ছবি: AP
প্রেসিডেন্টের মৃত্যু
২০১০ সালের ১০ই এপ্রিল পোল্যান্ডের বিমানবাহিনীর একটি বিমান দুর্ঘটনায় পড়লে দেশটির সে সময়কার প্রেসিডেন্ট সহ ৯৬ জন যাত্রীর সবাই নিহত হন৷ পোল্যান্ডের সরকারি তদন্ত প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার জন্য পাইলটকে দায়ী করা হয়৷ বলা হয়, খারাপ আবহাওয়ায় ল্যান্ডিং এর পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ছিল না পাইলটের৷
ছবি: AP
ইয়েমেনিয়া
ল্যান্ডিং এর আগে ইয়েমেনের এয়ারলাইন্স ‘ইয়েমেনিয়া’-র একটি বিমান সাগরে ভেঙে পড়লে ১৫৩ জন যাত্রীর ১৫২ জনই মারা যান৷ শুধু বেঁচে যায় ১২ বছরের একটি মেয়ে৷ দুর্ঘটনার কারণ পাইলটের ‘ঝুঁকিপূর্ণ ম্যানুভার’৷
ছবি: AP
8 ছবি1 | 8
তবে বিমান দশ হাজার মিটার উচ্চতায় গেলেই তা আবার ‘দৃষ্টিগোচর' হয়ে পড়ে, কেননা এবার তার বেতার সংকেত ভূপৃষ্ঠে ধরা পড়তে থাকে৷ বৈমানিকরা নিয়মিতভাবে ভূপৃষ্ঠে ফ্লাইট ট্র্যাফিক কন্ট্রোলারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন৷ বিমান সাধারণত চলেও বাঁধা পথ ধরে, যেন অন্তরীক্ষে অদৃশ্য মোটরওয়ে! সেই নির্দিষ্ট বায়ুপথে কতগুলো নির্দিষ্ট বিন্দু আছে, মাইলফলকের মতো, যা থেকে ট্র্যাফিক কন্ট্রোলারকে খবর দেওয়া যায়৷
বিমান দুর্ঘটনায় ভূপাতিত হলে রাডার কিংবা বেতার, দু'টোর কোনোটাই কাজ করবে না৷ কিন্তু বিমানের ‘ব্ল্যাক বক্স' ঠিকই সিগনাল পাঠিয়ে যাবে, যদিও সাগরগর্ভে সেই সিগনাল খুবই দুর্বল হবে৷ সেক্ষেত্রে সাগরবক্ষ থেকে ‘সোনার' শব্দতরঙ্গ পাঠিয়ে বিমানের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে বার করতে হবে৷ কিন্তু ‘সোনার' প্রযুক্তি কাজে লাগাবার আগে মোটামুটি জানা থাকা চাই, বিমানটি ঠিক কোনখানে সাগরে পতিত হয়েছে৷ সে তুলনায় রাডার কিংবা বেতারের পরিধি স্বভাবতই অনেক বেশি৷