1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

স্বাস্থ্যকর্মীদের ক্লান্তি কাটাতে নাচ-গান-আবৃত্তি

৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১

কোভিডের বিরুদ্ধে লড়তে লড়তে ক্লান্ত স্বাস্থ্যকর্মীরা নিজেরাই খুঁজছেন ভালো থাকার উপায়। কলকাতার একটি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা কর্মীরা খুলেছেন সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী। রোগীদের চাঙা রাখতেও নেয়া হয়েছে বিশেষ উদ্যোগ।

Indien Kalkutta Coronavirus MR Bangur Krankenhaus
ছবি: Payel Samanta/DW

করোনা অতিমারির বিরুদ্ধে লড়াই চলছে বছর দুয়েক ধরে। অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে চলেছেন স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত সব ধরনের কর্মীরা। চিকিৎসক থেকে নার্স কিংবা চতুর্থ শ্রেণীর কর্মী, সকলেই সামিল কোভিডের বিরুদ্ধে যুদ্ধে। চিকিৎসক থেকে চিকিৎসা কর্মী, অনেকের মৃত্যু হয়েছে করোনায়। অনেকে আক্রান্ত হয়েছেন এই মারণব্যাধিতে। বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই যেমন কঠিন হয়েছে, তেমনই মনের সঙ্গে লড়তে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

গত বছরের মার্চ থেকে কোভিডের ঝড় সামলাতে হয়েছে কলকাতার এম আর বাঙ্গুর হাসপাতালকে। দক্ষিণ কলকাতার টালিগঞ্জে অবস্থিত এই সরকারি প্রতিষ্ঠান করোনা মোকাবিলার ভরকেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। সেই সময় ভয়াবহ মৃত্যু মিছিল দেখেছেন এই হাসপাতালে কর্মীরা। প্রথম তরঙ্গের ধাক্কা সামলে ওঠার পর বাঙ্গুরের স্বাস্থ্যকর্মীরা চিন্তা করেছেন, কীভাবে শরীরের পাশাপাশি মনেও সুস্থ-সবল থাকবেন। এই ভাবনা থেকে জন্ম নিয়েছে সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী। গড়ে উঠেছে এম আর বাঙ্গুর কালচারাল গ্রুপ।

ডা. শিশির নস্কর

This browser does not support the audio element.

এই হাসপাতালের বিভিন্ন স্তরের কর্মীরা ব্যক্তিগত জীবনে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। কারোর ভালোলাগা নাচ-গানে, কেউ আবৃত্তি-অভিনয় পছন্দ করেন। এই সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীতে সামিল হয়েছেন সেই স্বাস্থ্যকর্মীরা। হাসপাতালের কাজের ফাঁকে সময় বের করে একসঙ্গে মহড়া দেন তারা। হাসপাতাল কর্মীদের নাচের গোষ্ঠীর নাম যাজ্ঞসেনী। এই গোষ্ঠীর সদস্য সংখ্যা ১০। এর সদস্য দেবস্মিতা বিশ্বাস ডয়চে ভেলেকে বলেন, "সপ্তাহে যেদিন সম্ভব হয়, আমরা একসঙ্গে নাচের রিহার্সাল করে নিই। চেষ্টা করি সকলে একই সময় ডিউটি নিতে। সবাই মিলে রিহার্সাল করা যায়

সপ্তাহে চারদিন। চণ্ডালিকা, চিত্রাঙ্গদা পারফর্ম করেছি আমরা।” যাজ্ঞসেনীর সদস্য সোমা দত্ত, রিশা ভট্টাচার্য, শ্রেয়সী মজুমদার, রিচা দাস, সৌমী চক্রবর্তীরা প্রতিদিনের চ্যালেঞ্জ সামলে এ ভাবেই বাঁচার অক্সিজেন সংগ্রহ করে চলেছেন। চেষ্টা করছেন ইউটিউব চ্যানেল খোলার।

এম আর বাঙ্গুর হাসপাতাল সম্প্রতি দেশের সেরা জেলা হাসপাতালে তকমা পেয়েছে। অসাধারণ পরিষেবা দেবার জন্য নীতি আয়োগ এই স্বীকৃতি দিয়েছে। জেলা হাসপাতাল হয়েও যেভাবে বড় সংখ্যক রোগীকে বাঙ্গুর হাসপাতাল উন্নতমানের পরিষেবা দিয়েছে, তার প্রশংসা করেছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। এখানকার স্বাস্থ্যকর্মীরা শুধু নিজেরাই ভালো থাকার চেষ্টা করছেন, এমন নয়। একই সঙ্গে কোভিড রোগীদের মানসিকভাবে চাঙ্গা রাখতে তারা সক্রিয়। এজন্য ভিডিও কলিং পরিষেবা থেকে রাইটিং থেরাপি, নানা পন্থা নিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের সুপার ডা. শিশির নস্কর ডয়চে ভেলেকে বলেন, "কোভিড ওয়ার্ডে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ভর্তি থাকা মানসিক যন্ত্রণার। শরীরের পাশাপাশি তার চিকিৎসাও দরকার। আমরা যন্ত্রণা উপশমের চেষ্টা করেছি। রোগীদের মনের কথা লিখতে বলছি। অনেক রোগী তাদের অভিজ্ঞতার কথা লিখছেন। এমনকি বাইপ্যাপে থাকা অবস্থাতেও লিখছেন। এটা রোগীকে মানসিকভাবে হালকা থাকতে সাহায্য করছে।”

দেবস্মিতা বিশ্বাস

This browser does not support the audio element.

বাঙ্গুর হাসপাতালে স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রথম তরঙ্গের ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা ভুলতে পারেননি। কী সেই অভিজ্ঞতা? রোজ একের পর এক মৃত্যু। রোগী দেখেছেন, তার ওয়ার্ডে একের পর এক শয্যা খালি হয়ে যাচ্ছে কোভিডের গ্রাসে। তারা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। একই পরিবারের একাধিক সদস্য হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন, এই পরিস্থিতিও হয়েছে। এতে অনেক রোগী কান্নাকাটি করতেন, চুপচাপ বসে থাকতেন। কেউ কেউ খেতেও চাইতেন না। এই পরিস্থিতিতে ভিডিও কলিংয়ের মাধ্যমে প্রিয়জনকে একটু দেখা এবং কথা বলা সুযোগ করে দিয়েছেন বাঙ্গুর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হরিদেবপুরের এক বাসিন্দা গত বছর ভর্তি ছিলেন কোভিড ওয়ার্ডে। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, "একা একা কিছু ভালো লাগত না। মনে হতো, আমি আর বাঁচব না। চিকিৎসক, নার্সরা সাহস জোগাতেন। তবু মন মানত না। মন ছটফট করত মেয়েকে দেখার জন্য। ভিডিও কলিংয়ে ওঁরা মেয়ের সঙ্গে কথা বলিয়েছেন। এতে একটু শান্তি পেয়েছিলাম।”

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

বাংলাদেশ