এর মূল কারণ, সোমবার যাবৎ মার্কিন নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক জোট কোবানিতে জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট বা আইসিস-এর উপর বিমান হানার সংখ্যা ও তীব্রতা বাড়িয়েছে৷ দৃশ্যত তার ‘কোঅর্ডিনেটস' সরবরাহ করছে কোবানির কুর্দ যোদ্ধারা৷
বিজ্ঞাপন
কোবানি থেকে ওয়াইপিজি কুর্দ সশস্ত্র গোষ্ঠীর এক কর্মকর্তা এএফপি সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন যে, ইতিপূর্বে কোবানির ৩০ শতাংশ আইসিস-এর নিয়ন্ত্রণে ছিল; এখন তা ২০ শতাংশের কম হয়ে দাঁড়িয়েছে – বিশেষ করে আন্তর্জাতিক জোটের বিমান হানার ফলে৷ দৃশ্যত কুর্দ যোদ্ধারা এখন কোবানির পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন অংশ থেকে আইসিস যোদ্ধাদের ‘‘ফ্লাশ আউট'', অর্থাৎ বাড়ি বাড়ি থেকে বহিষ্কার করছে৷ ওয়াইপিজি কর্মকর্তাটি যুগপৎ বলেছেন যে, ‘‘আমাদের আরো বেশি বিমান হানার প্রয়োজন, সেই সঙ্গে স্থলযুদ্ধের জন্য অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ৷''
৪৮ ঘণ্টায় ৪০ বার
গত সোমবার যাবৎ মার্কিন বিমান কোবানিতে বিভিন্ন আইসিস লক্ষ্যের উপর ৪৮ ঘণ্টায় প্রায় ৪০টি অভিযান চালিয়েছে: প্রথম ২৪ ঘণ্টায় ২১টি এবং দ্বিতীয় ২৪ ঘণ্টায় আরো ১৮টি৷ এর নানা কারণ আছে৷ পেন্টাগনের মুখপাত্র অ্যাডমিরাল জন কার্বি জানিয়েছেন যে, কোবানি এখন বস্তুত দু 'পক্ষের যোদ্ধাদের হাতে: কোবানির বাসিন্দাদের ‘‘একটা বড় অংশ'' শহর ছেড়ে পালিয়েছে; শহরে এখন মাত্র ‘‘কয়েক'শ'' মানুষ পড়ে আছে, বলে মার্কিন তরফের ধারণা৷
কোবানি ও তার চারপাশে বিমান হানা বাড়ানো হলো কেন, এ ব্যাপারে কার্বি বলেছেন যে, সেটা সুযোগ দেখা দিয়েছে বলে; কোনো রণকৌশলের অঙ্গ হিসেবে নয়৷ ইরাকে প্রতিরোধ বেড়েছে বলেই সম্ভবত আইসিস অধিনায়করা কোবানির উপর চাপ বাড়িয়েছেন – যার ফলে মার্কিন বিমানবাহিনী কোবানির আশেপাশে আরো বেশি লক্ষ্য খুঁজে পাচ্ছে, বলেছেন অ্যাডমিরাল কার্বি৷ তিনি আরো জানিয়েছেন যে, কোবানির চারপাশে মার্কিন বিমান হানায় সম্ভবত ‘‘বেশ কয়েক'শ'' আইসিস যোদ্ধা নিহত হয়েছে৷
কোবানিতে বিমান হানা বাড়ার আরেকটি কারণ হলো, ইরাকের আইসিস-অধিকৃত এলাকাগুলিতে আবহাওয়া খারাপ থাকার ফলে মার্কিন অধিনায়করা আরো বেশি বিমান ও বৈমানিক কোবানির দিকে প্রেরণ করার সুযোগ পেয়েছেন৷ তবুও কোবানিতে একটি ‘‘তরল পরিস্থিতি'' বিরাজ করছে, বলে কার্বি মন্তব্য করেন: ‘‘লোকের এটা জানা দরকার যে, কোবানির এখনও পতন ঘটতে পারে'' – অর্থাৎ আইসিস কোবানি জয় করতে পারে৷
অপারেশন ইনহেয়ারেন্ট রিজল্ভ
কোবানির কুর্দ যোদ্ধাদের তরফ থেকে বলা হয়েছে যে, ওয়াইপিজি-র উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা আন্তর্জাতিক জোটকে আইসিস টার্গেটগুলির অবস্থান জানাচ্ছেন – যদিও কিভাবে, তা কুর্দ অথবা মার্কিন, কোনো তরফ থেকেই জানানো হয়নি৷ অপরদিকে আন্তর্জাতিক জোট দৃশ্যত কোবানির কাছে, তুর্কি সীমান্তের অপরপার থেকে পর্যবেক্ষকদের পাঠানো খবরাখবর, এছাড়া চালকবিহীন ড্রোন থেকে তোলা ভিডিও ছবির উপরেও নির্ভর করছে৷
আইএস বিরোধী লড়াইয়ের আঁচ জার্মানিতে
গত জুন মাসে ইরাকের মোসুল দখল করে নেয় ইসলামিক স্টেট (আইএস বা আইসিস)৷ চরমপন্থি ইসলামি সংগঠনটির লক্ষ্য, মধ্যপ্রাচ্যের একটা অংশে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা৷ এদিকে আইএস-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আঁচ লেগেছে জার্মানিতেও৷ দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: Aris Messinis/AFP/Getty Images
জার্মানিতে সংঘর্ষ
সুদূর ইরাক ও সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেট জঙ্গিদের তৎপরতার আঁচ জার্মানিতেও দেখা যাচ্ছে৷ উত্তরের হামবুর্গ ও সেলে শহরে মঙ্গলবার (০৭.১০.১৪) কুর্দি ও ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে উগ্রপন্থি মুসলমানদের সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Markus Scholz
গনসচেতনতার উদ্যোগে বাধা
জার্মানিতে বসবাসরত কুর্দি ও ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের মানুষ সিরিয়া ও ইরাকে আইএস জঙ্গিদের তৎপরতা সম্পর্কে গণসচেতনতা বাড়াতে গত কয়েক মাস ধরে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ, বিক্ষোভ ও সমাবেশের আয়োজন করেছে৷ কখন উগ্রপন্থিরা তাদের বাধা দিচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/Alexander Koerner
কোবানিতে তীব্র লড়াই
এদিকে সিরিয়ার কোবানি বা আইন আল-আরব শহরে আইএস জঙ্গিদের ব্যাপক হামলা চলছে৷ প্রাণ বাঁচাতে এক লাখেরও বেশি সিরীয় কুর্দি এলাকা ছেড়েছে৷ অধিকাংশই আশ্রয় নিয়েছে প্রতিবেশী দেশ তুরস্কে৷ আইএস জঙ্গিদের প্রতিরোধের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কুর্দিদের আধা সামরিক বাহিনী ওয়াইপিজি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/EPA/SEDAT SUNA
আপাতত রক্ষা
কুর্দি এই নারী তাঁর দুই মেয়েকে নিয়ে আইন আল-আরব থেকে পালিয়ে এসেছেন৷ সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় শহরটিতে আইএস-এর হামলা তীব্র হওয়ার পরপরই তাঁরা তুরস্কে আশ্রয় নেন৷
ছবি: DW/Alice Martins
আতঙ্ক
তখনও আইন আল আরব সীমান্তে চলছে তীব্র লড়াই৷ এই কুর্দি পরিবার আইন আল-আরব থেকে এসে তুরস্কের সীমান্তে অপেক্ষা করছে৷ ইরাকে কুর্দি নারীদের আইএস যেভাবে তুলে নিয়ে বিক্রি করেছে, তাড়াতাড়ি পালাতে না পারলে তাঁদেরও একই পরিণতি হতে পারে এই আতঙ্ক গ্রাস করেছে তাঁদের৷
ছবি: DW/Alice Martins
অসহায়ত্ব
তুরস্কেও ভালো নেই আইন আল-আরব ছেড়ে আসা কুর্দিরা৷ খাবারদাবার, এমনকি খাওয়ার পানিও ঠিকমতো জোটে না৷ একটি সংগঠন তাই চাঁদা তুলে পানির বোতল কিনে এনে বিতরণ করছে শরণার্থীদের মাঝে৷
ছবি: DW/Alice Martins
দীর্ঘ অপেক্ষা
প্লাস্টিকের ব্যাগে কিছু খাবার নিয়ে এসেছেন একজন৷ আইন আল-আরব ছেড়ে আসা সিরীয়দের সে খাবারগুলো দিতে চান৷ বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে্ তুরস্কের সেনাবাহিনী৷ তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা চলছে৷ ওদিকে খাবারের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনছে শরণার্থীরা৷
ছবি: DW/Alice Martins
যাত্রী চাই
সিরীয় শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার জন্য সীমান্ত খুলে দিয়েছে তুর্কি সরকার৷ এক মিনিবাস চালক তাই যাত্রীর অপেক্ষায়৷ শরণার্থীদের কেউ যদি তাঁর মিনিবাসে ওঠেন, তাতে নিজের তো সামান্য কিছু আয় হবেই, শরণার্থীদেরও উপকার হবে৷ জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, এ পর্যন্ত প্রায় ১৩ লাখ সিরীয় তুরস্কে আশ্রয় নিয়েছে৷
ছবি: DW/Alice Martins
মধ্যপ্রাচ্যে কর্তৃত্ব চায় আইএস
আন্তর্জাতিক ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার সঙ্গে আইএস বা আইসিস-এর একসময় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল৷ ২০০৬ থেকে ২০০৭-এর দিকে ইরাকে যখন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ লড়াই চলছে তখনই আইএস-এর জন্ম৷ সংগঠনটির লক্ষ্য সিরিয়া, ইরাক, লেবানন, ফিলিস্তিন এবং জর্ডান মিলিয়ে বেশ বড় একটা অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
আইএস-এর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র
সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদ আর ইরাকে নুরি আল-মালিকির সাবেক সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট বিদ্রোহীদেরই পাশে ছিল৷ সিরিয়ায় ন্যাশনাল কোয়ালিশনের মতো কিছু মধ্যপন্থি সংগঠনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন রয়েছে৷ তবে ওবামা সরকার এখন আইএস-এর বিরুদ্ধে৷ জঙ্গি সংগঠনটিকে নিশ্চিহ্ন করার অঙ্গীকার নিয়ে ইরাক ও সিরিয়ায় চলছে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলা৷
ছবি: picture alliance/dpa/Matthew Bruch
এবার আইন আল-আরব?
সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত আইন আল-আরব সাধারণের কাছে ‘কোবানি’ নামেই পরিচিত৷ তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তের এ শহরের একটা অংশ এখন আইএস-এর দখলে৷ এবার কি তবে আইন আল-আরবও দখল করে নেবে আইএস? তারপর?
ছবি: Aris Messinis/AFP/Getty Images
11 ছবি1 | 11
মার্কিন মিলিটারি এবার ইরাক ও সিরিয়ায় জিহাদীদের বিরুদ্ধে গত দু'মাস ধরে চলমান অভিযানের নাম দিয়েছে ‘অপারেশন ইনহেরেন্ট রিজল্ভ' – অর্থাৎ অন্তর্নিহিত দৃঢ়তা৷ ওদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ব্রিটেন, জার্মানি, ফ্রান্স ও ইটালির সরকারপ্রধানদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে বলেছেন যে, অভিযানের সামরিক দিকটা হলো শুধু একটা অঙ্গ; সেই সঙ্গে আইসিস-এর অর্থ ও সদস্য সংগ্রহের প্রচেষ্টা রোধ করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন৷
কূটনৈতিক রণাঙ্গণের অপরাপর খবরের মধ্যে বলা যেতে পারে যে, সিরিয়া তুর্কি সীমান্তে একটি ‘বাফার জোন' সৃষ্টি করার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে৷ এছাড়া জার্মানি থেকে একটি ছোট্ট অথচ গুরুত্বপূর্ণ খবর হলো এই যে, চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী সিডিইউ দলের সংসদীয় গোষ্ঠীর প্রধান ফল্কার কাউডার মন্তব্য করেছেন: ‘‘(কুর্দ বিদ্রোহী গোষ্ঠী) পিকেকে-কে নিয়ে তুরস্কের যে সমস্যা আছে, তা আমি জানি; তা সত্ত্বেও: আইসিস যে একটির পর একটি গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত শহর (অর্থাৎ কোবানি) দখল করবে এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য আরো বড় বিপদ সৃষ্টি করবে, সেটা কোনো সমাধান হতে পারে না৷''
তবে কি কাউডার পরোক্ষভাবে বলছেন যে, জার্মানি পিকেকে-কে অস্ত্রপ্রদানের কথা বিবেচনা করতে পারে?