কোরালের বিকল্প হতে পারে ‘ফোরামিনিফেরা’
১৪ জুন ২০১৪বিষয়টি নিয়ে বিজ্ঞানীদের উদ্বেগ দিন দিন বাড়ছে৷ তবে ‘ফোরামিনিফেরা' নামের ছোট্ট একটি অর্গানিজম বোধ হয় এ ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে৷ গরম পানিতে থাকা এই অর্গানিজম থেকে বছরে বর্গমিটার প্রতি সর্বোচ্চ দুই কেজি ক্যালসিয়াম কার্বনেট নিঃসৃত হয়৷ পরিমাণটা প্রবালের অর্ধেক হলেও এর শেলগুলো ওশান অ্যাসিডিফিকেশনের বিরুদ্ধে বেশি লড়তে পারে৷
বন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাইনমান ইনস্টিটিউটের মার্টিন লাঙার ২৫ বছর ধরে ফোরামিনিফেরা নিয়ে গবেষণা করছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘প্রবালের উপর উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং ওশান অ্যাসিডিফিকেশনের প্রভাব নিয়ে এখন অনেক আলোচনা হচ্ছে৷ ভবিষ্যতে যদি প্রবাল হারিয়ে যায়, তাহলে ফোরামিনিফেরা তার জায়গা নিতে পারে৷ কারণ ওটাই এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত কোরালের সম্ভাব্য বিকল্প জীবাশ্ম৷''
প্রায় একশো কোটি বছর ধরে রয়েছে এই এককোষ বিশিষ্ট ফোরামিনিফেরা৷ সাধারণের কাছে অর্গানিজমটি দেখতে অনেকটা বালুর কণার মতো৷ সাগরপৃষ্ঠে বসবাসকারী ফোরামিনিফেরার আকার একেবারে অদৃশ্যমান থেকে ২০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে৷ লাঙার-এর বিশ্বাস, একটি দ্বীপকে ক্ষয়ের হাত থেকে বাঁচাতে পারে এই অর্গানিজম৷
ফোরামিনিফেরা-রা একটা দ্বীপের চারপাশ জুড়ে থাকে এবং আশেপাশের পরিবেশের জন্য পর্যাপ্ত কার্বনেট সরবরাহ করার মতো সংখ্যায়, তারা জন্মে৷
তেল-গ্যাসের নতুন ক্ষেত্র অনুসন্ধান কাজেও সহায়তা করে ফোরামিনিফেরা৷ কারণ বিশেষজ্ঞরা এটা পরীক্ষা করে পলি স্তরের বয়স সম্পর্কে ধারণা পান৷ ফলে ভুল জায়গায় অনুসন্ধান কাজ চালানো থেকে তাঁরা বিরত থাকতে পারেন৷ তবে এ সব অনুসন্ধান কাজ শুরুর আগে থেকেই মানুষের উপকার করে আসছে ফোরামিনিফেরা৷
অবশ্য ফোরামিনিফেরার একটা খারাপ দিকও আছে৷ ফোরামিনিফেরা যখন নতুন জায়গায় যায়, তখন তারা সেখানকার প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য প্রায় ১০ থেকে ৩০ শতাংশ কমিয়ে দেয়৷ লাঙার বলেন, ‘‘একদিক দিয়ে অবশ্য এটা ভালো, কারণ ফোরামিনিফেরা যেখানে যায় সেখানে কার্বনেট উৎপাদন বেড়ে যায়৷ তবে বৈচিত্র্যের কথা ভাবলে, যেহেতু দখলদার অর্গানিজম হিসেবে এটা বৈচিত্র্য কমিয়ে দেয়, এটাকে স্বল্পমেয়াদী সমস্যা মনে করা যেতে পারে৷''
তবে জলবায়ু পরিবর্তন ও সাগরের পানির তাপমাত্রা বাড়ার কারণে ফোরামিনিফেরা আরও জায়গা পরিবর্তন করবে৷ চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, এই ছোট্ট অর্গানিজমের সর্বোচ্চ ব্যবহার করা, যেটা কয়েকটি দেশ ইতিমধ্যে শুরু করে দিয়েছে৷