1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
ধর্মতুরস্ক

কোরআন অনুবাদের 'ঠিক-ভুল' নির্ধারণ করবে তুর্কি কর্তৃপক্ষ

১৬ জুন ২০২৫

তুরস্কে নতুন এক আইনে ইসলামের ব্যাখ্যার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, কোরআনের এমন অনুবাদ নিষিদ্ধ করার অধিকার দেয়া হয়েছে রাষ্ট্রীয় এক প্রতিষ্ঠানকে৷

সাদা পোশাক পরিহিত তুরস্কের ধর্ম বিষয়ক কর্তৃপক্ষ দিয়ানেতের প্রেসিডেন্ট আলী এরবাস বক্তব্য রাখছেন
আলী এরবাস তুরস্কের ধর্ম বিষয়ক কর্তৃপক্ষ দিয়ানেতের প্রেসিডেন্টছবি: ANKA

৪ জুন এই আইন পাস হওয়ার ফলে তুরস্কে ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ বেড়ে চলেছে৷

১৯২৪ সালে কামাল আতাতুর্ক তুরস্কে ধর্ম বিষয়ক প্রেসিডেন্সি দিয়ানেত প্রতিষ্ঠা করেন৷ দেশটির সবচেয়ে প্রভাবশালী কর্তৃপক্ষগুলোর মধ্যে এটি একটি৷ ২০১৮ সাল থেকে দিয়ানেত সরাসরি ইসলামি-রক্ষণশীল প্রেসিডেন্ট রিচেপ তাইয়্যেপ এর্দোয়ানের কাছে ‘রিপোর্ট' করে আসছে

দিয়ানেত-এর নিজস্ব পরিসংখ্যান অনুসারে, প্রতিষ্ঠানটিতে এক লাখ ৪০ হাজারের বেশি কর্মী রয়েছেন এবং এটি ১০০ টিরও বেশি দেশে ধর্মীয় সেবা প্রদান করে৷ প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক বাজেট প্রায় ৩০০ কোটি ইউরো (১ ইউরো = প্রায় ১৩০ টাকা)৷ দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ অন্য অনেক মন্ত্রণালয়ের বাজেটের চেয়ে বেশি এটি৷

দিয়ানেত তুরস্কজুড়ে ৯০ হাজার মসজিদ পরিচালনা করে৷ এছাড়াও কোরআন কোর্স, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং বার্ষিক তীর্থযাত্রা আয়োজনের পাশাপাশি কোরবানির সমন্বয়ও করে এই প্রতিষ্ঠান৷ ইমামদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দেশে-বিদেশে তাদের চাকরিও দেয়৷ দিয়ানেতের ফাউন্ডেশন ১৫০টি দেশে সক্রিয় এবং বিশ্বব্যাপী শিক্ষামূলক কর্মসূচি এবং বৃত্তির মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মানুষের মধ্যে সক্রিয় থাকে৷

কোরআন অনুবাদের উপর কর্তৃত্ব, সেন্সরশিপের অভিযোগ

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দিয়ানেতের ক্ষমতা প্রসারিত হয়েছে। ৪ জুন থেকে কার্যকর হওয়া একটি নতুন আইনে দিয়ানেতকে মুসলিমদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআনের অনুবাদ ব্যাখ্যা করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে৷ এই আইনে কোনো অনুবাদ 'ইসলামের মৌলিক বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ না', মনে করলে সেটা নিষিদ্ধও করতে পারবে দিয়ানেত। বাজারে থাকা 'সমস্যাযুক্ত কপি' বাজেয়াপ্ত এবং ধ্বংস করতে পারবে তারা। এই আইন অনলাইনে প্রকাশ হওয়া লেখা, অডিও এবং ভিডিও রেকর্ডিংয়ের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

এর আগে প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ান এক ডিক্রির মাধ্যমে দিয়ানেতকে এই কর্তৃত্ব প্রদান করেছিলেন৷ তখন কিছু অনুবাদকে 'অসত্য' হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করার অনুমতি দেয়া হয়েছিল দিয়ানেতকে৷ কিন্তু সাংবিধানিক আদালত সেই ডিক্রি বাতিল করে দেয়। এবার নতুন আইন প্রণয়নের মাধ্যমে দিয়ানেতের সাংবিধানিক ক্ষমতা নিশ্চিত করা হলো৷

মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে রাষ্ট্রপ্রধানেরা সাম্প্রতিক অতীতে নিয়মিতভাবেই তাদের কর্মকাণ্ডকে ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য ইসলামকে ব্যবহার করেছেন৷ উদাহরণস্বরূপ ইরাকে এক সময়ের ধর্মনিরপেক্ষ সাদ্দাম হোসেনের পরবর্তীতে নিজের স্বৈরাচারী পদক্ষেপ এবং ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য ধর্মীয় নীতি ব্যবহারের বিষয়টি স্মরণ করা যেতে পারে৷

ধর্মীয় উন্মুক্ততাকে রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন করার অজুহাত হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরুদ্ধে৷ মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউট বলছে, এর্দোয়ানের রাজনৈতিক দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (একেপি) "ধর্ম এবং জাতীয়তাবাদের ঐতিহাসিক বর্ণনার মাধ্যমে তার ভিত্তির আনুগত্য বজায় রেখেছে৷''

এর্দোয়ানের সমালোচকদের আশঙ্কা, তুরস্কের এই নতুন আইন ধর্মীয় স্বাধীনতাকে বিপন্ন করে রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত ইসলাম প্রতিষ্ঠা করবে৷

সুপরিচিত ধর্মতত্ত্ববিদ সোনমেজ কুতলু এমন ঘটনায় রাষ্ট্রের দেউলিয়াত্ব প্রমাণ হয়েছে বলে মনে করেন৷ তিনি বলেন, যে দেশে এক লাখের বেশি দিয়ানেত কর্মচারী এবং শতাধিক ধর্মতত্ত্ব অনুষদ রয়েছে, সেখানে নিষেধাজ্ঞার পরিবর্তে বুদ্ধিবৃত্তিক ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মাধ্যমেই কোরআনকে সমস্যাযুক্ত অনুবাদ থেকে রক্ষা করতে পারা উচিত ছিল৷

তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন, এই আইনের ফলে "ইসলামের মৌলিক বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক" বলে অভিযুক্ত আয়াত সম্বলিত প্রকাশনাগুলো তদন্ত এবং বিচারের মুখোমুখি হতে পারে৷

আরেক ধর্মতত্ত্ববিদ ইহসান এলিয়াচিক দিয়ানেতের নতুন কর্তৃত্বকে 'বিশ্বাসের মৌলিক লঙ্ঘন' হিসাবে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, "ইসলামে কোনো প্রতিষ্ঠানকে মানুষ এবং আল্লাহর মধ্যে দাঁড়ানোর অনুমতি দেয়া হয়নি। কিন্তু 'সত্যতা' নির্ধারণে দিয়ানেতের কোরআন পর্যালোচনা ঠিক সে কাজটিই করে৷''

এলিয়াচিকের নিজের করা কোরআনের অনুবাদ এর আগে দিয়ানেত নিষিদ্ধ করেছিল। তিনি সাংবিধানিক আদালতে আপিল করেছিলেন এবং জিতেছিলেন৷ কিন্তু নতুন আইনে এই ধরনের পদক্ষেপ নেয়া আর সম্ভব হবে না৷

ধর্মীয় অনুসারীরা প্রভাব বিস্তার করছে

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এলিয়াচিক, কুতলু এবং সরকারের সমালোচক অন্যান্য ধর্মতত্ত্ববিদেরা বারবার সরকারপন্থি গোষ্ঠী এবং ইসলামপন্থি অনুসারীদের অপপ্রচারের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন৷ ফ্রাঙ্কফুর্টের গ্যোয়েটে বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মতত্ত্বের অধ্যাপক ওমর ওজসয় মনে করেন, নতুন আইনের পেছনে রয়েছে সরকারের উপর এই ধর্মীয় অনুসারীদের ক্রমবর্ধমান প্রভাব৷

ওজসয় বলেন, ‘‘এই মহলগুলো প্রায় এক দশক ধরে তুরস্কের ইসলামিক ধর্মতত্ত্ব অনুষদে অ্যাকাডেমিক, সমালোচনামূলক এবং বহুত্ববাদী ধর্মতত্ত্বের প্রকাশ্য বিরোধিতা করে আসছে।"

এই গোষ্ঠীটি "বেশ কিছু দিন ধরেই হাই-প্রোফাইল ধর্মতত্ত্ববিদদের বিরুদ্ধে পদ্ধতিগতভাবে প্রচারণা চালিয়ে আসছে," জানিয়েছেন ওজসয়৷

তার আশঙ্কা, দমনমূলক এবং রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ব্যাখ্যার মাধ্যমে নতুন আইনের ব্যাপক প্রয়োগ হতে পারে। তিনি বলেন, "অনুবাদক সহকর্মীরা জানিয়েছেন, দিয়ানেত এরই মধ্যে মোট ১২টি অনুবাদ জব্দ করার প্রস্তুতি নিয়েছে, যার মধ্যে মুস্তাফা ওজতুর্ক এবং এদিপ ইউকসেলের অনুবাদও রয়েছে।"

তুরস্কে কোরআন অনুবাদের ভূমিকা

মুসলিমদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল কোরআন আরবি ভাষায় রচিত৷ বিশ্বজুড়ে ইসলাম ধর্মের কোটি কোটি অনুসারীদের কাছে কোরআন সহজবোধ্য করে তোলার জন্য অনুবাদ অপরিহার্য৷ তবে এসব অনুবাদে ব্যাখ্যাও সংযুক্ত থাকে, বিশেষ করে অস্পষ্ট শব্দ বা অনুচ্ছেদের ক্ষেত্রে৷ এই ব্যাখ্যাগুলোর ফলেই কোরআনের অনুবাদ একটি সংবেদনশীল বিষয়ে পরিণত হয়েছে৷

তুরস্কের মতো আরবিভাষী নয় এমন দেশগুলোতে কোরআন অনুবাদের গুরুত্ব সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বৃদ্ধি পেয়েছে৷ ওজসয় ব্যাখ্যা করেছেন, অতীতে ‘‘কোরআন ধর্মীয় পণ্ডিতদের উপরেই নির্ভর করতো৷'' তবে এখন পরিস্থিতি ভিন্ন বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘‘এখন সাধারণ বিশ্বাসীরা সরাসরি কোরআন পড়েন এবং স্বাধীনভাবে এর ব্যাখ্যা করেন৷''

ওজসয়ের মতে, সাম্প্রতিক দশকগুলোতে তুর্কি ভাষায় কোরআন অনুবাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে৷ অনুবাদকদের মধ্যে অনেকেরই পেশাদার যোগ্যতা নেই৷ এই সমস্যাটি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা রয়েছে এবং অনেক অ্যাকাডেমিক সাহিত্যও রয়েছে৷

তুরস্কে এখন ধর্ম সামাজিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে৷ বিশেষ করে তরুণরা ধর্মগ্রন্থ পাঠ এবং অনেক তত্ত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলার ফলে সরকারের মধ্যে উদ্বেগও বাড়ছে। প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ান বারবারই জোর দিয়ে বলেছেন, তিনি একটি 'ধার্মিক প্রজন্ম' গড়ে তুলতে চান৷

তবে, জনমত গবেষণা প্রতিষ্ঠান কোন্ডা তাদের সাম্প্রতিক গবেষণায় এর বিপরীত চিত্র দেখিয়েছে৷ দেখা গেছে, নিজেদের ধার্মিক মনে করা তুর্কিদের অনুপাত ২০১৮ সালে ৫৫ শতাংশ থেকে কমে এখন ৪৬ শতাংশ হয়েছে৷ অন্যদিকে নাস্তিক বা অবিশ্বাসীদের অনুপাত একই সময়ে দুই শতাংশ থেকে বেড়ে আট শতাংশ হয়েছে

এলমাস তোপচু/এডিকে

বিজ্ঞান আর ধর্ম যখন একসঙ্গে চলতো

04:37

This browser does not support the video element.

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ