কোলনে মুসলিমদের উপর আক্রমণ ন্যক্কারজনক কিন্তু দেখিয়েছে, জার্মানরা কিভাবে এমন একটি সংস্কৃতি থেকে আরো বেশি বিপন্ন বোধ করছেন, যা তাদের জীবনধারা বা আদর্শের সঙ্গে মেলে না – বলেছেন ডয়চে ভেলের শামিল শামস৷
বিজ্ঞাপন
জার্মান সরকার যে উদ্বাস্তুদের পটভূমি সম্পর্কে বিশদ খোঁজখবর ছাড়াই তাদের অবাধে জার্মানিতে ঢুকতে দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, জার্মানিতে কর্মরত পাকিস্তানি সাংবাদিক হিসেবে আমি সে বিষয়ে সন্দিহান৷
সিরিয়ার মতো যুদ্ধপীড়িত দেশ থেকে যাঁরা পালাচ্ছেন, যাঁরা একদিকে তথাকথিত ‘ইসলামিক স্টেট', অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের হাত থেকে মুক্তি পেতে আকুল, তাঁদের জন্য আমি গভীর সমবেদনা বোধ করি বৈকি৷ কিন্তু একইসঙ্গে এ ব্যাপারেও আমি নিশ্চিত যে, অভিবাসীদের বিপুল সংখ্যায় আগমন কালে জার্মান সমাজের সামঞ্জস্য ও ভারসাম্যকে ব্যাহত করবে৷ ইসলামি সংস্কৃতি আর ইউরোপীয় নিয়মকানুন বা আদর্শ পরস্পরের সঙ্গে খাপ খায় না, বলেই আমার ধারণা৷
উদ্বাস্তু সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে অধিকাংশ জার্মান আদর্শ মানবতাবোধ প্রদর্শন করেছেন৷ আমি আমার ইউরোপীয় বন্ধুদের চ্যান্সেলর ম্যার্কেলের অভিবাসী-বান্ধব নীতি সম্পর্কে সাবধান করে দিতে গেলে, তারা রাগ করেছেন৷ মধ্যপ্রাচ্য অথবা দক্ষিণ এশিয়া থেকে আসা উদ্বাস্তুরা যে জার্মান জীবনযাত্রা ও মূল্যবোধের সঙ্গে মানিয়ে চলবে, বহু জার্মানের এই ধারণাকে আমার একটু সরল মনে হয়েছে৷
আমি আমার বন্ধুদের বলেছি যে, মুসলিম দুনিয়া সম্পর্কে তাদের জ্ঞান সীমিত ও ভ্রান্ত৷ স্বাভাবিকভাবেই তাঁরা সে কথায় কর্ণপাত করেননি৷
জার্মানিতে এত শরণার্থী চায় না তারা
শরণার্থীরা তাদের গন্তব্য হিসেবে জার্মানিকে বেছে নিচ্ছে৷ জার্মানিও তাদের প্রতি সহানুভূতি দেখাচ্ছে৷ কিন্তু জার্মানিতে এত শরণার্থী চান না অনেকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘বিশ্বাসঘাতক’ ম্যার্কেল
জার্মানির ইসলাম ও অভিবাসী বিরোধী গোষ্ঠী পেগিডার হাজার হাজার সমর্থক সোমবার জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের শরণার্থী নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে৷ শরণার্থীদের প্রতি নরম মনোভাবের কারণ তারা ম্যার্কেলের বিরুদ্ধে ‘উচ্চ পর্যায়ের বিশ্বাসঘাতকতা’ ও ‘জার্মানির মানুষের বিরুদ্ধে অপরাধ’-এর অভিযোগ আনেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Settnik
শরণার্থীদের নিয়ে কটূক্তি
পেগিডার (প্যাট্রিয়টিক ইউরোপিয়ান অ্যাগেনস্ট দ্য ইসলামাইজেশন অফ দ্য অক্সিডেন্ট) প্রতিষ্ঠাতা লুটৎস বাখমান সম্প্রতি শরণার্থীদের ‘পশু’, ‘আবর্জনা’ ও ‘উচ্ছৃঙ্খল জনতা’ বলে আখ্যায়িত করেন৷ এ জন্য তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেছে সরকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O.Berg
সমাজে অন্তর্ভুক্তি সম্ভব নয়
সোমবার বিক্ষোভের সময় বাখমান বলেন, শরণার্থীর সংখ্যা দেড় কিংবা দুই মিলিয়নেই থেমে থাকবে না৷ এরপর আসবে তাদের স্ত্রী; আসবে এক, দুই কিংবা তিন সন্তান৷ ফলে এতগুলো লোকের জার্মান সমাজে অন্তর্ভুক্তির কাজ অসম্ভব হয়ে পড়বে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Settnik
জার্মান সরকারের অস্বীকার
জার্মানির জনপ্রিয় পত্রিকা ‘বিল্ড’ সরকারের গোপন ডকুমেন্টের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, চলতি বছর জার্মানিতে প্রায় দেড় মিলিয়ন শরণার্থী আসবে বলে মনে করছে সরকার৷ যদিও প্রকাশ্যে সরকার বলছে সংখ্যাটা এক মিলিয়ন হতে পারে৷ তবে জার্মান সরকারের এক মুখপাত্র এ ধরনের কোনো গোপন ডকুমেন্টের কথা তিনি জানেন না বলে সাংবাদিকদের বলেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Thalia Engel
শরণার্থীর মৃত্যু
জার্মানির পূর্বাঞ্চলের এক শরণার্থীদের বাসস্থানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ইরিত্রিয়া থেকে আসা ২৯ বছরের এক শরণার্থীর মৃত্যু হয়েছে৷ অগ্নিকাণ্ডের কারণ এখনও জানা যায়নি৷ এদিকে, জার্মান সরকারের হিসেবে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছর শরণার্থী ও তাদের বাসস্থানের উপর হামলার সংখ্যা বেড়েছে৷ এ বছরের প্রথম ছয় মাসেই এরকম ২০২টি ঘটনা ঘটেছে বলে সরকার জানিয়েছে, যেখানে গত বছর সংখ্যাটি ছিল ১৯৮৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিপদে ম্যার্কেল
শরণার্থীদের সঙ্গে এমন আচরণের কারণে নিজ দল সহ অন্যান্য দলের রাজনীতিবিদদের তোপের মুখে পড়েছেন ম্যার্কেল৷ তাঁরা জার্মানির শরণার্থী নীতি ও শরণার্থীদের আগমনের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে চ্যান্সেলরকে আরও কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন৷
ছবি: Reuters/F. Bensch
6 ছবি1 | 6
কোলনে থার্টি ফার্স্ট নাইটে যখন মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা থেকে আগত শত শত তরুণ জার্মান মহিলাদের উপর যৌন হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে, তখন আমার সব শঙ্কা সত্য প্রমাণিত হয়৷ ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষদের জন্য মুক্ত দুয়ার নীতি খুব বুদ্ধিমানের কাজ হয়েছে কিনা, তা নিয়ে জার্মানরা অবশেষে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছেন৷ ওদিকে আমি লজ্জায় মরছি৷
আমার পটভূমি মুসলিম; আমি বহু বছর ধরে জার্মানিতে বাস করছি, কিন্তু সর্বদাই ভদ্র-নম্র ব্যবহার পেয়েছি৷ আমি চিরকালই পাকিস্তানের চেয়ে জার্মানিতেই বেশি নিরাপদ বোধ করেছি৷ আমার বহু জার্মান বন্ধু আছেন এবং আমি কোনোদিনই বিচ্ছিন্ন বোধ করিনি৷ কিন্তু থার্টি ফার্স্ট নাইটে মহিলাদের উপর আক্রমণ থেকে আমার এই অনুভূতি হয় যে, আমি নিজেও কোনো না কোনোভাবে ঐ ঘটনার জন্য দায়ী৷ কোলনে যা ঘটেছে, তা তো আমার স্বদেশ পাকিস্তানে নিয়মিত ঘটে থাকে৷ সেজন্য পুরুষরা কিছুমাত্র লজ্জা পায় না, অপরাধবোধ করে না বা অনুশোচনা প্রকাশ করে না৷ কোলনে যারা মহিলাদের উত্যক্ত করেছে, তাদেরও মাথা খারাপ ছিল না; তারা জানতো, তারা কী করছে – এবং তারা সেটা করেছে ইউরোপের সংস্কৃতি, নিয়মকানুন ও এই মহাদেশের মানুষদের প্রতি গভীর অশ্রদ্ধা থেকে; সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত৷
প্রতিশোধ নয়
এখন আমরা চরম-দক্ষিণপন্থি জার্মান গোষ্ঠীগুলির তরফ থেকে তার জবাব পাচ্ছি৷ গত রবিবার সন্ধ্যায় কোলন সেন্ট্রাল স্টেশনের কাছে জনা বিশেকের এক জনতা ছ'জন পাকিস্তানি ও একজন সিরীয়কে আক্রমণ করে – জার্মান মিডিয়ায় আক্রমণকারীদের ‘‘বাইকার, হুলিগান, বাউন্সার'' ইত্যাদি বলে অভিহিত করা হয়েছে৷ অথচ ঘটনাস্থল এমন একটি জায়গা, যেখানে আমি নিজেও মাঝরাত্রির পরে স্বচ্ছন্দে ঘুরে বেরিয়েছি৷
আমিও তো ঐ পাকিস্তানিদের একজন হতে পারতাম৷ হুলিগানরা আমাকে মারার আগে তো আর আমার সাক্ষাৎকার নিত না৷ তারা তো জানতো না যে, আমি একজন নাস্তিক এবং আমি ইসলামি জঙ্গিবাদ সম্পর্কে গত ১৫ বছর ধরে সমালোচনামূলক লেখা লিখে আসছি৷ তারা সেই সব নিয়ে চিন্তাও করত না৷ তাদের কাছে আমি একজন মুসলিম, দক্ষিণ এশীয়, যে তাদের জীবনধারা বদলে দিতে চায়৷
এই আক্রণকারীদের কাজ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত হতে পারে, কিন্তু তাদের আশঙ্কাকে অবহেলা করার কোনো উপায় নেই৷ জার্মান সমাজ বদলাচ্ছে, দক্ষিণপন্থি খ্রিষ্টীয় গোষ্ঠী ও ইসলামপন্থি গোষ্ঠীরা দিন দিন আরো শক্তিশালী হয়ে উঠছে৷ জার্মানি তথা ইউরোপের সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মনিরপেক্ষ মানুষদের পক্ষে যা একটা শঙ্কার বিষয়৷
জার্মান সরকার যদি দেশের ধর্মনিরপেক্ষ ভিত্তি রক্ষা করতে চান, তাহলে যাদের এই সমাজের অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা চলেছে, তাদের উপর নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে হবে৷ ‘ইন্টেগ্রেশন' বা অন্তর্ভুক্তি শুধুমাত্র ভাষা শেখার ব্যাপার নয়৷ আমি বহু মুসলিমকে চিনি, যাঁরা দশকের পর দশক ধরে জার্মানিতে বসবাস করছেন, স্বচ্ছন্দে জার্মান বলেন, কিন্তু অন্তরে অন্তরে ধর্মনিরপেক্ষতা ও পশ্চিমি মূল্যবোধ সম্পর্কে গভীর ক্ষোভ পোষণ করেন৷ জার্মানিতে সালাফি আন্দোলন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নব নাৎসিবাদও মাথা চাড়া দিচ্ছে৷
থার্টি ফার্স্ট নাইটে কোলনে যা ঘটেছে, তা জার্মানরা কিভাবে বাঁচে ও তাঁরা বিদেশিদের প্রতি কিরকম আচরণ করে, এ সব কিছু চিরকালের মতো বদলে দিতে পারে৷ সরকারকে দেখতে হবে, তা যেন না ঘটে৷ এবং বিদেশি হিসেবে আমারও একটা দায়িত্ব থাকবে৷
বন্ধু, আপনি কি শামিল শামস-এর সঙ্গে একমত? জানিয়ে দিন আপনার মতামত, নীচের ঘরে৷
কেন এত ধর্ষণ? কী করলে কমবে এ জঘন্য অপরাধ?
নারী স্বাধীনতা, নারী আন্দোলন, নারী অধিকার নিয়ে সর্বত্র আলোচনা, সমালোচনা, বক্তৃতা, অন্যদিকে বেড়ে চলেছে ধর্ষণের সংখ্যা৷ কিন্তু কেন? এর জন্য কারা দায়ী, কী করে ধর্ষণ কমিয়ে আনা সম্ভব? বা ধর্ষিতা নারীদের কী-ই বা করা উচিত?
ছবি: Advocate Tanbir ul Islam Siddiqui
নারী নির্যাতন সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট
নারী নির্যাতন সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নতুন রিপোর্ট বলছে, বিশ্বের প্রায় এক তৃতীয়াংশ নারী যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন অহরহ৷ তার ওপর পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধের যেসব পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে, সেটাও যথার্থ নয়৷ এছাড়া বিশ্বের মোট নারীর ৭ শতাংশ নাকি জীবনের যে কোনো সময় ধর্ষণের শিকার হয়েছেন৷
ছবি: Fotolia/DW
উন্নত বিশ্বের নারীরাও রেহাই পান না
ধর্ষণ শব্দটি শুনলেই মনে হয় এ ধরণের অপরাধ হয়ে থাকে শুধু অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে৷ আসলে কিন্তু মোটেই তা নয়৷ সমীক্ষায় দেখা গেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে ১৫ বছর বয়স হওয়ার আগেই শতকরা ৩৩ জন মেয়ে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়৷ এমনকি জার্মানির মতো উন্নত দেশের নারীরাও যৌন নিগ্রহ বা ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত৷
ছবি: Fotolia/detailblick
ধর্ষিতা নারীরা জানাতে ভয় পান
জার্মানিতে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত বা ধর্ষিত নারীদের সঠিক পদ্ধতিতে ‘মেডিকেল টেস্ট’-এর ব্যবস্থা করে, এমন একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত স্ত্রী বিশেষজ্ঞ ডা. সোনিয়া পিলস বলেন, ‘‘ধর্ষণের শিকার নারী লজ্জায় এবং আতঙ্কে থাকেন৷ তিনি পুলিশের কাছে গিয়ে সে অভিজ্ঞতা বা ধর্ষক সম্পর্কে তথ্য জানাতে ভয় পান, কুণ্ঠা বোধ করেন৷ অনেকদিন লেগে যায় ধর্ষণের কথা কাউকে বলতে৷
ছবি: detailblick/Fotolia
ধর্ষককে ধরার জন্য দ্রুত ডাক্তারি পরীক্ষা
ধর্ষণের পর নারীদের কী করণীয় – এ বিষয়ে জার্মানির ধর্ষণ বিষয়ক নির্দেশিকায় কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে৷ যেমন ধর্ষণের পর একা না থেকে কারো সাথে কথা বলা৷ গোসল, খাওয়া, ধূমপান, বাথরুমে যাওয়ার আগে, অর্থাৎ ধর্ষণের চিহ্ন মুঝে না যাবার আগে ডাক্তারি পরীক্ষা করানো৷ এ পরীক্ষা করালে ধর্ষক কোনো অসুখ বা এইচআইভি-তে আক্রান্ত ছিল কিনা, তা জানা সম্ভব৷ নারীর শরীরে নখের আচড় বা খামচি থাকলে ধর্ষকের চিহ্ন সহজেই পাওয়া যায়৷
ছবি: DW/M. Ruettinger
যাঁরা ধর্ষণের শিকার, তাঁদের জন্য জরুরি বিভাগ
ধর্ষক যেসব জিনিসের সংস্পর্শে এসেছে, অর্থাৎ অন্তর্বাস, প্যাড এ সব তুলে রাখুন৷ ছবিও তুলে রাখতে পারেন৷ নিজেকে দোষী ভাববেন না, কারণ যে ধর্ষণের মতো জঘণ্যতম কাজটি করেছে – সেই অপরাধী, আপনি নন৷ জার্মানির বেশ কয়েকটি শহরের হাসপাতালে যৌন নির্যাতন বিষয়ক আলাদা জরুরি বিভাগ রয়েছে৷ তাছাড়া ধর্ষণ সংক্রান্ত নানা প্রশ্নের উত্তর জানতে রয়েছে ‘গেভাল্ট গেগেন ফ্রাউয়েন’, যেখানে ২৪ ঘণ্টাই টেলিফোন করা যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
গ্রুপ থেরাপি
যৌন নিগ্রহ বা ধর্ষণের শিকার নারীদের মানসিক ও শারীরিক সমস্যা সমাধানের জন্য জার্মানিতে রয়েছে গ্রুপ থেরাপি, যার সাহায্যে নারীরা আবার সমাজে সহজভাবে মিশতে পারেন এবং তাঁদের জীবনে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনাটি সহজে ভুলে যেতে পারেন৷
ছবি: dpa
সবচেয়ে বেশি যৌন অপরাধ হয় বাড়িতেই
ভারতের কোথাও না কোথাও প্রতি ২২ মিনিটে একটি মেয়ে ধর্ষণের শিকার হচ্ছে৷ তাই আদালতের নির্দেশে ভারতের পুলিশ বিভাগ এক সমীক্ষা চালিয়েছিল দিল্লির ৪৪টি এলাকায়৷ চলতি বছরের গত আট মাসে ২,২৭৮টি ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন এবং যৌন অপরাধের তদন্তের ফলাফলে দেখে গেছে: ১,৩৮০টি ক্ষেত্রে অভিযুক্তরা হলেন পরিবারের লোকজন এবং পরিচিতজনেরা৷ অর্থাৎ নিজের বাড়িতেও মেয়েরা নিরাপদ নয়!
ছবি: Fotolia/Miriam Dörr
সঠিক বিচার চাই
২০১৩ সালের ১৬ই ডিসেম্বর দিল্লিতে গণধর্ষণ ঘটনার পর, ভারতে ঘটা করে বিচার বিভাগীয় কমিশন বসিয়ে ধর্ষণ, যৌন নিগ্রহ দমনে আইন-কানুন ঢেলে সাজানো হয়৷ শাস্তির বিধান আরো কঠোর করা হয়৷ কিন্তু তাতে যৌন অপরাধের সংখ্যা না কমে বরং বেড়েছে৷
ছবি: picture alliance/abaca
বাংলাদেশে ধর্ষণের শিকার
বাংলাদেশে জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২০১১ সালে ৬২০ জন, ২০১২ সালে ৮৩৬ জন, ২০১৩ সালে ৭১৯ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন৷ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত, অর্থাৎ মাত্র ছ’মাসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৪৩১টি এবং এর মধ্যে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৮২ জন৷ তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে অপহরণ করে ধর্ষণ এবং পরে হত্যার ঘটনাও অনেক বেড়েছে৷
ছবি: DW
নারীর পোশাকই কি ধর্ষণের জন্য দায়ী?
বাংলাদেশের একজন পুলিশ কর্মকর্তা একটি মার্কিন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘‘বাংলাদেশের নারীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বেপরোয়াভাবে, বেপর্দায় চলাফেলার কারণে ধর্ষণের শিকার হন৷’’ পুলিশের কর্মকর্তার দাবি, ধর্ষণের দায় প্রধানত নারীদের৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘বখাটে ছেলেরা তো ঘোরাফেরা করবেই৷’’ এ কথা শুধু পুলিশ কর্মকর্তার নয়, ভারত-বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থাই এরকম৷ ধর্ষণ বন্ধ করতে এই মধ্যযুগীয় চিন্তা, চেতনার পরিবর্তন প্রয়োজন৷
ছবি: AFP/Getty Images/M. Uz Zaman
ছোট বেলা থেকে সচেতন করতে হবে
ধর্ষণ সম্পর্কে ছোটবেলা থেকে সঠিক ধারণা দিলে স্বাভাবিকভাবে ধর্ষণের সংখ্যা কমবে৷ তাছাড়া পাঠ্যপুস্তকেও বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া উচিত৷ ধর্ষিতা নারীকে শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণার শিকার হতে হয়, সে সম্পর্কেও সচেতনতা দরকার৷ অনেকে যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন৷ গোটা সমাজও নারীকেই দোষ দিয়ে থাকে৷ ডাক্তারি বা মনস্তাত্ত্বিক সাহায্য ছাড়াও প্রয়োজন পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও সমাজের বন্ধুবৎসল আচরণ৷