আর শীতল যুদ্ধ নয়, সরাসরি দক্ষিণে আঘাত হানার হুমকি দিল উত্তর কোরিয়া৷ মার্কিন সহায়তায় ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার ঘোষণার পরেই এলো এই প্রতিক্রিয়া৷ দুই কোরিয়ার মধ্যে বেড়ে চলা উত্তেজনা নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে৷
বিজ্ঞাপন
North Korea test fires two mid-range missiles
00:43
সামরিক ক্ষমতা বাড়াতে উত্তর কোরিয়া একের পর এক পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে৷ কিছু প্রচেষ্টা বিফল হলেও সার্বিকভাবে সে দেশকে হুমকি হিসেবেই বিবেচনা করে দক্ষিণ কোরিয়া ও তার জোটসঙ্গী অ্যামেরিকা৷ তাই উত্তর কোরিয়ার হামলার আশঙ্কায় এক উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার ঘোষণা করেছে দক্ষিণ কোরিয়া৷ তবে এই ব্যবস্থা ঠিক কোন এলাকায় গড়ে তোলা হবে, সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি৷
‘টার্মিনাল হাই অল্টিটিউড এরিয়া ডিফেন্স' নামের এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা মোতায়েন করা হলে কোরীয় উপদ্বীপে সামরিক ক্ষমতার ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাবে বলে পিয়ং ইয়ং সরকার আশঙ্কা করছে৷ তাই যে কোনো মূল্যে এই উদ্যোগ থামানোর হুমকি দিচ্ছে উত্তর কোরিয়া৷ আর শীতল যুদ্ধ নয়, প্রয়োজনে সরাসরি দক্ষিণে আঘাত আনা হবে – এমনই কড়া সুর শোনা যাচ্ছে উত্তর প্রান্ত থেকে৷ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজ শুরু হলেই ‘আরও ক্ষমাহীন, শক্তিশালী ধারাবাহিক পালটা পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে হুমকি দিয়েছে উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনী৷
চলতি বছর উত্তর কোরিয়ার সামরিক তৎপরতা বেশ বেড়ে গেছে৷ এরই মধ্যে চারবার পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা করেছে সে দেশ৷ দূর ও মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির ক্ষেত্রেও অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ উল্লেখ্য, শনিবারই সম্ভবত সাবমেরিন থেকে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের পরীক্ষা চালিয়েছে উত্তর কোরিয়া৷ মাঝারি পাল্লার এই নতুন ‘মুসুদান' ক্ষেপণাস্ত্র গুয়াম দ্বীপে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি পর্যন্ত পৌঁছতে পারে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ তবে এ দিনের পরীক্ষা বিফল হয়েছে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন৷
এমন বেড়ে চলা উত্তেজনার ফলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে চীন৷ দক্ষিণ কোরিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার ঘোষণার প্রতিবাদ জানিয়েছে বেইজিং৷ এই পদক্ষেপের পেছনে কোনো গভীর ষড়যন্ত্র থাকতে পারে বলে চিনের আশঙ্কা৷ দক্ষিণ কোরিয়া অবশ্য সব আঞ্চলিক দেশকে আশ্বস্ত করে বলেছে, হামলা নয় – শুধুমাত্র আত্মরক্ষার তাগিদেই এই উদ্যোগ নিতে হচ্ছে৷
বিশ্বের কয়েকটি বিপজ্জনক সীমান্ত
দুই দেশের মধ্যে সীমানা নিয়ে যুদ্ধ কিংবা উন্নত জীবনের আশায় এক দেশের নাগরিকের প্রতিবেশী দেশে যাওয়া – ইত্যাদি কারণে বিশ্বের কয়েকটি সীমান্ত বিপজ্জনক বলে পরিচিত৷ ছবিঘরে থাকছে সেগুলোর কথা৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত
এই সীমান্তের ৪০টি ‘স্পর্শকাতর’ অংশে ‘লেজার’-এর বেড়া দেয়া হবে বলে জানিয়েছে ভারত৷ পাকিস্তান থেকে ভারতে অবৈধ প্রবেশ ঠেকাতে এই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে৷ এর ফলে বেড়ার সংস্পর্শে কিছু আসলে উচ্চস্বরে সাইরেন বেজে উঠবে৷ ২০১১ সালের জুনে ‘ফরেন পলিসি’ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৮০০ মাইল দীর্ঘ এই সীমান্তে নিহত হয়েছে এক লক্ষ ১৫ হাজারের বেশি মানুষ৷ প্রতিবেদনটি পড়তে উপরে ‘+’ চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: Arif Ali/AFP/Getty Images
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৫ সালে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফ এর হাতে ৪৬ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছে৷ আহত হয়েছে ৭৩ জন৷ এছাড়া অপহরণ করা হয়েছে ৫৯ জনকে৷ কয়েক সপ্তাহ আগে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং অবৈধ অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত শিগগিরই বেড়া দেয়ার কাজ শেষ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে বলে জানান৷
ছবি: Str/AFP/Getty Images
যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্ত
উন্নত জীবনের আশায় মেক্সিকো থেকে প্রতিবছর অনেক মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করেন৷ আর তা করতে গিয়ে প্রাণ যায় অনেকের৷ আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম-এর ২০১৪ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদন বলছে, গত ১৪ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলের সীমান্ত পাড়ি দিতে গিয়ে ৬,০০০ এর বেশি লোক নিহত হয়েছে৷ প্রতিবেদনটি পড়তে উপরে ‘+’ চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: Gordon Hyde
ভূমধ্যসাগর
যুদ্ধ আর সংঘাত এড়াতে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে ইউরোপে শরণার্থী প্রবেশ করছে৷ এদের একটি বড় অংশ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগরপথে ইউরোপে ঢোকার চেষ্টা করে৷ এতে প্রাণ যায় অনেকের৷ জার্মান ম্যাগাজিন ‘ডেয়ার স্পিগেল’ গত অক্টোবরে এক প্রতিবেদনে ভূমধ্যসাগরকে বিশ্বের সবচেয়ে প্রাণঘাতী সীমান্ত বলে আখ্যা দেয়৷ ২০১৫ সালে ভূমধ্যসাগরে নিহতের সংখ্যা ছিল ৩,৭৭০৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. Palacios
আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্ত
প্রায় দেড় হাজার মাইল দীর্ঘ ‘ডুরান্ড লাইন’ নামে পরিচিত সীমান্ত এখনও মেনে নেয়নি আফগানিস্তান৷ পাকিস্তানের খাইবার-পাখতুনখা রাজ্যের পশতুন অধ্যুষিত এলাকা নিজেদের বলে দাবি করে আফগানিস্তান৷ এই সীমান্তকে ঘিরে দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে গুলি বিনিময়ের ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকে৷
ছবি: Reuters
উত্তর কোরিয়া-দক্ষিণ কোরিয়া
বিশ্বের সবচেয়ে সামরিক সজ্জায় সজ্জিত সীমান্ত বলা হয় একে৷ ১৯৫৩ সালে কোরিয়া যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর প্রায় দেড়শো মাইল দীর্ঘ এই সীমান্তের দুই পাশ থেকে সৈন্যদের সরিয়ে দেয়া হয়৷ তখন থেকেই দুই দেশের সৈন্যরা প্রায় আড়াই মাইল প্রশস্ত এই সীমান্তের দুই পাশে অবস্থান করছে৷