ছবি আঁকা তাঁর নেশা৷ এমনই নেশা যে, স্টুডিওতেই পরে থাকেন দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা৷ বলছিলাম জার্মান শিল্পী কার্স্টেনের কথা৷ বিশ্বখ্যাত অনেক তারকা তাঁর কাজের সঙ্গে পরিচিত৷
বিজ্ঞাপন
কার্স্টেন ব্রাইডেনব্রোখ ওরফে মাল-কার্স্টেন ছবি আঁকা, খাওয়া, ঘুমানো – এ সব ছাড়া অন্য কাজ খুব কমই করেন৷ বছরে ৩০০-র বেশি ছবি আঁকেন তিনি৷ বড়দিনের সময় তিনদিন ছুটি ছাড়া অন্য সময় রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা ড্যুসেলডর্ফে তাঁর স্টুডিওতেই থাকেন কার্স্টেন৷ কার্স্টেন বলেন, ‘‘যখন ছবি আঁকার মধ্যে থাকি, তখন আমি বলতে পারি না যে, ‘ও, পাঁচটা বেজে গেছে, এখন আমাকে কাজ বন্ধ রাখতে হবে'৷ তখন ছবি হয়ত বলবে, ‘দেখ, বন্ধু, আঁকতে থাক'!''
কার্স্টেনের সঙ্গী আছেন, আছে এক সন্তানও৷ কিন্তু তিনি আসলে তাঁর ক্যানভাস আর অ্যাক্রিলিককে বিয়ে করেছেন৷
তিনি কি কখনও আঁকার সময় ঘুমিয়ে পড়েন? কার্স্টেন বলেন, ‘‘হ্যাঁ, তবে কাউকে বলবেন না৷ কয়েকবার আঁকতে গিয়ে আমার মাথা ছবির উপর পড়ে গিয়েছিল৷ যেহেতু আমি সাধারণত অ্যাক্রিলিক ব্যবহার করি, তাই তখন, চুল ধোয়ার জন্য গোসলখানায় যেতে হয়৷ তবে ছবির কোনো ক্ষতি হয়না৷''
বিশ্বের দামি কিছু শিল্পকর্ম
বিখ্যাত শিল্পীদের আঁকা ছবি ও ভাষ্কর্যের জন্য সংগ্রাহকরা বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে থাকেন – ৪০ কোটি ডলারের বেশি দাম ওঠাও আশ্চর্যের কিছু নয়৷ দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: picture alliance/ZUMAPRESS/R.Tang
সালভাদর মুন্ডি
লিওনার্দো দা ভিঞ্চির আঁকা ২০টি অক্ষত ছবির একটি এটি৷ ধারণা করা হয়, ১৫০০ সালে এ ছবিটি আঁকা হয়৷ ১৯৫৮ সালে ছবিটিকে অনুলিপি ভেবে নিলামে মাত্র ৬০ মার্কিন ডলারে এটি বিক্রি হয়৷ যিশুখ্রিষ্টের এ ছবিটি ২০১৭ সালে ১০ কোটি মার্কিন ডলারে বিক্রি হবে ধারণা করা হলেও অজ্ঞাত এক ক্রেতা ৪৫ কোটি ডলার দিয়ে কেনেন এটি৷
ছবি: picture alliance/ZUMAPRESS/R.Tang
ইন্টারচেঞ্জ
ডাচ-অ্যামেরিকান শিল্পী উইলেম ডে কুনিং-এর আঁকা ইন্টারচেঞ্জ নামে একটি তৈলচিত্র ২০১৫ সালে ৩০ কোটি ডলারে বিক্রি হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
তাস খেলায় মগ্ন
উত্তর অভিব্যাক্তিবাদ ঘরানার ফরাসি শিল্পী পল সেজানের আঁকা এ ছবিটির নাম ‘দ্যা কার্ড প্লেয়ার’৷ ২০১১ সালে ২৫ কোটি ডলারে ছবিটি বিক্রি হয়৷
ছবি: picture-alliance/akg-images
‘যখন তুমি বিয়ে করবে’
এ ছবিটি আঁকা হয়েছিল ১৮৯২ সালে৷ শিল্পী ফ্রান্সের পল গগাঁ৷ ‘হোয়েন উইল ইউ মেরি’ শিরোনামের এ ছবিটির দাম ২১ কোটি ডলার৷
ছবি: picture-alliance/akg-images/E. Lessing
‘নাম্বার ১৭এ’
অ্যামেরিকান শিল্পী জ্যাকসন পোলোকের আঁকা ‘নাম্বার ১৭এ’ নামের একটি চিত্রকর্ম ২০১৫ সালে ২০ কোটি ডলারে বিক্রি হয়৷ উপরের ছবিটি পোলোকের আঁকা, যার নাম নাম্বার ৭৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘বিয়ের ছবি’
নেদারল্যান্ডসের বিখ্যাত মার্টেন ও ওপইয়েন এর ১৬৩৪ সালের অনুষ্ঠিত বিয়ের ছবি এটি৷ চিত্রকর ডাচ শিল্পী রেমব্রান্ট হারমেনসুন ফান রিন৷ ২০১৫ সালে বিক্রি হওয়া এ ছবিটির দাম পড়েছে ১৮ কোটি ডলার৷
ছবি: gemeinfrei/DW Montage
আলজিয়ার্সের মহিলারা
লেডি অব আলজিয়ার্স শিরোনামে ছবিটি স্পেনের জগদ্বিখ্যাত চিত্রকর পাবলো পিকাসোর ১৯৫৫ সালে আঁকা৷ নিলামে ছবিটির দাম উঠে ১৭ কোটি ৯৪ লাখ ডলারে৷
ছবি: Reuters
‘ন্যু কুশে’
ইটালির চিত্রকর আমেদেও মোদিগলিয়ানি এই ছবিটি আঁকেন ১৯১৭ সালে, তার মৃত্যুর তিন বছর আগে৷ ১৭কোটি চার লাখ ডলারে ২০১৫ সালে বিক্রি হয় ছবিটি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
‘মাস্টারপিস’
অ্যামেরিকান পপ আর্টিস্ট রয় লিচটেনস্টাইনের ১৯৬২ সালে একেছিলেন বিখ্যাত এ ছবিটি৷ ২০১৭ সালে ১৬ কোটি ৫০ লাখ ডলারে ছবিটি বিক্রি হয়৷
ছবি: Dan Kitwood/Getty Images
লুসিয়ান ফ্রয়েডের তিনটি প্রতিকৃতি
আইরিশ চিত্রকর ফ্রান্সিস বেকন এই তিন খণ্ডের ছবিটি আঁকেন ১৯৬৯ সালে৷ ছবিতে যার আলেখ্য, তিনি হলেন ব্রিটিশ চিত্রকর লুসিয়ান ফ্রয়েড, পক্ষান্তরে মনস্তত্বের জনক সিগমুন্ড ফ্রয়েডের পৌত্র৷ ২০১৩ সালে ক্রিস্টি’স-এর নিলামে ছবিটির দাম ওঠে ১৪ কোটি ২৪ লাখ মার্কিন ডলার৷ রয়েছে মার্কিন শিল্পকলা সংগ্রাহক এলেইন ওয়াইনের সংগ্রহে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অঙ্গুলিনির্দেশ
সুইস ভাস্কর আলবের্তো জাকোমেত্তির সৃষ্টি এই মানুষ-সমান ব্রোঞ্জ মূর্তিটি নিউ ইয়র্কে ক্রিস্টি’স-এ নিলাম করা হয় ২০১৫ সালে, কেনেন স্টিভ কোহেন নামের এক হেজফান্ড ম্যানেজার৷ মূর্তিটি আজ বিশ্বের সবচেয়ে দামি ক্রয়যোগ্য ভাস্কর্য বলে গণ্য৷ এটি বিক্রি হয়েছেল ১৪ কোটি ১৩ লাখ মার্কিন ডলারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/V. Hatfield/Christies
সোনার আডেলে
অস্ট্রিয়ার চিত্রকর গুস্তাফ ক্লিম্ট আডেলে ব্লখ-বাউয়ারের এই প্রতিকৃতিটি আঁকেন ১৯০৭ সালে৷ ম্যানহ্যাটানের ‘নয়ে গ্যালেরি’ নামের সংগ্রহশালার জন্য ২০০৬ সালে ছবিটি কেনেন মার্কিন ব্যবসায়ী রোনাল্ড লডার৷ ছবিটি ১৩ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলারে কেনার ব্যবস্থা করে ক্রিস্টি’স সংস্থা৷
ছবি: AUSSCHNITT: picture-alliance/Heritage Images
চিৎকার
নরওয়েজীয় চিত্রকর এডভার্ড মুঞ্চ ‘চিৎকার’ ছবিটি এঁকেছেন একাধিক বার ৷ দা ভিঞ্চির মোনালিসা ও ফান গখ-এর সূর্যমুখি ফুলের পরেই মুঞ্চের এই ছবিটিকে বিশ্বের খ্যাততম চিত্রকর্ম বলে গণ্য করা হয়৷ ছবিটির প্যাস্টেল রঙে আঁকা এই সংস্করণ নিলাম করা হয় ২০১২ সালে, নিউ ইয়র্কের সথেবি সংস্থায়৷ মার্কিন শিল্পপতি লিয়ন ব্ল্যাক ১১ কোটি ৯৯ লাখ মার্কিন ডলারে কিনেন এটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নগ্নমূর্তি, সবুজ পাতা, আবক্ষ
পাবলো পিকাসো এই তেলরঙের ছবিটি এঁকেছিলেন মাত্র একদিনে – দিনটা ছিল ৮ই মার্চ, ১৯৩২৷ প্রায় অজ্ঞাত ছবিটি নিউ ইয়র্কের নিলামে বিক্রি হয় ১০ কোটি ডলারের বেশি মূল্যে, কেনেন এক অজ্ঞাত ক্রেতা৷ ব্যক্তিগত মালিকানায় থাকলেও, ছবিটি লন্ডনের টেট মডার্ন গ্যালারিকে ধার দেওয়া হয়েছে ২০১১ সালে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রুপোলি গাড়ি দুর্ঘটনা
মার্কিন চিত্রকর অ্যান্ডি ওয়ারহল ১৯৬৩ সালে এই সিল্ক স্ক্রিন প্রিন্টটি সৃষ্টি করেন – যার বিষয়বস্তু হল একটি গাড়ি দুর্ঘটনা৷ ২০ বছর ধরে ব্যক্তিগত সংগ্রহে থাকার পর ২০১৩ সালে সথেবি-তে ছবিটি নিলাম করা হয়৷ ক্রেতা অজ্ঞাতই থাকেন; তবে ছবিটি পপ আর্ট শিল্পী ওয়ারহলের সবচেয়ে দামী ছবি বলে গণ্য করা হয়৷
ছবি: AUSSCHNITT: picture-alliance/dpa/Sotheby's
15 ছবি1 | 15
নিজের উৎসাহ কিংবা কারও চাহিদা থেকে কার্স্টেন ছবি আঁকার প্রেরণা পান৷ আগ্রহীরা তাঁকে তাঁদের পছন্দের বিষয় বলতে পারে এবং কীভাবে সেটা করা হবে, তাও বলতে পারে৷ দাম আলোচনা করে ঠিক হয়৷ ‘‘প্রদর্শনীর সময় কোনো ছবির সামনে যদি কেউ একজন তিন ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকে, এবং সেটা পেতে খুব আগ্রহ দেখায়, কিন্তু সামর্থ্য নেই; – আর কেউ যদি পর্শে গাড়ির চাবি হাতে এসে বলে, ‘ওকে, আপনি এই ছবিটা আমার গাড়িতে তুলে দিতে পারেন, এটা এখন আমার' - তাহলে আমি হয়ত তাঁকে বলতে পারি, ‘হয়ত পরেরবার'৷ এরপর, যাঁর ছবিটা সত্যি ভাল লেগেছে, কিন্তু কেনার সামর্থ্য নেই, তাঁকে দিয়ে দিতে পারি – সঙ্গে এক প্যাকেট সিগারেটও,'' বলেন কার্স্টেন৷
মাঝেমধ্যে কার্স্টেন তাঁর স্টুডিও ছেড়ে ভবন পেইন্টের কাজ করেন৷
কাপড়ে করা তাঁর কাজও দেখতে ভালো লাগে – লস অ্যাঞ্জেলসে যে তারকাদের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়েছে, তাঁরা এমনটা জানিয়েছেন৷
সিলভেস্টার স্ট্যালোন মাল-কার্স্টেনের ছবি আঁকা ব্লেজার পরেছেন৷ মার্কিন গায়িকা শেরও কার্স্টেনের একজন ক্রেতা৷
তারকাদের সঙ্গে যুক্ত হতে কার্স্টেন সম্প্রতি কান চলচ্চিত্র উৎসবে গিয়েছিলেন৷ তিনি বলেন, উইল স্মিথ আর জার্মেইন জ্যাকসন আমার কাজের সঙ্গে পরিচিত হয়েছেন৷ মনে হয়েছে যেন, আমি বিশ্বের একমাত্র পেইন্টার....তবে সপ্তাহান্তে সেখানে উড়ে যাওয়াটা দারুণ ছিল৷''
ছবি রং করলে মানসিক চাপ কমে?
শিশুদের শান্ত রাখার জন্য রং পেনসিল আর ছবির বই দিয়ে ছবি আঁকতে বসিয়ে দেয় বড়রা৷ ছবি রং করে মনকে শান্ত করার এই পদ্ধতি কিন্তু বড়দের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য৷ কীভাবে? জেনে নিন ছবিঘর থেকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Pleul
রঙিন অবসর
আজকাল কিন্তু অনেক বড়রাও বিভিন্ন রঙের পেন্সিল দিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ছবির চারিদিকে রং করেন মূলত মানসিক চাপ কমানোর জন্য৷ অন্তত গত কয়েক বছরে বড়দের ছবি রং করার বই বিক্রি সেই কথাই বলে৷ কারণ এত বেশি ছবির বই বিক্রি হয়েছে যে এখন আর সেসব বই ‘বেস্টসেলার লিস্ট’ থেকে বাদ যাওয়ার কথা ভাবাই যায় না৷
ছবি: picture-alliance/ZB/P. Pleul
পড়ার চেয়ে ভালো
যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনে বই অর্ডার দেওয়ার লিস্টে প্রায়ই দেখা যায় এক নম্বরেই রয়েছে বড়দের ছবি রং করার বই৷ আর এই ট্রেন্ড কিন্তু এখন জার্মানিতেও এসেছে৷ এমনকি অনলাইনে কেনাকাটার ওয়েবসাইট অ্যামাজন-এর অর্ডারের শীর্ষেও দশটি বইয়ের তালিকায় রয়েছে দু’টি ছবির বইয়ের নাম৷
ছবি: Getty Images/B. Pruchnie
প্রতিটি ছবির বইয়ের সাথেই রং পেন্সিল
অ্যামাজন থেকে ছবি রং করার বইয়ের অর্ডার দিলে তার সাথে রং পেন্সিলও থাকে৷ বলা বাহুল্য, বিষয়টি পেন্সিল উৎপাদনকারী কোম্পানির জন্য অত্যন্ত আনন্দের৷ আর রং পেন্সিলের চাহিদা এখন এত বেড়ে গেছে যে কোনো কোনো পেন্সিল কোম্পানি কর্মীদের কাজের শিফট বাড়িয়ে দিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T.Koene
মেডিটেশনের নতুন রূপ
আপনার কি দীর্ঘদিন ধরে ঘাড়, পিঠ ও মাথায় ব্যথা হচ্ছে? তাহলে ছবির বই কিনে রং করতে শুরু করে দিন৷ দেখবেন আস্তে আস্তে স্ট্রেসের কারণে হওয়া এ সব ব্যথা থেকে আপনি মুক্তি পাচ্ছেন৷ ছবি রং করে মানসিক চাপ কমার এই সাফল্য দেখে থেরাপিস্টরাো নাকি বিস্মিত!
ছবি: APTN
সামাজিক ছবি পেইন্টিং
যাঁরা একাকী, নিঃসঙ্গ তাঁরা সাধারণত নিজেদের ভাবনা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে অন্যদের সাথে শেয়ার করেন৷ তাই টুইটারে #AdultColouring লিখলেই পাবেন অনেক গুণী শিল্পীর রং করা ভালো কিছু ছবি৷ শুধু তাই নয়, মাঝে মধ্যে তাঁরা রং করার জন্য ছবির বইও নাকি বিনামূল্যে দিয়ে থাকে৷