1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কোরবানির হাট: করোনা ছড়ানোর নতুন উদ্বেগ

২৮ জুন ২০২০

এবার করোনার মধ্যেও ঢাকাসহ সারাদেশে কোরবানির পশুর হাট বসবে৷ তবে স্বাস্থ্যবিধি যাতে মানা হয় সেদিকে কঠোর নজরদারি করা হবে বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা৷

Bangladesh Dhaka | Cattle Market
২০১৯ সালের ছবি৷ছবি: S. Hossain

কিন্তু জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে  মাঠে কোরবানির পশুর হাট বসিয়ে সামাজিক দূরত্ব এবং স্বাস্থ্যবিধি মানানো অসম্ভব৷ গত রোজার ঈদেও দোকানপাট খোলার সময় একই কথা বলা হয়েছে৷ ব্যক্তিগত পরিবহণের নামে মানুষকে ঢাকা ছাড়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে৷ এর কারণে ঈদের পরে করোনার প্রাদুর্ভাবও বাড়তে শুরু করে৷ এবার খোলা মাঠে গরুর হাট বসানো হলে আরো বড় সর্বনাশ হতে পারে বলে মনে করেন তারা৷

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, গ্রামীণ অর্থনীতির সাথে কোরাবানির পশুর হাটের একটা যোগ আছে৷ বাংলাদেশের চামড়া শিল্পও অনেকটা নির্ভরশীল কোরাবানির ওপরে৷ তাই দুই দিক রক্ষা করতে এবার কোরাবনির পশুর হাটের জন্য অনলাইন হাট এবং ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দেয়া উচিত৷

যেভাবে বসবে পশুর হাট

এবার ঢাকার দুই সিটি মিলিয়ে পশুর হাট বসবে মোট ২৪টি৷ এরমধ্যে উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ১০টি এবং দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় হবে ১৪টি৷ সারা দেশের জেলা উপজেলায়ও পশুর অস্থায়ী হাট বসানোর অনুমতি দেয়া হয়েছে৷ বাস্তবে অনুমোদনের বাইরেও কোরবানিতে আরো অনেক হাট বসে৷ সব মিলিয়ে এই হাটের সংখ্যা সারাদেশে পাঁচ হাজারের কম হবে না৷

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন জানান, ‘‘কোরাবানির পশুর হাটের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগ একটি গাইডলাইন তৈরি করছে৷ চূড়ান্ত হলে সেটা অনুসরণ করেই পশুর হাট বসবে৷ আমাদের নিজস্ব টিম এবং মোবাইল কোর্ট থাকবে যাতে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মানা হয়৷’’

ডা. লেলিন চৌধুরী

This browser does not support the audio element.

অন্যদিকে শুধু পশুর হাট নয়, প্রচলিত পদ্ধতিতে পশু কোরবানিও স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াবে৷ কিন্তু ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের এখনও এ বিষয়ে কোনো পরিকল্পনা নেই৷ ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক বলেন, ‘‘আমরাতো কোরবানির জন্য আলাদা জায়গা করে দেই৷ এর বাইরে কোরবানি করাতো নিষেধ৷ তাই নতুন করে আর কোনো ব্যবস্থার প্রয়োজন নেই৷’’

জানা গেছে, সারাদেশেই কোরবানির হাটের জন্য একটি স্বাস্থ্যবিধি তৈরি করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কাজ করছে৷ তারা বলছেন, পশুর হাটের এখনও অনেক বাকি৷ তার আগেই চূড়ান্ত হবে স্বাস্থ্যবিধি৷ সাধারণত কোরবানির চার-পাঁচদিন আগে পশুর হাট বসে৷ কিন্তু সারাদেশ থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন হাটে পশু নেয়া শুরু হয় তারও এক সপ্তাহ আগে৷ চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৩১ জুলাই বা ১ আগষ্ট বাংলাদেশে ঈদুল আজহা উদযাপিত হতে পারে৷

পশুর হাটে সর্বনাশের ষোলকলা?

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও প্রিভেনটিভ মেডিসিনের চিকিৎসক ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘‘ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক কারণে কোরবানি ও কোরাবানির পশু বিক্রি বাদ দেয়া যাবে না৷ কিন্তু হাট বসিয়ে পশু বিক্রির ব্যবস্থা করে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সোনার পাথর বাটি৷ এটা যদি করা হয় তাহলে আমি এই করোনায় পশুর হাটেই সর্বনাশের ষোলকলা পূর্ণ হবে বলে মনে করছি৷’’

অন্যদিকে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, পরিকল্পনা করে করোনায় অর্থনীতি সচল রাখা যেতে পারে৷ কিন্তু এভাবে হাট বাজার খুলে দিলে শেষ পর্যন্ত অর্থনীতিও বাঁচবে না, মানুষও বাঁচবে না৷ তাই বিকল্প ব্যবস্থার কথা বলেন ড. নাজনীন আহমেদ৷ এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘‘এখনও সময় আছে, তাই পরিকল্পনা করে কোরবানির পশুর অনলাইন বাজার শক্তিশালি করতে হবে৷ কৃষক এবং ব্যাপারীদের কাছ থেকে গরু সংগ্রহের চেইন গড়ে তুলতে হবে৷ যেভাবে এবার শাক-সবজি, খাদ্য শস্য সংগ্রহ করা হয়েছে৷’’ যতদূর সম্ভব কসাইখানার ব্যবস্থা করতে হবে৷ গ্রামেও পশু কোরবানির জন্য নিয়ম করে দিতে হবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভলপমেন্ট স্টাডিজ এর এই গবেষক৷

ড. নাজনীন আহমেদ

This browser does not support the audio element.

হাটে কেন এত আগ্রহ?

কোরবানির হাটকে ঘিরে চলে বড় ধরনের বাণিজ্য৷ এরসাথে বিপুল মধ্যস্বত্বভোগী জড়িত৷ হাটের ইজারা, হাসিল, গরুর ট্রাক বা ট্রলার থেকে চাঁদা আদায়ে প্রভাবশালীরা জড়িত থাকেন৷ হাট না বসলে বা কম বসলে তাদের আয়ে টান পড়বে৷ তাই হাট বসানোতে আগ্রহ অনেকের৷

বাংলাদেশে গত কয়েক বছর ধরেই অনলাইনে কোরবানির পশুর হাট চালু হয়েছে৷ এছাড়া মাংস বাজারজাত করার আধুনিক প্রতিষ্ঠান এবং খামার গড়ে উঠছে৷ এবার তা আরো সম্প্রসারিত বা জোরদার করা নিয়ে মন্ত্রণালয় ও সিটি কর্পোরেশনের কোনো আগ্রহ নেই৷ সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার বার্ষিক একটি বড় আয়ও আসে কোরবানির গরুর হাট ইজারা দিয়ে৷ স্থানীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরাও এই হাট থেকে বেশ আয় করেন৷ ঢাকার দুই সিটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অনলাইন গুরুর হাট নিয়ে তারা চিন্তা করেননি৷

প্রস্তুতি নিচ্ছে ই-কমার্স সাইটগুলো

ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) এরইমধ্যে কোরবানির অনলাইন পশুর হাট নিয়ে কাজ শুরু করেছে৷ একশরও বেশি অনালইন হাট আছে৷ তবে যাতে প্রতারণা না হয় সেদিকেও তারা জোর দিচ্ছেন৷ সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, ‘‘এবার আমরা অনলাইন হাট ছাড়াও চেষ্টা করছি কোরাবানির পশু জবাই যেন যত্রতত্র না হয় তার ব্যবস্থা করতে৷ হাট বসলে সেখানেই কসাইখানা৷ আর অনলাইনে পশু বিক্রি করলেও তাদের মাধ্যমেই কোরবানির ব্যবস্থা করা৷’’

আগ্রহ কম

বাংলাদেশে প্রতিবছর এক কোটিরও বেশি পশু কোরবানি হয়৷ গত বছর এক কোটি ১০ লাখ পশু কোরবানি হয়েছে৷ তবে এবার কম হতে পারে৷ গরুর ব্যাপারীরা সংশয়ে আছেন৷ ফরিদপুরের দুদু মিয়া প্রতিবছরই গরু নিয়ে ঢাকার শনির আখড়া বাজারে আসেন৷ এবার তিনি এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি৷ তিনি বলেন,‘‘এই করোনার মধ্যে গরু নিয়ে যাব৷ শেষ পর্যন্ত যদি বিক্রি করতে না পারি! এবার যা অবস্থা মানুষের মধ্যে কোরবানি নিয়ে আগ্রহ কম দেখছি৷’’ অন্য ব্যাপারীরা আরো এক সপ্তাহ পর সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান তিনি৷

হারুন উর রশীদ স্বপন(ঢাকা)

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ