বন্দুক চালানোর প্রতিযোগিতা জিতে ‘মার্কসম্যান’ হয়েছেন তুর্কি বংশোদ্ভূত এক জার্মান নাগরিক৷ কিন্তু মুসলিম হিসেবে ক্যাথলিক সংগঠনে তাঁর স্থান নিয়ে এখন জার্মানিতে চলছে তুমুল বিতর্ক৷ বিষয় – বৈষম্য বনাম ধর্মীয় সংগঠনের স্বাধীনতা৷
বিজ্ঞাপন
নামে শখের বন্দুক চালানোর ক্লাব৷ ভ্যার্ল নামের এক গ্রামেও তার শাখা আছে৷ সংগঠনের পোশাকি নাম ‘অ্যাসোসিয়েশন অফ হিস্টরিক জার্মান শুটিং ব্রাদারহুডস'৷ বলা বাহুল্য, একমাত্র পুরুষরাই সদস্য হতে পারেন৷ শুধু শুটিং বা বন্দুক চালানোর মধ্যেই ক্লাবের কার্যকলাপ সীমাবদ্ধ নেই৷ জার্মানির সনাতন ঐতিহ্য বজায় রাখা সংগঠনের মূল আদর্শ৷ নেপোলিয়ানের বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধের পর সেই ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতেই সংগঠনের যাত্রা শুরু৷ সদস্যদের রয়েছে বাহারি ইউনিফর্ম৷ দেশজুড়ে প্রায় ১,৩০০ শাখা সংগঠনে এই মুহূর্তে সদস্য সংখ্যা প্রায় ৪ লক্ষ৷
জার্মানদের ভদ্রতা জ্ঞান
বিশ্বের প্রতিটি দেশেরই থাকে নিজস্ব সংস্কৃতি, ঐতিহ্য আর ভদ্রতা৷ জার্মানিও এর ব্যতিক্রম নয়৷ জার্মানরা ভদ্রতা সম্পর্কে কতটা সচেতন, তারই কিছু নমুনা পাবেন এই ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ধন্যবাদ দেওয়া
জার্মানরা কথায় কথায় ধন্যবাদ দেন৷ এ অভ্যাস তাঁদের একেবারে ছোট থেকেই গড়ে ওঠে৷ এমনকি ছোট্ট বাচ্চাদেরও যদি কেউ কোনো উপহার বা চকলেট দেয়, তখন তার মা লক্ষ্য রাখেন বাচ্চা ধন্যবাদ দিলো কিনা৷ শিশুটি ধন্যবাদ না দিলে মা মনে করিয়ে দেন, ‘‘সোনামনি, কী....বলতে হয়?’’
ছবি: picture-alliance/dpa
ফুল, চকলেট বা অন্যকিছু
জার্মানিতে কোনো বাড়িতে দাওয়াত বা নিমন্ত্রণ খেতে যাওয়ার সময় অতিথি অবশ্যই কিছু না কিছু সাথে নিয়ে যান৷ কেউ বা আগে থেকে জেনে নেন কী নিলে হোস্টের সুবিধা হয়৷ অন্যথায় ফুল, চকলেট বা অন্য যে কোনো কিছু অবশ্যই সঙ্গে থাকে৷
ছবি: AP
ধন্যবাদ দেওয়ার সুন্দর ধরণ
জার্মানরা বাঙালিদের মতো এত রান্নাবান্না না করলেও খেতে, খাওয়াতে এবং হৈচৈ করতে ভালোবাসেন৷ তবে তাঁদের দাওয়াতটা হয় কিছুটা আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে৷ দাওয়াত খাওয়ার পর কেউ কার্ড পাঠিয়ে, কেউ বা টেলিফোনে আতিথেয়তার জন্য ধন্যবাদ জানান৷
ছবি: Fotolia/Web Buttons Inc
খাওয়ার সময় শব্দ না করা
একসাথে টেবিলে খাওয়ার সময় মুখে শব্দ করা জার্মানদের কাছে অভদ্রতার সামিল৷ খাবার চিবানোর সময় কারো মুখে শব্দ হলে, জার্মানরা কপাল কুঁচকে তাকান৷ মুখে কিছু না বললেও এমন ভাব যেন বলছে: শব্দ না করে খাও৷
ছবি: Monkey Business/Fotolia
প্রতিবেশীদের জানিয়ে রাখা
বাড়িতে বড় কোনো পার্টি বা উৎসবের আয়োজন করা হলে তারা আগে প্রতিবেশীদের জানিয়ে রাখার একটা চল আছে জার্মানিতে, যাতে কেউ বিরক্ত বোধ না করেন৷ জার্মানিতে ছুটির দিন, অর্থাৎ রবিবার এবং যে কোনোদিন রাত ১০টার পর কেউ-ই বেশি শব্দ করেন না৷
ছবি: Fotolia/chagin
নারীদের সম্মান দেখানো
কোনো নারী গাড়ি থেকে নামার সময় বা তাঁর সামনে দরজা থাকলে, সঙ্গের পুরুষ বন্ধুটি দরজা খুলে দেন৷ বাড়িতে নারী অতিথি এলেও তাঁর ওভারকোটটি খুলতে সাহায্য করে পুরুষরা৷ কেউ এ ধরণের ভদ্রতা না দেখালে, তিনি এ সব রীতি জানেন না বলে ধরে নেওয়া হয়৷
ছবি: Fotolia/Peter Atkins
প্রতিবেশীদের সঙ্গে আলাপ
গৃহপ্রবেশের পর অনেকেই প্রতিবেশীদের সঙ্গে আলাপ করার জন্য ছোটখাটো পার্টি করেন৷ এভাবে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে৷ এই রীতি অবশ্য অফিসেও প্রচলিত৷ কাজে ‘জয়েন’ করার পর টুকটাক খাবার, চা, কফি বা শ্যাম্পেনের সঙ্গে সহকর্মীদের পরিচিন হন অনেকে৷
ছবি: Jason Merritt/Getty Images for Baby2Baby
সহযাত্রীদের সাহায্য
ধরুন আপনি ট্রামে বা বাসে যাবেন, কিন্তু ‘স্টপেজ’ পর্যন্ত পৌঁছানোর আগেই যানবাহনটি ছেড়ে দিচ্ছে৷ তখন অনেক সময় দেখা যায় যে, অন্য কোনো যাত্রী আপনার দৌড়ানো দেখে ট্রাম বা বাসের দরজা ধরে দাঁড়িয়ে থাকেন, একেবারে আপনি ওঠা পর্যন্ত৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রাস্তা খুঁজে পাচ্ছেন না?
আপনি পায়ে হেঁটেই হোক অথবা গাড়িতে থাকুন, কোনো বাড়ির নম্বর বা আপনার গন্তব্যটি খুঁজে পাচ্ছেন না৷ পথচারী কোনো জার্মানকে সেকথা বলতেই তিনি এমন সুন্দর করে আপনাকে রাস্তাটা বুঝিয়ে দেবেন যে, গন্তব্যে পৌঁছতে কোনো সমস্যাই আর হবে না৷
ছবি: DW/I. Kuprianova
বাড়ির কাজে সাহায্য
প্রায় প্রতিটি জার্মানই কম-বেশি মেরামতির কাজ জানেন৷ তা পানির পাইপ লাগানো, আলমারি তৈরি অথবা ঘরের লাইট লাগানো হোক ৷ এ সব কাজের জন্য আসলে মিস্ত্রিদের ঘণ্টায় অন্তত ৮০ ইউরো দিতে হয়৷ তাই যাঁরা এ কাজ জানেন না, তাঁদের সাহায্য করতে প্রতিবেশী বা বন্ধু-বান্ধবরা এগিয়ে আসেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
10 ছবি1 | 10
ঊনবিংশ শতাব্দীর জার্মানির ঐতিহ্যের মূল ভিত্তিই হলো খ্রিষ্টধর্ম – আরও ভালো করে বলতে গেলে ক্যাথলিক মূল্যবোধ৷ ফলে সেই ঐতিহ্য বহন করতে হলে ধর্মপ্রাণ খ্রিষ্টান হওয়াও জরুরি৷ স্থানীয় শাখার ‘মার্কসম্যান' হতে হলে তো বটেই৷ কিন্তু ভ্যার্ল গ্রামে সম্প্রতি লক্ষ্যভেদের প্রতিযোগিতায় ‘শ্যুৎসেনক্যোনিশ' হিসেবে জয়ী হয়েছেন মিটবাট গেডিক৷ বয়স ৩৩৷ তুর্কি বংশোদ্ভূত জার্মান নাগরিক৷ সবচেয়ে বড় কথা, তিনি মুসলিম৷ তবে তাঁর স্ত্রী ক্যাথলিক৷ তাঁদের ৪ সন্তানও ক্যাথলিক ধর্ম পালন করে৷
এমন ‘অঘটন' দেখে কেন্দ্রীয় সংগঠনে ‘গেল গেল' রব উঠেছিল৷ প্রথমেই তারা গেডিক-এর কাছ থেকে এই সম্মান ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছিলেন৷ কিন্তু গোটা ঘটনাটি জার্মান সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় অনেক মানুষ সংগঠনের বিরুদ্ধে বৈষম্যের অভিযোগ তোলে৷ ফলে শেষ পর্যন্ত মূল সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে এসে সংগঠন একটি আপোশ করেছে৷ গেডিক ‘শ্যুৎসেনক্যোনিশ' হিসেবে স্বীকৃতি বজায় রাখতে পারবেন বটে, তবে সেই সম্মান সীমাবদ্ধ থাকবে নিজের গ্রামের মধ্যেই৷ তাছাড়া গোটা ঘটনাটিকে ব্যতিক্রম হিসেবেই দেখা হবে৷
জার্মানির ‘ডেয়ার স্পিগেল' পত্রিকার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে গেডিক বলেন, ‘‘এই একবিংশ শতাব্দীতে এমন বিতর্ক আমার কাছে একেবারেই বোধগম্য নয়৷'' সমাজের বিভিন্ন অংশেও সেই একই মনোভাবের প্রতিধ্বনি শোনা গেছে৷ অনেকে বলেছেন, যখন জার্মান সমাজের মূল স্রোতে মুসলিম সহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের আরও শামিল করার প্রচেষ্টা চলছে, তখন এমন বৈষম্যমূলক আচরণ একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়৷
তবে ‘জার্মান শুটিং ব্রাদারহুডস'-এর কেন্দ্রীয় সংগঠন এমন যুক্তি মেনে নিতে প্রস্তুত নয়৷ তাদের মতে, কোনো সংগঠনের উপর জোর খাটিয়ে তার ধর্মীয় বৈশিষ্ট্য
তুলে নেওয়া যায় না৷ মুসলিম, ইহুদি বা বৌদ্ধ সংগঠনেও জোর করে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ঢুকিয়ে দেওয়া যায় না৷