‘কোরআন পোড়ানো ব্যক্তি হত্যার পেছনে বিদেশি শক্তি থাকতে পারে’
৩১ জানুয়ারি ২০২৫
সুইডেনে কোরআন পোড়ানো এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যার সঙ্গে বিদেশি শক্তি জড়িত থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী উলফ ক্রিস্টাশন৷ বুধবার নিজ বাড়িতে ঐ ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়৷
সালওয়ান মোমিকা ২০২৩ সালে বেশ কয়েকবার কোরআন পুড়িয়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন৷ছবি: Johan Nilsson/TT NYHETSBYRÅN/picture alliance
বিজ্ঞাপন
এই ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে৷ তবে তাদের মধ্যে বন্দুকধারী আছেন কিনা তা জানানো হয়নি৷
‘‘আমি আপনাদের নিশ্চিত করে বলতে পারি যে, নিরাপত্তা বাহিনী বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে কাজ করছে, কারণ, স্পষ্টতই এমন এক ঝুঁকি আছে যে, এর সঙ্গে একটি বিদেশি শক্তির সংযোগ আছে,'' বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন সুইডিশ প্রধানমন্ত্রী৷
ধর্মীয় পোশাক পরায় ৪২ দেশে হয়রানি, না পরায় ১৯ দেশে
পিউ রিসার্চ সেন্টার বলছে, ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ৫৬টি দেশের নারীরা তাদের পোশাক খুব বেশি ধর্মীয় অথবা খুব বেশি ধর্মনিরপেক্ষ হওয়ায় সামাজিক হয়রানির শিকার হয়েছেন৷ জার্মানি, ভারতসহ পাঁচ দেশের নারীদের দুই অভিজ্ঞতাই হয়েছে৷
ছবি: Karim Sahib/AFP
পোশাকের কারণে হয়রানি
যুক্তরাষ্ট্রের থিংক ট্যাংক পিউ রিসার্চ সেন্টার বলছে, ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ৫৬টি দেশের নারীরা তাদের পোশাক খুব বেশি ধর্মীয় অথবা খুব বেশি ধর্মনিরপেক্ষ হওয়ায় সামাজিক হয়রানির শিকার হয়েছেন৷ মৌখিক কটূক্তি থেকে শুরু করে শারীরিক আঘাত, এমনকি হত্যা এমন হয়রানির মধ্যে পড়ে৷ প্রতিবেদনটি পড়তে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: picture-alliance/PYMCA/Liat Chen
হিজাব পরায় হয়রানি, না পরায়ও হয়রানি
৫৬টি দেশের মধ্যে ৪২টি দেশে নারীরা ধর্মনিরপেক্ষ পোশাক রীতি লঙ্ঘন করায়, অর্থাৎ হিজাব বা অন্যান্য ধর্মীয় পোশাক পরায় হয়রানির শিকার হয়েছেন৷ আর ১৯টি দেশের নারীরা ধর্মীয় পোশাক রীতি না মানায়, অর্থাৎ হিজাব না পরায় কিংবা ধর্মীয় রীতির সঙ্গে মেলে না এমন পোশাক পরায় হয়রানির শিকার হয়েছেন৷ জার্মানি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইসরায়েল ও রাশিয়ায় নারীদের দুই অভিজ্ঞতাই হয়েছে৷
ছবি: DW
সবচেয়ে বেশি ইউরোপে
৫৬টি দেশের মধ্যে ইউরোপের দেশ ২২টি৷ এর মধ্যে ২০টি দেশে নারীরা হিজাব বা অন্য ধর্মীয় পোশাক পরায় হয়রানির শিকার হয়েছেন৷ আর দুটি দেশে হিজাব না পরায় নারীদের হয়রানি হতে হয়েছে৷ ২০১৮ সালে ডেনমার্কে এক চালক হিজাব পরা এক মুসলিম নারীকে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা ছেড়ে দিতে অস্বীকার করেন৷ জার্মানিতে এক নারী একজন মুসলিম নারীকে মেরে তার হেডস্কার্ফ খুলে ফেলার চেষ্টা করেন৷
ছবি: Imago/R. Peters
এশিয়া-প্যাসিফিক
এই অঞ্চলের ১৬ দেশে নারীরা হয়রানিতে পড়েছেন৷ ২০১৮ সালে হেডস্কার্ফ না পরায় এক নারীকে হামলা করায় মালয়েশিয়ায় এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল৷ ২০১৬ সালের কিরঘিস্তানে বিলবোর্ডে বিভিন্ন রকম ইসলামি পোশাক পরিহিত নারীর ছবি বিতর্ক তৈরি করেছিল৷
ছবি: Chong Voon Chung/Xinhua/picture alliance
সাব-সাহারা আফ্রিকা
এই অঞ্চলের সাত দেশের নারীরা পোশাকের কারণে হয়রানির শিকার হয়েছেন৷ ২০১৮ সালে কেনিয়ার কিছু অংশে নারী শিক্ষকদের হিজাব পরার নিয়ম করা হয়েছিল৷ আর লাইবেরিয়ায় হেডস্কার্ফ পরায় মুসলিম নারীরা কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Dai Kurokawa
অ্যামেরিকা
ছয়টি দেশে নারীদের হয়রানির মুখোমুখি হতে হয়েছে৷ ২০১৮ সালে ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে এক হিন্দু স্কুলে এক মুসলিম নারীকে হিজাব না খুললে স্কুল থেকে চলে যেতে বলা হয়েছিল৷ ২০১৬ সালে ক্যানাডায় এক নারী এক হিজাব পরিহিতার দিকে থুতু ছুড়ে তার হিজাব ও চুল ধরে টান দিয়েছিলেন৷
ছবি: imago images/tagesspiegel/K. Heinrich
মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা
পাঁচ অঞ্চলের মধ্যে একমাত্র এই অঞ্চলের দেশগুলোতে নারীরা হিজাব বা ধর্মীয় পোশাক পরার চেয়ে না পরায় বেশি হয়রানির শিকার হয়েছেন৷ ২০১৬ সালে কাতারে এক মুসলিম নারী হিজাব না পরে খবর উপস্থাপনা করায় সমালোচিত হয়েছিলেন৷ ২০১৮ সালে ইসরায়েলের একদল অর্থডক্স ইহুদিকে তাদের দৃষ্টিতে ‘অভদ্র’ পোশাক পরায় এক তরুণীর দিকে চিৎকার ও তাকে ধাওয়া করতে দেখা গিয়েছিল৷
ছবি: Karim Sahib/AFP
যেভাবে তথ্য সংগ্রহ করেছে পিউ রিসার্চ
ধর্মীয় বিশ্বাস ও রীতিনীতির উপর সরকার ও সমাজের বিধিনিষেধ নিয়ে প্রতিবছর রিপোর্ট করে পিউ রিসার্চ৷ এ লক্ষ্যে প্রথমে কয়েকটি প্রশ্ন ঠিক করা হয়৷ তারপর মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জাতিসংঘ ও বিভিন্ন সংস্থার প্রকাশিত ১৯টি রিপোর্টে থাকা প্রতিটি দেশের তথ্যের মধ্যে ঐ প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজা হয়৷ এভাবে ‘সরকারি বিধিনিষেধ সূচক’ ও ‘সামাজিক হয়রানি সূচক’ প্রকাশ করা হয়৷ ছবিঘরের তথ্যগুলো ২০২০ সালে প্রকাশিত হয়েছে৷
ছবি: Alain Pitton/NurPhoto/picture alliance
8 ছবি1 | 8
উপ-প্রধানমন্ত্রী এবা বুশ হত্যাকাণ্ডের নিন্দা করেছেন৷ এক্স-এ এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘‘এটা আমাদের মুক্ত গণতন্ত্রের জন্য হুমকি৷ সমাজের পূর্ণ শক্তি দিয়ে এর বিরুদ্ধে অবশ্যই লড়তে হবে৷''
মোমিকারবিরুদ্ধেকীমামলাহয়েছিল?
মোমিকা এবং তার ‘সহ-প্রতিবাদকারী' সালওয়ান নাজিমের বিরুদ্ধে গত ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে চারবার একটি জাতিগত গোষ্ঠীর মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টির অভিযোগ আনা হয়৷
সালওয়ান মোমিকা-সালওয়ান নাজিম জুটির কোরআন পোড়ানোর আয়োজনকে ঘিরে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সুইডেনের সম্পর্ক ক্ষুন্ন হয়৷
সুইডেন পুলিশ বাকস্বাধীনতা নিশ্চিতে এ ধরনের কর্মসূচি পালন করতে দিলেও তাদের বিরুদ্ধে মামলাও করে৷
কোরআন পোড়ানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে ২০২৩ সালের জুলাইয়ে দুইবার বাগদাদের সুইডেন দূতাবাসে হামলা চালায় প্রতিবাদকারীরা৷ দ্বিতীয়বার হামলার সময় সেখানে অগ্নিসংযোগও করা হয়েছিল৷
গত মার্চে নরওয়েতে আশ্রয় চেয়েছিলেন মোমিকা৷ কিন্তু কয়েক সপ্তাহ রাখার পর নরওয়ে আবার তাকে সুইডেনে ফেরত পাঠিয়ে দেয়৷
সুইডেনের অভিবাসন সংস্থা ২০২৩ সালে মোমিকাকে তার দেশে ফেরত পাঠাতে চেয়েছিল, কিন্তু পারেনি, কারণ, ইরাকে তার উপর নির্যাতন ও অমানবিক আচরণ হওয়ার ঝুঁকি ছিল৷