স্পোর্টস বলতে বোঝায় দৌড়ঝাঁপ, ট্রেনিং – ক্রীড়াবিদ না হয়েও মানুষ যা করতে পারে ও করে থাকে৷ কিন্তু ক্যানসার পেশেন্ট, এমনকি যাদের কেমোথেরাপি চলেছে,তাদের ক্ষেত্রেও ট্রেনিং অসম্ভব উপকারী৷
বিজ্ঞাপন
ক্যানসার সেরে যাবে খেলাধুলাতেই
03:56
স্পোর্ট, অর্থাৎ খেলাধুলা কীভাবে ক্যানসার রোগীদের ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, দক্ষিণ জার্মানির উল্ম শহরের ইউনিভার্সিটি ক্লিনিকে তা নিয়ে গবেষণা চলছে৷ ক্যানসারের রোগীরা সরাসরি ক্লিনিক থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য আসেন, এমনকি কেমোথেরাপি চলার সময়, যখন অনেকেই মানসিকভাবে দমে যান৷
উল্মের ইউনিভার্সিটি ক্লিনিকের ক্রীড়াবিজ্ঞানী স্টেফানি অটো প্রত্যেক রোগীর জন্য আলাদা ট্রেনিং প্রোগাম প্রস্তুত করেন৷ স্টেফানি বলেন, ‘‘বিশেষ করে কেমোথেরাপির সময় খেলাধুলা করাটা খুবই জরুরি, যাতে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও কম হয়৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগীদের খেলাধুলার ক্ষমতা অটুটই থাকে, কোনো কোনো সময় হয়ত সামান্য কমে যায়৷ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হলো, তাদের ফিট থাকা, যারা দিনের কাজকর্মগুলো ঠিকমতো চালিয়ে যেতে পারেন৷’’
ক্যানসারের দশ লক্ষণ
ক্যানসারের কিছু লক্ষণ আছে, যা মানুষ নিজের অজান্তেই এড়িয়ে যায়৷ অথচ রোগবালাই শুরুতে ধরা পড়লে চিকিৎসা অনেক সহজ হয়৷ তাই আজ জানাবো ক্যানসারের দশটি লক্ষণের কথা, যেগুলো সহজেই শনাক্ত করা সম্ভব৷
ছবি: Fotolia/ Alexander Raths
ঘনঘন কাশি
মাঝে মাঝে কাশি হলে উদ্বেগের কোনো কারণ নেই৷ কিন্তু ঘনঘন কাশি কিংবা কফের সঙ্গে রক্ত বের হলে, উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো ব্যাপার বৈকি! বেশিরভাগ কাশি বিপদের না হলেও কিছুক্ষেত্রে তা ফুসফুসে ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে৷ তাই এক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত৷
ছবি: Fotolia/Brenda Carson
অন্ত্রের অভ্যাসে ঘনঘন পরিবর্তন
আপনার অন্ত্রের মধ্যে নড়াচড়া যদি সহজ না হয় এবং মল স্বাভাবিকের চেয়ে বড় কিংবা কোনোভাবে অস্বাভাবিক মনে হয়, তাহলে তা মলাশয়ে ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে৷ তাই এক্ষেত্রেও দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা জরুরি৷
ছবি: Fotolia/Jiri Hera
মূত্রথলির অভ্যাসে পরিবর্তন
যদি কারো মূত্র বা প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত আসে, তাহলে তা মূত্রথলি বা কিডনির ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে৷ আবার মূত্রনালীতে সংক্রমণের কারণেও এটা হতে পারে৷ তাই সন্দেহ থাকলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়াই শ্রেয়৷
ছবি: imago/eyevisto
ঘনঘন অপ্রত্যাশিত ব্যথা
অধিকাংশ ব্যথাই ক্যানসারের লক্ষণ নয়, তবে ঘনঘন ব্যথা হলে তা চিন্তার বিষয়৷ তবে ক্রমাগত মাথাব্যথা হলে আবার এটা ভাবার কারণ নেই যে, কারো বুঝি ব্রেইন ক্যানসার হয়েছে৷ কিন্তু বুকে ক্রমাগত এবং নিয়মিত ব্যথা ফুসফুসের ক্যানসার কিংবা তলপেটে ক্রমাগত ব্যথা ডিম্বাশয়ের ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে৷
ছবি: Fotolia/Adam Gregor
আঁচিল বা তিলের আকৃতিতে পরিবর্তন
সব আঁচিল বা তিলের সঙ্গে টিউমারের সম্পর্ক নেই৷ তবে কোনো আঁচিল বা তিলের আকৃতি ক্রমাগত পরিবর্তন হতে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়াই ভালো৷
ছবি: Fotolia/ Alexander Raths
ক্ষতস্থান না শুকালে
আপনার শরীরে কোনো ক্ষত যদি তিন সপ্তাহেও না শুকায়, তাহলে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ থাকতে পারে৷ এ ধরনের পরিস্থিতিতে তাই দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Karl-Josef Hildenbrand
অপ্রত্যাশিত রক্তপাত
মাসিকের সময় ছাড়া অন্য সময়ে যোনি থেকে রক্তপাত সার্ভিকাল ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে৷ আর মলদ্বার থেকে রক্তপাতও কোনো কোনো ক্ষেত্রে ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে৷
ছবি: Fotolia/absolutimages
অপ্রত্যাশিতভাবে ওজন কমা
অনেকেই ওজন কমানোর জন্য নানারকম চেষ্টা করেন৷ কিন্তু যদি কোনোরকম চেষ্টা ছাড়াই কারো ওজন ক্রমাগত কমতে থাকে, তাহলে সেটা বিপদের লক্ষণ৷
ছবি: Fotolia/rico287
অপ্রত্যাশিত স্ফীতি
শরীরের কোথাও কোনো অপ্রত্যাশিত স্ফীতি বা কোনো ফোলা স্থানের আকার পরিবর্তন হতে থাকলে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন৷ মেয়েদের স্তনের মধ্যে কোনো অস্বাভাবিক মাংসপিণ্ডের উপস্থিতিও কিন্তু ক্যানসারের লক্ষণ৷
ছবি: picture alliance/CHROMORANGE
ঘনঘন গিলতে সমস্যা হলে
এটা দু’ধরনের ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে৷ ঘাড় এবং খাদ্যনালীর ক্যানসার৷ তাই দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যান৷ দ্রষ্টব্য: ছবিঘরটি তৈরিতে ‘‘ওম্যান’স হেল্থ’’ ম্যাগাজিন থেকে তথ্য সহায়তা নেয়া হয়েছে৷
ছবি: Fotolia/Dasha Petrenko
10 ছবি1 | 10
এককালে ক্যানসার রোগীদের বিছানায় শুয়ে থাকতে বলা হতো৷ আজ বলা হয়, যত পারো হাঁটাচলা করো৷ ট্রেনিংয়ের সময় রোগীদের স্ট্রেস হর্মোন কমে যায়, তাঁরা অনেক কিছু করতে পারেন ও তাঁদের মন ভালো হয়ে যায়৷ এ ছাড়া স্পোর্টস শরীরের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়, মেটাবলিজমকে সক্রিয় করে, এছাড়া শরীরের বৃদ্ধির বিশেষ বিশেষ উপাদান ও বিশেষ বিশেষ হর্মোন বাড়িয়ে দেয়৷ যেহেতু কেমোথেরাপি সারা শরীরকে দুর্বল করে, তাই পেশির বৃদ্ধিও প্রয়োজন৷
গবেষণায় যা দেখা গেছে
ট্রেনিংয়ে কেমন কাজ হচ্ছে, তা দেখার জন্য ক্রীড়াবিজ্ঞানীরা স্পোর্টথেরাপির সূচনায় ও শেষে সরাসরি রোগীর পেশি থেকে টিস্যুর নমুনা নেন৷ পরীক্ষাগারে পেশির কোষগুলোকে বিশ্লেষণ করে দেখা হয়, কী ধরনের ট্রেনিংয়ে মেটাবলিজমের ক্রিয়া ও পেশির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি হয় – এবং এ ধরনের পরিবর্তনের কারণই বা কী৷
উল্মের ইউনিভার্সিটি ক্লিনিকের স্পোর্টস ফিজিসিয়ান প্রফেসর ইয়ুর্গেন স্টাইনাকার বললেন, ‘‘গবেষণায় দেখা গেছে যে, স্পোর্ট থেরাপি ব্রেস্ট ক্যানসার, ক্যানসার অফ দ্য বাওয়েলস বা প্রস্টেট ক্যানসারের ‘রিল্যাপ্স’ করার সম্ভাবনা ৫০ শতাংশ কমিয়ে দেয় – অর্থাৎ এর প্রভাব কেমোথেরাপির সমান৷ কেমোথেরাপি বাদ দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না, কিন্তু দু’টোকে মিলিয়ে দেওয়া সম্ভব, যাতে নতুন করে টিউমার হওয়ার সম্ভাবনা কমানো যায়৷’’
‘ক্যানসারের বিরুদ্ধে রোয়িং’ প্রকল্পে স্পোর্টস মেডিসিনের লক্ষ্য হলো, রোগীরা যাতে তাদের থেরাপি শেষ হবার পরও সক্রিয় থাকেন৷ সকলেরই ইচ্ছা, তারা যেন সুস্থ থাকেন, রোগ যেন আবার ফিরে না আসে৷ এছাড়া অন্যদের সঙ্গে ট্রেনিং করায় তাদের মনমেজাজও ভালো থাকে৷
ক্লাউস ডার্টমান/এসি
চীনের ‘ক্যানসার হোটেল’
হাসপাতালে থাকার যে ব্যয় তার চেয়ে কম খরচে ‘ক্যানসার হোটেল’এ থাকতে পারেন রোগী ও তার পরিবার৷ বড় হাসপাতালগুলোর আশেপাশেই পাওয়া যায় এমন হোটেল৷
ছবি: REUTERS/K.-H. Kim
ত্রিশ লক্ষের বেশি
প্রতিবছর ৩০ লক্ষেরও বেশি চীনা নাগরিক ক্যানসারে আক্রান্ত হন৷ তাদের অনেকেরই হাসপাতালের খরচ দেয়ার সামর্থ্য থাকে না৷
ছবি: REUTERS/K.-H. Kim
আছে স্বাস্থ্যবিমা
চীনের ১৪০ কোটি নাগরিকের জন্য সরকারি স্বাস্থ্যবিমা সেবা চালু আছে৷ তবে এর আওতায় শুধু মৌলিক কিছু সেবা পাওয়া যায়৷ এছাড়া মোট খরচের অর্ধেক রোগীকে দিতে হয়৷ ক্যানসারের মতো জটিল রোগের ক্ষেত্রে আরও বেশি খরচ দিতে হয় রোগীদের৷
ছবি: REUTERS/K.-H. Kim
দারিদ্র্যকে বরণ
সরকারি তথ্য বলছে, চীনের ৪৪ শতাংশ পর্যন্ত পরিবার চিকিৎসার খরচ মেটাতে গিয়ে দরিদ্র হয়ে পড়ছে৷ ছবিতে এক রোগীকে ক্যানসার হোটেলের রুমে নিজের সিটি স্ক্যান দেখতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: REUTERS/K.-H. Kim
হাসপাতালের অর্ধেক
ছবিতে ৪২ বছরের ওয়াংকে দেখতে পাচ্ছেন৷ তিনি জরায়ুমুখের ক্যানসারে আক্রান্ত৷ চিকিৎসা নিতে তিনি ইনার মঙ্গোলিয়া থেকে সাড়ে সাতশ’ কিলোমিটার দূরের বেইজিংয়ে গেছেন৷ উঠেছেন এক ক্যানসার হোটেলে৷ সেখানে এক রাতের ভাড়া ১০ ডলারের একটু বেশি৷ হাসপাতালের একটি বিছানার ভাড়া তার প্রায় দ্বিগুন৷
ছবি: REUTERS/K.-H. Kim
ছোট জায়গায় ভালো ডাক্তার থাকতে চান না
ওয়াং-এর স্বামী ৪৬ বছরের লিউ রয়টার্সকে বলেন, ভালো চিকিৎসকরা মফস্বল কিংবা ছোট শহরগুলোতে কাজ করতে চান না৷ ফলে জটিল রোগের চিকিৎসা নিতে সবাইকে শহরে যেতে হয়৷ ছবিতে বেইজিং এর একটি এলাকা দেখা যাচ্ছে যেখানে ক্যানসার হোটেল রয়েছে৷
ছবি: REUTERS/K.-H. Kim
দীর্ঘদিনের বাসিন্দা
একটি ক্যানসার হোটেলের ম্যানেজার জানিয়েছেন, বেশিরভাগ রোগী কয়েকমাস থেকে এক বছর পর্যন্ত এসব হোটেলে থাকেন, কারণ, চিকিৎসা সেবা পেতে তাদের দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয়৷ ছবিতে হোটেলের বাসিন্দাদের তাদের কাপড়-চোপড় শুকাতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: REUTERS/K.-H. Kim
হোটেলের সুযোগ-সুবিধা
এসব হোটেলের ঘরগুলোতে টেলিভিশন ও ফ্যান থাকে৷ বাসিন্দারা চাইলে রুমেই রান্না করতে পারেন৷ যেমনটা ছবিতে দেখছেন একটি হোটেল রুমে রান্নার উপকরণ দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: REUTERS/K.-H. Kim
‘আমরা গরিব এলাকার মানুষ’
কথাটা ৬০ বছরের প্যান-এর৷ ২০১৩ সালে তাঁর স্ত্রী’র মলাশয়ের ক্যানসার ধরা পড়ে৷ তখন থেকে চিকিৎসায় তাঁদের খরচ হয়েছে প্রায় সাড়ে ৪০ হাজার ডলার৷ রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘‘বিমা সুবিধা থেকে খরচের মাত্র অর্ধেকটা আসে৷ আমরা শহরের মানুষ নই যে হাজার হাজার ইউয়ান খরচ করতে পারবো৷ আমরা কৃষক মানুষ৷ চিকিৎসার জন্য আমাদের অর্থ ধার করতে হয়৷’’