1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কোরবানিতে মধ্যবিত্ত বাড়তি চাপে না পড়ুক

১৭ জুলাই ২০২০

আর্থিক সঙ্গতি থাক বা না থাক, স্ট্যাটাসের দিকে মধ্যবিত্তের নজর সবচেয়ে বেশি৷ ‘পাছে লোকে কিছু বলে' চিন্তাটা নিম্ন ও উচ্চবিত্তের মধ্য যতটা না দেখা যায়, মধ্যবিত্ত এ মানসিক সংকটে সবচেয়ে বেশি ভোগে।

Bangladesh Coronavirus in Munshiganj
ছবি: Reuters/M. P. Hossein

ফলে অন্যান্য ধর্মীয় বা জাতীয় উৎসবের মতো কোরবানিতেও দেখা যায় মধ্যবিত্তকে ‘স্ট্যাটাস' সংক্রান্ত জটিলতায় ভুগতে৷ ধর্মমতে যদিও কোরবানি শো অফ নয়, বরং আত্মত্যাগের জন্য হওয়ার কথা, কিন্তু অনেককেই এখন রীতিমত সবচেয়ে ভালো ও বেশি দাম দিয়ে গরু কেনার প্রতিযোগিতায় মত্ত হতে দেখা যায়।

কিন্তু শ্রেণি হিসেবে মধ্যবিত্তের আরেকটি চরিত্রের উল্লেখ করে থাকেন বিশ্লেষকেরা৷ নিম্ন ও উচ্চবিত্ত যেমন নিজের আর্থিক অবস্থানকে ও সুবিধাকে বেশি প্রাধান্য দেয়, মধ্যবিত্ত এর পাশাপাশি মান-সম্মানকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন৷ ফলে আমরা করোনার সময়েওদেখে থাকি, নিম্নবিত্ত গার্মেন্টস শ্রমিকেরা বেতন-বোনাসের দাবিতে রাস্তায় আন্দোলনে নেমেছেন, উচ্চবিত্ত গার্মেন্টস মালিকেরা টিভি-পত্রিকায় বাণী দিয়ে বেড়াচ্ছেন, সরকারের কাছ থেকে প্রণোদনা নিচ্ছেন৷ কিন্তু মধ্যবিত্তের মতামত ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ৷

অনুপম দেব কানুনজ্ঞ, ডয়চে ভেলেছবি: DW/P. Böll

মধ্যবিত্ত আর্থিক অসঙ্গতি থাকলেও মানসম্মানের ভয়ে কারো কাছে সাহায্য চাইতেও যাবে না৷ আবার আর্থিক অসঙ্গতি যাতে অন্য কেউ বুঝতে না পারে, সেজন্য নিজের খরচ না কমিয়ে ঠাটবাটটাও ঠিকই বজায় রাখতে চাইবে৷ এমন ঘটনা আমাদের আশেপাশে বা খুব খেয়াল করলে নিজের মধ্যেও টের পাওয়া যাবে।

 

ফলে কোরবানি যখন কেউধর্মীয় দৃষ্টি থেকে না ‘নিজেকে জাহির করার মাধ্যম' হিসেবে নিবেন, এবার তাদের ব্যাপক সমস্যার সৃষ্টি হবে৷ সেটা কেমন? হাতে কলমে জানতে মধ্যবিত্তদের সবচেয়ে বড় বিচরণের স্থান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানতে চেয়েছিলাম মতামত৷ আশঙ্কা ছিল কেউ আসলেই নিজের অবস্থান জানাতে চাইবেন কিনা।

তবে বেশ কয়েকজন নিজের মত জানিয়েছেন৷ সামর্থ্য না থাকলে কোরবানি বাধ্যতামূলক নয়, কিন্তু তারপরও অনেকে লোকলজ্জা বা সামাজিক চাপে কোরবানি দিতে বাধ্য হতে পারে বলে মনে করেন অনেকেই।

আরশাদ জামিন লাবিব মনে করেন, বেসরকারি চাকরিজীবীদের বেতন কাটা যাওয়া বা অনেকের চাকরি চলে যাওয়ার ফলে অনেকে এবার কোরবানিই দিতে পারবেন না৷

তালুকদার তুহিন মনে করেন, যারা আগে একাই কোরবানি দিতেন তারা অনেকে এবার শরিকের সঙ্গে মিলে কোরবানি দিতে বাধ্য হবেন৷ তিনি অবশ্য সামাজিক চাপের কোনো ব্যাপার রয়েছে বলে মনে করেন না৷ কিন্তু অনেকের মধ্যে হতাশা তৈরি হতে পারে বলে মত তার।

মোহাম্মদ জোনায়েদ আহমেদ এবং আলিন তারেক মনে করেন এ ব্যাপারে ইসলামে সুস্পষ্ট বলা রয়েছে, সামর্থ্য না থাকলে কোরবানি বাধ্যতামূলক নয়৷ ফলে এ নিয়ে বিভ্রান্তির কোনো অবকাশ নেই।

তবে অনেকে আবার বলছেন, সামর্থ্য না থাকলে বাধ্যতামূলক না হলেও অনেকে লোকলজ্জার ভয়ে বাধ্য হবেন৷ তানজিম আহমেদ খান এবং আনোয়ার হোসেন ধার করে বা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে কোরবানি দেয়ার উদাহরণ তুলে ধরেছেন।

তবে কোরবানিকে কেন্দ্র করে যে মধ্যবিত্তের আর্থিক সমস্যা দেখা দেবে, এ বিষয়ে একমত সবাই৷

যেমন ইফতেখার আলম বলছেন, এবার তিনি কোরবানি নিয়ে কিছু ভাবছেনই না৷

এবার হাটে বেচাকেনা কম হওয়ার আশঙ্কা থাকায় এর প্রভাব যে অন্যদিকেও পড়তে পারে, সে ইঙ্গিতও দিয়েছেন অনেকে৷ কোরবানি কমে যাওয়ায় চামড়ার দাম বাড়ার আশঙ্কা তালুকদার তুহিনের৷ অন্যদিকে আয়াজ রহমান অনলাইনে কেনাবেচার ফলে অন্য এক অংশের লাভবান হওয়ার কথাও তুলে ধরেছেন মন্তব্যে।

মাহফুজুল ইসলাম তারেক আহ্বান জানিয়েছেন, অন্তত এবার যাতে, ‘কী কোরবানি দিয়েছেন' জাতীয় প্রশ্ন করে কেউ কাউকে বিব্রত না করেন৷

করোনা আগামী কয়েক মাসের মধ্যে চলে যাচ্ছে না, এমনটা প্রায় নিশ্চিত হয়েই বলা যায়৷ ফলে আরো একটি  ঈদের আনন্দ অনেকটাই ঘরে বসেই উপভোগ করতে হবে৷

তবে এ অবস্থা একদিন কেটে যাবে, ভাইরাস মানুষের কাছে পরাজিত হবেই৷ তখন নিশ্চয়ই আমরা সব উৎসব আগের চেয়েও বেশি আনন্দে পালন করব। ফলে এবার অন্তত মধ্যবিত্তের ওপর সেই বাড়তি চাপটা তৈরি না হোক৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ