অবাক হচ্ছেন? অন্তত সাম্প্রতিক একটি গবেষণা কিন্তু সেটাই বলছে৷ অস্ট্রেলিয়ার দুই গবেষক ৫৩ জন কৌতুক অভিনেতার উপর গবেষণা করে এই ধারণা পেয়েছেন৷ আন্তর্জাতিক এক জার্নালে গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে৷
অস্ট্রেলিয়ার ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটির ‘ম্যারি ম্যাককিলপ ইনস্টিটিউট অফ হেলথ রিসার্চ'-এর দুই গবেষক – অধ্যাপক সিমন স্টুয়ার্ট এবং অধ্যাপক ডেভিড থমসন – এর গবেষণাটি ‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ কার্ডিওলজি-তে প্রকাশিত হয়েছে৷
হাসির রাজা রবিন উইলিয়ামস
প্রায় তিন দশক ধরে তিনি মানুষকে একই সাথে হাসিয়েছেন এবং কাঁদিয়েছেন৷ ২০১৪ সালের ১১ আগস্ট প্রতিভাবান এই অভিনেতার মরদেহ পাওয়া যায় তাঁর ক্যালিফোর্নিয়ার বাড়িতে৷ তাঁর অবিস্মরণীয় কিছু কাজ ও জীবনের অজানা কথা তুলে ধরা হলো ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
হারানোর বেদনা
তিন দশক ধরে দর্শককে হাসিয়েছেন এবং কাঁদিয়েছেন তিনি৷ হলিউডের অন্যতম প্রতিভাধর অভিনেতা রবিন উইলিয়মস ২০১৪ সালের ১১ আগস্ট চলে যান না ফেরার দেশে৷ ক্যালিফোর্নিয়ার উত্তরাঞ্চলে নিজের বাড়িতে পাওয়া যায় তাঁর মরদেহ৷ আত্মহত্যা করেছেন তিনি৷
ছবি: Getty Images
পপ-আই
টেলিভিশনে রবিনের প্রথম কাজ টিভি সিরিজ মর্ক অ্যান্ড মিন্ডি, যার মাধ্যমে তিনি পরিচিতি পান৷ ১৯৮০ সালে চলচ্চিত্রে তাঁর অভিষেক ঘটে৷ কি চরিত্রে জানেন? পপ-আই চরিত্র হিসেবে৷ যদিও মুভিটি তেমন সফল হয়নি৷ কিন্তু আর পিছনে ফিরে তাকাননি তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
গুড মর্নিং ভিয়েতনাম
১৯৮৭ সালে ভিয়েতনাম যুদ্ধের ওপর একটি ওয়ার কমেডি নির্মাণ করা হয় গুড মর্নিং ভিয়েতনাম নাম দিয়ে৷ রবিন ঐ মুভিতে সামরিক রেডিও ডিজে’র ভূমিকায় অভিনয় করেন৷ এই ছবিটির কারণেই কমেডিয়ান হিসেবে তাঁর জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে, অস্কার মনোনয়ন পান এবং গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার জেতেন তিনি৷
ছবি: picture alliance/ZUMA Press
স্পিলবার্গের ছবিতে অভিনয়
১৯৯১ সালে স্টিভেন স্পিলবার্গের পরিচালিত ‘হুক’ মুভিতে উইলিয়াম অভিনয় করেন পিটার প্যানের ভূমিকায়৷ স্পিলবার্গ ঐ সিনেমা নির্মাণ শেষে বলেছিলেন, ‘‘উইলিয়াম একজন কমিক জিনিয়াস, যিনি হাসির ঝড়ের তোড়ে আমাদের ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারেন৷’’
ছবি: picture alliance/Mary Evans Picture Library
নারী চরিত্রে অভিনয়
মিসেস ডাউটফায়ারের কথা মনে আছে? ১৯৯৩ সালে নির্মিত এই মুভিটিতে উইলিয়াম কমেডিকে ভিন্ন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন৷ ন্যানির ভূমিকায় তাঁর অভিনয়ের কারণে মুভিটি বিশ্বের ১০০টি মজার ছবির মধ্যে স্থান করে নেয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অস্কার জয়
অনেক বছর ধরে নানা পুরস্কার পেলেও অস্কার অধরাই ছিল তাঁর কাছে৷ কিন্তু ১৯৯৭ সালে সেই পুরস্কারও জিতলেন তিনি৷ মুভির নাম ‘গুড উইল হান্টিং’৷ এই ছবিতে সেরা পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে দুর্দান্ত অভিনয়ের জন্য অস্কার জেতেন উইলিয়ামস৷
ছবি: picture alliance/ZUMA Press
নাইট অ্যাট দ্য মিউজিয়াম
এই ট্রিলজির শেষটিতে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট থিওডর রুজভেল্টের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন তিনি৷ ছবিটি মুক্তি পায় ২০০৬ সালে৷ বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে বলেছেন, ‘‘উইলিয়ামস যাবার আগে ছুঁয়ে দিয়ে গেছেন মানব চেতনার প্রতিটি বিন্দু৷ আমাদের যেসব সেনা বাইরে আছেন তাদের মুখে হাসি ফোটাত তাঁর অভিনয়৷’’
ছবি: picture alliance/Mary Evans Picture Library
শেষ ছবি
২০১৩ সালে তাঁর অভিনীত দ্য বাটলার ছবিটি মুক্তি পায়৷ সেখানে আবারো মার্কিন প্রেসিডেন্টের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন তিনি৷ তাঁর অভিনীত মুক্তি পাওয়া শেষ মুভি এটি৷
যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের শিকাগো শহরে ১৯৫১ সালের ২১ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন রবিন উইলিয়াম৷ তাঁর পুরো নাম রবিন ম্যাকলরিন উইলিয়ামস৷ রবিন উইলিয়াম বিয়ে করেছেন তিনবার৷
ছবি: Mark Ralston/AFP/Getty Images
বিষন্নতায় ভুগছিলেন উইলিয়ামস
মৃত্যুর আগে বেশ কিছুদিন ধরে মারাত্মক বিষন্নতায় ভুগছিলেন বলে জানিয়েছিলেন তাঁর এজেন্ট৷ গত কয়েক বছরে নিজের অ্যালকোহল ও মাদক ছাড়ার চেষ্টা নিয়ে একাধিকবার প্রকাশ্যে রসিকতা করেছেন রবিন উইলিয়ামস৷
ছবি: picture-alliance/dpa
11 ছবি1 | 11
গবেষণায় পাওয়া মূল তথ্যটি হচ্ছে, মজার মানুষ হওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক – একজন কৌতুক অভিনেতা যত বেশি মজার, তাঁর অকাল মৃত্যু হওয়ার ঝুঁকি বেশি৷
কমেডিয়ানদের ব়্যাংকিং করে এমন একটি ওয়েবসাইটের সহায়তা নিয়ে গবেষকরা ৫৩ জন ব্রিটিশ ও আইরিশ কৌতুক অভিনেতার উপর এই গবেষণা করেন৷ গবেষকরা আবার এঁদের মধ্য থেকে নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী ২৩ জনের একটি তালিকা তৈরি করেন, যাঁদের গবেষকরা ‘এলিট' কমেডিয়ান বলে মনে করেছেন৷ গবেষণায় দেখা যায় এই ২৩ জনের মধ্যে ৭৮ শতাংশ অভিনেতাই অকাল মৃত্যুর শিকার হয়েছেন৷
অধ্যাপক স্টুয়ার্ট তাঁদের গবেষণা নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার এবিসি-তে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন৷ সেখানে তিনি বলেন, ‘‘নীচুমান ছাড়া উঁচুমান থাকতে পারেনা৷ মানুষকে হাসানোর ক্ষেত্রে এই অভিনেতারা অনেক উঁচু মানের পরিচয় দিয়েছেন, তাই বলে কি আমরা একটা বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারি যে, তাঁদের পুরো জীবনটাই হাসির মধ্য দিয়ে গেছে?
‘‘ব্যক্তিগত জীবনে অনেক কমেডিয়ানই সাংঘাতিকভাবে অস্বাভাবিক মানসিক অবস্থা বা মনোবৈকল্য, বিষাদ ইত্যাদির মধ্য দিয়ে যান'', বলেন অধ্যাপক স্টুয়ার্ট৷