1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানদের প্রিয় পানীয়

মার্ক ফন ল্যুপকে/আরবি২৪ জুন ২০১৩

জার্মানির রেস্তোঁরা ও পানশালাগুলিতে নানা ধরনের পানীয় পরিবেশন করা হয়৷ আগতরা কোনটি নেবেন তা ঠিক করতে গিয়ে অনেকসময় খেই হারিয়ে ফেলেন৷ অসংখ্য ঠাণ্ডা ও গরম পানীয়ের মধ্য থেকে কোনো কিছু বেছে নিতে হয় তাদের৷

Mit Alkohol gefüllte Gläser stehen auf dem Tresen einer Bar während einer Feier. Foto: Frank May pixel
ছবি: picture-alliance/Frank May

খ্রিষ্টপূর্ব ১০,০০০ বছর আগে হঠাৎ করেই মানুষ এক ধরনের পানীয় প্রস্তুত করে ফেলে, আর তা হলো বিয়ার৷ তারপর থেকে হালকা অ্যালকোহলযুক্ত তরল পদার্থটি মানুষের প্রিয় পানীয়তে পরিণত হতে থাকে৷ এছাড়া বিয়ারের ঔষধি গুণটিও চোখে পড়ে মানুষের৷ বিশেষ করে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে অবস্থাটা যখন মোটেও ভালো ছিল না৷

বিয়ারের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি

পানি ছিল অপরিষ্কার ও জীবাণুযুক্ত৷ তাই বাচ্চা ও বয়স্করা পরিষ্কার পানি পান করতে চাইলে বিয়ারই পান করতো৷ ঊনবিংশ শতাব্দীতে ইস্পাত ও খনি শ্রমিকরা ক্লান্তি দূর করতে বিয়ারের দিকেই হাত বাড়াতেন৷ এছাড়া কড়া অ্যালকোহলযুক্ত হুইস্কির চেয়ে বিয়ার পান করাই সমীচিন বলে মনে করা হতো৷ কবি দার্শনিকরাও বিয়ারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন৷ বিখ্যাত নোবেলজয়ী জার্মান লেখক টমাস মানের কথায় সেটাই স্পষ্ট হয়, ‘‘আমি প্রতিদিন রাতের খাবারের সঙ্গে এক গ্লাস লাইট বিয়ার পান করতে পছন্দ করি৷'' দীর্ঘদিন ধরে জার্মানরা বিয়ার পানে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ছিল৷ ইতোমধ্যে অবশ্য জায়গাটা ছেড়ে দিতে হয়েছে তাদের৷ এখন গড়ে একজন জার্মান বছরে ১০০ লিটার বিয়ার পান করেন৷ আর চেকরা পান করেন ১৫০ লিটার বিয়ার৷ একটি চেক প্রবাদ বাক্যে বলা হয়েছে, ‘‘যেখানে বিয়ার তৈরি করা হয়, সেখানে ভালোভাবে বাঁচা যায়৷''

‘‘বিয়ার হলো মানব সৃষ্ট, আর ওয়াইন ঈশ্বর প্রদত্ত''ছবি: picture alliance/Imagno

তবুও পানীয় হিসাবে বিয়ার এখনও শীর্ষস্থানে রয়েছে জার্মানিতে৷ ১৩০০ টি ব্রুয়ারিতে ৫০০০ ধরনের বিয়ার প্রস্তুত হয় দেশটিতে৷ এদিক দিয়ে বিশ্বে শীর্ষ স্থানে রয়েছে জার্মানি৷ ছোট ছোট ব্রুয়ারির বিয়ার পছন্দ করেন জার্মানরা৷ বিয়ার গার্ডেন, পাব বা টেলিভিশনের সামনে বসে রসিয়ে রসিয়ে এই পানীয় পান করেন তারা৷

উচ্চবিত্তের পানীয় ওয়াইন

অন্যদিকে ষোড়শ শতাব্দীতে খ্রিষ্ট ধর্মের সংস্কারক মার্টিন লুথার ওয়াইনকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘বিয়ার হলো মানব সৃষ্ট, আর ওয়াইন ঈশ্বর প্রদত্ত৷''

মধ্যযুগে খ্রিষ্টীয় মঠগুলিতে বিয়ার প্রস্তুত করা হলেও ওয়াইন তৈরিতেও মনোনিবেশ করেন খ্রিষ্টান সন্ন্যাসীরা৷ কথিত আছে তাঁরা মাটি চেখে বলতে পারতেন কোথায় সবচেয়ে ভালো ওয়াইন উৎপন্ন হয়৷ অবশ্য ওয়াইনের জন্য জার্মানরা তাদের দক্ষিণের প্রতিবেশীদের কাছে ঋণী৷ রোমানদের কাছ থেকেই জার্মানরা আঙুর উত্পাদনের সূক্ষ্ম কলাকৌশল শেখে৷

মধ্যযুগে ওয়াইনও অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল৷ কিন্তু ভালো এক ফোঁটা ওয়াইন শুধু ধনী ব্যক্তি ও রাজা রাজড়াই উপভোগ করতে পারতেন৷ আর সাধারণ জনগণকে সস্তার এক ধরনের অ্যালকোহল নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হতো৷ হয়ত বা সেজন্যই আজও জার্মানিতে বিয়ারের চেয়ে ওয়াইন কম পান করা হয়৷ জার্মানিতে বছরে গড়ে একজন ২০ লিটার ওয়াইন পান করে থাকে৷ অবশ্য এটার একটা ভালো দিকও রয়েছে৷ ২০০৮ সালে এক গবেষণায় দেখা গেছে, বিয়ারের চেয়ে ওয়াইনই স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে বেশি৷ মানুষের মস্তিষ্ককে দ্রুত সংকচিত করে এই পানীয়ের আধিক্য৷ তবে বিষয়টি বিস্ময়কর৷ কেননা শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ওয়াইনপ্রেমীর সংখ্যা বেশি৷ অর্থাৎ যারা মস্তিষ্কের কাজ করেন৷

খ্যাতনামা জার্মান সাংবাদিক ও লেখক কুর্ট টুখলস্কি ১৯২০ সালের দিকে একবার বলেছিলেন, ‘‘আহা, কী দুঃখের বিষয় ওয়াইনের গায়ে হাত বোলানো যায় না৷''

কফি চাই, কফি চাই

এবার আসা যাক অ্যালকোহল ছাড়া পানীয় কফি প্রসঙ্গে৷ সকালে উঠে গরম, তরতাজা করে এমন পানীয় পান করতে পছন্দ করে জার্মানরা৷ যাতে থাকবে না অ্যালকোহল৷ অনেকেই এক কাপ কফি বা চা দিয়ে শুরু করেন দিনটি৷ আগে ওয়াইনের মতোই ধনী ও হোমরাচোমরা ব্যক্তিরাই কেবল কফি ও চা এর স্বাদ নেওয়ার সামর্থ্য রাখতেন৷

এইসব পানীয়ের গুণাগুণ নিয়ে মজার গল্পও শোনা যায়৷ ঊনবিংশ শতাব্দীতে অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন একবার এই পানীয় পান করতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘‘এটা যদি কফি হয়, আমার জন্য চা এনে দিন৷ আর এটা যদি চা হয় আমাকে অনুগ্রহ করে কফি দিন৷''

সপ্তদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি নাগাদ ইউরোপে প্রথম কফি হাউস গড়ে ওঠে৷ সেখানে ব্যবসায়ী, পণ্ডিত ও ধনী ব্যক্তিরা মিলিত হতেন৷ গল্পগুজব ও ব্যবসা-বাণিজ্যের কথাবার্তা বলতেন৷ সাধারণ মানুষ কফির পরিবর্তে মল্ট বা চিকরির মতো উদ্ভিদের গুঁড়া গরম পানিতে মিশিয়ে পান করতো৷

চায়ের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য৷ ধনীদের পানীয় বলেই পরিচিত ছিল এটি৷ ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে কফি ও চায়ের দাম কমে এলে সাধরণ মানুষ এমনকি শ্রমিকদেরও আয়ত্তের মধ্যে চলে আসে এই পানীয়৷ এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে হয়, কফি ও চা বাগানে ক্রীতদাসদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলেই এইসব পানীয়ের দাম কমে যায়৷

জার্মানির রেস্তোঁরা ও পানশালাগুলিতে নানা ধরনের পানীয় পরিবেশন করা হয়ছবি: picture-alliance/dpa

আজও কফি ও টি হাউসগুলি মানুষের জনপ্রিয় আড্ডাস্থল৷ অন্যদিকে, ইউরোপে জাতিভেদে পানীয়প্রীতিতে তারতম্য লক্ষ্য করা যায়৷ ব্রিটিশরা চা পায়ী আর জার্মানরা কফিপ্রেমী হিসাবে নাম করেছে৷ বছরে একজন জার্মান গড়ে ১৫০ লিটার কফি পান করে৷ বিয়ার, ওয়াইন ও মিনারেল ওয়াটারের চেয়েও বেশি৷ সুপার মার্কেটে গেলে নানা ধরনের কফি চোখে পড়বে৷ ক্যাফে বা রেস্টুরেন্টে গেলে সমস্যায় পড়েন অতিথিরা৷ এত ধরনের কফির মধ্যে কোনটা ছেড়ে কোনটা যে অর্ডার দেবেন, তা নিয়ে বেশ দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যান৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ