কোভিড আক্রান্ত রাজ্য থেকে জরুরি সাহায্য চেয়ে বার্তা যাচ্ছে, কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর জানাচ্ছে, তিনি পশ্চিমবঙ্গে ভোটের প্রচারে ব্যস্ত৷
বিজ্ঞাপন
পশ্চিমবঙ্গে চলতি বিধানসভা ভোটের প্রচারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ যতবার এবং যেরকম ঘন ঘন রাজ্যে এসেছেন, তা বেনজির৷ যদিও কোভিড পরিস্থিতি বিচার করে রাজনৈতিক দলগুলি একে একে গণ কর্মসূচি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ ব্যতিক্রম বিজেপি৷ মোদি, শাহ, নাড্ডাদের রাজ্যে আসা এবং জনসভা করার কর্মসূচি অব্যাহত৷ সারা দেশে যখন কোভিড সংক্রমণের দ্বিতীয় দফার ঢেউ আছড়ে পড়ছে, মহারাষ্ট্র, দিল্লি, পশ্চিমবঙ্গ থেকে বার বার জরুরি সাহায্য চেয়ে বার্তা গেছে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে, প্রতিবারই শুনতে হয়েছে, দেশের সরকার প্রধান পশ্চিমবঙ্গের ভোট নিয়ে খুব ব্যস্ত৷ তিনি প্রচারের দায়িত্ব থেকে ফুরসৎ পেলেই, ইত্যাদি৷
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অবধারিতভাবেই মনে পড়ে যাচ্ছে গুজরাট দাঙ্গার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ির সেই ঐতিহাসিক উক্তির কথা৷ নরেন্দ্র মোদি তখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী৷ রাজ্যের মুসলিম জনগোষ্ঠীকে প্রশাসনিক নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য কার্যত রাজ্য সরকারকে ভর্ৎসনা করে প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ি নরেন্দ্র মোদিকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন প্রজা পালনের রাজধর্মের কথা৷ নিজের দলের রাজনৈতিক দায়কে গুরুত্ব দিয়ে প্রশাসনিক দায়িত্বকে কি অস্বীকার করলেন না প্রধানমন্ত্রী?
অরুণাভ ঘোষ
উঠছে প্রশ্ন৷ কিন্তু দেশের সংবিধান কী বলে এই বিষয়ে? প্রধানমন্ত্রী প্রচারে ব্যস্ত বলে কোভিড নিয়ন্ত্রণের আর্জিতে কান দিতে পারছেন না— এই ব্যাপারে আইন কী বলে?
‘‘আইন নির্দিষ্ট করে কিছুই বলে না৷''বললেন বিশিষ্ট আইনজীবী এবং কংগ্রেস নেতা অরুণাভ ঘোষ৷ তার সোজা কথা, ‘‘আপনি কী রকম মানুষ, আপনি কোনটাকে গুরুত্ব দেবেন, প্রাধান্য দেবেন, তার উপরেই সব নির্ভর করে৷ কিন্তু এই প্রধানমন্ত্রী, এই সরকারের থেকে সেরকম কিছু প্রত্যাশা না করাই ভাল৷''অরুণাভ ঘোষ সরাসরি কটাক্ষ করেছেন, সেই দায়িত্ববোধ পড়াশোনার উপর নির্ভর করে৷ যে কোনটা প্রাধান্য দেওয়া হবে৷ প্রধানমন্ত্রী যদি ভাবেন পশ্চিমবঙ্গে যে করেই হোক জিততে হবে, সেটাই তার প্রায়োরিটি, তা হলে কিছু করার নেই৷
অথচ যে রাজ্যে প্রধানমন্ত্রী, বা বিজেপির অন্যান্য নেতারা নিয়মিত প্রচারে আসছেন, সেখানকার অবস্থা সত্যি সঙ্গিন৷ সংক্রমণের হিসেবে রাজ্যের শীর্ষে আছে কলকাতা৷ সেখানে কোভিড হাসপাতালগুলি প্রায় ভর্তি৷ কোথাও জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না৷ অক্সিজেনের জোগানে টান পড়েছে৷ এমনকী কোভিড রোগীদের চিকিৎসা করতে যে ওষুধগুলি প্রয়োজন, তার মজুতেও টান পড়েছে৷ আড়ালে শুরু হয়ে গেছে ওষুধের কালোবাজারি এবং কার্যত যথেচ্ছাচার হচ্ছে৷
পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির প্রচার-কৌশল
পশ্চিমবঙ্গে ভোটের দিন ঘোষণা হয়ে গেছে। সব দলের প্রচার তুঙ্গে। কেমনভাবে চলছে ও চলবে বিজেপি-র প্রচার?
ছবি: picture-alliance/Zuma/D. Chatterjee
প্রচারের মুখ
পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি-র প্রচারের মুখ হলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এখনো পর্যন্ত বিজেপি কোনো মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি। মোদীকে সামনে রেখেই ভোটে লড়বে তারা। রাজ্যে জনসভা শুরু করে দিয়েছেন মোদী। পশ্চিমবঙ্গে আট পর্বের ভোটে বারবার তিনি আসবেন প্রচারে। তার ভরসাতেই ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন দেখছে বিজেপি। হলদিয়ার জনসভায় মোদীর ছবি।
ছবি: Dibyangshu Sarkar/AFP/Getty Images
মোদীর ব্রিগেড-পরীক্ষা
বাম ও কংগ্রেসের জনসভায় ব্রিগেড ছিল ভর্তি। বহুদিন বাদে বামেদের জনসভায় কাতারে কাতারে মানুষ এসে ব্রিগেড ভরিয়েছিলেন। এবার পরীক্ষা মোদীর। আগামী ৭ মার্চ ব্রিগেডে জনসভা করবেন মোদী। তার আগে নেতারা জেলায় চলে গেছেন। সেখান থেকে মানুষকে ব্রিগেডে আনবেন। মোদীর জনপ্রিয়তা ও দলীয় সংগঠনের দক্ষতায় ব্রিগেড ভরাতে চাইছে বিজেপি।
ছবি: DW/P. Tewari
বেশি সভা অমিত শাহের
এখনো পর্যন্ত ঠিক আছে, কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে সব চেয়ে বেশি জনসভা করবেন অমিত শাহ। তিনি ইতিমধ্যেই ঘন ঘন পশ্চিমবঙ্গে আসছেন। কখনো বাউল, কখনো কৃষকের বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজ করছেন। কর্মীসভা করেছেন। জনসভা এবং রোড শো-ও। পশ্চিমবঙ্গে দলকে ক্ষমতায় আনার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন অমিত শাহ।
ছবি: Payel Samanta/DW
বারবার নাড্ডাও
বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি জগত প্রকাশ নাড্ডাও বারবার পশ্চিমবঙ্গে প্রচারে আসবেন। বিজেপি প্রচারকারীদের যে তালিকা তৈরি করেছে, তাতে নাড্ডা গুরুত্ব পাচ্ছেন।
ছবি: Prabhakarmani Tewari/DW
থাকছেন যোগী আদিত্যনাথ
যোগী আদিত্যনাথ প্রচার শুরু করে দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গে। উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চড়া সুরে হিন্দুত্বের প্রচারের জন্য সুবিদিত। কিছুদিন আগে বিহারে তিনি এই কাজটাই করেছিলেন। এবার পশ্চিমবঙ্গেও করবেন। ফলে পশ্চিমবঙ্গের ভোটেও বিজেপি-র চড়া সুরের প্রচার চলবে। মোদী এবং যোগী পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি-র বড় ভরসা।
ছবি: Altaf Qadri/AP Photo/picture alliance
স্মৃতি ইরানি, রাজনাথরা থাকছেন
বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে স্মৃতি ইরানি খুবই ভালো বাংলা বলতে পারেন। তাঁর মা বাঙালি। তিনি বংলায় থেকেছেন। খুবই ভাল বক্তা। তাই তাঁকে দিয়ে প্রচুর জনসভা করাবে বিজেপি। রাজনাথও প্রচার করবেন। বিহার এবং ওড়িশা থেকেও নেতাদের নিয়ে আসা হবে। ছবিতে কলকাতায় শোভাবাজার রাজবাড়িতে সিস্টার নিবেদিতা স্মারক বক্তৃতা দেয়ার আগে স্মৃতি ইরানি।
ছবি: picture-alliance/Pacific Press Agency/S. Paul
দিলীপ ঘোষ চষে বেড়াবেন
রাজ্য নেতাদের মধ্যে সব চেয়ে বেশি জনসভা, রোড শো, বাড়ি গিয়ে প্রচার করবেন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। সারা রাজ্য তিনি চষে বেড়াচ্ছেন এবং বেড়াবেন। তৃণমূল থেকে বিজেপি-তে যাওয়া শুভেন্দু অধিকারীকে প্রচারে গুরুত্ব দেবে বিজেপি। তাঁকে দিয়ে প্রচুর জনসভা করানো হবে।
ছবি: Imago Images/Pacific Press Agency/S. Paul
সর্বাত্মক প্রচার
পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি-র প্রচার হবে সর্বাত্মক। কেন্দ্রীয় নেতারা বড় জনসভা করবেন। সেই সঙ্গে হবে ছোট পথসভা এবং বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার। সঙ্গে থাকবে সামাজিক মাধ্যমে আক্রমণাত্মক প্রচার। যার দায়িত্বে আছেন বিজেপি-র কেন্দ্রীয় আইটি সেলের প্রধান অমিত মালবীয়। প্রতিটি জেলায় ঘুরবে এলইডি প্রচারযান। এভাবেই প্রচারে কোনো ফাঁক রাখছে না বিজেপি।