বলিউডকে পিছনে ফেলে দিল ক্রিকেট৷ অক্ষয়, অমিতাভ, শাহরুখ, সলমন, আমিরদের হারিয়ে দিলেন বিরাট কোহলি৷ ফোর্বস ইন্ডিয়া ভারতের প্রথম একশো তারকার যে তালিকা প্রকশ করেছে, তাতে এক নম্বরে ভারতীয় ক্রিকেট অধিনায়ক৷ ২০১৮ র অক্টোবর থেকে ২০১৯ এর ৩০ সেপ্টেম্বরের সময়সীমায় আয় ও খ্যাতির পরিমাপে এক নম্বরে বিরাট কোহলি৷ এর পাশাপাশি আরেকটি কৌতূহলকর তথ্যও উঠে এসেছে তাদের তালিকায়৷ তা হল, সলমন, শাহরুখদের পিছনে ফেলে বলিউড তারকাদের মধ্যে এক নম্বরে অক্ষয় কুমার৷
তবে এ বার তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে দুটি মাপদণ্ড নিয়েছে ফোর্বস৷ এক, তারকাদের আয়৷ দুই, তাঁদের খ্যাতির পরিমাপ৷ খ্যাতির পরিমাপ করা হয়েছে সামাজিক মাধ্যমে তাঁদের জনপ্রিয়তা এবং সংবাদমাধ্যমে তাঁদের উপস্থিতির নিরিখে৷ আর তাতেই ২৫২ কোটি ৭২ লাখ টাকা আয় করে এক নম্বরে বিরাট৷ বিলউড তারকা অক্ষয় কুমার অবশ্য বিরাটের থেকে বেশি আয় করেছেন, ২৯৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা৷ কিন্তু সামগ্রিকভাবে বিরাটের কাছে পিছিয়ে পড়েছেন৷
শাহরুখ খানের জনপ্রিয়তা ছাপিয়ে গেছে বিশ্বের তাবৎ অভিনেতাকে৷ বলিউডের ‘বাদশা’ শাহরুখকে চিনুন এই ছবিঘরে...
ছবি: Getty Images/AFP/N.Seelamদিল্লিতে জন্মগ্রহণ করা শাহরুখের স্বাধীনতা সংগ্রামী বাবা সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ায় সন্তানদের সময় দিতে পারতেন না৷ তাই দাদা-দাদীর কাছেই বড় হন তিনি৷ চিরকালের ভালো ছাত্র শাহরুখ পড়াশোনার পাশাপাশি ফুটবল ও হকি খেলতেন৷ অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি লাভের পর জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর স্তরে পড়াশোনা শেষ করেন৷ তখন থেকেই বাড়তে থাকে অভিনয়ের প্রতি তার ঝোঁক৷ তাই চলে যান মুম্বাই৷
ছবি: picture alliance/dpa/Mum-Mitesh Bhuvad১৯৮৮ সালে প্রথম টিভি সিরিয়ালে অভিনয়ের সুযোগ পান শাহরুখ৷ তার অভিনীত প্রথম সিরিয়াল ‘দিল দরিয়া’ মুক্তি না পেলেও পরে ‘ফৌজি’ ও ‘সার্কাস’ সিরিয়ালে তার অভিনয় দর্শকদের নজর কাড়ে৷ ১৯৯১ সালে বড় পর্দায় অভিনয়ের প্রস্তাব পেলেও তা ফিরিয়ে দেন শাহরুখ৷ তবে ১৯৯২ সালে ‘দিওয়ানা’ ছবির হাত ধরে রূপালি পর্দায় তার আত্মপ্রকাশ৷ এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Vermaসেই সময়ে প্রচলিত নায়কের চরিত্রের ধারার একদম বিপরীতে গিয়ে ভিন্নধারার চরিত্র বাছতে শুরু করেন শাহরুখ৷ ‘ডর’, ‘আঞ্জাম’ বা ‘বাজিগর’ ছবিতে ‘নেতিবাচক’ বা খল চরিত্রে তার অভিনয় প্রশংসা কুড়োয়৷ বেশ কয়েকটি পুরষ্কারও পান৷ কিন্তু ১৯৯৪ সালে ‘কভি হা কভি না’ ছবির রোম্যান্টিক হিরো চরিত্রের অভিনয়ে নিয়মিত হয়ে যান৷
ছবি: picture alliance/dpa/AP Images/J. Ryan১৯৯৫ থেকে ২০০৩ সাল ছিল শাহরুখের প্রেমিক চরিত্রে অভিনয়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সময়৷ ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’, ‘পরদেস’, ‘দিল তো পাগল হ্যায়’, ‘মহব্বতে’, ‘কভি খুশি কভি গম’ ইত্যাদি ছবিতে তার অভিনয় দর্শকদের মন জিতে নেয়৷ একই সময়ে মনিরত্নম ও কমল হাসানের মতো অন্য ধারার পরিচালকের সাথেও কাজ করেছেন তিনি, যা তার ক্যারিয়ারে অন্য মাত্রা যোগ করে৷
ছবি: Imago/Xinhuaশারীরিক অসুস্থতার কারনে ২০০২ থেকে ২০০৩- এই দু’বছর তেমন ভালো কাটেনি৷ হাতে খুব বেশি কাজও ছিল না৷ কিন্তু তার জনপ্রিয়তা তাতে কমেনি৷ ২০০৪ সালে ‘ম্যায় হু না’ ছবির ব্যাপক সাফল্যই তা প্রমাণ করে দিয়েছিল৷ ওই সময়েই সংস্থা ‘রেড চিলিজ এন্টারটেনমেন্ট’ গড়ে চলচ্চিত্র প্রযোজক হিসাবে কাজ শুরু করেন৷ তখন ‘পহেলি’ বা ‘চাক দে ইন্ডিয়া’ ছবিতে অভিনয় করে নিজের অভিনয়ের ব্যাপ্তিও বাড়িয়ে নেন শাহরুখ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Balkটেলিভিশনে সঞ্চালকের ভূমিকাতেও দেখা গেছে তাকে৷ ‘কৌন বনেগা করোরপতি’ ও ‘ইন্ডিয়া নই সোচ’-এর শাহরুখকেও ভোলার নয়৷ এছাড়া প্লেব্যাকও করেছেন ‘জোশ’ ছবিতে৷ বন্ধু ও অভিনেত্রী জুহি চাওলার সাথে মিলে আইপিএল-এর একটি দল ‘কলকাতা নাইট রাইডার্স’ কিনেছেন৷ এছাড়া বহু সমাজসেবামূলক সংস্থার হয়েও কাজ করেছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Photo২০১৪ সালের পর থেকে আস্তে আস্তে শাহরুখের ক্যারিয়ারে কিছুটা খরা দেখা যেতে থাকে৷ ‘জিরো’, ‘দিলওয়ালে’ বা ‘জব হ্যারি মেট সেজাল’ সেভাবে সাফল্য পায়নি৷ কিন্তু ২০১৭ সালে মুক্তি পাওয়া ‘রইস’ বদলে দেয় এই ধারা৷ ২০১৮ সালে ‘ডিয়ার জিন্দেগি’ ছবিতে এক মনোরোগ বিশেষজ্ঞের চরিত্রে অভিনয় অভিনেতা শাহরুখকে দর্শকের সামনে নতুনভাবে তুলে ধরে৷
ছবি: Getty Images/AFP/N.Seelamবড়পর্দার ক্যারিয়ারে ওঠানামা, ছোটপর্দায় সাফল্য থেকে রাজনৈতিক বিতর্ক- সবকিছুই আছে শাহরুখের ত্রিশ বছর পেরিয়ে যাওয়া কর্মজীবনে৷ পেয়েছেন পদ্মশ্রী, ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার ছাড়াও দেশ-বিদেশের বহু সাম্মানিক উপাধি৷ পাশাপাশি পেয়েছেন তুমুল জনপ্রিয়তা৷ প্রতিদিন তাকে এক ঝলক দেখতে তার বাড়ি ‘মান্নাত’-এর সামনে জড়ো হয় অনেক মানুষ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Rapid Eye Movies ফোর্বসের তালিকায় আরও কয়েকটি চমক আছে৷ এই প্রথমবার দুই বলিউড অভিনেত্রী দীপিকা পাড়ুকোন এবং আলিয়া ভাট প্রথম দশের মধ্যে আছেন৷ আরেকটি চমকপ্রদ তথ্য হল, অবসর নেওয়ার ছ-বছর পরেও শচিন তেন্ডুলকরের প্রথম দশে৷ গত এক বছরে তাঁর আয়ের পরিমাণ ৭৭ কোটি টাকা৷ তেন্ডুলকরের জনপ্রিয়তা
এখনও বিজ্ঞাপনদাতাদের আকর্ষণ করার পক্ষে যথেষ্ট৷
বুড়ো হাড়ে এখনও ভেল্কি দেখাচ্ছেন অমিতাভ বচ্চন৷ তাঁর গত এক বছরের রোজগার বলিউডের খানেদের থেকেও বেশি৷ যদিও সলমন তিন নম্বরে আছেন ২২৯ কোটি ২৫ লাখ রোজগার নিয়ে, সেখানে চার নম্বরে থাকা অমিতাভ বচ্চনের রোজগার ২৩৯ কোটি ২৫ লাখ টাকা৷ এই এক বছরে মাত্র একটি সিনেমায় অভিনয় করা শাহরুখের আয় ১২৪ কোটি ৩৮ লাখ৷ রণবীর আছেন সাত নম্বরে, আয় ১১৮ কোটি ২০ লাখ৷ আট নম্বরে আলিয়া ভাট ৫৯ কোটি ২১ লাখ টাকা রোজগার করে৷ দীপিকা দশে, রোজগার ৪৮ কোটি৷
অজয়. দেবগন, আমির খান এবং ঋত্বিক রোশন প্রথম দশে ঠাঁই পাননি৷ ৯৪ কোটি আয় করে অজয় বারো নম্বরে, ৮৫ কোটি রোজগার করে আমির পনেরো নম্বরে এবং ৫৮ কোটি ৭৩ লাখ আয় করে ঋত্বিক আঠারো নম্বরে আছেন৷ একশো কোটি আয় করে রজনীকান্ত তোরো নম্বরে আছেন৷ একশর মধ্যে একমাত্র ফুটবলার হলেন ৮৫ নম্বরে থাকা সুনীল ছেত্রী৷ আর একমাত্র বঙ্গসন্তান হলেন ৯৫তে থাকা গল্ফার অনির্বাণ লাহিড়ী৷
ফোর্বসের হিসাব বলছে, গত বছরের তুলনয়া সামগ্রিকভাবে বিলউড তারকাদের আয় বাইশ শতাংশ বেড়েছে৷
জিএইচ/এসজি(ফোর্বস ইন্ডিয়া)