শুধু কোলন নয়, সুইজারল্যান্ডের জুরিখ-সহ অন্য কিছু শহর থেকেও ব্যাপক আকারে নারী নির্যাতনের খবর পাওয়া যাচ্ছে৷ স্বতঃস্ফূর্ত অপরাধ, নাকি পূর্ব পরিকল্পিত হামলা? এর জন্য কি শরণার্থীরা দায়ী?
বিজ্ঞাপন
বর্ষবরণ উৎসবের রাতে জার্মানির কোলন শহরের মূল স্টেশনে অসংখ্য নারী ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন৷ তাঁদের টাকাপয়সা, মূল্যবান জিনিসপত্র কেড়ে নেওয়া হয়েছে৷ সেই মানসিক অবস্থায় সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের কাছে অভিযোগ করতে পারেননি অনেকে৷ পরের দিনগুলিতে ধীরে ধীরে গোটা ঘটনার ভয়াবহতা স্পষ্ট হতে থাকে৷ ৮০ থেকে ১০০ মদ্যপ তরুণ ৩১শে ডিসেম্বর রাতে যে মাত্রায় এমন অভূতপূর্ব ন্যক্কারজনক কাণ্ড ঘটিয়েছে, সেটি সুপরিকল্পিত ছিল বলেই পুলিশের সন্দেহ রয়েছে৷
ঘটনার তদন্ত নিজস্ব গতিতে চলছে৷ পুলিশের বিরুদ্ধেও সমালোচনার ঝড় উঠেছে৷ কিন্তু সব তথ্য জনসমক্ষে আসার আগেই পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল আকার ধারণ করছে৷ অপরাধীরা আরব ও উত্তর আফ্রিকার মানুষ, তাদের মধ্যে অনেকেই সদ্য আগত শরণার্থী – এমন দাবিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে৷
চরম দক্ষিণপন্থি ও বিদেশি বিদ্বেষীরা এমন সুযোগ লুফে নিয়ে বহিরাগতদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়িয়ে দিচ্ছে ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে৷ জনমতের চাপে মূল স্রোতের রাজনৈতিক নেতারাও কড়া বক্তব্য পেশ করছেন৷
অপরাধীরা সত্যি শরণার্থী হলে তাদের দেশ থেকে বহিষ্কার করতে প্রয়োজনে আইন আরও কড়া করার অঙ্গীকার করছেন অনেকে৷ চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের পর এমনকি সামাজিক গণতন্ত্রী দলের নেতারাও আইনি কাঠামো আরও জোরালো করার পক্ষে সওয়াল করছেন৷
ম্যার্কেল উদার হাতে যেভাবে শরণার্থীদের জন্য জার্মানির দ্বার খুলে দিয়েছেন, তা এমনকি তাঁর নিজস্ব রাজনৈতিক শিবিরেই চরম বিতর্কিত বিষয়৷ জার্মানির পক্ষে এত কম সময়ে বিশাল সংখ্যক বহিরাগত মানুষ গ্রহণ করা সম্ভব নয় বলে অনেকে মনে করে৷ এমনকি শরণার্থীর ছদ্মবেশে সন্ত্রাসবাদীরা এসে এ দেশে হামলা চালাতে পারে, এমন আশঙ্কাও করছে তারা৷ তবে এভাবে বিশাল আকারে নারী নির্যাতনের ঘটনার আশঙ্কা কেউ করে নি৷ জার্মানি তথা ইউরোপের আরও শহর থেকে এমন ঘটনার খবর পাওয়া যাচ্ছে৷ মূল ঘটনা সম্পর্কে শেষ পর্যন্ত যাই জানা যাক না কেন, বর্তমান আবেগের জের ধরে শরণার্থীদের স্বাগত জানাবার মনোভাব এর ফলে মারাত্মক ধাক্কা খেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷
উদ্বাস্তু পরিস্থিতি ও জার্মান রাজনীতি
জার্মানিতে বিপুল সংখ্যক শরণার্থীদের আগমন শুধু সরকারি ব্যবস্থাপনাকেই বিপদের মুখে ফেলেনি, অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও তার ছাপ ফেলেছে: চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল-এর জনপ্রিয়তা আজ কমতির দিকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Gebert
উদ্বাস্তু শিবিরে দাঙ্গা
হামবুর্গ শহরের ভিলহেল্মসবুর্গ এলাকায় শরণার্থীদের প্রাথমিক আশ্রয়কেন্দ্রটি ভরে যাওয়ায় আগন্তুকদের তাঁবুতে থাকার ব্যবস্থা করা হয়৷ মঙ্গলবার (৬ই অক্টোবর) সেখানে আফগানিস্তান ও আলবেনিয়া থেকে আগত উদ্বাস্তুদের মধ্যে ব্যাপক দাঙ্গা বাঁধে৷ লোয়ার স্যাক্সনি-র ব্রাউনশোয়াইগ-এও অনুরূপভাবে আলজিরীয় ও সিরীয় উদ্বাস্তুদের মধ্যে দাঙ্গা বাঁধে একটি চুরির অভিযোগকে কেন্দ্র করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Charisius
ইসলাম বিরোধীরা আবার মাথা চাড়া দিয়েছে
ড্রেসডেনে ইসলাম বিরোধী পেগিডা গোষ্ঠীর বিক্ষোভ সমাবেশে গত সোমবার প্রায় ন’হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেন৷ বিক্ষোভকারীরা মূলত চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল-কেই বর্তমান উদ্বাস্তু সংকটের জন্য দায়ী করছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Settnik
ম্যার্কেল লাগাম টানলেন
চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল দৃশ্যত তাঁর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টোমাস ডেমেজিয়ের-এর গুরুত্ব কিছুটা খর্ব করে চ্যান্সেলরের দপ্তরের প্রধান পেটার আল্টমায়ার-কে শরণার্থী সংক্রান্ত কর্মকাণ্ড সমন্বয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন৷
ছবি: Reuters
উদ্বাস্তুর লাশ
টুরিঙ্গিয়া রাজ্যের সালফেল্ড-এ অবস্থিত একটি রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী আবাসে সোমবার একটি অগ্নিকাণ্ডের পর ২৯ বছর বয়সি এক ইরিট্রিয়ান উদ্বাস্তুর লাশ পাওয়া যায়৷ কিভাবে এই শরণার্থী প্রাণ হারিয়েছেন, তা এখনও অজ্ঞাত৷ তবে আবাসটিতে ইচ্ছাকৃতভাবে অগ্নিসংযোগের কোনো হদিশ পুলিশ এখনও পায়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যে কোনো পন্থায়
টুরিঙ্গিয়ায় এর আগেও উদ্বাস্তু আবাস হিসেবে চিহ্নিত বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে শরণার্থীদের আসা বন্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে৷ যেমন বিশহাগেন-এর এই বাড়িটির ছাদ পুরোপুরি পুড়ে গিয়েছে৷ গত সোমবার এখানে প্রথম উদ্বাস্তুদের আসার কথা ছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Gränzdörfer
ঘরে বাইরে
শরণার্থী সংকট এখন জার্মানির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও টান ধরাচ্ছে৷ চ্যান্সেলর ম্যার্কেলের সিডিইউ দলের জোড়োয়া দল বাভারিয়ার সিএসইউ৷ তাদের প্রধান হর্স্ট জেহোফার সেপ্টেম্বর মাসের শেষে একটি দলীয় সম্মেলনে বক্তা হিসেব আমন্ত্রণ জানান হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অর্বান-কে, যিনি সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে উদ্বাস্তুর স্রোত আটকানোর চেষ্টা করেছেন৷
ছবি: Reuters/M. Dalder
হাওয়া যদি বদলায়
বাভারিয়ার অর্থমন্ত্রী মার্কুস জ্যোডার ইতিপূর্বেও বলেছেন: ‘‘আমরা (অর্থাৎ জার্মানি) বিশ্বকে বাঁচাতে পারি না৷’’ এমনকি তিনি অস্ট্রিয়া সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার কথাও চিন্তা করেছেন৷ তবে জ্যোডার যখন সম্প্রতি রাজনৈতিক আশ্রয় প্রাপ্তির সাংবিধানিক অধিকার সীমিত করার কথা বলেন, তখন জেহোফার স্বয়ং সাথে সাথে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Gebert
7 ছবি1 | 7
এসবি/ডিজি (ডিপিএ)
আপনার কী মনে হয়? যৌন হয়রানির মতো জঘন্য অপরাধের সঙ্গে কি সত্যিই শরণার্থীরা জড়িত? লিখুন নীচের ঘরে৷