ইরানে শুক্রবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে৷ একদিকে বর্তমান প্রেসিডেন্ট হাসান রোহানি তাঁর ক্ষমতা ধরে রাখতে চাইছেন, অন্যদিকে তাঁকে চ্যালেঞ্জ করতে আসরে নেমেছেন এবরাহিম রাইসি৷
বিজ্ঞাপন
ইরানের জটিল রাজনৈতিক কাঠামোয় একাধিক ক্ষমতাকেন্দ্র রয়েছে৷ সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ খামেনেই-এর হাতেই ক্ষমতার মূল রাশ রয়েছে৷ শক্তিশালী রেভোলিউশানারি গার্ডস বাহিনীসহ একাধিক রাষ্ট্রযন্ত্র নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা তাঁরই হাতে৷ অন্যদিকে মজলিস বা সংসদের সীমিত ক্ষমতা রয়েছে৷ অতএব, প্রেসিডেন্ট পদের জন্য সীমিত ক্ষমতা অবশিষ্ট থাকে৷ তা সত্ত্বেও এই পদের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে৷ খামেনেই এবারের নির্বাচনকে গুরুত্বপূর্ণ আখ্যা দিয়ে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বিশাল সংখ্যায় ভোট দেবার আহ্বান জানিয়েছেন৷
বর্তমান প্রেসিডেন্ট ৬৮ বছর বয়স্ক হাসান রোহানি বাস্তববাদী ও অপেক্ষাকৃত নরমপন্থি বলে পরিচিত৷ আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রায় একঘরে হয়ে থাকা দেশটিকে অনেকটাই উন্মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি৷ বিশেষ করে আন্তর্জাতিক সমাজের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষর করায় ইরানের উপর অনেক নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হচ্ছে৷ সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারের ক্ষেত্রেও তিনি বেশ সক্রিয় রয়েছেন৷
অন্যদিকে ৫৬ বছর বয়সি এবরাহিম রাইসি কট্টরপন্থি ও রক্ষণশীল হিসেবে পরিচিত৷ রেভোলিউশানারি গার্ডস বাহিনী তাঁকেই সমর্থন করে৷ রোহানির আমলে তাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা অনেকটা খর্ব করা হয়েছে৷ হারানো জমি ফিরে পেতে তারা রাইসিকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চাইছে৷ প্রকাশ্যে না বললেও স্বয়ং খামেনেই রাইসিকেই সমর্থন করেন, এ সত্য গোপন নয়৷ এমনকি নিজের উত্তরসূরি হিসেবেও রাইসিকেই তাঁর পছন্দ৷
দুই সম্ভাবনাময় প্রার্থী ছাড়াও এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সংস্কারপন্থি নেতা মোস্তাফা হাশেমিতাবা এবং প্রাক্তন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী মোস্তাফা মীরসালিম৷
এবারের নির্বাচনে দেশের জরাজীর্ণ অর্থনীতি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷ রোহানি ও রাইসি পরস্পরের বিরুদ্ধে এই বিষয়টিকেই মূল হাতিয়ার করার চেষ্টা করছেন৷ আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা শিথিল হওয়া সত্ত্বেও ইরানের অর্থনীতি এখনো মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না বলে রোহানিকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করছেন রাইসি৷ অন্যদিকে রোহানি ভোটারদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, রাইসি ক্ষমতায় এলে দেশ আবার কয়েক বছর পিছিয়ে যাবে এবং অর্থনীতির আরও ক্ষতি হবে৷ উল্লেখ্য, ১৯৮১ সাল থেকে ইরানে সব প্রেসিডেন্টই দ্বিতীয় বার পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন৷
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রেভোলিউশানারি গার্ডস বাহিনী ও তাদের আজ্ঞাবহ বাসিজ মিলিশিয়ার ভূমিকা অত্যন্ত বিতর্কিত৷ ২০০৯ সালে তারা ভোটগণনার ক্ষেত্রে কারচুপি করে মাহমুদ আহমেদিনিজাদকে জিতিয়ে দিয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল৷ ফলে গোটা দেশে প্রায় ৯ মাস ধরে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ দেখা গিয়েছিল৷ এবার সে রকম অরাজকতার আশঙ্কা কম বলেই পর্যবেক্ষরা মনে করছেন৷
ইরান: সভ্যতার এক সূতিকাগার
ইরানের ইতিহাস অনেক পুরনো৷ সেই সময়কার বিভিন্ন নিদর্শন ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে জার্মানির বন শহরে হয়েছিল একটি প্রদর্শনী৷
ছবি: Bundeskunsthalle Bonn
চার মাসব্যাপী প্রদর্শনী
প্রায় আট হাজার বছর আগে খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ সহস্রাব্দে এই এক ঘরের ভবনটি তৈরি করা হয়েছিল৷ জার্মানির বন শহরের এক মিউজিয়ামে প্রাচীন ইরানের বিভিন্ন নিদর্শনের প্রদর্শনী চলছে৷ খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ সহস্রাব্দ থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ৫২২ সাল পর্যন্ত ঐ অঞ্চলের মানুষজন কীভাবে বসবাস করতেন, তা প্রদর্শনীতে তুলে ধরা হচ্ছে৷
ছবি: National Museum of Iran/Bundeskunsthalle Bonn
দ্য টাওয়ার অফ বাবেল
বিশেষজ্ঞরা এই টাওয়ারকে ইতেমেনানকি নামের একটি ‘জিগুরাত’ বা প্রাসাদ-কমপ্লেক্সের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মনে করেন৷ আলেকজান্ডার দি গ্রেট এটি ধ্বংস করেন৷ ‘ইহুদিদের বাইবেল’ বলে পরিচিত ‘তানাখ’-এর প্রথম গ্রন্থ ‘জেনেসিস’-এ এই টাওয়ারের কথা উল্লেখ আছে৷ খ্রিষ্টানদের বাইবেলের প্রথম অংশ ‘ওল্ড টেস্টামেন্ট’-এও আছে এই টাওয়ারের কথা৷
ছবি: Bundeskunsthalle Bonn
দ্য রয়েল গেম অফ উর
অন্যতম প্রাচীন বোর্ড গেম হচ্ছে ‘ব্যাকগ্যামন’৷ বন শহরের প্রদর্শনীতে সোপস্টোন দিয়ে তৈরি কয়েকটি ব্যাকগ্যামন বোর্ডও দেখানো হচ্ছে৷ এগুলোতে সাপ আর পাখির নকশা রয়েছে৷ খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় সহস্রাব্দে পশ্চিম এশিয়ায় ‘দ্য রয়েল গেম অফ উর’ খেলা হতো৷ ‘গেম অফ ২০ স্কয়্যার’ নামে পরিচিত খেলাটি আজও জনপ্রিয়৷
ছবি: National Museum of Iran/Bundeskunsthalle Bonn
পাঁচ হাজার বছর আগের
ক্লোরাইট দিয়ে তৈরি এই পাত্রটি খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় সহস্রাব্দের৷ ইরানের জিরফট শহরের সমতল ভূমি থেকে এটি উদ্ধার করা হয়েছে৷
ছবি: National Museum of Iran/Bundeskunsthalle Bonn
দক্ষতার পরিচয়
সেই সময়কার ধনি ব্যক্তিরা স্বর্ণখচিত এই ধরণের (ছবি) পাত্রে ওয়াইন পান করতেন৷ এসব পাত্রের নকশা ও কারুকাজ দেখলে তখনকার মানুষদের ব্যবহারিক ও প্রযুক্তি বিষয়ক দক্ষতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়৷
ছবি: National Museum of Iran/Bundeskunsthalle Bonn
রাজকন্যাদের সমাধিতে
এসব স্বর্ণালংকার পাওয়া গেছে দুজন এলামাইট রাজকন্যার সমাধিতে৷ পারস্য উপসাগরের কাছে অবস্থিত ইরানের জুবাজি গ্রামে ২০০৭ সালে এগুলো পাওয়া যায়৷ সমাধিতে স্বর্ণালংকার ছাড়াও খাবার ও ধর্মীয় বিষয়াদিও দিয়ে দেয়া হতো বলে জানা যায়৷
ছবি: Bundeskunsthalle Bonn/D. Ertl
রাজার প্রাসাদ
খ্রিষ্টপূর্ব ১২৭৫ থেকে ১২৪০ পর্যন্ত রাজত্ব করা রাজা উনতাশ-নাপিরিশা শোঘা জানবিল শহরে বাস করতেন৷ তিনটি উঁচু দেয়াল দিয়ে শহরটি ঘেরা ছিল৷ ঐ স্থানে হাজার হাজার ইট পাওয়া যাওয়ায় বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শহরের আকার বাড়ানোর হয়ত পরিকল্পনা ছিল৷
ছবি: Bundeskunsthalle Bonn
পৃথিবীতেই যেন স্বর্গ
প্রদর্শনীর একটি জায়গায় ছোট আকারে ‘পার্সিয়ান গার্ডেন’ তৈরি করা হয়েছে৷ ইউনেস্কোর ঐতিহ্যের একটি অংশ হচ্ছে এই বাগান৷ পার্সিয়ান গার্ডেন মানেই হচ্ছে মাঝখানে থাকবে পানির ফোয়ারা আর পাশে ফুলের বাগান৷ সঙ্গে থাকবে বসার জায়গা, যেখান থেকে দর্শকরা সৌন্দর্য্য উপভোগ করবেন৷