শিশু-কিশোরদের যত ধরনের ক্যান্সার হয় তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয় লিউকেমিয়া বা ব্লাড ক্যান্সার, এরপরে সবচেয়ে বেশি হয় ব্রেইন ক্যান্সার৷ জার্মান ব্রেইন টিউমার অ্যাসোসিয়েশন বলছে, যেসব শিশুদের ক্যান্সার হয় তাদের মধ্যে ২৫ ভাগ মস্তিষ্ক ও কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের ক্যান্সারে আক্রান্ত৷

সাড়ে ছয় বছরের শিশুদের মধ্যে এ ধরনের ক্যান্সারের হার বেশি৷ এছাড়া মেয়ে শিশুদের তুলনায় ছেলেদের মধ্যে এ ধরনের ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা বেশি৷

ব্রেইন টিউমারের সাধারণ লক্ষণগুলো হল: মাথা ব্যথা, মাথা ঘোরা, বমি, দৃষ্টি বিভ্রান্তি, ভারসাম্যে সমস্যা এবং যেকোন জিনিসের সামঞ্জস্য করতে সমস্যা৷ তবে মস্তিষ্কে স্থান ভেদে লক্ষণ ভিন্ন হয়৷

এমআরআই এর মাধ্যমে মস্তিষ্কের ছবি তুলে চিহ্নিত করা হয় কোথায় টিউমার আছে৷ এটা ক্যান্সার কিনা সেটা জানার জন্য বায়োপ্সি করা হয়৷

শিশুদের মধ্যে অ্যাস্ট্রোসাইটোমা ধরনের টিউমারটি সবচেয়ে বেশি দেখা যায়৷ প্রাথমিক অবস্থায় সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এটিকে অপসারণ করা গেলে পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার সুযোগ থাকে৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই টিউমারকে ‘গ্রেড ১’ হিসেবে ক্যাটাগরি করেছে৷ এরপর গ্রেড-২ ও গ্রেড -৩ এ আছে এপেনডাইমোমা৷ গ্রেড-৪ এ আছে মেডুলোব্লাস্টোমা৷ এই দুই ধরনের ক্যান্সার শিশুদের মধ্যে কমই দেখা যায়৷

টিউমার কত বড় বা মস্তিষ্কের কোথায় এর অবস্থান সে অনুযায়ী অস্ত্রোপচার, রেডিও থেরাপি, কেমোথেরাপি বা এগুলোর সমন্বয়ে চিকিৎসা করা হয়৷ হাইডেলবার্গের হোপ চিলড্রেনস ক্যান্সার সেন্টারের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টিয়ান পাটলার জানান, শিশুদের এক দুইবারের বেশি রেডিও থেরাপি দেয়া সম্ভব নয়, তখন কেমোথেরাপি দিতে হয়৷ এটা নিতে শিশুদের ভীষণ কষ্ট হয়৷

মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচারে বেশ ঝুঁকি রয়েছে৷ সফলভাবে অস্ত্রোপচার না হলে সারাজীবনের জন্য মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যেতে পারে৷

মস্তিষ্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশে টিউমার হলে অস্ত্রোপচার বেশ কঠিন হয়ে পড়ে৷ বিশেষ করে কথা বলঅ এবং চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করে মস্তিষ্কের যে অংশ এবং ব্রেইন স্টেম৷ অস্ত্রোপচারের সময় এগুলোর কোনটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে জীবন সংশয় দেখা দিতে পারে৷

কোন শিশুর ক্যান্সার হওয়া মানেই তার মৃত্যু নিশ্চিত এমন নয়৷ টিউমার সফলভাবে অপসারণ করা গেলে ৭৫ ভাগ সম্ভাবনা থাকে পুরোপুরি সেরে ওঠার৷ খারাপ ধরনের টিউমারের ক্ষেত্রে সম্ভাবনা ৪০ ভাগ৷

কিছু ক্ষেত্রে অপারেশনের কয়েক বছর পর এপেনডাইমোমা টিউমার ফিরে আসে৷ এ কারণ হতে পারে কোন কোষ রয়ে গিয়েছিল৷ সেক্ষেত্রে আবারও অস্ত্রোপচার করে টিউমারের প্রতিটি কোষ সরিয়ে ফেলতে হয়, যা বেশ কঠিন কাজ৷

জার্মানির ক্যান্সার বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুরা মানসিকভাবে বেশ সাহসী৷ ভবিষ্যতে কি হবে তা না ভেবে হাসিমুখে তারা চিকিৎসার প্রতিটি ধাপে অংশ নেয়৷ তবে শিশুদের ক্যান্সার চিকিৎসায় সফলতার হার অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন জার্মান চিকিৎসকেরা৷

মাঝে মাঝে কাশি হলে উদ্বেগের কোনো কারণ নেই৷ কিন্তু ঘনঘন কাশি কিংবা কফের সঙ্গে রক্ত বের হলে, উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো ব্যাপার বৈকি! বেশিরভাগ কাশি বিপদের না হলেও কিছুক্ষেত্রে তা ফুসফুসে ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে৷ তাই এক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত৷

আপনার অন্ত্রের মধ্যে নড়াচড়া যদি সহজ না হয় এবং মল স্বাভাবিকের চেয়ে বড় কিংবা কোনোভাবে অস্বাভাবিক মনে হয়, তাহলে তা মলাশয়ে ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে৷ তাই এক্ষেত্রেও দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা জরুরি৷

যদি কারো মূত্র বা প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত আসে, তাহলে তা মূত্রথলি বা কিডনির ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে৷ আবার মূত্রনালীতে সংক্রমণের কারণেও এটা হতে পারে৷ তাই সন্দেহ থাকলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়াই শ্রেয়৷

অধিকাংশ ব্যথাই ক্যানসারের লক্ষণ নয়, তবে ঘনঘন ব্যথা হলে তা চিন্তার বিষয়৷ তবে ক্রমাগত মাথাব্যথা হলে আবার এটা ভাবার কারণ নেই যে, কারো বুঝি ব্রেইন ক্যানসার হয়েছে৷ কিন্তু বুকে ক্রমাগত এবং নিয়মিত ব্যথা ফুসফুসের ক্যানসার কিংবা তলপেটে ক্রমাগত ব্যথা ডিম্বাশয়ের ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে৷

সব আঁচিল বা তিলের সঙ্গে টিউমারের সম্পর্ক নেই৷ তবে কোনো আঁচিল বা তিলের আকৃতি ক্রমাগত পরিবর্তন হতে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়াই ভালো৷

আপনার শরীরে কোনো ক্ষত যদি তিন সপ্তাহেও না শুকায়, তাহলে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ থাকতে পারে৷ এ ধরনের পরিস্থিতিতে তাই দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন৷

মাসিকের সময় ছাড়া অন্য সময়ে যোনি থেকে রক্তপাত সার্ভিকাল ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে৷ আর মলদ্বার থেকে রক্তপাতও কোনো কোনো ক্ষেত্রে ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে৷

অনেকেই ওজন কমানোর জন্য নানারকম চেষ্টা করেন৷ কিন্তু যদি কোনোরকম চেষ্টা ছাড়াই কারো ওজন ক্রমাগত কমতে থাকে, তাহলে সেটা বিপদের লক্ষণ৷

শরীরের কোথাও কোনো অপ্রত্যাশিত স্ফীতি বা কোনো ফোলা স্থানের আকার পরিবর্তন হতে থাকলে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন৷ মেয়েদের স্তনের মধ্যে কোনো অস্বাভাবিক মাংসপিণ্ডের উপস্থিতিও কিন্তু ক্যানসারের লক্ষণ৷

এটা দু’ধরনের ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে৷ ঘাড় এবং খাদ্যনালীর ক্যানসার৷ তাই দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যান৷ দ্রষ্টব্য: ছবিঘরটি তৈরিতে ‘‘ওম্যান’স হেল্থ’’ ম্যাগাজিন থেকে তথ্য সহায়তা নেয়া হয়েছে৷