কোভিড অ্যাপের তথ্য নিয়ে তদন্ত, বিতর্কে জার্মান পুলিশ
১২ জানুয়ারি ২০২২
কোভিড কনট্যাক্ট ট্রেসিং অ্যাপের অপব্যবহারের অভিযোগ এসেছে জার্মান পুলিশের বিরুদ্ধে। গত নভেম্বরের শেষ দিকে মাইন্স শহরে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। মৃত্যুর আগে রেস্তোরাঁয় ছিলেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
এই ঘটনার সূত্র ধরে তদন্তে নেমে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের সাহায্যে লুকা অ্যাপ থেকে তথ্য নেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
ওই রেস্তোরাঁয় কতক্ষণ কোন ব্যক্তি ছিলেন, অ্যাপ থেকেই তা জানা গিয়েছিল। অ্যাপ থেকে পাওয়া তথ্যের মাধ্যমে ২১ জন সাক্ষীর কথাও জানা যায়। অভিযোগ বেআইনিভাবে অ্যাপ থেকে তথ্য নেওয়া হয়েছে। এরপর শুরু হয় প্রতিবাদ। মাইন্সের সরকারি আইনজীবী একটি বিবৃতিতে জানান, এই বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। পরবর্তীতে আর কোনও তথ্য এই অ্যাপ থেকে ব্যবহার করা হবে না।
কিন্তু এই লুকা অ্যাপ কাজ করে কীভাবে?
এক ব্যক্তি কতক্ষণ রেস্তোরাঁ, পানশালায় থাকছেন কিংবা সাংস্কৃতিক কাজে যুক্ত থাকছেন সেটা এই অ্যাপ থেকে জানা সম্ভব। ব্যক্তিগত তথ্য জানা সম্ভব। রেস্তোরাঁ কিংবা দোকানে প্রবেশের সময় কিউ আর কোড স্ক্যান করতে হয়। বেরোনোর সময় লগ আউট করতে হয়। কেউ করোনা আক্রান্ত হলে তাকে সহজেই শনাক্ত করা যায়।
এই অ্যাপ ব্যবহারের ফলে নথির ব্যবহার কমে যাওয়া সহ একাধিক সুবিধা হলেও স্বাস্থ্য বিভাগ এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দেখলে এই জাতীয় বিষয়ের সমাধান সম্ভব। ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষাও সম্ভব মত ওয়াকিবহাল মহলের। কিন্তু মেইনজের ঘটনার পর খানিকটা বিরক্ত হয়েছেন এই অ্যাপ ডেভেলপার কালচার ফর লাইফ।
তথ্য সংগ্রহের তীব্র নিন্দা করেছে অ্যাপ ডেভেলপার সংস্থা। ডিজিটাল অ্যাপকে নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন সরকারের শরিক দলের সদস্যরাও। এই রাজনীতিবিদদের কেউ কেউ অ্যাপ ডিলিটের কথাও উল্লেখ করেছেন। পাশাপাশি, অ্যাপ ডিলিটের বিষয়টির তীব্র নিন্দা করেছেন এক জার্মান শিল্পী যিনি নিজে এই প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত।
এই জাতীয় অ্যাপ ব্যবহার, আদৌ কতটা সুরক্ষিত? ব্যক্তিগত তথ্যের অধিকারে কতটা হস্তক্ষেপ হচ্ছে, উঠে আসছে এইসব প্রশ্ন।
২০২০ সালের ছবিঘরটি দেখুন
করোনা নজরে রাখার কয়েকটি অ্যাপ
করোনার বিস্তার ঠেকাতে বিভিন্ন দেশ প্রযুক্তির সহায়তা নিচ্ছে৷ এক্ষেত্রে মোবাইল অ্যাপ, সফটওয়্যার, কিউআর কোড ব্যবহৃত হচ্ছে৷ ছবিঘরে থাকছে বিস্তারিত৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Keystone/L. Gillieron
অস্ট্রেলিয়া
করোনার বিস্তার ঠেকাতে ‘কোভিডসেফ’ অ্যাপ চালু করেছে সরকার৷ এর মাধ্যমে একজন অ্যাপ ব্যবহারকারী আরেকজন ব্যবহারকারীর দেড় মিটার দূরত্বের মধ্যে আসার তথ্য সংগ্রহ করছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা৷ ব্লুটুথ ওয়্যারলেস সিগন্যালের মাধ্যমে এই তথ্য জোগাড় করা হচ্ছে৷ একজন ব্যবহারকারী করোনা আক্রান্ত কারো সঙ্গে ১৫ মিনিট বা তার বেশি সময় ধরে ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে এসে থাকলে, সেই তথ্য বার্তা দিয়ে ঐ ব্যক্তিকে জানিয়ে দেয়া হয়৷
ছবি: Getty Images/Q. Rooney
চীন
নাগরিকদের চলাফেরার তথ্য সংগ্রহ করছে দেশটি৷ ‘আলিপে’ ও ‘উইচ্যাট’ অ্য়াপ ব্য়বহারকারীরা ব্যক্তিগত তথ্য, ভ্রমণের ইতিহাস, অসুস্থতার লক্ষণ ইত্যাদি তথ্য দেয়ার মাধ্যমে একটি কিউআর কোড পেয়ে থাকেন৷ বাসে, ট্রেনে, অফিসে, এমনকি নিজের বাড়িতে ঢুকতে এই কোড স্ক্যান করতে হয়৷ এভাবে হালনাগাদ তথ্য পেয়ে থাকে সরকার৷ কোডের রং সবুজ হলে চলাফেরায় বাধা নেই, হলুদ হলে সাতদিন আর লাল হলে ১৪ দিনের কোয়ারান্টিনে যেতে হয় নাগরিকদের৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Imaginechina/D. Qing
ইটালি
কেউ করোনা আক্রান্তের স্পর্শে এসেছেন কিনা, সেই তথ্য় জানতে অ্যাপ চালু করতে চায় ইটালি৷ সেজন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে৷ শত শত প্রস্তাব জমা পড়েছে৷ শিগগিরই তা চালু হবে৷ তবে এই অ্যাপ ব্যবহার ঐচ্ছিক হবে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photos/L. Bruno
দক্ষিণ কোরিয়া
‘কোভিড-১৯ স্মার্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’-এর মাধ্যমে করোনা রোগী ও যারা কোয়ারান্টিনে আছেন তাদের চলাফেরা পর্যবেক্ষণ করা হয়৷ এছাড়া যারা হোম-কোয়ারান্টিন মানছে না ভবিষ্যতে তাদের হাতে ইলেকট্রনিক ব্যান্ড পরানোর চিন্তা করছে দেশটি৷ কেউ এটি না পরলে তাকে আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানো হবে এবং তার খরচ ঐ ব্যক্তিকেই দিতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Keystone/L. Gillieron
ভারত
করোনা রোগী ও তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের গতিবিধি জানতে ‘আরোগ্যসেতু’ অ্যাপ চালু করেছে সরকার৷ প্রায় সাড়ে সাত কোটি মানুষ এটি ডাউনলোড করেছেন বলে সরকার জানিয়েছে৷ এগারোটি ভাষায় অ্যাপটি চালু হয়েছে৷ এই অ্যাপে করোনা নিয়ে সচেতনতা ও জরুরি স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে সহজে যোগাযোগের উপায়ও বলা আছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Swarup
জার্মানি
আপনি করোনা আক্রান্ত কারো সংস্পর্শে এসেছেন কিনা, তা জানাতে অ্যাপল ও গুগল যৌথভাবে একটি সফটওয়্য়ার তৈরি করছে৷ মে মাসে এটি পাওয়া যেতে পারে৷ জার্মানি এই উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছে৷ যদিও জার্মানি একই কাজের জন্য নিজ উদ্য়োগে ‘পিইপিপি-পিটি’ নামে একটি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চেয়েছিল৷ কিন্তু সমালোচনার কারণে সেই পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে৷