কোলনের কেন্দ্রীয় ট্রেন স্টেশনে জিম্মিকাণ্ডের কারণ খুঁজতে বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ৷ কর্তৃপক্ষ বলছে, আহত অবস্থায় আটক ব্যক্তি সম্ভবত সিরীয় নাগরিক৷ তবে তার জার্মানিতে বসবাসের অনুমতি রয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
সোমবারের ঘটনার সূত্র ধরে মঙ্গলবার কোলনের একটি ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ৷ মূল হামলাকারী পুলিশ হেফাজতেই রয়েছে, তবে গ্রেপ্তারের সময় তিনি গুরুতর আহত হন৷ সোমবার এক নারীকে জিম্মি করেছিলেন তিনি৷ এ বিষয়ে কারো কাছে কোনো তথ্য থাকলে তা পুলিশকে জানানোর জন্য একটি ওয়েব ঠিকানাও প্রকাশ করা হয়েছে৷
যা ঘটেছিল:
- সোমবার দুপুরে এক ব্যক্তিকোলনের কেন্দ্রীয় ট্রেন স্টেশনে অবস্থিত ম্যাকডোনাল্ডস রেস্টুরেন্টে একটি মলটভ ককটেল নিক্ষেপ করেন৷ এতে তিনজন আহত হন, আহতদের একজনের অবস্থা গুরুতর৷ এক প্রত্যক্ষদর্শী ডয়চে ভেলেকে জানান, বিস্ফোরণের পর পায়ে আগুন ধরা অবস্থায় এক নারীকে দৌঁড়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে যেতে দেখা যায়৷
সেই ঘটনার কিছুক্ষণ পরই কাছের এক ফার্মেসিতে এক নারীকে জিম্মি করেন সেই হামলাকারী৷ পুলিশ দ্রুতই সাড়া দেয় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ও জিম্মিকারীর সঙ্গে সমঝোতা করতে বিশেষ একটি দলকে ঘটনাস্থলে পাঠায়৷আটক ব্যক্তি এক তিউনিশীয় নারীর মুক্তি দাবি করে বলে শোনা গেছে৷
জিম্মিকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করার পর পুলিশ ফার্মেসিতে অভিযান চালায়৷ তার কাছে একটি পিস্তল ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ পুলিশের অভিযানের সময় গুলিতে গুরুতর আহত হন জিম্মিকারী৷ তবে জিম্মি করা নারী নিরাপদেই ঘটনাস্থল থেকে বের হতে সক্ষম হন৷
জার্মানিতে যেসব সন্ত্রাসী হামলার চেষ্টা হয়েছিল
গত আঠারো মাসে বেশ কয়েকবার জার্মানিতে সন্ত্রাসী হামলার চেষ্টা করা হয়েছে, যার অধিকাংশই অবশ্য পুলিশ আগেভাগে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়৷ আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএস-এর অন্যতম টার্গেট এখন ইউরোপের এই দেশটি৷
ছবি: Reuters/M. Rehle
লাইপসিশ, অক্টোবর ২০১৬
লাইপসিসের পুলিশ দু’দিন ধরে তল্লাশি চালানোর পর ২২ বছর বয়সে সিরীয় শরণার্থী জাবের আল-বাকেরকে গ্রেপ্তারে সক্ষম হয়৷ চেমনিৎসে তার অ্যাপার্টমেন্টে বিস্ফোরক এবং বোমা তৈরিত সরঞ্জাম পাওয়ার পর তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ সন্দেহ করা হয় যে, বার্লিন বিমানবন্দরে সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা করছিল সে৷ গ্রেপ্তারের দুই দিন পর অবশ্য কারাগারে আত্মহত্যা করে এই সিরীয় শরণার্থী৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Willnow
আন্সবাখ, জুলাই ২০১৬
গত জুলাই মাসে জার্মানিতে দু’টি হামলার দায় স্বীকার করে জঙ্গি গোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএস৷ দু’টি হামলাই শরণার্থীরা ঘটিয়েছিল৷ এর মধ্যে বাভারিয়ার আন্সবাখ শহরে একটি মিউজিক ফেস্টিভ্যালের প্রবেশ মুখে এক সিরীয় শরণার্থী বিস্ফোরণ ঘটালে ১৫ ব্যক্তি আহত হন৷ হামলায় হামলাকারী অবশ্য নিজেও প্রাণ হারায়৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/D. Karmann
ভ্যুয়র্ত্সবুর্গ, জুলাই ২০১৬
১৭ বছর বয়সি এক শরণার্থী ভ্যুয়র্ত্সবুর্গে একটি ট্রেনের মধ্যে কুড়াল ও ছুরি নিয়ে যাত্রীদের উপর হামলা চালায়৷ এতে হংকং থেকে আসা এক পর্যটক পরিবারের চার সদস্য এবং অন্য একজন আহত হন৷ পুলিশ হামলাকারীকে গুলি করে হত্যা করে৷ পুলিশ জানায়, হামলাকারী তথাকথিত ইসলামিক স্টেট-এর সদস্য না হলেও এই জঙ্গি গোষ্ঠীর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে হামলা চালিয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K. Hildenbrand
ড্যুসেলডর্ফ, মে ২০১৬
ইসলামিক স্টেট-এর তিন সন্দেহভাজন সদস্যকে নর্থ রাইনওয়েস্টফেলিয়া, ব্রান্ডেনবুর্গ এবং বাডেন ভ্যুর্টেনবের্গ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ কর্তৃপক্ষ জানায়, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে দু’জন ড্যুসেলডর্ফের শহরতলীতে আত্মঘাতী হামলার পরিকল্পনা করেছিল৷ অপরজন এবং ফ্রান্সে গ্রেপ্তারকৃত চতুর্থ জিহাদি বন্দুক ও বিস্ফোরক নিয়ে পথচারীদের হামলার পরিকল্পনা করছিল বলে খবর৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Hitij
এসেন, এপ্রিল ২০১৬
এসেনে একটি শিখ মন্দিরে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ বিস্ফোরণে তিন ব্যক্তি আহতও হন৷ সিসিটিভি ফুটেজ প্রচারের পর ১৬ বছর বয়সি এক সন্দেহভাজন নিজেই পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে৷ আর অন্য তরুণ সন্দেহভাজনকে বাড়ি থেকে আটক করে স্পেশাল পুলিশ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Kusch
হানোফার, ফেব্রুয়ারি ২০১৬
১৬ বছর বয়সি জার্মান-মরোক্কান তরুণী সোফিয়া এস. হানোফার ট্রেন স্টেশনে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে ছুরিকাঘাত করে৷ ধারণা করা হয়, ইসলামিক স্টেট-এর সদস্যরা তাকে এই হামলায় প্ররোচিত করেছিল৷
ছবি: Polizei
বার্লিন, ফেব্রুয়ারি ২০১৬
বার্লিনে সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনার অভিযোগে ইসলামিক স্টেট-এর সন্দেহভাজন তিন আলজেরীয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ বার্লিনের প্রসিকিউটরের দপ্তরের তথ্য আনুযায়ী, রাজধানীতে হামলা করার জন্য তাদের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা সম্পর্কে অবগত ছিল কর্তৃপক্ষ৷
ছবি: Reuters/F. Bensch
ওবারউরসেল, এপ্রিল ২০১৫
এশবর্ন-ফ্রাংকফুর্ট সিটি লুপ বাইক রেস বাতিল করে পুলিশ, কেননা তারা সন্দেহ করছিল যে সেই রেসে ইসলামিক স্টেট হামলা চালাতে পারে৷ হামলা পরিকল্পনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ ৩৫ বছর বয়সি এক তুর্কি বংশোদ্ভূত জার্মান এবং তাঁর ৩৪ বছর বয়সি স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে৷ বাইক রুটের কাছে তাদের বাড়ি থেকে বোমা তৈরির উপকরণও উদ্ধার করে পুলিশ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Dedert
8 ছবি1 | 8
ঘটনার পর কোথাও কোনো বিস্ফোরক আছে কিনা তা পরীক্ষার জন্য পুরো ট্রেন স্টেশন অবরুদ্ধ করে রাখে পুলিশ৷ সেসময় তারা ৫৫ বছর বয়সি এক সিরীয় নাগরিকের পরিচয়পত্র খুঁজে পান, যার ২০২১ সাল অবধি জার্মানিতে বসবাসের অনুমতি রয়েছে৷
জার্মান কর্তৃপক্ষ এখন অবধি হামলাকারীর হামলার উদ্দেশ্য শনাক্ত করতে পারেনি৷ কোলনের উপ-পুলিশ প্রধান মিরিয়াম ব্রাউনস বলেন, ‘‘তদন্তে সব সম্ভাবনাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং সন্ত্রাসবাদের বিষয়টি আমরা বাদ দিচ্ছি না৷''
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করেছেন, হামলাকারী নিজেকে ‘ইসলামিক স্টেটের' সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে দাবি করেছেন৷ তবে পুলিশ এই দাবি এখনো যাচাইয়ে সক্ষম হয়নি বলে জানিয়েছে৷
এখন তাহলে কী হবে?
পুলিশ বিষয়টির পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করছে বলে জানিয়েছে৷ ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরাও ঘটনার কারণ এবং হামলাকারী সম্পর্কে আরো জানতে ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করেছেন৷