কোরবানির ঈদে ৪০ হাজার টন বর্জ্য
১২ আগস্ট ২০১৯এবার ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন মহাখালী পশু জবাইখানায় পশু কোরবানি করলে বিশেষ সুবিধা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল৷ তারা বলেছিল, ওই জবাইখানায় পশু কোরবানি করলে মাংস প্রস্তুতের শতকরা ২৫ ভাগ খরচ দেবে সিটি কর্পোরেশন৷ আর বাসায় মাংস পরিবহনেও সহায়তা করা হবে৷ ওই জবাইখানার জন্য সব প্রস্তুতিই রাখা হয়েছিল৷ ছিল প্রশিক্ষিত কসাই৷ উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলামের ঈদের দিন দুপুরে জবাইখানা পরিদর্শনেও যাওয়ার কথা ছিল৷ কিন্তু তাঁর সেই কর্মসূচি বাতিল করা হয়৷ উত্তর সিটির জনসংযোগ কর্মকর্তা এ এস এম মামুন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘দুপুর পর্যন্ত মাত্র একটি গরু ও একটি খাসি কোরাবানির জন্য আনা হয়৷ আমাদের ব্যাপক প্রচারের পরও সাড়া মেলেনি৷'' তবে তিনি বলেন,‘‘ আমরা আশাহত নই৷ দুইজন হলেও তো এসেছেন৷ হয়তো পরের বছর আরো বেশি মানুষ কোরবানি দিতে জবা্ইখানায় আসবে৷''
দুই সিটি কর্পোরেশনের সাথে কথা বলে জানা গেছে কোরবানির ঈদে ঢাকায় প্রায় ৪০ হাজার টন বর্জ্য তৈরি হয়৷ এর মধ্যে আছে গরুর হাটের বর্জ্য এবং পশু কোরবানির বর্জ্য৷ তারা এবার ২৪ ঘন্টার মধ্যে বর্জ্য অপসারণের ঘোষণা দিয়েছেন৷ দক্ষিণ সিটির প্রধান বর্জ্য-ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমোডর জাহিদ হোসেন জানান, ‘‘ঈদের দিনও কোথাও কোথাও গরুর হাট বসেছে৷ আবার কেউ কেউ আগামীকাল (মঙ্গলবার) কোরবানি দেবেন৷ তাই পুরোপুরি বর্জ্য অপসারণ মঙ্গলবার সন্ধ্যা নাগাদ সম্ভব হবে৷'' উত্তর ও দক্ষিণ সিটি এজন্য তাদের ডাস্পিং স্টেশনও প্রস্তুত রেখেছে৷
দুই সিটি কর্পোরেশন এবার ঢাকায় মোট ৮৭৫টি জায়গায় পশু কোরবানির ব্যবস্থা করে৷ এর বাইরে আরো ৪০০ জায়গা নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়৷ ২০১৫ সাল থেকে সিটি কর্পোরেশন নগরবাসীকে নির্ধারিত জায়গায় পশু কোরবানিতে অভ্যস্ত করার চেষ্টা করছে৷ এবার ঈদের আগেই মাইকিং করা হয়েছে৷ লিফলেটও বিতরণ করা হয়েছে যাতে নগরবাসী নির্ধারিত স্থানে পশু কোরবানি করেন৷ কিন্তু তেমন সাড়া মেলেনি৷
দক্ষিণের প্রধান বর্জ্য-ব্যবস্থাপক বলেন, ‘‘আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি, তবে তেমন সাড়া পাচ্ছি না৷ মানুষ ঐতিহ্যগত কারণে তার বাসা-বাড়ির সামনেই কোরবানি দিতে চায়৷ আর সচেতনতা যে বাড়ছে তা-ও বলা যাবে না৷ কারণ, বর্জ্য বস্তায় ভরে যার যার এলাকায় নির্ধারিত স্থানে রাখার জন্যও আমরা অনুরোধ করেছি৷ এজন্য আমরা এক লাখ ৭৫ হাজার বস্তা বিতরণ করেছি বিনামূল্যে৷ কিন্তু তারপরও ছড়িয়ে ছিটিয়ে বর্জ্য ফেলা হয়েছে৷'' উত্তর সিটি অবশ্য ৫ লাখ ৮০ হাজার বর্জ্য ব্যাগ বিতরণের দাবি করেছে৷
নির্ধারিত স্থানে পশু কোরবানি করতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে পারেন জনপ্রতিনিধিরা৷ মিরপুর এলাকায় মোবাশ্বির হোসেন নামে একজন ওয়ার্ড কমিশনার এবার নির্ধারিত স্থানে কোরবানি করতে এলাকাবাসীকে উদ্বুদ্ধ করেছেন৷ ফলে ওই এলাকায় অনেকেই এবার নির্ধারিত জায়গায় কোরবানি করেছেন বলে জানান উত্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা এ এস এম মামুন৷ তিনি বলেন, ‘‘কোরবানি একটি ধর্মীয় বিষয়৷ তাই আমরা কাউকে নির্ধারিত স্থানে কোরবানির জন্য বাধ্য করতে পারি না৷''
দুই সিটি কর্পোরেশন মিলিয়ে প্রায় নয় লাখের মতো পশু কোরবানি হয়৷ এরমধ্যে দক্ষিণে পাঁচ লাখ আর উত্তরে সাড়ে তিন লাখের কিছু বেশি৷ এই পশুগুলো কোরবানি করা হয় বাসার সামনে খোলা জায়গায় অথবা রাস্তায়৷ মূল সড়কেও পশু কোরবানি করা হয়৷ কোরবানির বর্জ্য ড্রেনে প্রবেশ করলে বড় সমস্যা তৈরি হয়৷ রক্ত এবং বর্জ্য থেকে গেলে দুর্গন্ধ ছড়ায় এবং পরিবেশ দূষিত হয়৷
তাই বর্জ্য অপসারণে দুই সিটিতে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে প্রায় ২০ হজার কর্মী কাজ করছেন৷ তাঁরা কাজ করছেন পালাক্রমে৷ তাঁরা গাড়ি, ট্রাক ও ভ্যান ব্যবহার করছেন৷ ছিটাচ্ছেন জীবাণুনাশক৷ ঈদের আগেই নগরবাসীর মধ্যে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মাধ্যমে ব্লিচিং পাউডার, ফিনাইল ও জীবাণুনাশক বিতরণের কথা জানিয়েছে সিটি কর্পোরেশন৷