কেঁচো খুঁড়তে সাপ যাতে বেরিয়ে না পড়ে, তা নিশ্চিত করতে নিজের এক সহযোগীর বিরুদ্ধে তদন্ত বন্ধ করার জন্য চাপ সৃষ্টি করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প – এবার তাঁর বিরুদ্ধে এমন মারাত্মক অভিযোগ উঠলো৷
বিজ্ঞাপন
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই-এর প্রধান হিসেবে জেমস কোমিকে বরখাস্ত করেছেন ট্রাম্প৷ নিউ ইয়র্ক টাইমস সংবাদপত্রের সূত্র অনুযায়ী কোমি ট্রাম্পের সঙ্গে প্রতিটি সাক্ষাতেরপর কথোপকথন লিখে রাখতেন৷ এবার তারই অংশবিশেষ ফাঁস হয়ে গেছে৷ সেই ‘মেমো' অনুযায়ী ট্রাম্প নাকি সরাসরি কোমিকে বলেছিলেন, রাশিয়ার সঙ্গে গোপন যোগাযোগের অভিযোগে প্রাক্তন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিনের বিরুদ্ধে তদন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়৷ ১৪ই ফেব্রুয়ারি ফ্লিন বরখাস্ত হবার পরের দিন ট্রাম্প নাকি কোমিকে বলেছিলেন, ‘‘আই হোপ ইউ ক্যান লেট দিস গো৷'' শুধু তাই নয়, সংবাদ মাধ্যম রাশিয়ার সঙ্গে তাঁর টিমের সদস্যদের যোগাযোগ সম্পর্কে এত গোপন সরকারি তথ্য ফাঁস করে দেওয়ায় ট্রাম্প উলটে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবার জন্য কোমি'র উপর চাপ সৃষ্টি করেন৷
বলা বাহুল্য, হোয়াইট হাউস দ্রুত এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে৷ কোমি ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যে এমন কোনো কথা হয়নি বলে দাবি করা হয়েছে৷ উল্লেখ্য, সম্প্রতি রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও রাষ্ট্রদূতের সামনে অতি গোপন তথ্য তুলে ধরার কারণে ট্রাম্প প্রবল চাপের মুখে পড়েছিলেন৷ একের পর পর এক অভিযোগের মুখে হোয়াইট হাউস প্রবল চাপের মুখে রয়েছে৷
কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফেডারেল স্তরে তদন্তের ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করছেন, তা-ও নিজের টিমের সদস্যদের রক্ষা করতে – এমন মারাত্মক অভিযোগের ফলে নড়েচড়ে বসেছে মার্কিন কংগ্রেস৷ বিরোধী ডেমোক্র্যাটিক দলের সদস্যরা সংসদীয় তদন্তের দাবি করছেন৷ দুই দলের সদস্যরা সেই মেমো স্বচক্ষে দেখতে চাইছেন৷
হাউস অফ রিপ্রেসেন্টেটিভের এক কমিটি এফবিআই-এর কার্যনির্বাহী প্রধান অ্যান্ড্রু ম্যাককেবের কাছে আগামী ২৪শে মে'র মধ্যে কোমি ও প্রেসিডেন্টের মধ্যে যোগাযোগের সব নথিপত্র পেশ করার নির্দেশ দিয়েছে৷ এ বিষয়ে তথ্য-প্রমাণ যাচাই করে পরবর্তী পদক্ষেপ স্থির করতে চান সংসদ সদস্যরা৷
বিতর্কে জেরবার ট্রাম্প আপাতত সব কিছু পেছনে ফেলে ৯ দিনের মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপ সফরের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন৷ বিদেশের মাটিতে তিনি যাতে বেফাঁস মন্তব্য না করেন, তা নিশ্চিত করতে রিপাবলিকান দল ও মার্কিন প্রশাসনের সদস্যরা তাঁর উপর চাপ সৃষ্টি করছেন৷ বিশেষ করে তাঁর বিরুদ্ধে রাশিয়ার কাছে যে তথ্য ফাঁস করার অভিযোগ উঠেছে, তার সূত্র ইসরায়েল বলে কিছু মহলে দাবি করা হচ্ছে৷ আসন্ন ইসরায়েল সফরে বিষয়টি উঠে আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে৷
বেকায়দায় ট্রাম্প, চারিদিকে অরাজকতা
প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবার পরেও বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না ডোনাল্ড ট্রাম্পের৷ কখনো কোনো সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে গিয়ে ধাক্কা খাচ্ছেন, কখনো প্রশাসনের সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগে জেরবার হচ্ছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Kamm
রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক
নির্বাচনি প্রচারের সময় থেকেই ট্রাম্প টিম-এর সঙ্গে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত সহ একাধিক মহলের যোগসূত্র নিয়ে জলঘোলা হচ্ছে৷ এর মধ্যে জাতীয় উপদেষ্টা হিসেবে মাইকেল ফ্লিনকে বিদায় নিতে হয়েছে৷ একাধিক তদন্তের মুখে পড়েছেন অভিযুক্তরা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/D. Lovetsky
ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞা
কয়েকটি মুসলিম-প্রধান দেশ থেকে অ্যামেরিকায় ভ্রমণের উপর তড়িঘড়ি নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন ট্রাম্প৷ আদালতের হস্তক্ষেপে প্রথম নির্বাহী আদেশ বাতিল হবার পর দ্বিতীয়টিও থামিয়ে দিয়েছে আদালত৷
ছবি: Getty Images/J. Sullivan
স্বাস্থ্য বিমা বিপর্যয়
তথাকথিত ‘ওবামাকেয়ার’ বা পূর্বসূরি বারাক ওবামার আমলে স্বাস্থ বিমা খাতে যে সংস্কার চালানো হয়েছিল, তা বাতিল করতে বদ্ধপরিকর ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ তবে রিপাবলিকান দলেরই একটা অংশ ট্রাম্প প্রশাসনের বিকল্প আইনের বিরোধিতা করায় এ যাত্রায় হাত পুড়িয়েছেন ট্রাম্প৷ তবে এখনো হাল ছাড়তে রাজি নন তিনি৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Kamm
স্বজনপোষণ
প্রচলিত বিধিনিয়ম উপেক্ষা করে জামাই ও মেয়েকে হোয়াইট হাউসে উপদেষ্টার পদ দিয়ে প্রবল বিতর্কের মধ্যে পড়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ সমালোচকদের মতে, পারিবারিক ও ব্যবসায়িক স্বার্থের সংঘাত এক্ষেত্রে অনিবার্য৷ অবৈতনিক ফেডারেল কর্মী হিসেবে তাঁরা অনেক রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্যেরও নাগাল পেতে পারেন৷
ছবি: picture alliance/dpa/S. Thew/Epa
পরিবেশের ক্ষতি
বহু বছর ধরে দরকষাকষির পর জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা করতে অ্যামেরিকা সহ বিশ্বের দেশগুলি প্যারিস চুক্তি স্বাক্ষর করে৷ সেই ঐকমত্যের পেছনে ওবামা প্রশাসনের উদ্যোগ নস্যাৎ করে ট্রাম্প পরিবেশের ক্ষতি করতে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Thibault Camus
ক্ষমতার অহমিকা
প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প বার বার ‘একলা চলো রে’ নীতির পথে চলার চেষ্টা করছেন৷ চটজলদি সিদ্ধান্ত নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে কার্যকর করতে চান তিনি৷ নিজের মন্ত্রিসভা তো নয়ই, এমনকি রিপাবলিকান দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা সত্ত্বেও সংসদের দুই কক্ষের সঙ্গেও আলোচনা এড়িয়ে চলতে পছন্দ করেন তিনি৷ এই অবস্থায় প্রশাসনের ভিতর থেকেই অনেক গোপন বিষয় ফাঁস হয়ে যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters/C. Barria
প্রশাসনে অরাজকতা
একদিকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, অন্যদিকে প্রশাসনের কাঠামোর মধ্যে কোনো স্পষ্ট নীতি বা বিভিন্ন বিষয়ে ধারাবাহিকতার অভাব বার বার প্রকট হয়ে উঠছে৷ এমনকি খোদ ট্রাম্প অনেক বিষয় পুরোপুরি না বুঝেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠছে৷ এমন অরাজক পরিস্থিতিতে কোনো সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে গিয়ে নাস্তানাবুদ হয়ে পড়ছে ট্রাম্প প্রশাসন৷ অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদ খালি থাকায় লোকবলের অভাবও স্পষ্ট হয়ে উঠছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/A. Harnik
জনপ্রিয়তার অভাব
সাম্প্রতিক কালে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট কার্যকালের প্রথম পর্যায় জনমত সমীক্ষায় এমন বিরোধিতার সম্মুখীন হননি৷ এমনকি রিপাবলিকান দলের অধিকাংশ কর্তাব্যক্তিও তাঁর থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলছেন৷ বিচার বিভাগ বার বার হস্তক্ষেপ করছে৷ সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে তাঁর প্রশাসনের বৈরি সম্পর্ক পরিস্থিতি আরও কঠিন করে তুলছে৷