জার্মানিতে সরকার গড়ার প্রচেষ্টা নির্বাচনের প্রায় ১০ সপ্তাহ পরেও অনিশ্চিত রয়ে গেছে৷ ম্যার্কেল শিবির দ্রুত মহাজোট সরকার গড়তে চাইলেও এসপিডি দল সময় নিয়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চায়৷
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার বেশ রাত পর্যন্ত সবার নজর ছিল বার্লিনে জার্মান প্রেসিডেন্টের ভবনের দিকে৷সম্ভাব্য সরকারি জোটের তিন শীর্ষ নেতা সেখানে প্রবেশ করলেন, প্রায় দু'ঘণ্টা পর বেরিয়ে এলেন৷ কিন্তু পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে মুখে তাঁদের কুলুপ আঁটা রইলো৷
ফলে খবর পেতে টেলিভিশনের এক টক শো-য় দ্বিতীয় সারির নেতাদের ইঙ্গিতের উপর নির্ভর করতে হলো৷ সিডিইউ দলে ম্যার্কেলের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত চ্যান্সেলর দফতরের মন্ত্রী পেটার আল্টমায়ার বলেন, যাবতীয় অনিশ্চয়তা কাটিয়ে দ্রুত আলোচনা সেরে সরকার গড়ার কাজে মন দেওয়া উচিত৷ তিনি মনে করিয়ে দেন, জার্মানির ভাবমূর্তির অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো স্থিতিশিলতা – ‘মেড ইন জার্মানি'৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন জার্মানিতে সরকার গড়ার প্রত্যাশা নিয়ে বসে আছে, বলেন আল্টমায়ার৷
কিন্তু এসপিডি দলের নেতা ওলাফ শলৎস বলেন, দেশে কার্যনির্বাহী সরকার রয়েছে৷ তাই কোনো তাড়া নেই৷ সবদিক ভেবেচিন্তে তবেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে৷ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও এসপিডি নেতা সিগমার গাব্রিয়েলও এ বিষয়ে বাস্তবসম্মত প্রত্যাশা রাখার কথা বলেন৷ এসপিডি মহাজোটে যোগ দিতে তৈরি, শুক্রবার সকালে সংবাদ মাধ্যমের একাংশে যে খবর প্রচারিত হয়েছে, দলের শীর্ষ নেতা মার্টিন শুলৎস তা পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘স্বয়ংক্রিয়ভাবে’ কোনো পথেই যাবে না তাঁর দল৷ আসন্ন দলীয় সম্মেলনে বিভিন্ন বিকল্প নিয়ে আলোচনার করা হবে৷ তিনি মহাজোট সংক্রান্ত আলোচনার ক্ষেত্রে কিছু প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন৷
শুক্রবার থেকে দুই শিবিরের অভ্যন্তরে এ বিষয়ে আরও আলাপ-আলোচনা শুরু হচ্ছে৷ পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে নিজেদের অবস্থান স্থির করতে একাধিক বৈঠক বসছে৷ মহাজোট সরকার, সংখ্যালঘু সরকার না নতুন নির্বাচন – বর্তমান পরিস্থিতিতে কোন বিকল্প তাদের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য, সে বিষয়ে তর্ক-বিতর্ক শেষ করে চূড়ান্ত অবস্থানে আসার উদ্যোগ নিচ্ছেন দলের নেতারা৷
দেশের এই কঠিন পরিস্থিতিতে জার্মানির ভোটাররা কী ভাবছেন? সর্বশেষ জনমত সমীক্ষা অনুযায়ী প্রায় ৬১ শতাংশ মানুষ মহাজোট সরকার চাইছেন৷ এমনকি এসপিডি দলের সমর্থকদের মধ্যেও প্রায় ৫৮ শতাংশ মহাজোটের পক্ষে৷ অর্থাৎ সংখ্যালঘু সরকার বা নতুন নির্বাচন চাইছেন না বেশিরভাগ মানুষ৷
যেভাবে প্রতিদ্বন্দ্বীদের পরাস্ত করেন ম্যার্কেল
এমনকি ২০১৭ সালের নির্বাচনের আগেও তাঁর পথে বাধা হয়ে দাঁড়ানো রাজনীতিবিদদের নিষ্ক্রিয় বা পাশে সরিয়ে দিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ নিজের দল বা বিরোধী দলের অনেক নেতাকেই নানাভাবে ঠেকিয়েছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ANP/R. De Waal
‘কোল গার্ল’ যখন গুরুকে ছাড়লেন
দীর্ঘদিন চ্যান্সেলর পদে থাকে হেলমুট কোল ম্যার্কেলকে মন্ত্রিসভায় প্রথম সুযোগ দিয়েছেন এবং তাঁর উত্থানে সহায়তা করেছিলেন৷ কিন্তু ১৯৯৮ সালে চ্যান্সেলর পদ হারানোর পর ম্যার্কেল এবং সিডিইউ তাঁর বিপক্ষে চলে যায়৷ কোল কিছু সূত্র থেকে নগদ অর্থ সাহায্য নিয়েছিলেন৷ কিন্তু সে সব সূত্রের বিস্তারিত তিনি জানাননি যা দলের জন্য ক্ষতিকর বলে মন্তব্য করেছিলেন সেসময় সিডিইউ’র সাধারণ সম্পাদক আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Altwein
গেয়ারহার্ড শ্র্যোডার – রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের সমাপ্তি
২০০৫ সালের নির্বাচনে এসপিডি’র চ্যান্সেলর শ্র্যোডারকে পরাস্ত করেন ম্যার্কেল৷ তবে এই পরাজয়ে শ্র্যোডারের নিজের দাম্ভিকতাও কিছুটা ভূমিকা রেখেছিল৷ সেই নির্বাচনে খুব অল্প ব্যবধানে সিডিইউ’র কাছে হেরে যায় এসপিডি৷ যদিও নির্বাচনের আগে টিভি বিতর্কে তিনি দাবি করেছিলেন, যে জার্মানরা চায় তিনি ক্ষমতায় থাকুন৷ কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি এবং তিনি রাজনীতি থেকে বিদায় নেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার - দীর্ঘদিনের সঙ্গী
শুরুতে ম্যার্কেলের অধীনে চারবছর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার৷ এরপর ২০০৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে তাঁকে চ্যালেঞ্জ করেন সামাজিক গণতন্ত্রীদের এই রাজনীতিবিদ৷ কিন্তু সেই নির্বাচনে সুবিধা করতে পারেনি স্টাইনমায়ারের দল৷ পরবর্তীতে ২০১৩ সালে আবারো ম্যার্কেলের অধীনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হন স্টাইনমায়ার৷ আর চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে তিনি জার্মানির প্রেসিডেন্ট৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Kembowski
গ্যুন্টার ও্যটিঙার - পথের কাঁটা দূর হলো
ম্যার্কেল যে শুধু তাঁর সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেন এমন নয়৷ বরং নিজের দলে থাকা সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের লোভনীয় অন্য কোন পদেও পাঠিয়ে দেন৷ তাঁর সহকর্মী বাডেন-ভ্যুর্টেমব্যার্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী গ্যুন্টার ও্যটিঙারকে ২০১০ সালে তিনি ইউরোপীয় কমিশনে বড় পদে পাঠিয়ে দেন৷ অথচ ও্যটিঙারের সেই পদ পাওয়ার মতো কোনো অভিজ্ঞতাই ছিল না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Seeger
রোনাল্ড কখ - বাতিলের তালিকায় ফেলে দেয়া
দুই কারণে রোনাল্ড কখ পরিচিত৷ প্রথমত, তিনি দলাই লামার বন্ধু৷ দ্বিতীয়ত, সরকারের দ্বৈত নাগরিকত্ব চালুর পরিকল্পনার বিরুদ্ধে কয়েক মিলিয়ন স্বাক্ষর সংগ্রহের জন্য৷ হেসে রাজ্যের এই রাজ্য প্রধান কখনো ম্যার্কেলের উত্থানে বাধা না হলেও হঠাৎ করেই মনে করেছিলেন তাঁকে বার্লিনে বড় পদের জন্য ডাকা হবে৷ কিন্তু ম্যার্কেলকে তাঁকে সেরকম কোন সুযোগ দেননি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ক্রিস্টিয়ান ভুল্ফ - একজন দুর্ভাগা রাষ্ট্রপতি
ক্রিস্টিয়ান ভুল্ফ প্রেসিডেন্ট হিসেবে ম্যার্কেলের প্রথম পছন্দ ছিলেন না৷ কিন্তু ২০১০ সালে হর্স্ট ক্যোলার পদত্যাগ করার পর সিডিইউ বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েনের ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারায় ভুল্ফ সুযোগ পেয়ে যান৷ ভুল্ফ তখন লোয়ার স্যাক্সনি রাজ্যের রাজ্যপ্রধান৷ পরবর্তীতে অবশ্য দুর্নীতির দায়ে প্রেসিডেন্টের পদ ছাড়তে হয় তাঁকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পেয়ার স্টাইনব্রুক – সঠিক মানুষ, ভুল সময়
২০১৩ সালে ম্যার্কেল যখন তাঁর ক্যারিয়ারের তুঙ্গে, তখন এসপিডি থেকে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বেছে নেয়া হয় পেয়ার স্টাইনব্রুক’কে৷ ম্যার্কেলের অধীনে একসময় অর্থমন্ত্রী থাকা এই রাজনীতিবিদের চ্যান্সেলর পদ পাওয়ার সব যোগ্যতাই ছিল৷ কিন্তু সময়টা ঠিক ছিল না৷ ম্যার্কেলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সুবিধা করতে পারেননি তিনি৷