1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
খেলাধুলানিউজিল্যান্ড

কোহলির বিরাট কীর্তিতে ভারতের ৩৯৭

রাহেনুর ইসলাম
১৫ নভেম্বর ২০২৩

ওয়াংখেড়েতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে ভারত করেছে ৪ উইকেটে ৩৯৭ রান। শচীন টেন্ডুলকারের ৪৯তম ওয়ানডে সেঞ্চুরির রেকর্ড ভেঙে আজ অনন্য চূড়ায় পৌঁছেছেন বিরাট কোহলি। সেঞ্চুরি করেছেন শ্রেয়াস আয়ারও।

Indien | ICC Cricket World Cup 2023 – Halbfinale – Indien – Neuseeland
ছবি: Adnan Abidi/REUTERS

ওয়াংখেড়ে হয়ে পড়েছিল নীল সমুদ্র। সেখানেই বিরাট কোহলি ফোটালেন নীল পদ্মফুল। শচীন টেন্ডুলকারকে পেছনে ফেলে গড়লেন ওয়ানডেতে ৫০ সেঞ্চুরির রেকর্ড। তাতে বিমোহিত টেন্ডুলকারও। করতালি দিয়ে অভিনন্দন জানালেন তাকে। গ্যালারিতে টেন্ডুলকারকে দেখে কুর্নিশ করলেন কোহলিও।

পুরো স্টেডিয়াম সাক্ষী হল অনন্য এক মাহেন্দ্রক্ষণের। তিন অংকে পা রাখার পর উচ্ছ্বাসে যখন কোহলি লাফ দিয়েছিলেন শূণ্যে, পুরো গ্যালারি তখন দাঁড়িয়ে অভিনন্দনে সিক্ত করছিল এই কিংবদন্তিকে।

 ৫০তম ওয়ানডে সেঞ্চুরিটা যে টেন্ডুলকারের সামনে ঐতিহাসিক ওয়াংখেড়ে করবেন, এতটা কি ভেবেছিলেন কোহলি নিজেও! ক্রিকেট বিধাতা ভেবেছিলেন এমনটাই। নয়ত এবারের বিশ্বকাপেই কেন ৮৮ আর ৯৫ রানে দুবার আউট হবেন কোহলি। তাহলে যে টেন্ডুলকারের সামনে হত না এই মহাকাব্য। কোহিল ৫০তম সেঞ্চুরিটি করলেন ২৭৯তম ইনিংসে। টেন্ডুলকারের ক্যারিয়ারে ৪৫২ ইনিংসে সেঞ্চুরি ৪৯টি। টেন্ডুলকার মাঠে থেকেই টুইটারে অভিনন্দন জানিয়েছেন কোহলিকে।

 কোহলির ১১৭-তে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনালে ৪ উইকেটে ৩৯৭ রান করেছে ভারত। বিশ্বকাপ নকআউটে এটাই যেকোনো দলের সর্বোচ্চ স্কোর। ফাইনালে যেতে তাই পাহাড় ডিঙ্গাতে হবে নিউজিল্যান্ডকে। শ্রেয়াস আয়ার ১০৫, শুভমান গিল ৮০ ও রোহিত শর্মা করেন ৪৭ রান। টিম সাউদির উইকেট ৩টি।

ওয়াংখেড়ে মানেই তারার মেলা। আজও বলিউডের একাধিক তারকা ছিলেন গ্যালারিতে। তাদের মাঝে আলো ছড়াচ্ছিলেন ইউনিসেফের দূত হয়ে আসা ডেভিড বেকহাম। ইংল্যান্ড ফুটবলের সাবেক এই তারকা শচীন টেন্ডুলকারের সঙ্গে ফুটবল নিয়ে মাঠেও নেমে পড়েছিলেন খেলা শুরুর আগে।

শ্রেয়স আইয়ার : বিশ্বকাপে টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরিছবি: FRANCIS MASCARENHAS/REUTERS

 বিরাট কোহলি বেকহামের সঙ্গে কথা বলতে এগিয়ে যান প্যাড পড়ে। তখন পাশে ছিলেন টেন্ডুলকারও। নিশ্চয়ই তখন বলছিলেন, ‘‘সেমিফাইনালে আমার ৪৯তম সেঞ্চুরির রেকর্ডটা ভেঙে ফেল।''

কোহলি শুধু সেঞ্চুরির রেকর্ড নয় ভেঙেছেন টেন্ডুলকারের আরও দুটি কীর্তি। বিশ্বকাপের এক আসরে সর্বোচ্চ ৬৭৩ রানের রেকর্ড ছিল শচীন টেন্ডুলকারের। ২০০৩-এ ১১ ইনিংসে করেছিলেন এই রান। আজ তাকে পেছনে ফেললেন কোহলি। এবারের আসরে তাঁর রান ৭১১।

এছাড়া বিশ্বকাপের এক আসরে সর্বোচ্চ সাতটি করে ৫০ ছাড়ানো ইনিংস ছিল শচীন টেন্ডুলকার ও সাকিব আল হাসানের। আজকের ইনিংসটিতে এবারের বিশ্বকাপে কোহলির ৫০ ছাড়ানো ইনিংস আটটি।

রোহিত শর্মা টস জিতে ভুল করেননি ব্যাট নিতে। টসের আগেই অবশ্য বিতর্ক হয়েছে পিচ নিয়ে। ভারতীয় দৈনিক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ও ইংল্যান্ডের ডেইলি মেইল দাবি করেছিল, ভারতের চাওয়ায় পিচ বদলে মন্থর করে দেওয়া হয়েছে। কাটা হয়েছে উইকেটের ঘাস।

 আইসিসি ইভেন্টে স্বাগতিক দল এমন কিছু চাইতে পারে না বলে, প্রশ্নও্ ছুঁড়ে দেয় এই দুটি দৈনিক। তবে কারও দিকে আঙ্গুল না তুলে নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন শুধু টসের পর এইটুকু বলেছেন,‘‘এটা ব্যবহৃত পিচ। আমিও আগে ব্যাটিং নিতাম।'' টুর্নামেন্ট চলার সময় ব্যবহৃত পিচে খেলাটা অস্বাভাবিক কিছু নয় বলে বিবৃতিও দেয় আইসিসি।

ভারতকে আবারও উড়ন্ত সূচনা দেয় রোহিত শর্মা ও শুভমন গিলের উদ্বোধনী জুটিছবি: Adnan Abidi/REUTERS

হাতের তালুর মত চেনা এই পিচে দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও শুভমান গিল উড়ন্ত সূচনা এনে দেন ভারতকে। গড়েন ৭১ রানের জুটি। প্রথম ৫ ওভারে ভারতের স্কোর ছিল ৪৭ আর ১০ ওভারে ৮৪।

 মুম্বাইয়ের ছেলে রোহিত চড়াও প্রথম ওভার থেকেই। ট্রেন্ট বোল্টের চতুর্থ আর পঞ্চম বলে টানা দুই বাউন্ডারিতে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ঝড়ের। হয়েছেও সেটা। রোহিত ৪৭ রানে আউট হওয়ার সময় অপর ওপেনার শুভমান গিলের স্কোর তখন ২১। অধিনায়ককে সেরাটা খেলতে দেখে ঝুঁকি নিতে যাননি গিল।

নীল সমুদ্রে পরিণত হওয়া ওয়াংখেড়ে ‘হিটম্যান'খ্যাত রোহিত ভাঙেন ছক্কার দুটি রেকর্ড। ২০১৫ বিশ্বকাপে ২৬টি ছক্কা মেরেছিলেন ক্রিস গেইল, যা এই টুর্নামেন্টে এক আসরে সর্বোচ্চ। আজ নিজের তৃতীয় ছক্কার সময় রেকর্ডটা পেছনে ফেলেন রোহিত। বিশ্বকাপে সব মিলিয়ে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসাবে ৫০ ছক্কার মাইলফলকেও পা রাখেন রোহিত। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৯ ছক্কা গেইলের।

আজ ৪৭ রানের ইনিংসটি রোহিত সাজান ৪ বাউন্ডারি ও ৪ ছক্কায়। এই বিশ্বকাপে তার ছক্কা ২৮ আর সবমিলিয়ে বিশ্বকাপে ৫১টি। টিম সাউদির বলে ছক্কা মারতে যেয়েই মিড অফে কেন উইলিয়ামসনকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন রোহিত। সাউদির স্লোয়ারটা তিনি তুলে দিয়েছিলেন আকাশে। এ নিয়ে রোহিতকে ছয়বার আউট করলেন সাউদি।

ওয়ানডেতে ৫০তম সেঞ্চুরির পর টেন্ডুলকারকে কুর্নিশ করে শ্রদ্ধা জানানোর মুহূর্তে বিরাট কোহলিছবি: ADNAN ABIDI/REUTERS

ওয়ানডে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে বিরাট কোহলি বিবর্ণই ছিলেন এতদিন। ২০১১ সালের সেমিফাইনালে ৯, ২০১৫ বিশ্বকাপে ১ আর ২০১৯-এ আউট হয়েছিলেন ১ রানে। আজও আউট হতে পারতেন দ্বিতীয় বলে। সাউদির এলবির জোড়ালো আপিলে আম্পায়ার সাড়া না দিলে রিভিউ নেয় কিউইরা। রিপ্লেতে দেখা যায় বলটা ব্যাটের কাণায় লেগেছিল কোহলির।  শুরুর এই অস্বস্তিটা ঝেড়ে ফেলে স্বাচ্ছন্দ্যেই খেলেন কোহলি। ৫৯ বলে করেন ওয়ানডে বিশ্বকাপ নকআউটে প্রথম ফিফটি।

 শুভমান গিলের সঙ্গে কোহলি দ্বিতীয় উইকেটে গড়েন ৯৩ রানের জুটি। রোহিত ফেরার পর আক্রমণের ধার বাড়িয়েছিলেন গিল। ফিফটি করেন ৪১ বলে, এবারের বিশ্বকাপে সর্বশেষ চার ইনিংসে এটা তার তৃতীয় পঞ্চাশ ছাড়ানো ইনিংস। তবে সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে যাওয়া গিলকে ক্রিজ ছাড়তে হয় ইনজুরিতে পড়ে। ক্র্যাম্পে মাঠ ছাড়ার আগে ৬৫ বলে ৮ বাউন্ডারি ৩ ছক্কায় ৭৯ করেছিলেন তিনি। পরে ফিরে এসে করেন ১ রান।

ভারত এই ধাক্কাটা কাটায় কোহলি ও শ্রেয়াস আয়ারের ১৬৩ রানের জুটিতে। এবারের বিশ্বকাপটা স্বপ্নের মতই কেটেছে কোহলির। গ্রুপ পর্বে তার নয়টি ইনিংস ৮৫, ৫৫*, ১৬, ১০৩*, ৯৫, ০, ৮৮, ১০১* ও ৫১। ওয়াংখেড়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়েও আউট হয়েছিলেন ৮৮ রানে। টেন্ডুলকারের সামনে তাই ছোঁয়া হয়নি তার ৪৯ ওয়ানডে সেঞ্চুরির কীর্তি। পরের ম্যাচেই অবশ্য গড়েছিলেন রেকর্ডটা।

 সেদিন অভিনন্দন জানিয়ে টেন্ডুলকার প্রত্যাশা করেছিলেন,পরের সেঞ্চুরিটা করে তাকে পেছনে ফেলতে খুব বেশিদিন নিবেন না কোহলি। টেন্ডুলকারের কথাই সত্যি হল। ইডেনে সেঞ্চুরির এক ম্যাচ পরই ঐতিহাসিক ৫০-এ পা রাখলেন কিং কোহলি। সেঞ্চুরির কিছুক্ষণ পরই শেষ হয় ১১৩ বলে নয়টি বাউন্ডারি দুইটি ছক্কায় ১১৭ রানের ইনিংসটি। সাউদির বলে ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ দেন ডেভন কনওয়েকে। মাঠ ছাড়ার সময় আরও একবার গ্যালারি কুর্নিশ করে এই কিংবদন্তিকে।

টানা দ্বিতীয় ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছেন শ্রেয়াস আয়ার। তিনি খেলেন ৭০  বলে ১০৫ রানের ইনিংস। চার নম্বর জায়গাটা নিয়ে ভারতের মাথা ব্যথাও কেটে যাওয়ার কথা তাতে। এছাড়া লোকেশ রাহুল অপরাজিত ছিলেন ২০ বলে ৩৯ রানে। ভারত থামে ৩৯৭ রানে যা বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে সর্বোচ্চ। আগের সেরা ছিল ২০১৫ সালে ভারতের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার ৭ উইকেটে ৩২৮।

এই নিউজিল্যান্ডের কাছে গত বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে হেরে স্বপ্ন ভেঙেছিল ভারতের। এবার গ্রুপ পর্বে কিউইদের হারিয়ে প্রতিশোধ নিয়েছেন রোহিতরা। আজ জিতলে সেটা মধুর হবে আরও।

সংক্ষিপ্ত স্কোর :

ভারত ৫০ ওভারে ৩৯৭/৪ (কোহলি ১১৭, শ্রেয়াস ১০৫, গিল ৮০ ; সাউদি ৩/১০০, বোল্ট ১/৮৬)

রাহেনুর ইসলাম সাংবাদিক
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ